প্রতিদিনের কথ
অশোক মিত্র
স্পপ্ুুলাল্ল লাইহ্রেন্ী
১৯৫/১'ব, দ্িধান সরণি, কল-৬
প্রকাশ : নববর্ষ ১৩৬৯
প্রকাশক
স্থনীলকুমার ঘোষ এম. এ.
পপুলার লাইব্রেরী
১৯৫/১বি, বিধান সরণি, কলিকাতা।-৭০ ০০০৬
প্রচ্ছদ শিল্পী
প্রবীর সেন
ক্যালকাট সিটি প্রেস
৯এ, যনমোহন বন্থ স্ট্রীট,
কলিকাতা-৭০০০০৬
গ্রামে-গঞ্জে শহরে-শহরতলিতে যে-বন্ধুর। সপ্তাহের
পর সপ্তাহ ধ'রে এই লেখাগুলি পড়েছেন, নিজেদের
মধ্যে আলোচনা করেছেন, কখনো হয়তো বা
চিঠি দিয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন রেখেছেন আমার
কাছে, পরম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাদের জন্য
লেখকের নিবেদন
বিগত বছর দেড়েক ধ'রে 'গণশক্তি' পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন
রচন1] থেকে বাছাই ক'রে “প্রতিদিনের কথা” সংকলিত হলে ।
রাজনীতির আষ্ট্েপৃষ্ঠে মোড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাঁপন, এই
লেখাগুলির মধ্যে বার-বাঁর ঘুরে-ফিরে সেই রাজনীতির প্রসঙ্গ তাই
এসেছে। বাঁচন-ভঙ্গির তীক্ষুতা হয়তো৷ কারো-কারো' অস্বাচ্ছ্যন্দের
উদ্রেক করবে, কিন্তু, আমার বিবেচনায়, দেশের যে-হাল, ঘুরিয়ে
পেচিয়ে বক্তব্য প্রকাশের খতু শেষ হয়ে এসেছে, য1 বলার, তা
স্পষ্ট করৈ বলাই ভালো ; কোনো-কোনো৷ মুহূর্তে র;তারও তো৷
সামাজিক উপযোগিতা আছে।
গল্পকার-ওপন্তাসিক অমলেন্দু চক্রবতী বহুমুখী প্রতিভাধর, ভিনি
প্রতিদিনের কথা'র প্রচ্ছদ একে দিয়েছেন, তীঁকে ধন্যবাদ
জানাবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
৩১ ডিসেম্বর ১৯৬২ অশোক মিজ্র
এ কোথায় দেশকে টেনে নাষানে! হয়েছে
কমরেড বাচ্চ! মুন্লীর ভূগোলের বই
দেশপ্রেমের ইতিকথা
কুদাট বা? বাগুইহাটির সেই বৃদ্ধা
পুড়ে মরা আর পুড়িকে মার।
দুরাক্মার ছল
অপব্যয় রুখতে হবে
ঘটিবাটি বন্ধ ক'রে দেবেন?
জালানির মতো জলুন !
অনভ্তকাল য1 চলতে পারে ন।
মানুষ কেন খঞ্জ হয়
জাতীয় সংহতির কী ও কেন
ধনতত্ত্রের নাভিশ্বাস ?
“নিলামে তেল বেচে, দাম কমবে"
সর্বভূতেষু
ভারতভাগ্যবিধাতা
ষড়যন্ত্রী মশাইদের লীলাখেলা
ধর্মে আছে, জিরাফেও আছে
মেরেছে! কলসীর কান, তা ব'লে কি
কবরে-চাপা ইতিহাস
আমরা মার। পড়ছি, কিন্ত কেন
শুধু প্রেম নয়, কিছু ঘ্বণা রেখো মনে
খাল কেটে কুমির
সংকট, টোটকা, বুন্দা করাতের হাতে লাঠির বাড়ি
তাকে কী তাতে কী কাহিনী
আমার যৌবন-বাঁগানে হাওয়া লেগেছে ফুল-ন্জাগানে
মহাভারত একটু অশুদ্ধ হোক
আমাদের লড়াই, আমাদেরই লড়াই
দীধ শিখার বগি জলে
১২০
১৩১
১৩৬
১৪২
১৪৭
১৫২
১৫9
এ কোথায় দেশকে টেনে নামানে। হয়েছে
ধরুন আপনাদের রাজ্যের এক মন্ত্রী কোনো চৌমাঁথায় পৌছে দেখতে পেলেন
ওখাঁনে দীড়ানে। ট্র্টাফিক কনস্টেবল বেপরোয়া লরিট্রাকচালকদের কাছ থেকে
ঘুষ নিচ্ছে । মন্ত্রী তাঁর গাড়িতে কনস্টেবলটিকে তুলে কাছাকাছি থানায় জম ক'রে
দিয়ে এলেন, এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানালেন আইন-অনুযায়ী ব্যবস্থা
নেওয়ার জন্য | পরদিন মান্তগণ্য খবরের কাগজে ফলাও ক'রে বেরোলে। : কর্তব্যরত
পুলিসকে কর্তব্যস্থান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অধিকার মন্ত্রীকে কে দিল?
পুলিসপ্রবর কোন্ মহান কর্তব্যে রত ছিলেন, ন। ঘুষ নিচ্ছিলেন । কিন্তু তা হ'লে
কী হবে, মন্ত্রীর নামে টিটিককার পড়ে গেল ।
এ-ধরনের মান্গণ্য সংবাদপত্রে হঠাৎ কিন্তিতে-কিজ্ডিতে জীবনী বের হ'তে
শুর করলো । ফ্কাদের জীবনী? কলকাতা শহরের মান্গণ্য মাস্তান-সমাজ-
বিরোধীদের জীবনী । আমাদের ছেলেবেলায় স্কুলের পাঠক্রমে জীবনী পাঠ্য
ছিল, আমরা পড়তাম দেশবন্ধু চিত্তরঞ্রনের জীবনী, রবীন্দ্রনাথের জীবনকথা, নয়তো
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের অথব1 হাঁজী মহম্মদ মোহ,সিনের | কালের ধারা পাল্টায়,
মহাজ্ঞানী-মহাজন-মহা পুরুষের সংজ্ঞীও, সৃতরাঁং মান্তগণ্য সংবাদপত্রাি দ্বারা যদি
সমীজবিরোধীদের জীবনকথা ফুলিয়ে-ফীপিয়ে-আবেগে ডুবিয়ে প্রকাশ করাই
সমীচীন মনে করা হয়, নতমস্তকে মেনে নেওয়! ছাড় আমার-আপনাপ অগ্ঠ কী
উপায় আছে? আমর প্রতিবাদ জানাতে গেলে তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতায়
হস্তক্ষেপ বলেও বিবেচিত হওয়ার আশঙ্কা । তবে এ যে কিংবদস্তী আছে, ধর্ম
ন] অধর্মের কল, বাতাসে নড়ে, হঠাৎ গোৌপীবাড়ি আন্দোলনের প্রকোপে মাগ্যগণ্য
সংবাদপত্রার্দির কর্তৃপক্ষ হয়তে। দোৌঁনোমনা হয়ে গেলেন, মহামহিম মাস্তান
বাহাছুরদের জীবনী বেরোঁনে! আপাতত স্থগিত রইলো] ।
অথচ এ-সমস্ত সংবাদপত্রের কর্তীব্যক্তিদের সমাজ-সংস্কৃতির পুরোধা ব'লে
মেনে নেওয়। হয়, তাঁদের বাদ দিয়ে পঁচিশে বৈশাখ-বাইশে শ্রাবণের কোনো
অনুষ্ঠানের কথা ভাবা যায় না । রজনীগন্ধার ঝাঁড়ে উন্মোচিত চন্দনচচিত সন্ধ্যা,
রবীন্দ্রনাথের গাঁন, রবীন্দ্রনাথ থেকে আবৃত্তি, বেদ থেকে শ্লোকোচ্চারশ, স্থবেশ-
প্র, কথা ১ না
স্চিণ ভদ্রমহোদয়মহোদয়াদের অভিজাত ভিড়, সব-মিলিয়ে এক প্রায়-অপাধিব
পরিবেশ, তার মধ্যমণি হয়ে বিরাজ করছেন খবরের কাগজের প্রধান পুরোহিতরা,
ধারা অসাধু রাজকর্চারীকে হাতে-নাতে মন্ত্রী ধ'রে ফেললে তা গভীর অপছন্দ
করেন, এবং সমাজবিরোধীদের কী ক'রে মহাপুরুষের সম্মান প্রদান করা যায়,
সে-ভাবনায় ধাদের প্রহরের পর প্রহর কেটে যাঁয়।
কিন্তু সংবাদপত্রের সম্পাদকদের উপর অভিমান ক'রে কী লাভ? জনৈক মহিলা,
তিনি আপাতত সংসদ সদশ্যা, কিছুদিন দাপিয়ে দাবি ক'রে বেড়ালেন, তিনি
মহাবিদৃষী, অযূক মাকিন বিশ্ববিগ্ভালয় থেকে তমুক বিষয়ের উপর গবেষণ। ক'রে
পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেছেন । কিছুদিন বাদে আবিষ্কৃত হলো, যদিও মাঁফিন
দেশে অনেক মায়াবী জিনিশই ঘ'টে থাকে, এই ক্ষেত্রে কিন্তু ঘটেনি । অমুক নামে
মাকিন দেশে কোনে] বিশ্ববিদ্ভালয়ই নেই, সুতরাং তমুক বিষয়ে উক্ত মহিলার
গবেষণাপত্র জম দেওয়ার প্রপঙ্গ, তথা পি এইচ ভি প্রাপ্তিযোগ, অলীক-অবান্তর,
পুরে। ব্যাপারটিই ব1নানো, সংসদীয় ভাষায় হয়তো মায়! কিংবা মতিভ্রম, লোকায়ত
ভাষায় বল। হবে নিছক প্রতারণা, আরো একটু স'রে এসে, দেশজ ভাষায়,
জুয়াচুরি | এ নামে বিশ্ববিদ্ভালয়ই নেই, স্থৃতরাং এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভদ্রমহিলার
পি এইচ ডি পাওয়ার প্রশ্নই নেই, মানুষকে ধাপ্সা দেওয়া হয়েছে । সরল সাধারণ
মানুষ, মাঁকিন দেশ তাঁদের কাছে স্বদুর স্বপ্নের মতে।, সেই দেশের মহান্ বিশ্ববিদ্ভীলয়
থেকে এই মহিলা মস্ত পড়াশুনো৷ ক'রে মস্ত ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন, খবরকাগজে
ছাঁপ! হয়েছে সেই ডিগ্রির কথা, শ্রদ্ধাঁয়-বিম্ময়ে-ভক্তিতে সাধারণ মানুষের মাথা
নত হয়ে এসেছে, তাঁদের মধ্যে অনেকে সংসদ নির্বাচনে এই মহিলাকে গদগদ অনু-
প্রেরণায় ভোট দিয়ে এসেছেন ৷ তীদের এটা কল্পনার বাইরে যে লেখাপড়ার
ব্যাপার নিয়েও এ-ধরনের পুকুরচুরি সম্ভব, বিশেষ ক'রে কোঁনে। মহিলার পক্ষে ।
কিন্ত সংবিধানে কিংবা দেশের অন্ত আইনে তো কোথাও লেখা নেই যে
অনুতভাষিণী হ'লে সংসদের সদশ্যা থাক যাবে না| স্তরাং মহিলাটি সংসদে
আছেন, প্রতারণ। ধর প'ড়ে যাওয়ার ফলে যে তেমন লঙ্জিত-ফজ্জিত তা-ও,
আচরণ-বিচরণ দেখে অন্তত, মনে হয় না । বরঞ্চ বল চলে, তিনি সগৌরবে বিরাঁজ
করছেন । এবং, প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে, উপস্থিত তিনি বিশ্বভারতী কর্মসমিতির
অদন্যা | প্রধান মন্ত্রী স্বয়ং বিশ্বভারতীর আচার্য । আচার্য হবার মতো তাঁর কী-
কী আর্য গুণ আছে, সে-প্রসঙ্গ আপাতত উহা থাক, তবে মহিলাটির গুণাবলী
আমাদের কাছে অপ্রকাশ্ঠ নয় ।
১৩
এ হেন আচার্য-প্রধান মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের পুণ্যস্বতি-আগুত শান্তিশিকেতনে
এলেন বিশ্বভাঁরতীর সমাবর্তন উপলক্ষে, স্বভাবতই উক্ত মহিলাও উপস্থিত ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পর আচার্য-প্রধান মন্ত্রী কতিপয় ছাত্রীর সঞ্গে মধ্যাহ্ন আহারে
সম্মত হলেন । তার ছু'পাশে ছু'জন ছাত্রী, আচার্-প্রধান মন্ত্রী তীদের সঙ্গে
আহারের ফাকে-ফীকে একটু-আধটু সৌজগ্যসম্মত বিশ্রস্তালাপ করছেন, তার
মুখোমুখি আসনে আমাদের ছন্মডিগ্রিধারিণী মহিলাটিও আহাররতা । আচার্ষ-
প্রধান মন্ত্রী তার সহোপবিষ্ট। ছাত্রী ছুটকে, আহারান্তে, সেহাঁভিনন্দন জানালেন,
এবং গাত্রোথান করার মুহূর্তে মহিলাটির দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, “জীবনে
উন্নতি করতে হ'লে আদর্শ বেছে নিতে হয়, আমার শুডেচ্ছা-আশীবাদ রইলো,
তোমরা যেন গুর মতে। হ'তে পারো” |
অতিরঞ্রন নয়, গণ্যমান্য খররকাগজে এই উপাখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, ভারত-
বর্ষের প্রধান মন্ত্রী, খিনি সেই স্থবাদে বিশ্বভারতীর আচার্য, রবীন্দ্রনাথের মানস-
তপোবন বিশ্বভারতীর আচার্য, তিনি এ বিশ্ববিগ্ভালয়ের ছাত্রীদের উদ্বদ্ধ করছেন
যেন তারা এ ভুয়ো-ডিগ্রি-জাহির-করতে-গিয়ে-ধরা-পড়া মহিলাকে জীবনের আদশ
হিশেবে বরণ ক'রে নেন |
না, সম্ভবত ধরণী-দ্বিধা-হও বলার দিনও অপগত। গুরুবাদী দেশ আমাদের,
শিশুকাল থেকে আমাদের শেখানে। হয় দেশনায়কদের বন্দনা! করতে, তাঁদের
পদাঙ্ক অনুসরণ করতে । অথচ দেশের ধার হাঁল ধ'রে আছেন, তারা নিজেরাই
নৈতিকতার বাইরে চ'লে গেছেন | সত্য ও মিথ্যার মধ্যে আর আড়াআড়ি নেই,
সাধুতা এবং প্রতারণার ওজন সমান হয়ে গেছে, এখন গল। ফুলিয়ে বলা হচ্ছে
চুরি খিদ্ভা বড়ো বিদ্যা যদিও পড়ে ধরা । স্থতরাং ছাঁপোষা সংবাদপত্রের
কর্তৃপক্ষকে দৌষারে।প ক'রে লাভ নেই, তাঁরাও কালের পুতুল, দেশকে-জাতিকে
শীর্ষপুরষরা যে-নৈতিকতাঁয় টেনে নামিয়েছেন, সম্পাদকরাঁও সেই নীতিব্যাকরণ
প্রাণের দায়ে রপ্ত করতে বাধ্য হয়েছেন ।
এই মুহুর্ঠে দেশের রাজধানী নতুন দিল্লিতে মহা শৌরগোল, গেল, গেল।
সব গেল, দেশের-জাতির মহা সর্বনাশ, ঘোর বড়যন্ত্র, আমাদের প্রধান মন্ত্রীকে
সিংহাসনচ্যুত করার কুটিল অভিসন্ধি। এত শোরগোলের কী কারণ? দেখুন ন1
কেন, কত বড়ো অন্ায়, কিছু লোক কাঁলাতিপাঁত ক'রে কিছু কালো টাকা
রোজগার করেছে, ফন্দিফিকির খাটিয়ে সরকারকে কর ফাঁকি দিয়েছে, সেই টাকা
তারপর বিদেশে পাঁচার করার পরিত্র উদ্দেশ্তে কিছু আটঘ টের ব্যবস্থা গুরু
৯১
করেছে মাত্র, এই সময় একটা উটকো। বোঁকাসোক। মন্ত্রী এ-সমস্ত অতি সাধারণ,
বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের মতলব ভাজতে গিয়েছিল, দেশকে টুকরো -ট্ুকরে! করার.
এর চেয়ে বড়ে। চক্রান্ত আর কী হ'তে পারে। আরো দেখুন ন। কেন, আমরা যার!
দেশের দায়িত্বে আছি, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সরকার চালাচ্ছি, আমরা এবং
আমাদের প্রিয়জনের সরকারের কেনা-কাঁটা থেকে, সেই কেনা-কাটা দেশেই
হোক আর বিদেশেই হোক, একট দস্তরি পেয়ে থাকি। এ অতি-অপদার্থ মন্ত্রী
বলছে কিন। এই দস্তরির ব্যাপারও অনুসন্ধান ক'রে দেখতে হবে, তাহ'লে আর অন্ত-
কী বড়ো প্রমাণ চাই যে মহাষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, জাতি বিপন্ন । এই সংকটমুহুর্তে
তক্ষরসাুদস্থ্যবীরসৎঅসৎসরলখলমহাপুরুষলম্পট, ভেদাভেদহীন, প্রতিটি দেশবাসীর
কর্তব্য প্রধানমন্ত্রীর হাত শক্ত করা, এই কর্তব্যে অন্যথা ঘটলে নিরাপদে চৌর্যবৃত্তি
সম্পন্ন কর অসম্ভব হবে, উৎকোচদাতা৷ ও উৎকোচগ্রহীত। উভয়েরই সর্বনাশ ঘটবে,
প্রতারকবুন্দ মাথা উঁচু করে সমাজে ঘুরে বেডাতে অপারগ হবে। সত্যভাষণ-
মিথ্যাচরণের যে-বৈষম্য আন্তে-ধীরে ঘুচিয়ে দেওয়। হচ্ছিল অতীব সু প্রক্রিয়ায়,
সেই বৈষম্যের পুনরুথানের আশঙ্কা দেখা দেবে। তাড়াও, তাড়াও এ কুচুটে
মন্ত্রীকে অচিরে তাড়াও ।
ধারা এখনে! মাঝে-মাঝে মহীত্া গাঞ্ধির নাম ভজন] করেন, “দত্যমেব
জয়তে'-র উপনিষদধোত নিগুঢ দর্শন নিয়ে ধড়াই করেন, এ কোথায় দেশকে টেনে
নামিয়েছেন তাঁরা? দেশ সত্যিই বিপন্ন, এটা নির্ভুল সত্য দেশের অনেক
অনিষ্টকামী আশেপাশে ঘুর-ঘুর করছে । দেশের ভিতরে ও বাইরে, তারা স্থযোগ
খুঁজছে, কী ক'রে ভারতবর্ষকে শতচ্ছিন্ন ক'রে দেওয়া যায়। তাদের সব চেয়ে
বড়ে। সহায় দেশের শাসককুল । এই শাঁসককুল সমস্ত নৈতিক মানদণ্ড বিসর্জন
দিয়েছেন, তারা লোভাতুর-কামাতুর, গোঁটা! দেশের সরল সাধারণ মানুবের
বিশ্বাসের স্থযোগ নিয়ে তাঁর জাতির সম্পদ নিয়ে, জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি
খেলছেন ।
যে ক'রেই হোক, নীত্িহীনতা থেকে আমাদের নীতির বৃত্তে প্রত্যাবর্তন
করতে হবে । দেশকে রক্ষা করতে হ'লে নিঃসন্দেহে এটাই প্রথম-প্রধান কর্তব্য,
পবিভ্রতম কর্তব্য । নীতি বাদ দিয়ে তো৷ জাতি বাঁচতে পাঁরে না ।
১২
কমরেড বাচ্চা! মুন্দীর ভূগোলের বই
'ছোটোখাটো মানুষটি ছিলেন কমরেড মহম্মদ বাচ্চা মুন্সী । ভুগছিলেন অনেক
দিন থেকে, গত মীসে প্রয়াত হয়েছেন ।
কয়েক বছর অগেকার কথা | কমরেড বাচ্চা মুন্সী অস্থস্থ, হাসপাতালে আছেন,
এক বিকেলে দেখা করতে গেছেন কেউ । গিয়ে দেখেন হাঁসপাঁতালের বিছানায় শুয়ে
বই পড়ছেন বাচ্চা মুন্সী | যষ্ঠ শ্রেণীর কিশোর-কিশোরীদের জঙ্য মাধ্যমিক শিক্ষা
পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত ভূগোলের বই, পৃথিবীর নান! দেশের কথা আছে যে-
বইতে, সে-দব দেশের জলবাঁঘুর কথা, নদীশহরবন্দরের কথা, কৃষিকাঁজের কথা,
খনিজশিল্পবাঁণিজ্যের কথা । যিনি দেখা করতে গেছেন, কমরেড বাচ্চা মুন্সী
সাগ্রহে তীকে-ভূগোল বইয়ের পাতা উল্টে দেখাচ্ছেন । গাঁয়ের গরিব ঘরে জন্ম,
ছেলেবেলায় লেখাপড়ার স্থযোগ পাননি, দারিদ্র্যে-কঙ্ছে-সংগ্রামে সারা জীবন
কেটেছে, এখন প্রবীণ বয়সে বইপত্র জোগাড় ক'রে, পার্টর আর আন্দোলনের
কাঁজের ফাঁকে-্ীকে, পড়াশুনে৷ করার চেষ্টা করেন । চেষ্টা করেন প্রতিদিন পৃথিবী
সম্পর্কে নতুন-কিছু জানবার । আমাদের প্রত্যেককে তো নিজেদের আরো
উন্নত করতে হবে, আরো শিক্ষিত) যত বেশি আরো৷ আরো জানতে-বুঝতে
পারবে পৃথিবীতে কোথায় কী আছে, কোথায় কী ঘটছে, তত বেশি নিজেদের
অবস্থান নিয়ে ধ্যানধারণ] আমাদের স্পষ্টতর হবে, তত বেশি আমরা আন্দোলনকে
আরো সুন্দর ক'রে গঠন করতে পারবো, আমাদের সংগঠনের শক্তি তত বেশি
জোরাঁলে। হবে : হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে-থাকা কমরেড বাচ্চা মুন্সীর ভৃগোপ
বইটি নিয়ে আনন্দ তথা গর্ববোধ উপচে পড়ছিল । যিনি দেখতে গিয়েছিলেন
তাকে, তবীরও এক নতুন অভিজ্ঞান হলে। সেই সন্ধ্যাবেলা । কমরেড বাচ্চ মুন্সী
দীর্ঘদিন ধ'রে আন্দোলনের শরিক, তাঁর অঞ্চলে নেতৃপর্যায়ের কমী, সংগ্রামের মধ্য
দিয়ে নিজেকে শিক্ষিত করেছেন, প্রথাগত লেখাপড়ার স্থুযোগ পাবনি, কিন্তু
মানুষের জ্ঞানপিপাসা তো বয়ঃসীমার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখার ব্যাপার নয়,
পৃথিবীতে কোথায় কী ঘটছে তা যে-কোনো বয়সের যে-কোনে। অবস্থার মানুষের
ন্ীনবার অধিকার আছে, সংগ্রামশীল জনসাধারণের আন্দোলনের স্বার্থেই এই
১৩
জ্ঞান-আহরণের প্রয়োজন । চুপচাপ বিনীত-নমর মানুষ ছিলেন কমরেড বাচচা মুন্সী ॥
ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে ভালোবাসতেন, গর্ব-করাঁর বাইরে ছিলেন বরাবর,
অথচ সেই সন্ধ্যাবেল! তাঁর শীর্ণ-অন্থুস্থ মুখে উদ্ভীসিত হয়ে উঠেছিল সরল অহংকারের
হাঁসি, ইশকুলের ছেলেমেয়েদের ভূগোল বই কুড়িয়ে তিনি পৃথিবীর কথা জানছেন।
কমরেড বাচ্চ৷ মুন্সী বৃদ্ধ বয়সে নিজের জন্য স্বযোগ সি ক'রে নিয়েছিলেন,
আমাদের গোটা দেশে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোটি-কোটি মানুষ এই
স্থযোৌগ থেকে বঞ্চিত, স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও বঞ্চিত। ইতিহাস-ভূগোল
প'ড়ে পৃথিবী সম্বন্ধে জ্ঞানার্জনের কথা ছেড়েই দিলাম, শীদীমাট] পাঁটিগণিত, যোগ-
বিয়োগ-গুণ-ভাগ, তা-ও ছেড়ে দিলাম, নিজের ভাষায় সাধারণ অক্ষরজ্ঞান, যাঁকে
আমরা বলি সাক্ষরতা, কষ্টেসৃষ্টে নিজের নাঁমটি সই করবার মতো] বিদ্যা, ত1 থেকে
পর্যন্ত প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ দেশবাঁসী আঁজ পর্যন্ত বঞ্চিত। সরকার ব1 বিরোধী
পক্ষের কোন্ সিদ্ধান্ত বা আঁচাঁর-আচরণ সংবিধানসম্মত অথব1 সংবিধান-পরিপন্থী
ত1 নিয়ে মস্ত তর্ক ছুড়ে দিই প্রায়-ই আমরা । কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তার সম্পর্কে
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোর সংবিধান-বিরোধী আচরণ নিয়ে তেমন-কোনে। প্রতিবাদ
অথব] ধিক্কারের ঝড় উঠতে দেখা যায় না । অথচ সংবিধানের ৪৫ সংখ্যক ধার।
পড়ুন : সংবিধান প্রবতিত হবার দশ বছরের মধ্যে ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি শিশুকে
তার চতুর্দশ বছর অতিক্রম করা না-পর্যন্ত বিন! ধেতনে প্রাথমিক শিক্ষাদানের দায়িত
রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করতে হবে । ১৯৫০ সালে সংবিধান চালু হয়েছে, অতএব ১৯৬০
সালের মধ্যে দেশের প্রত্যেকটি শিশুর জন্য লেখাপড়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করার দায়িত্
ছিল সরকারের । সেই দায়িত্ব পালনের দিকে ফিরেও তাঁকানে? হয়নি, সংবিধানের
ধার। সংবিধানের পাঁতাতেই আবদ্ধ থেকেছে । গরিধ ঘরের ছেলেমেয়েরা লেখা-
পড়ার সুযোগ পায়নি স্বাধীনতার পর চল্লিশ বছর ধ'রে স্বাধীন ভারতবর্ষে, কারণ
সরকার কর্তৃক সেই স্থযোগ সৃষ্টি ক'রে দেওয়ার জহ্য আঁদো নিষ্ঠীবান কোনো ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হয়নি । ধনী-উচ্চবিত্ব-মধ্যবিত্ত পরিবারভুক্তর1 শিক্ষার সুযোগ পেয়ে
এসেছে, সামধ্য তাঁদের ক্ষেত্রে বাঁধ! হয়ে ঈাড়ায়নি, ধরাড়াবেও না। কিন্তু সরকারি
ব্যবস্থা ছাঁড়। গ্রামের-শহরের গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া] অপস্ভব |
সংবিধানের নির্দেশ আছে. রাষ্ট্রকর্তৃক সেই ব্যবস্থার বন্দোবস্ত ক'রে দেওয়ার | সেই
নির্দেশ উপেক্ষা করা হয়েছে । যদিও বা একটি-ছু”টি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে
প্রাথমিক শিক্ষা প্রসারের জন্ত বিশেষ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কোমর
বেঁধে সে-সব রাজ্যের নিন্দায় নেমেছেন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ । প্রাথমিক বিদ্যালয়ে,
১৪
একটু জলপানের ব্যবস্থা অথব1 এক বেলা আহারের ব্যবস্থা করতে পারলে দরিদ্র-
পরিবারভুক্ত ছেলেমেয়েদের আগলে রাখার একটু স্থবিধা হয়, তেমনি স্থবিধা হয়
যদি বছরে একবার অন্তত তাঁদের একটা ক'রে জাম! বা শাড়ি ধ'রে দেওয়া যায়,
যদি বিনাযূল্যে তাদের মধ্যে বই-শ্লেট-খাতা বিতরণ করা খায়। কিন্ত যখনই
কোনে। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এ-ধরনের অতি-সাধারণ, অতি-স্বাভাবিক,
অতি-প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কর] হয়েছে, দিল্লির সরকার সব গেল-সব গেল ব'লে
চিৎকার-চেচামেচি শুরু করেছেন : অপব্যয়, অপব্যয়, রাজ্য সরকারগুলি নাকি
গরিব দেশের গরিব মানুষজনের কষ্টাজিত টাকা, যা] সরকারকে ট্যান্সো হিশেবে
দেওয়া? হয়েছে, লেখাপড়া শেখানোর অঙ্গুহাতে অপচয় করছেন। বিদেশী
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন শলাঁপরামর্শ ক'রে তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার নাঙে
হাঁজার-হাজার কোঁটি টাকা সরকারি খাতে খরচ করা অপব্যয় নয়, কিন্তু গরিব
ঘরের ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভি হবার আগ্রহ বাড়ানোর উদ্দেশে
যদ্দি দু'দশ কোটি টাঁক। খরচ করা হয়, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় ত1 হ'লে, নিন্দা
করার ভাঁষ। পর্যন্ত খুঁজে পান না নতুন দিল্লির মহামান্য কেন্দ্রীয় সরকার |
স্কুলে ভুল নেই, কমরেড বাচ্চা মুন্সী যে-কারণে মস্ত উৎসাহ নিয়ে পরিণত বয়সে
নিজের জ্তানের পরিধি বৃদ্ধি করতে আগ্রহবাঁন ছিলেন, এ একই কারণে দিল্লির
শ্রেণীস্বার্থান্ধ সরকার গরিবদের লেখাপড়1 শেখানে1 ঘোর অপছন্দ করেন । অক্ষর-
পরিচয় হ'লে, একটু-আধটু পাঁটিগশিত শিখলে, পৃথিবীর ইতিহাস-ভূগোল নিয়ে
সামান্য নাঁড়াচাঁড়া করলে, শহরের-গ্রামের বিস্তহীন ঘরের ছেলেমেয়েদের আস্তে
আস্তে বোধোঁদয় ঘটবে, কী সামাজিক-আথিক সংস্থানের মধ্যে তারা আছে সে-
বিষয়ে তাঁদের চেতন1 জাগতে শুরু করবে, যে-কুসংস্কারভয়ভীতিভ্রান্তির গহ্বরে
তার৷ মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, ত৷ পেরিয়ে যে চ'লে আসা সম্ভব, সে-সম্পর্কে,
আপাতত অর্ধস্ফুট হ'লেও, কিছু-কিছু ধ্যানধারণা তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করবে ।
বিহার, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যে কোটি-কোটি গরিব
মানুষ এখনে! প্রস্তর বা লৌহযুগে বিরাজ করছে, শাঁসকশ্রেণীর মস্ত স্থবিধা এই
অবস্থায়, লক্ষ-কোটি এই গরিব মানুষগুলিকে নিষ্পেষণ ক'রে বছরের-পর-বছব্ন
ধ'রে নিজেদের আখের গুছিয়ে যাওয়া যাচ্ছে, যাদের শোষখ করা হচ্ছে তাদের
প্রতিবাদের ভাষা নেই, এমনকি তাঁরা যে শোঁষিত-বঞ্চিত সেই অনুভূতির বোধ
পর্যন্ত হয়তো! নেই, এমনি করেই যায় যদি দিন যাঁক না। শিক্ষার স্থযোগহীন
এই হতভাগ্য দরিদ্রকূলকে ভয়ের মধ্যে রাখ! যাচ্ছে সব সময়. সংবিধান বলে ধনী-
দরিদ্র নিবিশেষে প্রতোকের একটি ক'রে ভোট, প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তাই এই
ভয়গ্রন্ত মান্যগুলিকে ভেড়ার পালের মতে। ভোটের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়৷ যাঁয়,
তাদের নির্দেশ দেওয়। হয় কোন্ চিহ্কের উপর সীলমোহর মারতে হবে, গৃহপালিত
পশুর মতো! নিঃশব্দ আন্গত্যে গরিব মান্ষগুলি নির্দেশ পালন করে, শাসকদলের
মৌরসি পাঁট্। আরে পাঁচ বছরের জন্য কায়েম হয় |
“লিখিবে-পড়িবে-মরিবে দুখে মংশ্য ধরিবে খাইবে সুখে", এই ব্যঙ্গীস্ব
প্রবচনের একটি নতুন ব্যাখ্যায় অতএব পৌছুনো গেছে স্বাধীন ভারতবর্ষে : গরিব-
গুরবোদের লেখাপড়া শিখিয়েছো তে। মারা পড়বে, নিঝ্ধাট ভালে খাওয়া-
দাঁওয়। যদি চালিয়ে যেতে চাঁও, গরিবদের নিরক্ষর ক'রে রেখে দাও, শাঁসককুলের
কোনো ঝামেল। থাকবে না তা হ'লে । সংবিধানে গরিবদেরও প্রত্যেককে একটা
ক'রে ভোটের অধিকার দেওয়। হয়েছে; সংবিধানের সেই ধারাটি মান] হচ্ছে,
কারণ আর্ধাবর্তের একটি বড়ে৷ অঞ্চল জুড়ে গরিবদের ভোটগুলি কোন্ বাক্সে
পড়বে সেটা বড়োলোকেরাই নির্ধারণ ক'রে দিতে পারছেন। কিন্তু সংবিধানের
এঁ অন্য ধারাটি মান্ত ক'রে যদি সকলের জন্ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হতো, এমনকি
হতচ্ছাড়া গরিবদের জন্যও, তা হ'লে হয়তো পাখা গজাতে তাদের, তাঁদের চোখ-
কান খুলতো, বড়োলোকদের নির্দেশ মেনে ভোটের বাক্সে ছাপ মারতে আর
হয়তে। তারা রাজি হতো না। সেই সর্বনাশের আশঙ্কা চিন্তা করেই কেন্দ্রীয়
কতৃপক্ষ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের ব্যাপারে বাঁধা দিয়ে এসেছেন ।
শীসকশ্রেণীর পক্ষে সত্যিই বীচা-মরাঁর লড়াই এট! ; যদি শিক্ষা বিস্তারের স্বত্রে
গগিবদের সাহস বাঁড়ে, প্রতিবাদের ভাষা শেখে তারা, সংঘবদ্ধ হ'তে শেখে তারা,
তা হ'লে, কে জানে, বিহাঁরের গ্রামে এখন থেকে আর খেতমন্জুরদের পুড়িয়ে মারা
সম্ভব হবে না, উত্তর প্রদেশে রামজন্মসভূমিউদ্ধারের অন্ধ উন্মাদনায় সরল-নিরেট
দেহাতী লৌকজনগুলিকে সী্প্রদায়িকতাবোধে উুদ্ধ করা যাবে না, রাঁজস্থানে
সতীদাহরূপ বালিকাঁবধূ হত্যা অব্যাহত রাঁখ। মুশকিল হবে, একটি বিশেষ দল ব
বিশেষ পরিবারের বিহনে ভারতবর্ষ চোঁখে অন্ধকার দেখবে সেই ধর্মবিশ্বীসেও হয়তো
ঘুণ ধরতে শুরু করবে । এত বড়ো-বড়ো বিপদের আশঙ্কা! নিহিত সংবিধানের
এঁ ৪৫ সংখ্যক ধার! প্রয়োগের সম্ভাব্য পরিণামের মধ্যে, ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে
না। সংবিধান প্রবর্তনের পর প্রায় আটতিরিশ বছর অতিক্রান্ত, শাসকশ্রেনী
কোনে? ঝুকি নেননি । ১৯৪৭ সালে, স্বাধীনতার বছরে, ভারতবর্ষে সাক্ষরতার
অনুপাত ছিল শতকর। ২৭ ভাগ, ১৯৮৭ সালে তা মেরে-কেটে শতকরা ৩৪ ভাগ।
১৬
তবে যেহেতু আমরা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জে সমস্ত নিরপেক্ষ দেশগুলির নায়কত্ব
'দিয়ে থাকি, সর্ব খতুতে অন্যদের উপদেশের উপহীরমা'ল! বিলোই, কিছু ঠমক বজায়
রাখতে হয় আমাদের, কিছু ভড়ং না ক'রে উপায় নেই। মাঝে-মাঝে তাই
প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার-প্রপঙ্গে তদগত বক্তৃতাদি দেওয়! হয় নতুন দিল্লিতে, গত
সপ্তাহে যেমন কেন্দ্রের মানবসম্পদ মন্ত্রী ঘোষণ1 ক'রে বসলেন আগামী কয়েক বছরে
শাঁকি তাঁরা সব-মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ শো কোটি টাকা ব্যয় করবেন প্রথা-বহিভূত
পদ্ধতিতে দেশের প্রাপ্তবয়স্ক এখনেণ-নিরক্ষর ব্যাক্তদের প্রাথমিক শিক্ষার আলোয়
উদ্ভাসিত করার মহান্ উদ্দেশ্ট নিয়ে । আধ মণ তেল পুড়বে ঠিকই, সাঁড়ে পাঁচশো
কোঁটি টাকা এই অছিলায় খরচ হবে ঠিকই, কিন্তু শহর-গ্রাঁমের গরিব মানুষদের
তাঁতে শিক্ষার কোনে! সুরাহা হবে ব'লে মনে হয় ন!, এই টাকার বড়ো অংশ
হয়তো ব্যয় হবে রঙিন টেলিভিশন কিনতে, অথব1 বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পিছনে,
অথকা প্রঞ্চ বয়ক্দের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্তসাধনার্থ শহরে-শহরে যে নতুন-নতুন
সরকারি দপ্তর খোলার দরকার দেখ দেবে, সে-সব দপ্তরের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি
করতে, তারপর পেঁই ঘরবাড়ি বাঁতান্ুকূল করতে । রবীন্দ্রনাথের “তোতাঁকাহিনী'তে
যা-যা বণিত আছে, ঠিক সে-রকমই ঘটবে ; অক্ষরপরিচয়হীন দরিদ্র সম্প্রদায় যে-
তিমিরে, সেই তিমিরেই থেকে যাবেন ।
কমরেড বাচ্চা মুন্দী প্রয়াত হয়েছেন, ইতিহাসের সার কথ] বুঝে নিয়েছিলেন
তিনি। পৃথিবীটাকে বদলাতে হলে পৃথিবীর ভূগেল-ইতিহাস জান। দরকার, তা
জানতে হবে আমাদের নিজেদের চেষ্টায়, যখন-যে-অবস্থায় থাকি ন। কেন আমর]।
কমরেড বাচ্চ। মুন্সী তাঁর সেই ভূগোলের বইটি ভারি ভালোবাসতেন, মানুষকে
ভালোবাপাঁর সমার্থক ছিল তাঁর সেই ভালোবাস] |
১৭
দেশপ্রেমের ইতিকথা
হয়তো কোনে। বিদেশী গল্পের আভাস ছিল, তা হ'লেও আমর অনেকেই শিবরাম
চক্রবত্তণ মশাইর একটি গল্প থেকে ছেলেবেলায় প্রচুর আমোদ পেতাম । গল্পটি
বাজার করার হাজার ঠ্যালা" । বাচ্চা ছেলে জিনিশ কিনতে বাজারে এসেছে,
বাড়ি থেকে তাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে দেওয়। হয়েছে দৌঁকানি য] দাঁম চাইবে, ঠিক
তার অর্ধেকের বেশি দিতে কিছুতেই রাজি ন] হ'তে । বাঁড়ির নির্দেশ, বাচ্চা
ছেলে সেই নির্দেশ থেকে এক চুলও স'রে আসবে না । জিনিশের দাম, দোকানি
বললো, দশ টাকা, ছেলেটি সঙ্গে-সঙ্গে জানালো, উচু, পাঁচ টাকার বেশি একটি
পয়সাও সে দিতে রাঁজি নয় | দৌকাঁনি রফা করতে চাইলো : আচ্ছা, সাড়ে সাত
টাঁকা। ছেলেটির সঙ্গে-সঙ্গে জবাঁব : আজ্তে না, পৌনে চার টাকা । দোকানি
ভড়কে গিয়ে এবার বললো। : ছ'টাঁকা । বাচ্চ৷ ছেলের প্রতুৎপন্তরমতির অভাব নেই,
সোজা অঙ্কের হিশেব তার, মা ব'লে দিয়েছেন দোৌকাঁনি যা! চাইবে বলতে হবে
তাঁর অর্ধেক, সুতরাং এবার তার জবাঁব : তিন টাকা । দোকানি অত:পর চার
টাকায় নামলো, ছেলেটি অতএব দু'টাকায়। এমনি ক'রে দরাঁদরির জের
চলতে-চলতে যখন দাম দোঁকানির হাঁকে চার পয়সায় গিয়ে ঠেকেছে, এবং ছেলেটি
ছু'পয়সার বেশি কিছুতেই দেবে না, উদ্ভ্রান্ত দোকানি হঠাৎ “দুতোর” ব'লে
বিনামূল্যে জিনিশটি বাচ্চা ছেলের হাতে তুলে দিয়ে দোকানের ঝাঁপি তুলে
পলায়ণপর হলো ।
রূপকথার গল্প, রূপক গল্প ৷ পণড়ে মগ! পাওয়] যাঁয়। কিন্তু আমরা জানি
এ-ধরনের ঘটন। পৃথিবীতে ঘটবার নয় । আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কোনে
বাচ্চা ছেলেরই দরাদরির এমন জাদ্ুকৌশল জান। নেই যা প্রয়োগ ক'রে বাজারে
সমস্ত জিনিশপত্রের দাঁম শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনা সম্ভব হয়, সংসারনির্বাহের
খরচও কমতে-কমতে শেষ পর্যন্ত প্রায় নামমাত্র হয়ে যায় | দীম ব1 খরচ ক্রমশ ক'মে
আসার কাহিনী তাই রূপকথা, খরচ বল্গাহীন বেড়ে যাঁওয়ণর কাহিনী অথচ কিন্ত
নয়। ধরুন দু'টি পাশাপাশি রাষ্ট্র, অতি দরিদ্র, বনু শতাব্দী ধ'রে তারা বিদেশী
সামাজ্যবাদীদের দ্বারা শৌষিত হয়েছে, কয়েক বছর হলে। তারা স্বাধীনতা পেয়েছে,
১৮
কিন্তু হতদরিদ্র, দেশের বেশির ভাগ মানুষ ছু'বেলা ক্ষুপ্রিবৃত্তি করতে পাঁরে না, কমি
অনুন্নত, সেচের প্রসার ঘটেনি, কিছু-কিছু ক্ষুদ্র-তথা-কুটিরশিল্পের বাইরে শিল্লোম্নয়ন
হয়নি, সড়কঘাট-যাঁনবাঁহন মধ্য যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় । বিদ্যুতের উৎপাদন
অতি সীমিত, দেশের বেশির ভাগ মানুষ নিরক্ষর । এখন উভয় দেশেই বৈদেশিক
শৃঙ্খলমুক্ত, রাষ্্নীয়কর] ছুই রা্ট্রেই জনসাধারণের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ যে দ্রুত
আথিক উন্নয়ন যেহেতু একমাত্র জাতীয় লক্ষ্য, জাতির সমস্ত সামর্থ্য জড়ো ক'রে শিল্প-
বি্যুৎ-যোগাযোগব্যবস্থা-শিল্প-সেচ ইত্যাদির বিকাশ ক্ষিপ্রতম করার দিকে দৃষ্টি
দিতে হবে । “ক দেশে আর খ' দেশ, পাশাপাশি রাষ্ট্র, কাছাকাছি সমস্যা,
দারিদ্র্য দূরীকরণের সমস্যা । এমন সময় 'ক' দেশের রাষ্ট্রনীয়কের কাঁনে কেউ
পরামর্শ দিলেন, দেশ বধাঁচলে তবে তো৷ দেশের আর্থিক উন্নতি, “খ' রাষ্ট্রের মতলব
ভালে! নয়, এ রাষ্ট্র বিদেশ থেকে পাঁচশো কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র আমদানি করেছে,
আমাদের সুতরাং অন্তত এক হাঁজার কোটি টাঁকা প্রতিরক্ষার খাতে সরিয়ে
রাখতে হবে, দেশ টি'কলে তে? তবে দেশের আথিক বিকাশ । “ক' রাষ্ট্র প্রতি-
রক্ষাথাতে এক হাজার কোটি টাক] খরচ করেছে : সেই খবর অচিরে “খ' রাষ্ট্রে
জানাজানি হয়ে গেল, ওখানেও মন্ত্রণীদাতাদের অভাব নেই, তদের প্রভাবেরও
খামতি নেই, দ্রুত সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো, কুছ পরোয়া! নেই, 'ক' রাজ্য যদি প্রতি-
রক্ষার নামে এক হাঁজীর কোটি টাঁক। খরচ ক'রে থাকে, আমরা তবে খরচ করবো
দু'হাজার কোটি টাকা । খ' রাষ্ট্র ছ'হাজার কোটি টাঁক৷ অস্ত্রশস্ত্র কিনতে ব্যয়
করেছে জেনে “ক' রাষ্ট্র এবার সিদ্ধান্তে পৌছুলে৷ নিতান্ত চার হাজার কোটি টাকা
প্রতিরক্ষার জন্য ব্যয় ন! করলেই নয় | “ক'-র চার হাজার কোটি টাক খরচের
জবাবে “খ রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যয় অত:পর আট হাজার কোটি টাকায় পৌছুলো।
কিন্তু এখন তে] পরিস্থিতি সেই “তোমার হাঁসি হইছে বীক1 আমার হাঁসি সন্দমাথা'
স্তরে উত্তীর্ণ, যেহেতু “ক' রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাবরাদ্দ ষোঁলে1 হাজার কোটি টাকা
নিদিষ্ট হলো, অতএব পরের বছর “থ'-র প্রতিরক্ষা ব্যয় বত্রিশ হাজার, স্ৃতরণং
“ক'-র চৌষটি হাজার, তাই "খ-র এক লক্ষ বত্রিশ হাজার, কিন্তু এই প্রতিযোগিতার
তো শেষ নেই, অন্তহীন এই ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের পাটিগণিত । দ্রুত আথিক উন্নয়নের
লক্ষ্য এই অবস্থায় এক পাঁশে মুখ থুবড়ে প'ড়ে থাকবে । রাষ্ট্রকে চক্রাত্তকারী
বহিঃশত্রর শ্যেনদৃষ্টি থেকে রক্ষা! করতে পারলেই আথিক বিকাশের প্রশ্ন, আপাতত
অন্ত-সমস্ত প্রসঙ্গ অবান্তর, একমাত্র প্রতিরক্ষা! সত্য, প্রতিরক্ষাব্যয় কমানোর কথা
যে বলবে, অথব! প্রতিরক্ষার নামে যা খরচপাতি হচ্ছে তা ভালে! ক'রে পরীক্ষা
৯৯
ক'রে দেখতে যে বলবে, তার স্বদেশপ্রেম নেই । সে হয়তো এমনকি বৈদেশিক
চর। সে ক' রাষ্ট্রের নাগরিক হ'লে নিশ্চয়ই “খ'-র টাকা খেয়েছে, “খ' রাষ্ট্রের
অধিবাসী হ'লে, “ক'-র টাকা, শুলে চড়াও তাকে ।
'বাজার করার হাজার ঠ্যাঁল1” গল্পের বাচ্চা ছেলে ও দোকানি দাম-কমানোর
অন্তহীন প্রতিযোগিতাঁয় নেমেছিল, আমাদের বাস্তব রূঢ় পৃথিবীতে প্রতিবেশী ছুই
রাষ্ট্রও অন্তহীন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ, তবে ত1 কী ক'রে প্রতিরক্ষার নামে খরচ
বছরের পর বছর অবিশ্রান্ত বাঁড়ানে। যায় । অন্তহীন প্রতিযোগিতা, অর্থহীন প্রতি-
(যোগিতা । কারণ শেষ পর্যন্ত সত্যিসত্যিই “ক' কিংবা “খ" কেউ-ই কিন্তু অপর
রাষ্ট্রের তুলনায় নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব পাঁকাপাঁকিভাবে প্রতিষ্ঠ।
করতে পারবে না । কখনো “ক' এগিয়ে থাকবে, কিন্তু পর মৃহূর্তে “থ' ধ'রে ফেলবে
তাঁকে, 'খ” কখনে! এগিয়ে যাঁবে, কিন্তু অচিরে “ক' ধ'রে ফেলবে তাকে, শিকেয়
তোল থাকবে শিক্ষাকর্মসূচী, শিল্পবিদ্যুৎকর্মম্চী, কষিসেচকর্মস্থচী । প্রতিরক্ষা-
ব্যয় ও দেশপ্রেম সমার্থক হয়ে যাঁবে, দেশপ্রেমের দুর্দম অন্ধ বন্যায় গোট!| জাতির
যুক্তি-বুদ্ধি কুটোর মতো ভেসে যাঁবে ।
যাচ্ছেও। এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকা থেকে তুরি-ভুরি উদাহরণ
দেওয়া যেতে পারে, দেশে ছুভিক্ষ, নিরক্ষরতা, শিল্পোগ্যোগের অভাব, সর্বব্যাপী
কর্মসংস্থানহীনতা, কিন্ত দেশনীয়কর] এ-সমন্ত ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র সমস্য] নিয়ে মাথা ঘামাতে
রাজি নন, দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে, দেশের সৈম্ভবাহিনীকে আধুনিক থেকে
আধুনিকতর করার দিকেই তাঁর! প্রাণমন ঢেলে দিয়েছেন । বনু ক্ষেত্রেই দেখা
যাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় বাজেটের অর্ধেক কি তারও বেশি প্রতিরক্ষার জন্য বরাদাকৃত। এই
অনুপাত বাঁড়ছে বই কমছে না, প্রতিযোগিতার পাঁটিগণিত অমোঘ নিয়মে নিজের
কাজ ক'রে যাচ্ছে । দেশের মানুষগুলি অভুক্ত, শিক্ষাহীনতাঁর অন্ধকারে নিমজ্জিত,
সাবিক আথিক সংকটে দেশ হীঁসঞ্ফীস করছে, কিন্ত কেউ নলতে পারবে ন' প্রতিরক্ষা-
ব্যবস্থায় কোনো ত্রটি আছে । দেশের মানুষগুলি না খেয়ে মারা যাবে হয়তো,
কিন্তু আচমকা বিদেশী শক্র এসে তাদের স্বাধীনত। হরণ করতে আদৌ সফল হবে
'না, এটুকু তৃপ্তি নিয়ে তার। অন্তত মরতে পারবে |
তবে বাস্তব পৃথিবীর কাহিনী আমাদের বাচ্চাছেলে-দৌকানদীরের পারস্পরিক
প্রতিযোগিতায় দাম-কমানোর রূপকথার মতো অত সরল নয়। এই বাস্তব
কাহিনীতে তৃতীয় পুরুষের ছায়। পড়ে, কখনো তা৷ নেপথ্য ছায়া, কখনে। ত৷ প্রকাস্ত।
“ক? এবং “খ' উভয় রা্টকে প্রতিরক্ষাখাতে ব্যয় সম্প্রসারণ করতে, এবং সেই সঙ্গে
০
বিদেশ থেকে অঢেল অস্ত্র আমদানি করতে, পাঁশ থেকে অহরহ উৎসাহ দান করেন এই
তৃতীয় পুরুষ। ইনি বিদেশী অন্ত্রসদাঁগর ৷ পশ্চিমের ধনতান্ত্রিক দেশগুলি কাঠামোগত
ংকটে দীর্”, আথিক বিকাশ তাদের ক্ঈথগতি, লক্ষ-লক্ষ বেকার, কিন্তু কাঠামোর
পরিবর্তন ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কর৷ ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্ভব নয়, কাঠামো
পাল্ট1নে! মানে তো ধনতন্ত্রকেই বর্জন, তা কী ক'রে হয়। অর্থব্যবস্থাকে টিকিয়ে
রাখার জন্য পশ্চিমের এ-সমন্ত অতি সথসভ্য দেশে তাই অস্ত্রোৎপাদনশিল্পের উপর
বাড়তি জোর দেওয়। হয়েছে । দেশে বেকার থাকুক না৷ ক্ষতি নেই, ওদের জন্য
কাজের সংস্থান না ক'রেও পুঁজিপতিনা নিজেদের মুণাফা ধাঁড়িয়ে যেতে পারবেন,
তারা নান। ধরনের বনুবৈচিত্র্যমপ্ডিত অস্ত্র উৎপাদন করবেন, তারপর সেই অস্ত্র অনুষ্নত
দেশগুলিতে রপ্তানি করবেন, প্রচুর অর্থোদগম ঘটবে, লাভের পরিমাপ বাড়বে।
পশ্চিমের দেশগুপির পুঁজিপতিসম্প্রদীয় আটথাট বেঁধে ব্যবসায় এগোন, তার!
'ক' রাষ্ট্রে অহ্চর পাঠান, সেই সঙ্গে খ' রাষ্ট্রেও, ক'কে বোঝান “থ' রাই অন্্রশত্ত-
সম্ভারে অনেক এগিয়ে গেছে, আপনারা যদি এবার পর্যাপ্ত কেনাকাঁট। না করেন,
যুদ্ধ বাধলে কচু-কাটর। হয়ে যাঁবেন। ত্রস্ত হয়ে 'ক' রাষ্ট্রের দেশনায়কর। এই বিদেশী
অনুচরকে পুষ্পার্ঘ্যসহ বরণ করেন, তাঁর পরামর্শ-অহুযায়ী বিদেশ থেকে অঢেল
অন্ত্র কেণবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । তড়িঘড়ি তখন বিদেশী অনুচর গিয়ে উপস্থিত
হন “খ' রাষ্ট্রের শাসককুলের সমীপে : গেল, গেল, সর্বনাশ হলো।, “ক' এই-এই অন্ত্
কিলেছে বিদেশ থেকে, এখন দেশকে যদি বীচাতে হয়, তা হ'লে আপনাদেরও
এবার আরো অস্ত্র কিনতে হবে, মহার্থতর অস্ত্র, উৎকৃষ্টতর অস্ত্র । প্রতিরক্ষাথাতে
অতএব খরচ বাড়বে, উন্নয়নের টাকায় কম পড়বে, দেশের আথিক উন্নতি আপা তত
ব্যাহত হবে, কিন্তু দেশকে বীচাতে হ'লে অন্ত বিকল্প তো নেই। দুই রাষ্ট্রই অতএব
এখন থেকে ব্যয়ের পাটিগণিতের অন্তহীন কুস্তিপাকে জড়াঁবে । বড়োলোক দেশ-
গুলিতে পরিণামে অস্ত্রশিল্প ফুলে-ফেঁপে উঠবে, পুঁজিপতিদের, সদীগরদের মুনাফার
পাহাড় আরো উঁচু হবে, গরিব দেশগুলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার ঠেলায়
মার! পড়বে | কিন্ত উপায় কী, বহিঃশক্রর আক্রমণের বিপদ থেকে দেশকে স্থরক্ষিত
করাই রাইঈনায়কদের প্রধান ও সর্বপ্রথম কর্তব্য |
কখনো-কখনে। একজন-ছু'জন অবোধ রাষ্ট্রনায়ক থাকেন, তারা চট করে
বুঝতে চান ন1 বা বুঝতে পারেন না এত ড"ই-ডণাই অস্ত্র বিদেশ থেকে অহরহ
কেনবার এমন কী যৌক্তিকতা ব৷ সার্থকতা আছে। কাঠখড় পোড়াতে হয় তাই,
সোজা আঙুলে যে-ঘি না ওঠে তার ভস্য বাঁকা আঙুলের ব্যবস্থা করতে হয় ।
২১
“বিদেশী অন্ত্রপ্রস্ততকাঁরকদের নিজস্ব-একান্ত প্রতিনিধি যদি কাঁজ হাসিল করতে না
পারেন, দালাল লাগাতে হয় তখন | দাঁলালর৷ গিয়ে রাষ্নায়কদের বোঝান,
মন্ত্রীদের বোঝান, সেনাপতিদের বোঝান, দিনের-পর-দিন ধ'রে বোঝান বিদেশ
থেকে মহার্থ থেকে মহার্ধতর অস্ত্রশস্ত্র বিনা জিজ্ঞজাসায় কেনার চেয়ে মহত্তর দেশপ্রেম
কিছু নেই । অচিরে মন্ত্রীরা-সেনপতিরা-রাষ্নায়করা বোঝেন, দালাল মহোদয়
কৃত-কৃতার্থ বোধ করেন, বিদেশী অস্ত্রোৎপাদকরা তার কাজের মহিমার স্বীকৃতি-
স্বরূপ তাঁর জন্য মোট। অঙ্কের পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করেন । এহ পারিশ্রমিকের
বিভিন্ন নাম দেওয়! হয়ে থাকে, কখনো বল! হয় কমিশন, কখনো দস্তরি, কখনে!
প্রতি-উপহার, কখনে1 অন্য-কিছু । নামে কী এসে থায়, শেকৃসপীয়র সেই কবে
লিখে গেছেন, গোঁলাঁপকে যে-নামেই ডাকো, সে সমান সথরভিমগ্ডিত থাকবে |
তবে মাঝে-মধ্যে মুশকিল দেখা দেয়, রাষইনায়ক-মন্ত্রীসেনাপতি-অমাত্যবর্গ অস্ত্র-
প্রতিযোগিতার অমোঘ পাটিগণিতের উপযোগিত। বুঝেও বুঝতে চান না, না-
বোঝার ভাঁণ করেন। ত৷ ছাঁড়। বিদেশী পুঁজিপতিদের মধ্যেও এক ধরনের রেষারেষি
শুরু হয়, “অ' ধনতান্ত্রিক দেশের অক্ত্রোৎপাদকের সঙ্গে 'উ' ধনতান্ত্রিক দেশের
অস্ত্রোৎপাদকের লাঠালাঠি বেধে যায় 'ক'-'খ' রাষ্ট্রে । তুমি নয়, আমি অস্ত্র বেচবো,
' তুমি অন্াত্র দেখো : এবংবিধ কলহবিবাঁদে আবহাওয়া আরক্ত হয়ে ওঠে । এই
অবস্থায় প্রতিনিধি-কিংবা-দালালশ্রেণীর লোকদের দিয়ে আর উদ্দেশ্ত সিদ্ধ হয় না,
কমিশন-দস্তরিতেও কুলোয় না, অন্য প্রকরণের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রতি বছর,
“দরকার থাকুক না-থাঁকুক, অজশ্ন অন্তর যাতে কেন। হয়, এবং সে-সমস্ত অস্ত্র যাতে 'অ'
"দেশের অমুক উৎপাঁদকের কাছ থেকেই কেনা হয়, '” দেশের কিংবা “ও দেশের
কারো কাছ থেকে নয়, তাঁর জন্য শেষ পর্যন্ত তাই উৎকোচ প্রদান করতে হয়, অর্থাৎ
কিন] ঘুষ দিতে হয়! ধারা অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করেন, তাঁর] দেন, “ক' অথব1 “থ,
রাষ্ট্রের নায়ক-মন্ত্রী-সেনপতি অমাত্যকুল গ্রহণ করেন। উৎকেচের টাকা রাষ্ইনায়ক-
মন্ত্রী-সেনাপতি-অমাত্য এদের মধ্যে কে কতটা পেলেন, কিংব1 সবাই পেলেন
' কিনা, কে কী অনুপাতে পেলেন, বিদেশী মুদ্রায় কতট। পেলেন দেশী মুদ্রায় কত,
সেই বিদেশী মুদ্রা স্থইৎজারল্যাণ্ডে না হঙকডে না বাহামার কোন্ ব্যাঙ্কের গোপন
খাতায় জমা পড়েছে, এ-সব বড়ে। জটিল প্রশ্ব। কে জানে, আমাদের মতো
সাধারণ মানুষের হয়তো এ-সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়ার অধিকারই নেই।
কে জীনে, এ-সব প্রশ্ন করা মানেই দেশদ্রোহিতা
আমাদের তো। দেশপ্রেমিক হ'তে হবে ।
২২
আমরা তো! তিমিরবিনাশী হ'তে চাই
টালমাটাল অবস্থ৷ দেশে | টাঁলমাটাঁল অবস্থা শাসকদলে, গোটা দেশ তার ভুক্ত-
(ভোগী। খরার আগুনে উত্তর ভারত জলছে, উড়িস্যায়-রীজস্থানে-মহারাষ্ট্রে গ্রীমের
গরিব মানুষ অনাহারে ধুকছে, কোটি-কোটি টন খাছশস্য সরকারি গুদামে মজুত,
কিন্ত সামান্য কিছু চাল-গম গুদাম থেকে বের ক'রে খরা পীড়িত মানুষদের মধ্যে
বিতরণ করার কথ! ভাববার মতে। সময় দিল্লির দয়ালু সরকারের নেই। জিনিশপত্রের
দাম লাফিয়ে-লাফিয়ে প্রতি সপ্তাহে বাঁড়ছে, সাধারণ মাহুষের কী সর্বনাশ হচ্ছে তা
নিয়ে চিন্তা করার মতো অবসর বা মাঁনসিকত। বর্তমান অবস্থায় সরকারি ব্যক্তিদের
কোথায়, রাজ্যে-রাঁজ্যে এ-বছর বৃষ্টির পরিমাণ এখন পর্যন্ত অত্যন্ত কম, ফলে ফসল
ভীষণরকম মার খাওয়ার আশঙ্কা, দেশের উপস্থিত এটাই চরম সমশ্যা। বলে বিবেচন।
হওয়া উচিত, কিন্তু এ-সব নিয়ে মাথা ঘামাবে কে, সর্বশক্তির আকর কেন্দ্রীয় সরকার
ও শীসকদল খাঁবি খাচ্ছে, কেমন ক'রে কোঁনেক্রমে টি'কে থাকবে তা নিয়েই সমস্ত
সামর্থ্য আপাতত নিয়োগ করতে হচ্ছে, দেশ মরলো। কি বাঁচলে। কিছু যায় আসে
না, দেশের মানুষ অভুক্ত রইলো! কি এক সুঠো ছু-মুঠে৷ খেতে পেল তাতেও কিছু যায়
আসে না । দেশ, দেশের মানুষ, তারা তো দলের চেয়ে, নেতার চেয়ে বড়ে। নয়।
নেতা সর্বস্ব দল, নেতা বাঁচলেই নাকি দল বাঁচবে, নেতার শুভাশুভই নাকি দেশের
শ্ুভাশুভ, নেতাকে সিংহাসনচ্যুত করার যে-কোনে। উদ্যোগ নাকি দেশকে খণ্ডিত-
বিখপ্ডিত করার ষড়যন্ত্রের পূর্বপ্রস্তুতি । একনায়কত্বই নাকি গণতন্ত্র, একনায়কত্বই
নাকি সমীজতন্ত্র, জাতীয় সংহতিরও তাঁই নাঁকি সমার্থক |
মীসের-পর-মাস ধ'রে যেই নেতা, যেই নেতার সরকার, দেশের আথিক স্বার্থ
পশ্চিমের ধনতান্ত্রিক দেশগুলির কাছে বিকিয়ে দিচ্ছেন, বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক
অর্থভাগ্ডারের কথায় উঠছেন-বসছেন, দেশের কৌটি-কোটি শ্রমজীবী মানুষের বর্তমান-
ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিতে ধার হাত পামান্ত একটুও কীপছে না, যে-নেতার প্রধান
অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অকুতোভয়ে ব'লে বেড়াচ্ছেন দেশের গরিব মানুষ আর খিদের
খাবার চাইছে ন!, চাইছে রঙিন টেলিভিশন, যে-নেতা৷ বৃহৎ পুঁজি ও বহুজাতিক
সংস্থাগুলির উপর সকল নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে উদগ্রীব, রাষ্ায়ত্ত প্রতিষ্ঠানাদির কর্ম-
২৩
দক্ষতা সম্পর্কে নিন্দাব্যঙ্গ করতে যিনি খতু-অধতুতে অতি পটিয়সী, পাঞ্জাব থেকে
দীজিলিও সর্বত্র যিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্জিসমূহকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ নানা
উৎসাহ বেশ কয়েক বছর ধ'রে জুগিয়ে এসেছেন, তিনি দেশকে প্রগতির পথে নিয়ে
যাবেন, দেশের দরিদ্রতর শ্রেণীর দেম্যানুর্দশ। ঘোচাবেন, জাতির সংহতি ও সার্ব-
ভৌমত্ব রক্ষা করবেন, এ-ধরনের গালগল্পে টোক গিলতে হয়। অন্য পক্ষে, প্রধান
মন্ত্রীর অন্তরঙ্গ বেশ কয়েকজন দুর্নশতির সঙ্গে জড়িত, কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে টাকা
পাচারে তারা কেরামতি দেখিয়েছেন, প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনার শ্বত্রে তীর!
দালালি হিশেবে হোঁক, ঘুষ হিশেবে হোঁক, বহু কোটি-কোটি টাক? অসংভাবে
উপায় করেছেন, এ-সমস্ত অভিযোগ এখন তে। আর ঠিক গুজবের স্তরে থাকছে না,
কিছু-কিছু অভিযো!গের সত্যতা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত, অন্য-কিছু'অভিযোগ সম্পর্কে
যাতে অনুসন্ধান মাত্র নাম-ক1-ওয়াস্তে হয় তার জন্য প্রধান মন্ত্রীর উৎসাহও
অপ্রমাণিত নয় । অসদাচরণের সংস্থানে দীড়িয়ে কোনে৷ জাতি এগিয়ে যেতে
পাঁরে না, কোনো অনাচাঁরআশ্রয়ী প্রধান মন্ত্রী দেশের স্থিতি রক্ষা করতে পারেন
না, কারণ অনাচার থেকেই অস্থিতি ছড়াতে বাধ্য । এখন য1 অবস্থা, দলের
মধ্যেই প্রতিদিন নিত্য-নতুন বিদ্রোহ ছড়াচ্ছে । নিত্য-নতুন কেলেঙ্কারির খবর
বেরোচ্ছে, প্রশাসন প্রায় অচল। তার সরকারের বিধিগত মেয়াদ যাই হোক
না কেন, এই অবস্থায় অবিলগ্ষে পুনর্বার লৌকমত যাচাই করতে প্রধান মন্ত্রী
সম্মত না! হলে অস্থিরতা বেড়েই চলবে । নতুন নির্বাচনে একনায়কতন্ত্রী শাসক
দলই হয়তো৷ ফিরে আসবে, হয়তো। সে দল গো-হারা হারবে। কিন্তু গণতন্ত্রের
গর্ব করি আমরা, নির্বাচনের ফল প্রশীত্ত মনে মেনে নিতে বাধ। কোথায়, দেশের
মানুষ কাদের চাঁইছেন এট স্পষ্ট হয়ে গেলে প্রশীসনে কোথা ও-কোথীও যে-
অস্থিতি, কোথাও-কোথাঁও যে-দ্বিধা গ্রস্তত। দেখা দিয়েছে, তার অবসান ঘটবে ।
কিন্ত কারো-কাঁরো মনে সম্ভবত এই ঝুকি নিতেও অনীহা | তাঁদের অনীহাঁকে
তাঁরা তন্কথার মধ্যে দিয়ে ব্যক্ত ক'রে থাকেন । কংগ্রেস দলের আভ্যন্তরীণ পীতি-
নীতি কিংবা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যতই প্রতিক্রিয়াশীল হোঁক না কেন, বৈদেশিক
নীতির ক্ষেত্রে অবশ্যই কিন্তু প্রগতিশীলতা অব্যাহত থেকেছে । এই প্রগতিশীল
বৈদেশিক নীতির পুরে। কৃতিত্ব, তাঁরা দাবি করবেন, একটি বিশেষ পরিবারের,
যে-পরিবার তিন পুরুষ ধ'রে ভারতবর্ষের হাল ধ'রে আছে। শাঁসকদলের
অভ্যন্তরে অনেক বিচ্যুতি, বিভিন্ন শ্রেণীস্বার্থের ঘন্বসংঘাঁত, নান। ধরনের খলনায়কের
নর্তনকুর্দন | অথচ স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যে আমাদের বৈদেশিক নীতিতে
২
ধারাবাহিকতা বজায় আছে, মাঁকিন সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী চক্রান্তের বিরুদ্ধে
আমরা যে মাথা উচু ক'রে দাড়িয়ে আছি, এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকায়
বন্ধনমুক্তির সংগ্রামে যারা যে-যেখানে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন, তাদের
পাশাপাশি যে আমরা আছি, এট] নাকি সম্ভব হয়েছে এঁ বিশেষ পরিবারভুক্ত
কেউ-না-কেউ দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আছেন ব'লেই । জাতিকে তীর দিগ.
নির্দেশ দিয়েছেন, এখনে। দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা না থাকলে আমাদের পাকিস্তান-
প্রীলঙ্কা-থাইল্যাণ্ডের মতে! দশ হতো, প্রতিক্রিয়ার হাত থেকে কোনোক্রমেই
নাকি নিজেদের বাঁচাতে পারতাম না আমরা ।
এক ততব্বের সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে আরো-এক তব । গরিব, অনুন্নত দেশে শ্রেণী-
চেতন। বিকাঁশ পেতে সময় লাগে । সাধারণ মানুষের সত্তীর গভীরে সাম্যন্থষমা-
নন্দিত সমাজব্যবস্থার জন্য আকৃতি, সাম্রাজ্যবাদ তথা উপনিবেশবাদ সম্পর্কে ঘৃণা,
কিন্ত এই অন্ুভূতিগুলি ব্যক্ত হ'তে পারে ন', প্রকাশের পলিভূমি তৈরি হয়নি
এখনো, সংগঠন দুর্বল । ইতিহাসের দ্বান্দ্িক প্রবাহে প্রধান ভূমিকা অবস্থাই শ্রেণী-
বিভাজনের, শ্রেণীদ্বন্্বের । তা হ'লেও এ-সমস্ত দেশের প্রেক্ষিতে, ব্যক্তিবিশেষের
ভূমিকা স্বীকার না ক'রে নাকি উপায় নেই, ব্যক্তি বিশেষই জাতির অব্যক্ত
আশী-আকাক্ষীর প্রতীক হয়ে দাড়ান, ইতিহাসকে এগিয়ে নিয়ে যাঁন, প্রতিবিপ্নবী
শক্তিকে সংহাঁর করেন, সারথীরূপে প্রগতির থকে হাজার বন্ধুর পথ অতিক্রম করিয়ে
নিয়ে যাঁন। ভাঁরতবর্ষেও নাকি তাই হয়েছে । একটি বিশেষ ব্যক্তির মধ্যবতিতাঁয়
আমাদের দেশে ইতিহীসের যে-অভিনব অধ্যায় শুরু, সমগ্র পরিবারকর্তৃক সেই
এঁতিহ অক্ষুপ্ন রাখা হয়েছে ; এই পরিবার জাতীয় চেতনার মূলে নিহিত উজ্ভ্বল-
প্রোজ্ল নান! প্রগতিশীল ভাবনাচিন্তা-ধ্যানধারণার প্রতীক এবং প্রতিভূ ; এই
পরিবার বিপন্ন হ'লে ভারতবর্ষের ইতিহাঁসধার বিপন্ন, প্রগতিশীলতা বিপন্ন ।
স্বতরাঁং আমাদের এমন-কিছু করা ব1 এমন-কোনে। পদক্ষেপের প্রস্তাব রাখা নাঁকি
উচিত নয় যা এই পরিবারকে বিপন্ন করতে পারে, এই পরিবারের স্বার্থ বিদ্রিত
হওয়া মীনেই, ভারতবর্ষের বিশেষ অবস্থায়, প্রগতির ঘনঘট। ঘনিয়ে আস] ।
চমকপ্রদ তত্ব, কিছু দিন আগে পর্যন্তও একটু রেখে-ঢেকে বলা হতো, এখন
কিন্তু প্রায় উচ্চগ্রামে | প্রথমেই একটি ছোটে ব্যবহারিক সমন্যার কথা বল
প্রশ্নোজন ৷ যদি সরকারের অর্থ নৈতিক ক্রিয়াকর্মে প্রতিক্রিয়ার ছায়া পড়ে, জাতীয়
এবং আন্তর্জাতিক পুঁজির স্বার্থে প্রশাসনকে কাঁজে লাগানে হয়, বহুজাতিক
স্থাগুলি দেশের অভ্যন্তরে নিজেদের উপস্থিতি কায়েম করে, সত্যি-সত্যিই কি
প্র. কথা ২ ২৫
আমর] তাহ'লে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অবৈকল্য খুব বেশিদিন বাচিয়ে রাখতে
পারব? স্বয়ংভরতার লক্ষ্য বিসর্জন দিয়ে এখন যে-উদ্দাম উৎসাহে বিদেশী পুঁজির
ভজনপুজন চলছে, যে-গতিতে দেশকে বৈদেশিক খণের ভারে জর্জর ক'রে তোল।
হচ্ছে, নতুন দিল্লির মসনদে সমাসীন ধারা তীরা হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় অর্থ-
ব্যবস্থা চালু রাখতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখবেন, পরিত্রাণের পথ খুঁজে না পেয়ে
পশ্চিমের দেশগুলির কাছে সম্পুর্ণ আত্মসমর্পণ শুরু করবেন | সেই ক্ষেত্রে শ্রেণী-
দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্নও বড়ো! আকারে দেখা দেবে। এ বিশেষ পরিবারভুক্তব। শ্রেণী-
দৃষ্টিভঙ্গির উপরে উঠতে পেরেছেন কিনা জান নেই, কিন্তু পরিবাঁরটির আশেপাশে
ধারা আছেন, শাসনযন্ত্রের প্রধান নির্ধারক-পরিচাঁলক ধারা, তার] কায়মনোবাক্যে
পাশ্চাত্যের ধনতান্ত্রিক রাষ্রগুলির অনুরাগী আদর্শ-অনুসরণকারী | তা সত্বেও যদি
এই এতগুলি বছর ধ'রে আমাঁদেব পররাষ্ট্রনীতির অন্তঃস্থিত ভাঁবন] অকম্প থেকেছে,
তার কারণ ভারতবর্ষের মানুষের সংগ্রামী এঁতিহা, আমাদের চেতনায়-ধমনীতে
সাম্রাজ্যবাদের প্রতি বিতৃষ্ণা, ব্বদেশী-বিদেশী কারো সাধ্য নেই রাতের অন্ধকারে
চুপিটুপি আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো বিচ্যুতি অনুপ্রবেশ করাবাঁর।
ভারতবর্ষের কোটি-কোটি মানুষ, তাঁর] সংঘবদ্ধ হোন-না-হোঁন যায়-আসে না,
তাঁদের চেতনার মান কতটা উন্নত কতট। অবরুদ্ধ সেই যুক্তিও এখানে অসার।
সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে তাঁদের মৈত্রীবন্ধন কিছুতেই শিথিল হবাঁর নয়,
বিশ্বের নানা প্রান্তে ধারা স্বাধীনতার জন্য নুনতম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জগ্য
লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, ভারতবর্ষের মানুষ তাদের সঙ্গে সখ্যতার নিগড়ে বন্দী
আছেন, থাকবেন, কোনো পরিবারিবিশেষের তত্বাঁবধান ব] নির্দেশনার প্রয়োজন
হবে না তাদের |
প্রধান প্রশ্ন অবশ্ঠ অন্তর । ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের মুক্তির সংগ্রীম, তা
তে৷ ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সামন্ত্রজান্ত্রেব বিরুদ্ধে অভিযান | 'এখানে-ওখাঁনে,
যেখানে ঈষৎ শিল্পায়ন ঘটেছে, ধনতন্ত্র নিজেকে প্রতিষ্ঠা ক'রে শোষণের ষোলো
কলায় নিজেকে বিকশিত করতে উদ্যত, কৃষিক্ষেত্রে তার ভূমিকা এখনো কিন্তু
যৎসামান্ত, দেশের মাত্র কয়েকটি প্রান্তে কষিতে বুহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
দেশের অধিকাংশ অঞ্চলেই সামন্ততন্ত্রের, এবং তাঁর বিভিন্ন রকমফেরের, সর্বসমাচ্ছন্ন
প্রভাব | বিহার-উত্তর প্রদেশ-মধ্য প্রদেশ-রাজস্থান ইত্যাদি রাজ্যে গেলে মনে হবে
মধ্যযুগে পড়ে আছি আমরা । জমিদার-জোতদার-মহাজনদের অথণ্ড প্রতাপ,
বর্ণভেদের ক্েদাক্ত কাহিনী, নারীদের প্রতি অসম্মান, সাম্প্রদায়িকত্বাবোধ,
২৬
সাঁমাজিক-আঁচরিক কুসংস্কীরের পুঞ্জীভূত পাহাড়। এমন নয় যে দেশের দরিদ্র
জনসাধারণ স্ঠায়-অন্তায়ের মোটা সমস্াগুলি সম্বন্ধে অবহিত নয়, ক্রাস্তির মুহূর্তে
কোনে! গভীর অবমাননার মুখোমুখি হ'লে তারা তাদের ভয়-দ্বিধা-জড়তাঁর নির্মোক
থেকে মুক্ত হয়ে অবশ্ঠই বেরিয়ে পড়বেন, কিন্তু দৈনন্দিন জীধনযাঁপনের ধারাক্রমে
অন্ধকারের ছায়া আলম্ব ঝুলে থাকবে আরে! বেশ কিছুকাল । আমাদের রাজনৈতিক
সামাজিক-দাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক যুদ্ধ এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে, একবিংশ শতাব্দীর
দ্বারপ্রান্তে পৌছেও মধ্যযুগের কুজ্মটকায় অধিকীংশ দেশবাসীর চেতন ঢাকা প'ড়ে
আছে, আমাদের যৃথবদ্ধ প্রতিবাদ এই অপংগতির বিরুদ্ধে ।
এখন তন্বকথার প্রসাধনে যে-পরিবারতন্ত্রের মহিমা! পরিবেশিত হচ্ছে, তা তো
সামন্ততন্ত্রেরই অস্তম প্রকাশ। কী খলা হচ্ছে আমাদের, এই তাত্বিক কী
শেখাতে চাইছেন আমাদের? সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাষে সামস্ততন্ত্রই আমাদের
পরম সহায়, মধ্যযুগীয় পরিবারতন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ না করলে আমরা দেশে প্রগতি
সংঘটন করতে অসমর্থ হবো, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাশম্প্রদায়িকতাধাঁদ ধ্বংস করতে
পারবো না, বিদেশী পুঁজির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে অসফল হবেো1? কী জবাব দেবে!
আমরা এই প্রলাপে।ক্তির? পরিবারতন্ত্রের উপর নির্ভর ক'রে সামন্ততন্ত্রের অবসান
শ্বটানে। সম্ভব নয়, কারণ পরিবারতন্ত্রও সামন্ততন্ত্র, পধিবারতন্ত্রও মধ্যযুগের অন্ধকার
আকাশের বিভীষিকা
আমরা তে মধ্যযুগকে দূর করতে চাঁই, মধ্যযুগে প্রবেশ করতে চাই না:
বাঙালি কবির সেই এলোমেলো পংস্তিগুলি মনে ন1 ক'রে উপায় থাকে নাঃ
“তিমিরহননে তবু অগ্রসর হয়ে /আমর। কি তিমিরবিলাসী ? / আমরা তো! তিমির-
বিনাশী / হ'তে চাই । / আমরা তো তিমিরবিনাশী | কোনে বিভ্রান্তির তো
অবকাশ নেই, আমর1 তো অন্ধকার শিকার করতে চাই, অন্ধকারের শিকার হ'তে
চাঁই না। তাত্বিকরা তাদের তিমিরবিলাস নিয়ে খাকুন, আমাদের তিমিরবিনাশী
সমিকা থেকে আমরা, ভারতবর্ষের সাঁধারণ মানুষ, অন্তত স্থলিত হবো না ।
৭
কুঁদঘাট বা বাগুইহাটির সেই বৃদ্ধা
ভর দুপুরের রোদে পুরে। ছটো! বস বদলে, হয়তো কুঁদঘাট থেকে এসেছেন, কিংব1»
কে জানে, বাগুইহাঁটি থেকে ; সত্তরের কাছাকাছি নিশ্চয়ই বয়স হবে রুগ্না
মহিলার, শরীর সামনের দিকে ঝুকে পড়েছে । হয়তো আশেপাশে কেউ নেই
যাঁকে দিয়ে খেখজ নিতে পারেন, অথব। ফরটি সংগ্রহ করতে পারেন । শুনতে
পেয়েছেন সবকার থেকে বিধব। ভাঁতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, অথব। দুঃস্থ বৃদ্ধ-
বৃদ্ধাদের জন্য বার্ধক্য ভাতার, যথাযথ ফর্মে আবেদন করতে হবে এ'র-গুর-তাঁর
সইসমেত | আশেপাশে পরিচিত-আঁপনজন কেউ নেই যাঁকে দিয়ে বৃদ্ধাটি ফর্ধ
আনাতে পারেন, লোকমুখে শুনেছেন অমুক রাস্তায় অমুক সরকারি দপ্তরে
প্রয়োজনীয় ফর্মটি পাওয়া যায় । ভর ছুপুরে, অনেক জিজ্ঞাসাঁব1দ ক'রে, অসমর্থ
শরীরকে টেনে-হি' চড়ে, ছুটে। বাঁস বদলে, দপ্তরটিতে গিয়ে পৌছেছেন তিনি ।
ইতি-উতি তাঁকাচ্ছেন, কোথায় যাঁবেন-কাঁর কাছে খোঁজ করবেন ভরসা ক'রে
এগিয়ে কাউকে বলতে পারছেন ন1 তা, অসহায় বৃদ্ধা, এক পা এগোচ্ছেন দু'পা
পিছোচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত সাহস ক'রে যাও ব1 একজনের কাছে গিয়ে নিজের
সমস্যাটি পাঁড়ধার চেষ্টা করলেন, উীদ্দিষ্ট ভদ্রলোক ভাঁলে। ক'রে শুনলেনও ন!
কথাটা, অগ্যমনক্ক হাত তুলে অন্য একদিক দেখিয়ে দিলেন । এই ঘর থেকে এঁ
ঘর, এ-টেবিল থেকে ও-টেবিল, সবাই ব্যস্ত, অথবা ব্যস্ততার ভাণে নিমগ্র।
ব্রাণের লক্ষ্য নিয়ে খোলা হয়েছে সধকারি দপ্তর, দপ্তরে ধার বসছেন তাঁদের
ঘোষিত কর্তব্য নির্নবিত্ব-অসহাঁয় সাধারণ মানুষদের হিতসাধন | কিন্তু গরিব
মহিলাটি ঠিক কোথায় গেলে দরবারি কর্ম সংগ্রহ করতে গারবেন, তা ব'লে দেওয়ার
মতে। মানসিকতা কেন ঘেন অনুপস্থিত । আমার-আপনার যে-কারো পিসিম। ব!
মাসিমা হ'তে পারতেন এই বৃদ্ধা, কিন্তু এক ভয়ংকর হৃদয়হীনতার শিকার আমর!
সবাই, বৃদ্ধাটিকে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে যেতে হয়, এ একই দপ্তরে কয়েকদিন
বাদে কের আসেন, দু'দিন, তিন-দিন, চাঁর-দিন, তারপরে হয়তো৷ কেউ দয়াপরবশ
হয়ে ফর্মটি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা ক'রে দেন। প্রথম দিনই য] ইচ্ছ! করলেই
দপ্তরের মানুষগুলি তাকে দিতে পারতেন, তিনদিন-চারদিন ঘুরিয়ে তারপর তা।
বৃদ্ধাকে দেওয়] হলো, করুণ! করা হলো যেন!
২৮
এন নয় যে প্রতিটি দণ্রেই এমনধার1 ঘটছে, কিংবা! যে-কেউই সরকারি
লপ্তরে এধরনের ব্যবহার পাচ্ছেন | কিন্তু কুঁদঘাট বা বাগুইহ?টির এই বৃদ্ধার
অভিজ্ঞতা ঠিক কচিৎ-কদাচিতের ব্যাপারও তো! নয় | অন্রূপ ঘটন! ঘটছে ব্যাঙ্কে,
ডাকথানায়, বীমা! দপ্তরে, রেল স্টেশনে, যত্রতত্র । আমার দপ্তরে আপনি একটা
কাজ নিয়ে এলেন, আমি আপনার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করলাম। পরের সপ্তাহে
আমার কোনো কাঁজের ঠেকায় আপনার দপ্তরে গেলাম আমি, আমিও অনুরূপ
'আচরণ পেলাম আপনার কাছ থেকে । একই সমাজব্যবস্থার অনাচাঁর-অবিচারের
শিকার আমি-আপনি, রাজনৈতিক লড়াইয়ে আমরা সমগোত্রীয়, একই মিছিলে
একই ঝাগ্ডার আশ্রয়ে একই দাঁবির উচ্চারণে এক সঙ্গে গলা মেলাই আমি-
আপনি । অথচ আমাদের প্রাত্যহিক দিনযাঁপনের আরক্ত কৌলাহলে এই সার
কথাটি ভুলে থাকি আমরা, আমার দপ্তরে সামান্য একটা! বিষয়ে অনুসন্ধান করতে
এসে আপনাকে ঘণ্টার-পর-ঘণ্ট1 ধ্ীড়িয়ে থাকতে হয়, আপনার দপ্তরে আমার
নিজের কাজে গিয়ে তেমনি ঘণ্টার-পর-ঘণ্টা মাথা খুঁড়ে মরতে হয় আমাকে ।
আমার-আপনার যে-কারে৷ দপ্তরে এ বাগুইহাটি বা সুদঘাট থেকে আসা সেই
অসহায় বৃদ্ধাটিকে--যিনি আপনার পিসিমা হ'তে পারতেন, অথব1 আমার মাসিমা
_-সীমীন্য-একটি ফর্ম সংগ্রহ করতে এ-ঘর ও-ঘর হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় ।
আসলে আমাদের প্রত্যেকের মন তিক্ততায় সমাচ্ছন্ন । জীবন থেকে যা মনে
করেছি আমাদের প্রাপ্য, কেউ আমর! পাইনি তা । সামাজিক-আথিক ব্যবস্থার
জতাকলে আমর! পিষ্ট হচ্ছি প্রতিদিন । জিনিশপত্রের দাম হু-ছ ক'রে চড়ছে,
অথচ মজজুরি-বেতন-ভাতা। সেই হারে বাড়ছে না, সংসারে গভীর অনটন | ছেলে
বা ভাইপো বেকার বসে আছে, কোনে চাকরি হবার সম্ভাবনা প্রায় শন্ত।
মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা কর] যাচ্ছে না, কিংব1 মেয়েটি সকাল-বিকেল মাকে সাহায্য
করবার ফীকে-্কাকে সীমান্ত-একটু বাড়তি উপার্জনের ব্যবস্থা করেছে, কিন্তু তা
থেকে আপনার আনন্দের চেয়ে প্লানিবোঁধ বেশি । সমাজের চেহাঁর। খুব চট ক'রে
পাল্টে যাচ্ছে, পুরোনো ধ্যানধারণা-যূল্যবোধ খ'সে-খসে পড়ছে, এই উ্থালপাঁথাল
টালমাটাঁল পরিস্থিতির সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে আমরা সবাই হাঁপিয়ে উঠছি।
রিরক্তিতে ঠাঁপা আমাদের সমগ্র অন্তঃকরণ। নিজের উপর রাঁগ, পরিপার্থের উপর
রাগ, যে-সমাঁজ ব্যবস্থা আমাদের নাস্তানাবুদ ক'রে দিচ্ছে তার সম্পর্কে পুঞ্জীভূত
ক্রোধ । ইতিহাসের নিয়মকলায় ছুবিপাকগুলি ঘটছে, ইতিহাসের নিয়মকলা
এড়াবার উপায় নেই কারো, এঁ নিয়মকলা দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেই
২৯
আমাদের সামাঁজিক-পারিবারিক-ব্য ক্তিগত মুক্তির স্থনিশ্চিত সম্ভাবন। নিহিত। যখন
সভাঁসমিতিতে যাই, কোনে। অনুকম্পায়ী বক্তার প্রাঞ্জল ব্যাধ্য। শুনি, সেই মুহুর্তে
বুঝতে পাঁরি সে-সব সত্যের সারাৎসার। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনধারণের চাপের
মধ্যে পড়ে এঁ মহৎ কথাগুলি ভুলে থাঁকি, তিক্ততায় ভেসে যাই, হাটে-বাজারে
সেই তিক্ততাঁর প্রকাশ ঘটে, দপ্তরের কাজেও ঘটে | যেখানে জীবিকা নির্বাহের
তাড়নায় জিভ লম্বা হয়ে যায়, স্ব-স্ব কর্তব্য কর্মে নিষ্ঠ1 বজায় রাখা মুশকিল হয়ে
পড়ে সেখানে, আমার দপ্তরে এলে আপনি অপমানিত হন, আপনার দপ্তরে গেলে
আমি বিমুখ হই, কুঁদঘাট বা বাগুইহাঁটির অসহাঁয়-অসমর্থ বৃদ্ধা মহিলাটির কাতর
নিবেদন শোনবাঁর মতে। সমর হয় না আমার-আপনার । যে-সমাজ আমাকে-
আপনাকে আমাদের প্র।প্য দিচ্ছে না, শোষণ করছে প্রতিনিয়ত, সে-সমাজের প্রতি
আমাদের কোনে। দায়বদ্ধতা নেই, এই মানসিকতায় উত্তীর্ণ হয়ে গেছি আমগা,
স্থতরাং এঁ বৃদ্ধ! তার ফর্মটি পেলেন কি না পেলেন তাতে কী এসে গেল আমাদের ।
এখানেই কিন্তু আসল সমস্যা । অভ্যাঁসের বশে আমরা বাঁমপন্থী দলের সভা-
সমিতিতে যোগ দিচ্ছি, মিছিলে গিয়ে পরস্পরের সঙ্গে গল মিলিয়ে শোগাঁন
আওড়াচ্ছি, ভোটের বাক্সে বামপন্থী দলকে সমর্থন করছি, বামক্রণ্ট সরকার গঠিত
হ'লে সেই সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন থেকেও সেই
সরকারকে চোৌথের মণির মতো রক্ষা করবার অঙ্গীকার নিচ্ছি, কিস্তু অভ্যাসের
সঙ্গে চিন্তার অন্বয় ন1-ঘটণতে পারলে আপাতত যেখাঁনে দাড়িয়ে আছি সেখান
থেকেও পশ্চাদপসরণে বাধ্য হবে, এগোঁনে। তো দূরের কথা । সমাজের উপরতলায়
ধারা আছেন - শিল্পপতিরা, জমিদাররা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়-তীরা পরস্পর
পরস্পরকে দেখেন, তাদের সামগ্রিক শ্রেণীস্বার্থ কোন্-কোন্ উপায়ে-পদ্ধতিতে
প্রসারিত হবে তা নিয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, ভারতীয় রা্্রব্যবস্থা! সেই
সিদ্ধান্তের অঙ্গুলিহেলনে পরিচালিত হচ্ছে । সেই শ্রেণীশ্বার্থের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন
সংগ্রাম না ক'রে নিম্নবিস্ত-বিত্তহীন মানুষদের বাঁচীর কোনে। উপায় নেই । হৃদয়ের
তিক্ততা দিয়ে ইতিহাসের গতিকে ক্ষিপ্রতর করা যাঁয় না, তিক্ততা থেকে
নিস্পৃহতা, নিস্পৃহতা থেকে গুঁদাসীন্ত, গুঁদাসীন্তের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়ানো
আন্দোলনের মৃত্যুর অঙ্কুর । এবং তা লে তে] বর্তমান সামীজিক-আধথিক ব্যবস্থায়
যেখানে অন্তত কোনোক্রমে দেয়ালে পিঠ দিয়ে ঈাড়িয়ে আছি, এত বড়ো দেশের
একটা-দ্ুটো জায়গায় শ্রেণীশক্রদের কিছুটা হটিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যুহ রচনা
করতে পেরেছি, যে-ব্যুহের উপর নির্ভর ক'রে অচিরে অন্থযত্র সংগ্রাম বিস্তার করার
৬০
পরিকল্পনা-খসড়া তৈরি করছি, সব-কিছুই তো! মিথ্যে হয়ে যাবে । কাদের ভরসায়
আন্দোলন, কাদের নিয়ে আন্দোলন, কাদের স্বার্থে আন্দোলন ?
এই অন্ঠায়-অবিচারে-ঠাস1 সামাজিক-আথিক ব্যবস্থার মধ্যেও আমরা
এখানে-ওখানে, আন্দৌলন-সংগ্রাম ক'রে, নিজেদের জন্য একটু স্থবিধার সম্ভাবন।
রচন। করতে পেরেছি, সেই সম্ভাবনার যদি যথার্থ ব্যবহার কর! যায়, তা হ'লে
আমাদের অনেকেরই একটু টিকে থাকার রসদ বাড়ে, আগামী দিনের যুদ্ধের জন্ত
আরো-একটু বুক চিতিয়ে দ্রীড়াতে পারি আমরা । আমার-আপনার সমস্যা
আমাদের পড়শির সমস্যা, আমাদের পড়শির সমস্যা আমাদের সমস্যা । পড়শির
সমস্যা লাঘব হ'লে, আমাদের সৌজন্ভে-চেষ্টায় সেই সমস্যা অন্তত খাঁনিকটা। হাঙ্কা
কর] গেলে, পড়শি আমাদের দিকে ঝু"কবেন, তিনিও বুঝতে পারবেন কে মারে,
কে বীচায়। আমাদের হাতে সময় বড়ো কম, এই সীমাবদ্ধ সময় যতট। সম্ভব
আন্দোলনে আরো দৃঢ়তা-ধজুতা-সংঘবদ্ধতা আনবাঁর জন্য ব্যয় করা প্রয়োজন,
স্থুতরাং আমার সময়ের অপব্যয় রোধ করা আপনার কর্তব্য, আপনার সময়ের
অপব্যয় রোধ করা আমার, আমার দপ্চরে তাই আপনাকে অযথা! ফ্রাড় করিয়ে রাখা
রাজনৈতিক বিশ্বীসঘাঁতকতা, আপনার দপ্তরে গিয়ে আমার বিফলমনোরথ হয়ে
ফেরাও আমাদের আন্দৌলনের প্রতি সমান কৃতপ্রতা। আমাদের অতিদুংস্থ
বৃদ্ধা মাসিমা-পিসিমাদের বাদ দিয়েও তো আমাদের আন্দোলন এগোতে পারে
ন1, তাঁদের জন্তই তো আন্দোলন, তাঁদের হেলাফেলা করলে নিজেদের বিবেকের
কাছে মুখ দেখাবে? কী ক'রে?
পল রোৌবসনের সেই পুরোন গান, গণনাট্য আন্দোলনের তুঙ্গ মুহুর্তে ভূপেন
হাঁজারিক1 এবং অন্য কেউ-কেউ অন্বাদ ক'রে এক সময় প্রচণ্ড ওজস্-সহকারে
গাইতেন, এখন আবার নতুন ক'রে শোন। যাচ্ছে সেই গান : ভাইয়েরা, বোনেরা,
আমরা তো! একই নায়ের যাত্রী, সুখে-ছুঃখে আনন্দে-অভিমানে আন্দোলনে-
অভিযানে পরম্পরকে আগলে থাকবো আমরা । তিক্ততা দিয়ে তো ইতিহাস
রচন। করা যায় না, পারস্পরিক হুদয়হীনতা৷ তো ইতিহাসের নিয়মকলার পরিপন্থী ।
আমি ব্যাঙ্কের ভিতরে আছি, বাইরে যে-বেকার ছেলেগুলি ঘুরছে, তাদের ব্যাঙ্ক
থেকে কী ক'রে একটু টাকা পাইয়ে দেওয়া সম্ভব নিয়মশৃঙ্খলার আটঘাট সমস্ত
বজায় রেখে তা তো আঁমি জানি, স্বৃতরাং একটু উদ্োগ নিয়ে ছেলেগুলির কাছে
সেই কথাগুলি বলা আমার নিকষ কর্তব্য শুধু নয়, সামাজিক দায়িত্ব । কিংবা যে-
মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক চেক ভাঙাতে এসেছেন ব্যাঙ্কে, দেড় ঘণ্টা অকারণে বসিয়ে না
৩১
রেখে যদি সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে টাঁকাট। দেওয়ার বন্দোবস্ত ক'রে দিই, খানিকটা
বাড়তি প্রসন্নতার বীজ বপন করতে পারি তা৷ হ'লে, যে-প্রসন্নতা হয়তো আগামী
দিনের শ্রেণীযুদ্ধে আমাদের সহায়ক হবে।
কুদঘাট অথবা বাগুইহাটি, যেখান থেকেই এসে থাকুন সেই বৃদ্ধাটি, এই
সমীজব্যবস্থায় তিনি আমাদের সহযেণদ্বা, কোন্ সাহসে তাঁর সমস্যা থেকে মুখ
ফিরিয়ে থাকবে! আমরা ? তিনি তো আমাদের বিবেক, তিনি আমাদের আদর্শ,
আমাদের নিয়তি | তাকে অবজ্ঞা করার অর্থ আদর্শের প্রতি আমাদের ব্রাত্য
হওয়া ।
আমাদের প্রতিদিন পরিশুদ্ধতর হ'তে হবে । নিজেদের প্রয়োজনে, ইতিহাসের
প্রয়োজনে ।
৩২
পুড়ে মরা আর পুড়িয়ে মারা
জ্বল্জল্ চিত দ্বিগুণ দ্বিগুণ / পরান সঁপিবে বিধবা বালা | যার য] ধর্ম, স্বতরাং
'আগুনের ইন্ধনে চিতা জলবেই, দেওয়াল। গীঁওয়ের রূপ কীওয়ারের মতো পুড়িয়ে
মারা হবে স্ছ-বিধবা-হওয়৷ হাজার-হাজার বাঁলিকাবধূদের ভারতবর্ষের যত্রতত্র,
কখনো সেই খবর সংবাদপত্রে ছাপ। হবে, কখনো হবে না। একবিংশ শতাব্দীর
আর বেশি বাকি নেই, একেবারে হালের দক্ষতম প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে আমরা
মাথা ঘামাচ্ছি, শৌখিন শহরে খেলার মাঠে ক্রিকেটের সমারোহ, কিন্ত, অসম
বিকাশ. মহান্ ভারতবর্ষে, পাশাপাশি, অন্ধকার মধ্যযুগের আস্ফালন, বাচ্চা
মেয়েদের পুড়িয়ে মেরে সতীতে পরিণত কর। হয় । চিতাভস্ম নিয়ে তারপর মাতন-
উৎসব, লক্ষ-লক্ষ মানুষের, দিখ্বিদিক্ জ্ঞান হারিয়ে দূর থেকে-কাছে থেকে জড়ো
হওয়া, সতীস্থলে মন্ত মন্দির অচিরে নির্মাণের শপ্থগ্রহণ। প্রশাসন অথচ হাত
গুটিয়ে দৃশ্য নিরীক্ষণে রত হন। এক মাঝাপ্রি পুলিশ কর্তা ব্যাখ্যা করে বলেন,
সতীদ'হ, সতীস্থল ভ্রমণ, ইত্যাদি ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাঁদিতে হস্তক্ষেপ করা!
পুলিশ-প্রশীসনের পক্ষে অকর্তব্য, আমাদের সংবিধানে প্রতোকটি নাগরিকের ধর্মীয়
অধিকার মেনে নেওয়া হয়েছে, পুলিশের ঘাড়ে স্থতরীং ক'টা মাথা যে সতীদাহে
বাধ। প্রধান করবে, অতএব জল্ জল্ চিতা দিগুণ দ্বিগুণ |
অসম বিকাশ | মধ্যযুগীয় অন্ধকার, ধর্মের নামে হত্যালীলা | পবিত্র অন্ধুহাতে,
আত্মার মুক্তি স্থুনিশ্চয় করার নিবিড় উদ্দেশে বাচ্চ। মেয়েদের বীভৎস উল্লাসে
পুড়িয়ে মার] হবে, উপচে পড়া ভিড় দীড়িয়ে-ব'সে, যেন অভিনয় বা ক্রীড়া প্রতি-
যোগিতা, সেই দৃশ্ত দেখবে । প্রশাপন থেকে বলা হবে কিছু করার নেই, মানুষের
ধর্মবিশ্বাসে হাত দেওয়1 বিপজ্জনক, আরে মস্ত অঘটন ঘ'টে যেতে পাঁরে তা হ'লে ।
একটা -ছটে। মিছিল বেরোবে ধিক্কার জানাতে, একটা-ছুটে! প্রতিবাদ সভা এ-শহর
ও-শহরে, হয়তো! একজন-ছু'জনকে গ্রেপ্তার করা হবে, কর্তব্যে গাফিলতির জঙ্য
একটি-দু"টি কনস্টেবলকেও সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ বেরোবে | জঙ্গী গণ-
সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে আরো কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জদ্য দাবি অবশ্ঠ অব্যাহত
থাকবে, ভারা হয়তো৷ বেশ কিছুদিন ধ'রে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, যে-যে
৩৩
অঞ্চলে মধ্যযুগীয় অন্ধকারের সমাচ্ছন্ন প্রভাব, সে-সব জায়গায় সামাজিক চেতনা
উন্মীলনের জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেবেন | কিন্ত ধারা সমীজবিপ্লব ঘটাতে চান,
তাঁদের তো বাস্তববাদী হ'তে হয়। স্থতরাঁং এট] মেনে নেওয়া ভালো, অদূর
ভবিষ্যতে বড়োরিকম কোন চমক ঘটবার সম্ভাবনা নেই, আরে। বেশ কিছুদিন
পেন্তা-চেরা চোঁথ মেলে খবরের কাগজে আমাদের ইতস্তত সতীর চিতারোহণের
কাহিনী পড়তে হবে, কত লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয় ক'রে সতীস্থলে চৈত্য নির্মাণের
ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়! হচ্ছে, পড়তে হবে তাঁর পুষ্থান্ুপুঙ্খ বিবরণ ।
এমন নয় যে মধ্যযুগকে ভারতবর্ষ থেকে হটানো অসম্ভব | কিন্তু মধ্যযুগ একটি
অখণ্ড মানসিকতা । সামন্ততন্ত্র, প্রজাপীড়ন, গরিবদের মাথায় কাঁঠাল ভাঙা,
বংশাহ্ক্রমিক উত্তরাধিকার, সমস্ত-কিছুই তে। মধ্যযুগের প্রতীক ও প্রকাশ, সতীকে
চিতায় চড়ানোর মতো | ধাঁরা দেশের হাঁল ধ'রে আছেন, তাঁরা বিংশ-একবিংশ
শতাব্দীর সভ্যতার শৌখিনতাঁয় গা ভাসাঁতে সদা-উৎস্থক, তীদের পরিমগুলে বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তির বিপুল সমারোহ, দেশের সাধারণ মানুষের কী হাল তা নিয়ে তাদের
বিন্দুমাত্র মাঁথা-ঘামাঁনে। নেই, নিজেদের শ্রেণীস্বার্থযুক্ত আখের সুষ্ঠু গোছানো
হলেই হলো । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পক্ষে তারা, কৃষি-শিল্পের দ্রুত বিকাঁশে আগ্রহ
তাদের, ক্রীড়ীসংগীতন্ৃত্যকল] ইত্যাদির প্রতিষেশগিতায় ভারতবর্ষ বিশ্বের অন্য সমস্ত
দেশকে হারিয়ে দিক তীদের এই ইচ্ছায় ধিন্দুতম খাদ নেই । কিন্তু, পাশাপাশি,
তারা এটাও চাঁন যে বড়োঁলৌকরা আরো বড়োলোক হোক, ভূমিসংস্কারের
মতে] বাঁজে ব্যাপার তুলে দেওয়া হোঁক, শ্রমিক-মধ্যবিস্ত শ্রেণী তাদের দাবিদাওয়া
নিয়ে বাড়াখাড়ি না-করুক, দেশের সাধারণ মানুষ নীরবে সমাজতন্ত্রের নামে
সমীজের উচ্চবিত্তদের অধিকতর প্রাধান্য বিস্তার মেনে নিক, আমাদের গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থায় একটি পরিবারের বংশাঙ্ুক্রমিক শাসন যে অশোভন ব] অযৌক্তিক নয়
তা কায়মনোবাক্যে স্বীকার ক'রে নিক | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভালো, কিন্তু মধ্য-
যুগীয় অন্ধকার আরো! ভালো, মধ্যযুগীয় অন্ধকীর অব্যাহত না-থাকলে তাঁদের
সাম্রাজ্য বিপন্ন হবে, জনসাধারণ দেশের সর্বত্র ভূমিসংস্কীরের জন্য লড়াই করবে,
জমিদার-জোতদারের অত্যাঁচীরের বিরুদ্ধে সংহত প্রতিবাদের ব্যৃহ রচনা করবে,
কলকাঁরখানা-সদাগরি-সরকারি দপ্তরে শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের ন্যায্য অধিকার
আদায়ের জন্য সোচ্চার হবে, কর্মসংস্থানহীন যুবকযুখতীর কাজের দাবিতে মিছিল
ক'রে রাজপথ-জনপথ কাপিয়ে তুলবেন, শিক্ষার জন্য, স্বাস্থোর জন্য গ্রামের-শহরের
কোটি-কোটি সাধারণ মানুষ প্রশাসনের উপর অবিরাম চাপ সৃষ্টি ক'রে যাবেন ।
৩৪
মধ্যযুগীয় অন্ধকার অপকৃত হ'লে এমনকি রা'জস্থান-মধ্য প্রদেশ-উত্তর প্রদেশের
গহনতম পল্লীর অধিবাসীরাঁও বুঝে নেবেন প্রথাগত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি
নাগরিকের অধিকার সমান, স্থযোৌগের অধিকারও সমান, অথচ তা মানা হচ্ছে না
ভারতবর্ষে । এই উপলব্ধি থেকে প্রতিবাদ সংগঠনের উপযোগিতাঁয় পৌছে যাবেন
যাবেন তাঁরা । কাঠীমোর পরিবর্তন ন1-ঘটাতে পারলে জনগণের মূক্তি পরাহত,
দীক্ষিত হবেন এই প্রতীতিতে । তা হ'লে তো শাসকশ্রেণীর সর্বনাশ ।
সোনার পাঁথরবাটির স্বপ্ন মেলানো যায় না, অথচ মেলীতে হয় | যতদিন আর্যা-
বর্তের সরলমতি সাধারণ মানুষকে মধ্যযুগের অন্ধকারে ফেলে রাখা যাচ্ছে, ততদিন
নিশ্চিন্ত সাশ্রীজ্যভোগ, যে অত্যাচার করছে, দমন চালাচ্ছে, ঘরবাড়ি জালিয়ে
দিচ্ছে, জমি থেকে উৎখাঁত করছে, মজুরি দিতে ঠকাচ্ছে, তাকেই এই সরল সাধারণ
মানুষগুলি গভীর ধর্মবিশ্বাসে ভোট দিয়ে যাবেন, কাঁরণ তাঁদের শেখানে। হয়েছে
রজার ধর্মই প্রজাপীড়ন, এবং প্রজার ধর্ম রাজাকে চিরস্তন আনুগত্য প্রদর্শন | মধ্য-
যুগকে জীইয়ে রাখা শীসকশ্রেণীর তাই একান্ত প্রয়োজন, তাঁদের পক্ষেও এই লড়াই
বাচার লড়াই । মুখে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কথা বলা হবে, সমাজতন্ত্রের কথা বল] হবে,
সংবিধানে নির্দেশ লেখা থাঁকবে দেশের প্রত্যেকটি শিশুকে লেখাপড়া শেখাবার
দায়িত্ব নিতে হবে সরকীরকে, সংবিধানে এট1ও লেখা থাকবে সম্পত্তিব্যবস্থাঁয় গুণগত
পরিবর্তন ঘটিয়ে আঘিক অসাম্য দূরীকরণের চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু এই তালকা-
ভুক্ত প্রত্যেকটি অভীষ্টই শাসককুলের শ্রেণীশ্বার্থের পরিপন্থী । কারণ এ-সব ব্যবস্থা
গ্রহণ করলে লোকের চৌখকান আরো খুলবে, তাঁরা সামাঁজিক-আঘথিক কাঁঠীমো'
পুবোপুরি পাল্টাঁবার লক্ষ্য নিয়ে আরে। বেশি সংঘবদ্ব-সংগঠিত হ'তে ব্যস্ত হবেন ।
অতএব মধ্যযুগীয় অন্ধকাঁরই শ্রেয় ।
এবং সেজন্যই বাঁলিকাঁবধূকে পুড়িয়ে মারাও মেনে নিতে হয়। অন্ধকারের
কতকগুলি নিজস্ব পরিভাষা আছে, পারস্পরিক বন্ধনযুক্ত সংজ্ঞা । এমনটি বলা
চলবে ন! ভূমিসংস্কীর ভালো, কিন্তু সতীদাহ খারাঁপ, অথবা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
শ্রেয়, কিন্তু অন্য সম্প্রদায়ভূক্ত গরিব মানুষের উপর হামলা চালানো অন্ুচিত। মধ্য-
যুগকে যদি বরণ করতে হয়, মধ্যযুগীয় অন্ধকারের আশ্রয়ে যদি নিজেদের শ্রেণী-
স্বার্থকে প্রতিষ্ঠ। করতে হয়, তাহ'লে মধ্যযুগের প্রতিটি গুণাবলী মাথা পেতে স্বীকার
ক'রে নিতে হবে। বংশানুক্রমিক সিংহাসন-আরোহণ যেহেতু মান্ত করা হচ্ছে,
পাশাপাশি সুতরাং রামজন্মভূমি নিয়ে সাম্প্রদাঁয়িক দাঙ্গাকেও প্রকৃতির নিয়ম হিশেবে
মেনে নিতে হবে, এক তরফের মৌলবাদীদের খুশি রাখবার জন্ত তীদের নির্দেশ-
৩৫
অনুযায়ী তালাক-দেওয়! মুসলমান বিধবাদের নাগরিক অধিকার যেমন খর্ব
কর] হবে, তেমনি দুটে1-দশটি রূপ কাওয়ারকে চিতায় চড়িয়ে পুড়িয়ে মারা হবে,
ভাবের ঘোরে চুরি ক'রে ইচ্ছাকৃত একটু অন্যমনস্ক হয়ে যেতে হবে ।
তাই ধারা বলবেন দেওয়ালা গ্রামে য1 ঘটল তা পুরুষশাসিত সমাজের অপফল,
তাদের কাছে সকাতর আবেদন জানাতে হয়, ব্যাখ্যার গভীরে গভীরতর ব্যাখ্যার
অন্বেষণ, দোহাই, বন্ধ ক'রে দেবেন না । আমাদের আধা-খ্যাচড়া সমাজব্যবস্থাঁয়
শ্রেণীনির্যাতণ অনেক ধরনের আকার নিয়ে দেখা দেয়, যেখানে-যেখানে সামন্ততন্্র
এখনে। অপ্রতিহত, মহিলাদের উপর হামল1-অত্যাচার সে-সব জায়গায় পরিচিত
অভ্যাসের মতো । কিন্তু উৎসের সন্ধানে না গিয়ে যদি প্রতিবাদের মুখরতা স্ত্রী-
পুরুষের পারম্পরিক সামজিক সম্পর্কের অসাম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নিজেকে
নিঃশেষ ক'রে দেয়, তেমন লাভ হবে না তাতে । সমশ্যাঁটি সামগ্রিক সমাজবিন্যাঁসের,
কারা কীসের স্বার্থের অন্ধকারকে লালন করছেন সেই রহস্যের সঙ্গে জড়ানে। রূপ
কাওয়ারের চিতারোহণের প্রসঙ্গ |
রূপ কাঁওয়ার পুড়ে মরেনি, তাঁকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তাঁকে হত্যা করা
হয়েছে । এ-ধরনের হাজার হত্যবকাহিনী ভাঁরতবর্ষের গ্রামে-প্রাস্তরে ঘটছে,
আমাদের কাছে খবর পৌছয় না। রূপের শ্বশুরকুলের একজন-দু'জনকে হয়তো
গ্রেপ্তার কর। হবে, একজন-ছু'জন পুলিস-প্রশাসনের কর্তাকে হয়তো মু ভৎ“সন।
জানানে। হবে, কিন্তু এসব তো লোক-দেখানে! লোঁক-ঠকাঁনে। প্রহসন । কোনো!
ব্যক্তিগত হত্যাকাহিনী নয়, শ্রেণীদন্জড়িত সামাজিক হত্যা এট] ৷ একটি বিশেষ
'গোঠী যাতে রাষ্ট্রক্ষমতায় অপ্রতিহত টি'কে থাকতে পারেন, সেই হেতু ভারতবর্ষে
সধ্যযুগকে প্রলঘ্িত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবং মধ্যযুগের বস্তা স্বীকার
করতে হ'লে সতীদাহকে সমাজের স্বাভীবিক নিয়মকলাঁর অঙ্গ হিশেবে বিবেচন! ন।
ক'রে উপায় থাকে না। মধ্যযুগীয় অন্ধকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম তাই ইতিহাসের
অনুশাসন-নির্দেশিত শ্রেণীসংঘর্ষ থেকে আলাদা নয়, ছুঢে। একহ যুদ্ধ । এই যুদ্ধে
সর্বদলীয় সমঝোতা সম্ভব নয় : যাঁরা পুড়ে মরে কীসের ভিত্তিতে তার। হাত মেলাবে
যারা পুড়িয়ে মারে তাঁদের সঙ্গে ?
২৬
দুরাত্মার ছল
ছুরাত্মীর ছলের অভাব হয় না। রাঁজ্যে-রাঁজ্যে ভূমিসংস্কীর ত্বরিত করার চিন্তায়
নাকি কেন্দ্রীয় সরকারের রাত্তিরে ঘুম হয় না; মাঝে-মধ্যে অনেক বাগাড়গ্বর করা
হয় কোথায় কীভাবে কেন্দ্রের উদ্যোগে ভূমিহীন কৃষককে জমি পাইয়ে দেওয়1
হয়েছে সেই বৃত্তাস্তংবলিত। অথচ স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে চল্লিশ বছর গড়িয়ে
গেছে, গোট1 দেশে সরকারি হিশেব অনুযায়ী কৃষিযোগ্য জমির পরিমাপ যেখানে
চল্লিশ কোটি একরের মতো, এমন কি চল্লিশ লক্ষ একরও ভূমিহীনদের মধ্যে
বণ্টন করা সম্ভব হয়নি, এবং সমগ্র ভারতবর্ষে সাকল্যে যত জমি বণ্টন করা হয়েছে
এই চার দশক জুড়ে, তার অন্তত অর্ধেক হয়েছে পশ্চিম বঙ্গে, প্রথমে যুক্তক্রণ্টের,
পরে বাঁমফ্রণ্টের; নায়কত্বে ও তত্বাবধানে |
কিন্ত ছুরাত্নার ছলের অতাব হয় না । ১৯৮১ সালে পশ্চিম বঙ্গ বিধানসভায়
একটি ভূমিসংস্কার সংশোধনী আইন পাঁশ করা হলো । আমাদের এমনই কিন্তৃত
রসে টইটঘুর সংবিধান, এমন কি রাজ্য তালিকার অন্তর্ভূক্ত বিষয়-সম্পকিত কোনে!
আইনও, বিধানসভায় গৃহীত হ'লেও, সঙ্গে-সঙ্গে চালু করা যাবে না । ভূমিবিষ্যাস,
ভূমিব্যবস্থা, ভূমিসংস্কাঁব ইত্যাদি সংবিধানের সপ্ঘম তফসিলে রাজ্য তালিকার অস্ত-
ভুক্ত । শাদামাট! যুক্তিতে মনে হখে তা হ'লে আর সমস্য। কী, রাঁজ্য সরকার বিধান-
সভায় যে-কোনে। ভূমিসংক্কীর বিধি মঞ্ুর করিয়ে নিয়ে সঙ্গে-সঙ্গে তা বলবৎ করতে
পারেন | ন।, পারেন না । কারণ সংবিধান এক হাতে রাজ্যগুলিকে অধিকার দিচ্ছে,
আরেক হাঁতে নিচ্ছে | সংবিধানে অন্য-একটি ধার আছে, যা বলছে সম্পত্তি অধি-
গ্রহণ-সংক্রীস্ত কোনে! আইন কোনে] রাজ্য বিধানসভা্ন গৃহীত হ'লে তা বলবৎ
করার আগে রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রয়োজন হবে! রাষ্ট্রপতির সম্মতি মানে কেন্দ্রীয়
মন্ত্রিসভার সম্মতি । কৃষিভূমিও যেহেতু ব্যাকরণের বিচাঁরে সম্পত্তি, অতএব কুষি-
ভূমি অধিগ্রহণ করতে গেলেও রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব গ্রহণ করলেই চলবে না,
কেন্দ্রের সম্মতির দরকার পড়বে | যেহেতু ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া ভূমি সংক্ষার সত্ভব
নয়, প্রত্যেকটি ভূমিসংস্কীর বিধিই তাই, রাজ্য তালিকা যা-ই বলুক না কেন, শেষ
পর্যন্ত নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সম্মতির উপর | পশ্চিম বঙ্গের ১৯৮১ সালের সংশোধনী
৩৭
'আইনেরও সেই দশ। হলো | এই সংশোধনীর উদ্দেশ্ত ছিল লুকোনো জমি আরো
'বেশি-বেশি ক'রে উদ্ধার । পুরোনো আইনে ফাকি ছিল, মেছো ভেড়ী জমির উ্ধ্ব-
সীম! নিরূপণের হিশেবে ধরা হতো না, যেমন ধরা হতো! না আমবাগান-কাঠাল-
খাগান-লিচুবাগান ধরনের যে-কোনো বাগান । ধূর্ত জমিদীর-জোতদাঁররা তাই
ধানজমিতে আল কেটে ছু'দিনের জন্য জল ঢুকিয়ে দাবি করতেন মেছো! ভেড়ী,
'অতএব হিশেবের বাইরে রাখো ; কিংব। ধান-কাটা মাঠে একটি লেবু গাছের
চারা পুঁতে ঘোষণা করতেন লেবুবাগাঁন, স্থতরাঁং ছাড় যাবে । ১৯১৯ সালের
সংশোধনী আইনে জ'মর হিশেব নিয়ে এই জাতীয় পুকুরচুরি বন্ধ করাঁর উদ্যোগ
নেওয়া হলো, বলা হলো এখন থেকে মেছে৷ ভেড়ী হোক, কি আমবাঁগাঁন-জাম-
বাগান হোক, জমির উ্ধধসীমার হিশেবে কোনে! ছাড় থাকবে না, সমস্ত জমিই
হিশেবের মধ্যে ধরা হবে | বিধানসভায় গৃহীত হখার পর সেই আইন চলে গেল
কেন্দ্রীয় মান্ত্রসভার অনুমতির জন্য দিলিতে | ভূমিসংস্কার ত্বরান্বিত করার জন্য নাকি
দিল্লির সরকারের হৃদয়মন আকুর্পাকু করছে, অথচ তারা পুরে। পাঁচ বছর ঝুলিয়ে
রীখলেন এই সংশোধনীটিকে | দিন যায়, মাঁস যায়, বছর যায়, বছরের পর বছর
যাঁয়, পশ্চিম বঙ্গের ভূমিসংক্কার সংশৌধনী আইনে কেন্দ্রের সম্মতি আর আসে না।
'শুণীর টান আসলে নাঁড়ির টান, বুকে ধ'রে কেন্দ্রীয় সরকার কী ক'রে এমন আইনে
রাজি হবেন যার পরিণামে জমিদার-জোতদারদের হাত থেকে জমি চ'লে যাবে,
যে-জমি ধর্টিত হবে ছোটো চাষী ব1 ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে? তাই পাঁচ বছরের
উপর সংশোধনীটিকে ঝুলিয়ে রাখা হলো । আজ এই ওজর, কাল এঁ ওজর ।
দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না, এরই মধ্যে একদিন দিল্লি থেকে কলকাতায় চিঠি
এলো, রাঁজ্য সরকার দয় ক'রে সংশোধনী আইনটি পুনবিবেচনা করুন, পশ্চিম বঙ্গ
থেকে প্রতি বছর পঁচিশ কোটি বা তিরিশ কোটি টাঁকার পরিমাণ চিংড়ি মাঁছ
বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে, এই রপ্তানি থেকে দেশ এ পরিমাণ বৈদেশিক দুদ্রা উপার্জন
করছেন, সংশোধনীটি চাঁলু হ'লে পশ্চিম বঙ্গে মেছো ভেড়ীর পর মেছো ডেড়ীর চাঁষ
লাঁটে উঠবে, চিংড়ি মাছ আর রপ্তানি হবে না, ফি বছর পঁচিশ-তিরিশ কোটি
টাকার বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে । দেশের এত বড়ো ক্ষতি পশ্চিম
বঙ্গ সরকার আশা করি সাধন করবেন ন1, আর-একবার ভেবে দেখবেন তারা ।
ভারতীয় সংবিধানটি পেড়ে ভালো ক'রে উল্টে-পাল্টে দেখুন । মৌলিক
অধিকাঁরাঁদির মধ্যে কোথাও উল্লেখ করা নেই যে যে-কোনে। ভারতীয় নাগরিকের
'বিদেশে রপ্তানি করবার অথণ্ড অধিকাঁর থাকবে, ত1 চিংড়ি মাছই হোক কি অন্ত
৩৮
যে-কোনো জিনিশেরই হোক । ইন্দির। গান্ধি মহোদয় জরুরি অবস্থার সময় মহা
উৎসাহে সংবিধানে মৌলিক দায়িত্ব-বিষয়ক একটি নতুন অধ্যায় যোগ করেছিলেন
এই অধ্যায়েও কিন্তু লেখা নেই চিংড়ি মাই-_- কিংবা! আলু, পটল, ধনে শাক--
রপ্তানি কর! প্রত্যেকটি ভারতীয় নাগরিকের প্রধান কর্তব্যের অন্তভুক্ত। অথচ
সংবিধানে রাষ্্রীর রীতিনী তির যে-দিগ নির্দেশ দেওয়া, তাতে পরিফার বলা আছে,
সম্পত্তির ও উপার্জনের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে । সংবিধানে এই নির্দেশও
দেওয়া আছে যে সামাজিক উৎপাদনের ওৎসিক ক্ষমতার বণ্টনে যে-বৈসা দৃশ্য দেখ!
যায়, তা দূর কর সরকাঁরেরর অন্যতম প্রধান কর্তব্য । ভূমিসংক্কার সম্পর্কে প্রত্যক্ষ
নির্দেশ না-থাকলেও, পরোক্ষ নির্দেশ অন্তত সংবিধানে অন্পস্থিত তাই নয় ।
দুরাত্মার ছলের অভাব নেই, কিন্ধ রপ্তানি ক'রে থেদেশিক মুদ্রা অঞ্জন না করলে
গলা কেটে নেওয়] হবে, ভারতীয় সংবিধান সেই কথা ধলে না। স্থৃতরাং কেন্দ্রীয়
সরকারের পক্ষ থেকে যদি কেউ বলেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের প্রশ্নটি আগে
বিচার্য, ভূমিসংস্কীর শিকেয় তোলা থাঁক, তিনি সংবিধানের অবমাননা করছেন ।
অথাৎ কিন] কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম বঙ্গ সরকারকে চিংড়ি ভেড়ীর মালিকদের স্বাথে
ভূমিসংস্কীর সংশোধনী আইন পুনধিবেচনাঁর উপরোধ ক'রে আসলে সংবিধানের
বিরুদ্ধাচারণই করছিলেন ।
অবশ্য, সার। দেশ জুড়ে রাজ্য “সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের ঝড় তোলার
পরে, অবশেষে ১৯৮৬ সালে দিল্লি থেকে এ সংশোধনীটির ব্যাপারে সম্মতিপত্র
আসে । তবে প্রধান ছুটি জিজ্ঞাস? থেকেই খায় । প্রথম জিজ্ছাঁস!, ভূমিসংক্কার যদি
রাজ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত, ত1 হ'লে তাদের মতো ক'রে, তাদের ধ্যানধারণ।-আদর্শ-
বিশ্বাস অনুযায়ী, ভূমি পুনবিস্যাসের অধিকার রাজ্যগুলির কেন থাকবে না, কেন
তাঁদের প্রতিটি ভূমিসংক্রান্ত আইনের সম্মতির জঙ্য নতুন দিলিতে দৌড়ঝাপ
করতে হবে? দিল্পর মসনদে অসাধু-প্রবঞ্চক-অত্যাচারী-শোঁষণকারী জমিদার-
জোতদারদের প্রতিনিধিবর্গ বসে আছেন, পশ্চিম বঙ্গের প্রশাসন থেকে সাধারণ
মানুষ তাঁদের হটিয়ে বিদায় করেছেন, ভূমিহীন কৃষক-ছোটে। চাধী-ভাগচাষী এবং
তাঁদের সহমরশীদের সরকার রাজ্যে গঠিত হয়েছে, অথচ রাজ্য সরকার পূর্বপ্রতি শ্রুতির
প্রতি সম্মান জানিয়ে ভূমিসংক্ষারের ব্যবস্থা করতে পারবেন না, যাঁদের হটানে!
হলো তাদের ইচ্ছাই শেষ পর্যন্ত খাঁটবে, এটা অসম্ভব প্রস্তাব । কেন্দ্র-রাজ্য
সম্পর্ক কেন খোল-নল্চে পাল্টানো প্রয়োজন ত। আলাদ। ক'রে ব্যাখ্যার আর
'তাই দরকার পড়ে না ।
৩৭
দ্বিতীয় প্রশ্ন, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের প্রাসজিকতা নিয়ে । সন্দেহ হয় একটু
বাড়াবাড়ি হচ্ছে, যে-কোনে। অপকীতিই বিদেশ-থেকে-মুদ্রা-উপার্জনের দাবির
আড়ালে ঢাকার অপপ্রয়াঁস চলছে, কোন্ সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ থেকে কে কতটা'
উপকৃত হলেন, কার কতটা অস্থবিধ! হলো, ঠিক যেন তলিয়ে দেখা হচ্ছে না।
রঞ্তাশিতে অজিত উপার্জনের কত অংশ বড়ে৷ রপ্তানিকাঁররা পেয়েছে, কত অংশ
ফড়ের] পেয়েছে, কতট। পৌছেছে ভেড়ীর মালিকদের পকেটে, গরিব মংস্যজীবীর
উপার্জন কতটা বেড়েছে এই রঞ্চানি থেকে ? যদি বাঁড়তি লাভ পুরোটাই ব্যবসাদার
আর ভেড়ীর মালিকদের কুক্ষিগত হয়ে থাকে, মাঝি-মেঝেনদের আয় এক রত্তিও
বাড়েনি, তা হ'লে আমরা কেন বৈদেশিক মুদ্রা বাড়তি অজিত হয়েছে ব'লে
আনন্দে ছু'হাঁত তুলে নৃত্য করবো! ? বরঞ্চ যদি রপ্তানি ঝুঁদ্ধ পাওয়ার ফলে যদি
দেখি দেশের অভ্যন্তরে মাছের ঘাটতি দেখ! দিয়েছে, মাছের দাঁম ভীষণ চড়েছে, যা
থেকে ফের আরো লাভ হয়েছে ফডেদের-ঠিকাদারদের-ভেড়ীর মালিকদের, লাভ
হয়নি মাঝি-মেঝেনদের, মাছের অসঙ্কুলান ঘটেছে মধ্যবিত্ত-নিম্ববিত্ত-দরিদ্র গৃহস্থ
পরিবারের, তা হ'লে মাছ রপ্তানি থেকে সামগ্রিক বিচারে আমাদের কী লাভ?
এখানে অবশ্য মন্ত-মস্ত সারগর্ভ কথা শোৌনানোর চেষ্ট] হবে, দেশের আথিক
বিকাশের হার ক্ষিপ্রতর করতে হ'লে, এমন কি একট? জায়গায় ধ'রে রাখতে
হ'লেও, বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন একান্ত প্রয়োজন, হাতে বিদেশী মুদ্রা না থাকলে
আিক উন্নতির জন্য আবশ্যক যন্ত্রপাতি আমরা আমদানি করতে পারবো না,
পেট্রোলজাত সামগ্রী আমদানি করতে পারবে না, পাঁরবে। ন] প্রয়োজনীয় কাঁচা-
মাল অথনা তৈলবীজের ব্যবস্থা করতে । রপ্তানি অতএব জাতীয় কর্তব্য, তেমন
পরিস্থিতির উদ্ভব হ'লে এমন কি আমাঁদের না-খেয়েও রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে,
আধক রপ্তানির উপরে জাতির অস্তিত্ব নির্ভর করছে, ধাঁর। রপ্তানি বা বৈদেশিক
মুদ্রা উপার্জনের বিরুদ্ধাচরণ করছেন তীর দেশদ্রোহী, আরে। বেশি ক'রে চিংড়ি
মাছ রপ্তানি করুন, আপনাকে নিবর্তন আইনে তা হ'লে আর কয়েদ কর হবে না।
এ-ধরনের সদেঁপদেশদীয়ীদের সামনে দ্রাড় করিয়ে একটু জেরা করার লোভ
হয়। বলুন তো, আমাঁদের দেশের শ্রমজীবী মানুষ তাঁদের গতর থাঁটিয়ে যে-যে
সামগ্রী উৎপাঁদন করেন, সে-সব বাইরে রপ্তানি ক'রে যে-বিদেশী মুদ্রা উপার্জন করা
হয়, তা কীভাবে ব্যয়িত হয়? বিদেশ থেকে স্থজুকি কোম্পানির গাঁড়ি বা গাড়ির
যন্ত্রাংশ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ ক'রে আমদানি করা হচ্ছে, কারা চড়েন সেই সব
গাঁড়ি? গরিব মানুষেরা ? বিদেশ থেকে রঙিন টেলিভিশন ব1 রঙিন টেলি ভিশনের;
5
যন্ত্রপাতি ডলার-মার্ক-ইয়েন খরচ ক'রে কেন] হচ্ছে, কাদের ঘরে শোভা পায় সেই
সব টেলিভিশন ? কীড়ি-কীড়ি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় ক'রে শৌখিন অতি-আধুনিক
বিমান কেন! হচ্ছে এয়ার ইগ্ডিয়া, ইগ্ডিয়ান এয়ারলাইনসের জন্য । কোন্ গরিব-
গুরবো এ-দমস্ত বিমানে চ'্ড়ে বেড়াবার সৌভাগ্যে নন্দিত হবেন? না কি
আমাদের ভূমিসংক্কীর বন্ধ রাখতে হবে, ভেড়ী মালিকদের রাতের ঘুম নিরু দ্বিগ্
করতে হবে, তারা যাতে আরো বেশি ক'রে চিংড়ি মাছ রপ্তানি করেন সেদিকে
নজর দিতে হবে, বৈদেশিক মুদ্রার উপার্জন আরো বাড়িয়ে যেতে হবে, যাতে
বচ্চন সম্প্রদায় সেই বিদেশী টাকায় স্থইৎজারল্যাণ্ডে আরে। ঘরবাড়িসম্পত্তি করতে
পারেন, কিংবা প্রধান মন্ত্রীর অন্-কৌনো৷ আপনজন বৈদেশিক মুদ্রায় উৎকোচ
অথবা? গোপন উপটৌকন গ্রহণ করতে পারেন ?
চল্লিশ বছর ধরে এ-সব মৌলিক প্রশ্ন মুলতুবি থেকেছে। কিন্তু এই প্রশ্নগুলি
এখন উত্থাপন করতেই হয় । দেশটা কাদের ?
প্র, কথা ৩ ৪ ১
অপব্যয় রুখতে হবে
কেন্দ্রে ধীরা সরকার ঢালাচ্ছেন, তাঁরা বেশিরভাগই বড়োলোকের ঘরের সন্তান,
এ্শ্র্যে লালিত হয়েছেন, বিলাসের ঘেরাটোপে তাঁদের দিনযাপন | জমিদাঁর-
শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের দ্বারা সমাচ্ছন্ন পরিমণ্ডলে তাঁদের ওঠাবসা-চলাফেরা, তাঁদের
একান্ত ধ্যানধারণাও তাই এই শ্রেণীভূক্তদের মানসিকতার সমগ্রোত্রীয় । মাকিন
যুক্তরাষ্ এদের আদর্শ। সেই দেশে পুঁজিওয়ালাদের পোয়াবারো, সেই দেশের
সরকার ধনী সম্প্রদায়ের নির্দেশ সাধারণভাবে মেনে চলে, ধনতন্ত্রের অপ্রতিহত
অগ্রগতির পথ সর্বদ! স্থগম করে দেয় । যেখানে-যেখানে লাভের বহর বেশি,
সরকার সে-সমস্ত আঁথিক ক্ষেত্রে নাক গলাবে না, বেসরকারি মালিকদের মুনাফা
লোটবার রাস্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে ন।, তা হলেই নাকি সামাজিক
সর্ব শুভ, পুঁজিবাদী দেশগুলির সমাজদর্শন এই কথাই বলে । গরিব মানুষ বাঁচুক-
মরুক, সাধারণ মানুষ খেতে পাক কি না-পাঁক, স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা তাঁদের জন্য থাকুক
কি না-থাকুক, কর্মসংস্থানের স্বযোগ তাদের হোঁক না-হোক, সরকার যেন ভাঁখিত
ন] হয়, সরকাঁর যেন কুঁকড়ে থাকে, সরকার যেন বেসরকারি উদ্যোগের হাঁতে এ-
সমস্ত দায়িত্ব ছেড়ে দেয় : প্রখ্যাত সব মাঁফিন বিশ্ববিদ্ভ।লয়ের বিদ্যাদিগ গজ
অধ্যাপকের নাকি প্রমাণ ক'রে দিতে পাঁরেন যে-দেশে সরকার নিজেকে সব চেয়ে
বেশি গুটিয়ে রাখে সেই দেশে নাঁকি মানুষ সব চেয়ে স্থখে থাকে । এ-ব্যাপারে এ-
ধরনের বিগ্ভাদিগ গজদের সঙ্গে তেমন তর্ক জুড়ে লাঁভ নেই । যেখানে ধর্মবিশ্বাস
বা শ্রেণী্বার্থ জড়িত, যুক্তির সেখানে আদে৷ ঠীই নেই, ভূর্ি-ভূরি তথ্য পেশ
ক'রেও সেখানে মত বা ধারণার পরিবর্তন ঘটানে। সম্ভব নয় ।
মুশকিল হলো, আঁমীদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এই মাঁফিন
রাষদর্শনের প্রতি গভীরভাবে আকুষ্ট । জীবনধাঁরার ছাপ চেতনাকে গড়ে, তাঁদের
জীবনধারার আষ্টেপৃষ্ঠে জুড়ে ধনতন্ত্র সম্পর্কে আবি মৌহীন্ধতা | এ হেন ব্যক্তিরা
ইন্দিরা গান্ধির হত্যার অব্যবহিত পরে অন্ুঠিত সাধারণ নির্বাচনে ভীষণভাবে
জিতে সরকারে সমাঁসীন হলেন ! নির্বাচনে জেতাটা সেই বিশেষ অবস্থায় অত্যন্ত
সহজে ঘটেছিল | এ'রা ভাবলেন, রাষ্ট্র চালানৌও ঠিক অতটাই সহজ হবে । ১৯৮৪
৪২
লালের নির্বাচন সাফল্য জবাহরলাল নেহরু ব] ইন্দির! গান্ির সাফল্যকেও ছাঁড়য়ে
গিয়েছিল, স্থতরাঁং বিজগ্বী মন্ত্রীরা ভাবলেন তার! জবাহরলাঁল বা ইন্দিরাঁর চেয়েও
বড়ে। নেতা, তাঁরা যা বলবেন, গোট। দেশের মানুষ মন্ত্রমু্ধের মতো তা-ই যেনে
নেবে । মাঁকিন রাষ্টদর্শনে আবাল্য তীর] দীক্ষা নিয়েছেন, ভারা ভাবলেন মাকিনি
ধীচে এখন থেকে ভারতবর্ষকে গ'ড়ে-পিটে তুলবেন | বড়ো-বড়ে! শিল্পপতি-
ব্যবসায়ী-জমিদারদের শলা-পরামশ বাঁড়তি গুরুত্ব পেতে শুরু করলো, বিভিন্ন
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শীর্ষে এই শ্রেণীর লোকদের এনে বসানে! হলো, শ্রমিকদলন শুরু
হলে নতুন উৎসাহে, শ্রীযুক্ত প্রধান মন্ত্রী স্বানে-অস্থানে ব'লে বেড়াতে শুরু করলেন
যে-সব সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ভালো লাভ দেখাতে পারবে না, তাদের অচিরে হয়
বন্ধ ক'রে দেওয়া হবে, নয় তো কোঁনে। বেসরকারি মালিকের কাছে বিক্রিক'রে
দেওয়া] হবে । ধরাঁকে-সরা-জ্ভান-কর। প্রধান মন্ত্রীর হয়তে! ঘটে বুদ্ধি একটু কম,
তিনি সমাজতন্ত্র নিয়ে নাঁন1 তির্ধক ব্যঙ্গবিস্তার আরম্ত করলেন, ভাট! এরকম,
একবার কোনেখক্রমে একবিংশতি শতান্দীতে পৌছুই না কেন আমার সথাসহচর
পরিবৃত হয়ে, ততদিনে তো দেশের আদল পাল্টে দেবো, যে-সব ভণ্ড সমাজতন্তর-
ফ্রমাঁজতন্ত্র গোছের তুকতাঁকের কথা বলে, তাদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবো তখন ।
গত কয়েক বছর ধ'রে এই উন্নাসিকতাঁয় ভর করে বড়োলোকের ঘরের
সন্তানের! দেশ শাসন করেছেন | শ্বশ্রেণীভুক্তদের জন্য বাড়তি নান? সাহায্যের
ব্যবস্থা! করেছেন, গরিব-মধ্যবিত্দের উপর বাড়তি নানা বোঝ চাপিয়েছেন ।
ধীর! ভেবেই নিয়েছিলেন এমনি করেই বাঁকি দিনগুলিও যাবে, তারা৷ নিশ্চিন্তে
অনন্তকাল ধ'রে ভারতবর্ষের জনগণের উপর ভাগ ঘুরিয়ে যাবেন, মাকিনি কায়দায়
দেশের অর্থব্যবস্থাকে চালন। করবেন, বহু-বছরের-অধ্যবসায়ে-1ততিক্ষায়-গ'ড়ে-ওঠ
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সর্বনাঁশ সাধন করখেন, সমাজতস্ত্রের ভূত চিরতরে দূর করখেন
সাধারণ মানুষের মন থেকে । কিন্তু এবছরের গোড়া থেকে হিশেবে ভুল হ'তে
শুরু হলে । রাজ্যের পর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে দেশের অবুঝ নিয়বিত্ত-
মধাবিত্ত গ্রাম-শহরের মানুষগুলি প্রতিবাদের ঝড় তুললেন, কুটৌর মতো ডেসে
গেল শাসক দলের প্রাথথীর। । গোদের উপর বিষফোড়া, এখন নান] প্রমাণিত
দুর্নশতির কলঙ্কে মসীলিপ্ত কেন্দ্রের মন্ত্রিসভা, কিংকর্তব্যবিষূঢ়, হালে পানি পাচ্ছেন
না। যে-সমাজতন্ত্র নিয়ে পুরে। ছুই বছর ধ'রে কৌতুকব্যঙ্গের অন্ত ছিল না, ভূতের
মুখে রাম নামের মতো, হঠাৎ সেই সমাজতন্ত্রের স্তবগান আরম্ত হয়েছে, তাতে
যদি লোককে ভোলানো যায় । সাধ ক'রে কি বাব বলি, গু'তোর চোটে বাবা
৪৩
বলায় । শ্রীযুক্ত প্রধান মন্ত্রী এখন ফের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলির কৃতিত্বের-প্রশংসাঁর
আদিখ্যেতায় নেমে পড়েছেন, সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রতি আনুগত্য ইনিয়ে-
বিনিয়ে ব্যক্ত করতে লেগেছেন, এমনই গু'তোর মাহাত্ম্য ।
কিন্ত এ-সব কিছুই তো ভড়ং, বিপদে পণ্ড়ে সাধারণ মানুষের পায়ে গিয়ে পড়া,
তোমাদের ভুলিনি, ভুলবে! না, তোমাঁদের জন্য সমাজতন্ত্র এনে হাজির করবে! ।
আসল মানসিকতার তো! কোনে! পরিবর্তন সম্ভব নয়, তা হবে প্রকৃতিবিরুদ্ধ
ব্যাপার, শ্রেণীস্বার্থ বিসর্জনের সমার্থক | প্রধান মন্ত্রী এবং তাঁর পারিষদবর্গ কখনোই
তা হ'তে দিতে পারেন না। তা যে হ'তে দিতে পারেন ন। তাঁর প্রকষ্ঠতম
উদাহরণ মেলে নবম অর্থ কমিশনকে যে-নির্দেশীবলী দেওয়। হয়েছে, তা থেকে।
মন আর মুখে যে কত দুস্তর ব্যবধান, এই নিদের্শাবলী তার প্রমাণ বহন করছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সরকাঁরি খাতে বিবিধ অপব্যয় নিয়ে ভাবিত। বাজে খরচ
হ'তে দেওয়া নেই । তাই অর্থমন্ত্রক অর্থ কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন, সরকারি
খাতে অপব্যয় কী ক'রে প্রশমিত হয় সে-সম্পর্কে যথাযোগ্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের
স্থপারিশ যেন কমিশনের সিদ্ধান্তগুলির অন্তর্ভুক্ত হয় । এবং কমিশন যাঁতে ঠিক-
ঠিক সুপারিশ করে, বেলাইনে ন৷ চ'লে যাঁয়, অর্থ মন্ত্রক একট বাড়তি নির্দেশিকাও
পাঠিয়েছেন বাঁজে খরচ কমাঁবার উপায় হিশেবে । দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে, রীজ্ো-রাজ্যে মানুষ বন্যায় বিপন্ন হয়, গরিবের ঘরবাড়ি
কুটোর মতে ভেসে যায়, ভেসে যায় পশুপ্রাণী, শশ্যাদি প'চে যায়, মড়কের সম্ভাবন।
দেখ! দেয়, অথব। ভয়ংকরী থরায় রাজ্যের-পর-রাঁজ্য জ'লে যায়, মাসের-পর-মাঁস
ধ'রে অনাবুষ্টি, সেচের অভাবে লক্ষ-কোটি বিঘ1 জমি অনাবাদী থাকে, পানীয়
জলের জন্য হাহাকার, গরিবের অভুক্ত, দুতিক্ষের উপান্তে, গবাদি পশুদের কাঁতারে-
কাতারে ন1-খেয়ে মীর! পড়ার উপক্রম, সরকারকে ত্রাণের উদ্বোগ নিতে হয়।
রাজ্য সরকারের পক্ষে চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে গরিব মানুষগুলিকে বাচাবার
উদ্দোশ্তে ন্যুনতম ব্যবস্থা'দি গ্রহণ অশশ্তকর্তব্য হয়ে পড়ে । বন্যাক্রান্তদের উদ্ধারের
জন্য আশ্রয় শিবির খুলতে হয়, খাছা-পরিধেয়-ওষুধের ব্যবস্থা করতে হয়, বিপর্যন্ত
রাস্তাঘাট-সীকো-বীধ পুননির্সীণের উদ্যোগ নিতে হয়, জলনিকাঁশের জন্য আবস্তিক
আয়োজনের দিকে নজর দিতে হয়, ভেসে-যাঁওয়া ঘরবাড়ি ফের যাতে ভুক্তভোগী
মানুষজন তুলতে পারেন তার জন্য টাকা পৌছে দিতে হয়, নতুন ক'রে ফসল
বোনার জঙ্ত, বীজশস্-সার ইত্যাদির জঙ্, অর্থ বরাদ্দ করতে হয়, এ-ধরনের আরে।
নান] খুঁটিনাটি দায়িত্ব রাজ্য সরকারের উপর বর্তায়। যে-যে রাজ্য খরাপীড়িত,
সেখানেও রাজ্য সরকারের অনুরূপ দায়-দায়িত্ব পালনের স্বাভাবিক তৃমিকা।
সাধারণ মানুষ তাদের দৈনন্দিন দিনযাঁপনে সরকারকে বাদ দিয়েও চলতে পারেন,
আমাদের মতে! গরিব দেশে সরকারের কাছে তেমন-বেশি সাতাঁযা কেউই আশ
করেন ন?, কিন্তু বিপদের মুহূর্তে সরকাঁরি ভরসা সাহায্য ছাড়া এগৌনে। অসম্ভব |
শহরের-গ্রীমের-পাড়ার মীমনুষেরা অবশ্যই এগিয়ে আসেন ছূর্গতদের সাহাধ্যকল্পে,
গণ-আন্দৌলনের কর্মীর! ঝীপিয়ে পড়েন, একটু যাবা সচ্ছল, তারাও সাধ্যমতো
নানা সাহায্য নিয়ে কখনো-সখনে। এগিয়ে আসেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারি
ব্যবস্থার উপরই প্রধানত ত্রাপের জন্য নির্ভর করতে হয় । বিপদের মুহুর্তে বিপন্নদের
ঈষৎ পরিচর্যা সরকারের প্রধানতম কর্তব্য : আমাদের দেশে অন্তত এট]
স্বতঃসিদ্ধত। ব'লে বিবেচিত |
কিন্ত বডে ঘরের সন্তানেরা এখন কেন্দ্রে সরকার চালাচ্ছেন, তার চালাঁক-
চতুর নানা কথাবার্তা বলেন, আঁখুনকতম প্রযুক্তির উপযোগিত। নিয়ে লম্বা-চওড়া
বক্তৃতা ফাঁদেন, একবিংশ শতাব্দীর স্বপ্ন তাদের চোখের অঞ্জন ছেয়ে, তাঁদের
চিন্তাভাবন] এখন থেকে পুরোনো ধ্যানধারণীকে উল্টে দেবে । এখন পর্যন্ত যে-
ব্যবস্থা স্বাধীনতার পর থেকে চ'লে এসেছে, প্রাকৃতিক বিগর্ষয়হেহ সরকারি খাতে
জাণের জন্য যে-টাঁকা খরচ করা হয়ে থাকে, তার জোগান রাজ) ও কেন্দ্রীয়
সরকারকে যৌথভাঁবে করতে হয় | একটি নিদিষ্ট উত্বসীম1 পর্যন্ত ব্রণের খাতে রাজ্য
সরকারের যে-অর্থব্যয়, তাঁর অর্ধেক কেন্জ্রীয় সরকার দিতে বাধ্য । ভ্রাঁণের ব্যয় এই
উর্ধ্সীম1 অতিক্রম ক'রে গেলে কেন্দ্রীয় সর্ণকা'র পর্যবেক্ষক দল পাঁঠাঁন, সেই দল
বাড়তি খরচের হিশেব কষেন, সেই হিশেব অন্যায়ী কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য
সরকাঁরকে বাড়তি টাকা ত্রাণের উদ্দেশ্টে ধার দিয়ে থাকেন, দেই ধাঁর পনেরো
বছরের মধ্যে শতকরা নয় ভাগ সুদে রাজ্য সরকারকে ফেরত পাঠাতে হয় |
কিন্ত জীবনদর্শন ছায়া! ফেলে । ত্রাণের অধিকাংশ টাকাই জোগাতে হয় রাজ্য
সরকারকে, খণ হিশেবে কেন্দ্র যে-টাঁক। দিয়ে থাকেন তা স্থদে-আসলে ফেরত দিতে
হয়। হ'লে কী হবে, জীবনদর্শনের অভিব্যক্তি তো! এড়াঁনে। সম্ভব নয় । প্রাকৃতিক
বিপর্যয়ে বিপদগ্রস্ত হন দেশের গরিব মান্ষগুলি, তারান1 খেতে পেয়ে মীরা পড়েন,
তাদের গোরু-ছাঁগল ধ্বংস হয়, তাদের মধ্যে মহাঁমারীর প্রকোঁপ দেখ] দেয়, তাদের
ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে, তাঁদের মাঠের শঙ্কয প'চে অথব1। জালে যায়। কিন্ত তাতে
বড়োলোঁকদের কী, গরিবর বিপন্ন ব'লেই সরকারকে কীঁড়ি-কাঁড়ি টাকা খরচ
করতে হবে, তা তো! ঠিক নয়। বক্তৃতার ছলে মাঝে-মধ্যে একটু সমা্জতম্ত্রের উল্লেখ
৪৫
করা ঠিক আছে, কিন্তু তা ব'লে মাত্রা ছাড়িয়ে যাঁওয়! তো ঠিক নয়, প্রাকৃতিক
বিপর্যয়ের মূহুর্তে ব্রাণের প্রয়োজন একটু-আধটু হয়তো থাকে, কিন্ত তাতে সরকারকে
জড়ানো কেন? সরকারের দায়-দায়িত্বের সীমা-পরিসীম। নেই, সরকারকে হাজারো
থাতে কত টাকা খরচ করতে হচ্ছে, প্রতিরক্ষার খরচ আছে, গুপুচরবাঁহিনীর খরচ,
মন্ত্রীদের বিলাসসফরের খরচ, বিভিন্ন উৎসবের খরচ, দূরদর্শনে নাঁম-তথা-তসবির.
মাহাত্স্যপ্রচারের খরচ, ত্রাঁণের জন্য খরচের ঝামেল৷ আবার সরকারের উপর
চাপাঁনে। কেন?
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সিদ্ধান্তে পৌছেছেন, সরকারি খাতে অপব্যয় রোধ করতে
হবে, এবং ত্রাণের জন্য ব্যয় অন্যতম প্রধান অপব্যয় | অর্থমন্ত্রক তাই অর্থ কমিশনকে
নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা বিবেচনা ক'রে দেখুন, এখন থেকে ত্রাণের জন্য বরাদ্দ,
অন্তত কেন্দ্রীয় সরকারের বাঁজেট থেকে, পুরোপুরি বাদ দেওয়া যায় কিনা । বরঞ্চ
একটি জাতীয় বীম। ভাগ্ডের ব্যবস্থা করা হোক, প্রত্যেকটি রাজ্য সরকার তাদের
সংগৃহীত রাঁজস্বের একটি অংশ প্রতি বছর এই বীমা ভীঞ্ডে জম দেবেন । ত্রাণের
টাকা জোগানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আর কোনে। দাঁয় থাকবে না, কেন্দ্র
বীমা ভাঁগ্ডে একটি কানাঁকড়িও দেবেন না, ভাঁগুটি একমাত্র রাজ্য সরকারদের,
দেওয়া! টীকা থেকেই ভরাট করা হবে । খুবই যুক্তিযুক্ত কথা এটা, কেন্দ্রে তো
আর খপ্পা বা বন্যা হয় না, স্থতরাঁং কেন্দ্র কেন ত্রাণের টাকা দেবে : প্রাকৃতিক:
বিপর্যয় ঘটে রাঁজ্যে-রাজ্যে, স্থতরাং রাজ্য সরকারগুলিরই তো উচিত ব্রাণের টাকার
ব্যবস্থা করা ।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক মাকিন দর্শনে পুরোপুরি মজেছেন | এখন থেকে ত্রাঁণব্যবস্থা
হবে ফেলো-কড়ি-মাখো-তেল নীতি-অনুযাঁয়ী। যেই রাজ্য সরকার জাতীয়
বিপদ খীম। ভাগে বেশি টাকা দেবেন, ত্রাণের সময় তীর বেশি টাঁকা পাঁবেন।
যে-রাজ্য সরকারের অত টাকা জম! দেওয়ার সামর্থ্য নেই. কী আর করা যাবে,
প্রলয়ংকর বন্যা হ'লেও তারা খীমাভাণ্ড থেকে কম হাঁরে সাহায্য পাবেন, মানুষজন
যদি না-খেয়ে মাঁরাঁও পড়ে, কী আর করা, মহামারীতে যদি লক্ষ-লক্ষ গ্রাম-শহর-
বাসীর জীবনসংশয়ও হয়, কী আর করা, যদি রাস্তাঘাট-স'কো-পয়ঃপ্রণালী-বাধ
ইত্যাদি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েও থাকে, কী আর কর] ।
দেশের ছুদিন, অপব্যয় রুখতে হবে। বিগত জুন মাঁসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক
থেকে অর্থ কমিশনের কাছে নির্দেশ গেছে, খোদ প্রধান মন্ত্রী তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন!
দেশে সমাজতম্্ব আসতে আর বাঁকি নেই ।
৪6৬
ঘটিবাটি বন্ধ ক'রে দেবেন ?
কলকাতায় সাত-সাঁতজন রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী সভা করলেন, সম্মিলিত প্রস্তাব গ্রহণ
করলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নানাবিধ অনাচার, দৌরাক্র্যের বিরুদ্ধে তার! সোচ্চার
হলেন । এদের বড়ো বাঁড় বেড়েছে, কংগ্রেসী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মতো বশংবদ
না এদের আলাপ-আচরণ, এদের বলাই চলে দেশদ্রোহী, কেন্দ্রের সরকারের
বিরুদ্ধে যারাই টণ্যাঁফে। করে, কে না জানে, তাঁরা সবাই দেশদ্রোহী, কেন্দ্রের
বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই দেশপ্রোহিতা । এই সব দেশদ্রোহী মুখ্যমন্ত্রীদের একটু
বুঝিয়ে দিতে হবে আমাদের জমিদারিতে বাস ক'রে আমাদের চোখ-রাঁঙানে।
চলবে ন।, ঘটিবাঁটি বন্ধ ক'রে দেওয়। হবে গুদের ।
মুখে তড়পন্থচ্ছেন প্রধান মন্ত্রী, কিন্তু মনে-মনে তিনি নিজেও জানেন তেমন
বেশি কিছু করবার মতো কব্জির জোর তাঁর নেই, দেশের সর্বত্র তার ও তার
দলের অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ সংঘবদ্ধ হচ্ছেন, কোনে! অকংগ্রেসী রাজ্য
সরকারের বিরুদ্ধে একটু বাড়াবাড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করলে দেশ ভডুড়ে
আগুন জলবে | কিন্তু চিমটি কাটতে তো অস্থৃবিধা নেই । তাই পশ্চিম বঙ্গে
মাঝে-মধ্যে ঘিসিওবাবুকে একটু চোখ টিপে দেওয়] হয়, ত্রিপুরায় উপজাতি সমিতির
গোপন সাঁকরেদদের উসকে দেওয়া] হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে অন্ত্র প্রদেশে পাঠিয়ে
আমলাদের চোখ রাঙিয়ে বল! হয়, খবরদার, দিল্লির হুকুম যদ্দি তামিল না করো,
তোমাদের গর্দান যাবে; কর্ণাটকে ব্যাঙ্ক খণমেলার অছিলায় লোক-খ্যাপানে।
হরিন্গুটের ব্যবস্থা করা হয়। এবং, সব শেষে, গত সপ্তাহে কেরল সরকারের
ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ওভারড্রাফট দেওয়। বন্ধ ক'রে দেওয়!
হয়। অকংগ্রেপী মুখ্যমন্ত্রীদের বড্ড বাড় বেড়েছে, তার একত্র হয়ে হন্িতঘি শুরু
করেছেন, তীঁদের টিকি যে দিল্লির সরকারের কাছে বাধা ত। একটু বুঝিয়ে দিঠে
হবে, কেরলকে দিয়ে শুরু করা যাক, ওদের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা পাওয়'
বন্ধ ক'রে দাও।
স্বৈরোচারীদের চোখের চামড়া অবশ্য থাকে না, চোখের চামড়া! থাকলে
স্বৈরাচারী হওয়া যায় না। বর্তমান বছরে কেন্দ্রীয় আয়-ব্যয়ের হিশেবে দশ
৪৭
হাজার কোটি টাকার মতো ঘাটতি চলছে, এই ঘাটতি মেটাবাঁর জন্য রিজার্ভ
ব্যাঙ্কের উপর হুকুম জারি ক'রে দশ হাজার কোটি টাকার বাঁড়তি নোট ছাপিয়েছেন
কেন্দ্রীয় সরকার | রিজার্ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দশ হাঁজার কোটি
টাকার ধণ নিলে তাতে দোষের কিছু নেই, কিন্তু কেরল সরকারের পঁচিশ কোটি
টাকার খণ বরদাস্ত করা হবে না, ওটী যে অকংগ্রেসী সরকার ; নিজের বেলা
আঁটিসীটি, পরের বেল! দাতকপাটি । “শ্বরাচার কী, অনেক সময় মস্ত প্রবন্ধ ফেঁদে
বোঁঝাঁবার চেষ্টা করি আমর | বিস্তৃত ব্যাখ্যার অথচ কোনো প্রয়োজনই নেই,
কেরল সরকারকে টাঁকা-দেওয়া বন্ধ করা থেকেই স্বৈরাচারের যথার্থ রূপ আমাদের
সামনে অতি স্পষ্ট হয়ে দেখা দেয় ।
টাকার ঘাটতি পড়লে কেন্দ্রীয় সরকাঁর নোট ছাপাঁতে পারেন, রাজ্য সরকারের!
পারেন ন|, তাঁরা বড়ো জোর দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, দ্বারস্থ
হ'তে পারেন, রিজার্ড ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সাময়িকভাবে কিছু খণ চাইতে পারেন,
যাঁকে বল৷ হয় ওভারড্রাফট | প্রত্যেক রাঁজ্য সরকারের টাকাঁকড়ি-হিশেবপত্র
রিজার্ভ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত থাকে, অস্থুবিধায় পড়লে সেই ব্যাঙ্কের কাছ থেকে একটু-
আধটু বাঁড়তি টাক! চাইব হক নিশ্চয়ই রাজ্য সরকারগুলির আছে। কিন্তু এই
অধিকারেও কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ ক'রে বসেছেন । কোন্ রাজা সরকা'র কত
ওভারড্রীফউ পেতে পারেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাঁছ থেকে, প্রত্যেকটি রাজ্যের ক্ষেত্রে
তা ছক কেটে ব'লে দেওয় হয়েছে, প্রায় লক্ষমণ-গপ্ডির মতো ব্যাপার, পেরোবার
উপায় নেই। পেরোলেই গর্দান যাবে, টাঁকা বন্ধ ক'রে দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয়
সরকার [নজে কিন্ত স্বাধীন মুক্তপুকষ, দশ-কুড়ি-তিরিশ হাঁজার কোটি টাকার _
কিংবা তারও বেশি-_ নোট ছাপিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে যথেচ্ছ ধার
নেবার অধিকার তার বীধাবন্ধহীন |
তাছাড়া, যে-রাঁজ্য সরকারকে না-প্ছন্দ, তাকে বেকায়দায় ফেলা কেক্্রীয়
সরকারের পক্ষে অতীব সোজা । সংবিধানের নির্দেশ-অন্ুযায়ী প্রত্যেকটি রাঁজ্য
সরকার আয়কর এবং অন্তঃশুফ থেকে সংগৃহীত রাজব্বের ভাগ পেয়ে থাকেন।
যোজনা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত স্বত্র-অনুযাঁয়ী রাজ্য সরকারগুলির প্রতি বছর
পরিকল্পন! সাহায্যও প্রাপ্য । এবং, ফের সংবিধানের নির্দেশ অনুযাঁয়ীই, কোনে-
কোনে। রাজ্য জাতীয় তহবিল থেকে বিশেষ নানা অনুদান পেয়ে থাকেন,
বিভিন্ন অনুদানের পরিমাণ অর্থ কমিশন থেকে স্থির ক'রে দেওয়। হয় | রাষ্ত্রীয়
ব্যবস্থায় জাতীয় তহবিলের পুরো টাঁকাই কেন্দ্রীয় সরকারের তত্বাবধানে মন্ডুত
৪৮
রাখার রেওয়াজ। আয়কর-অন্তঃশুক্ক বাবদ যে-টাঁকা জম পড়ে, তা-ও কেন্দ্রের
কাছেই গচ্ছিত থাকে, এবং কিস্তিতে-কিস্তিতে তা রাজ্য সরকাঁরদের কাছে পৌছে
দেওয়া হয় । কোনো আইনগত বিধান নেই, স্রেফ রীতি-্মভষায়ী, কেন্দ্র কিস্তির
টাক রাজ্যদের দিয়ে থাকেন, অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্কে রাজ্য সবকারের তহবিলে জমা
ক'রে দেন । অন্ত পক্ষে রাজ্য সরকারেরও কেন্ত্রের কাছে কিছু টাকা দেয় থাকে,
যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের কাঁছে অতীতে-ধার-করা৷ খণের স্থদ ও আসল পরিশোধ
কিস্তিবন্দি হিশেবে, কিংবা হয়তো! রাজোর বিদ্যুৎ পরিষদ কেন্দ্রীয় সংস্থা! কোল
ইত্ডিয়ার কাঁছ থেকে কয়লা কিনেছে, তার দাম মেটানো বাবদ |
এখন ধরুন প্রধান মন্ত্রীর সরকার কোনে] রাজ্য সরকার সম্পর্কে মনস্থির
করেছেন, ওকে দেখতে নারি, ওর চলন বাঁকা, এঁ রাজ্য সরকারকে একটু জব্দ করতে
হবে| উপাঁয় ভারি সোঁজা। এ রাজ্যের প্রাপ্য কিস্তির টাকা, তা আয়কর-অন্তঃ-
শুক্কের ভাগই হোক, অর্থ কমিশন-নির্ধারিত অনুদাঁনই হোক, বা পরিকল্পন1 সাহাঁধ্যই
হোঁক, চেপে দাও, কোনে] ছুতো। তুলে রাঁজ্য সরকারের প্রাপ্য টাঁকা জম দিতে দেরি
করে!, রীতি-নঈতি যা-ই হোঁক না কেন । সেই সঙ্গে, আরো-একটু রগড় কবো :
কয়লার দাম বাবদ কোল ইগ্ডিয়া এ রাঁজ্যের বিদ্যুৎ পর্যদের কাছ থেকে যে-টাঁকা
পাঁবে, বলাঁকওয়া নেই, সেটা কেটে নাও, কিংবা কোনে! পুরোনো খণের আসল ব'
স্থদবণবদ যে-অর্থ কেন্দ্রের প্রাপ্য আজ থেকে তিন মাস বাঁদে, আজই ত1 দাবি ক'রে
বসো, দাবি ক'রে বসে রাজ্যকে যে-পরিমীণ টাকা ছাড়ার কথা, ত1 থেকে বাদ
দিয়ে দাও। এ-রকম ক'রে যেত্তে পারলে রাজ্য সরকারটি গভীর গাঁড্ডায় পড়বেন,
খরচপাতি মেটাতে হিমশিম হবেন, রিজার্ভ বণঙ্কে তাঁর তহবিল শৃহ্ে গিয়ে ঠেকবে,
বাধ্য হয়ে তাঁকে তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ওভারড্রীফট চাইতে হবে, তখন
রিজার্ভ ব্যান্ককে নির্দেশ দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের সেই অনুরোধ সদন্তে প্রত্যাখ্যান
করাঁর জন্য, অর্থীৎ রাজ্য সরকারকে টাকা দেওয়া বন্ধ ক'রে দেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক |
যেমন করা হয়েছে গত সপ্তাহে কেরল সরকারের ক্ষেত্রে, যেমন করা হয়েছিল
বছর কয়েক আগে পশ্চিম বঙ্গের ক্ষেত্রেও । প্রধান মন্ত্রী একটু নাক ঘ'ষে দিতে চান
ছুবিনীত রাঁজ্য সরকারগুলির | বড়োদিনের ছুটি সীমনে, সরকারি কর্মচারী-শিক্ষক-
হাসপাতাল কর্মী-পরিবহণ কর্মণ ইত্যাদি সবাইকে বড়োঁদিনের আগে মাইনেপত্তর
দিতে চূড়ান্ত অনস্থবিধায় পড়বেন রাজ্য সরকার, প্রধানমন্ত্রীর তাঁতে বিমল আনন্দ
হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কেরলের মানুষ এ রাজ্য থেকে প্রধান মন্ত্রীর দলকে
উৎখাত করেছেন, কিন্তু ধাদের রন্ধে-রন্ধ্ধে স্বৈরাচারের উন্মাদনা, তাঁদের পক্ষে
৪৯
জনগণের রায় বরদাস্ত করা বড়ো কঠিন । অতএব কেরলের মাহ্ষদের একটু চিমটি.
কাঁটো, জনগণ-কর্তৃক নির্বাচিত সরকারকে একটু অপদস্থ করো, কেন্দ্রের সঙ্গে টক্কর
লাগাতে এলে তার কী পরিণাম তা এদের একটু নাঁকে ঝামা ঘ'ষে বুঝিয়ে দাও ।
কেরল সরকার সাময়িক সংকট অবশ্য ইতিমধ্যে সামলে উঠেছেন । কিন্ত
বর্তমান প্রধান মন্ত্রীর জমানায় এই ধরনের অভব্য আচরণের পুনরাবৃত্তি হ'তে বাধ্য ।
গত সপ্তাহে কেরল সরকারকে যেভাবে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা হয়েছে, কয়েক
সপ্তাহ বাদে হয়তো কর্ণাটক বা অন্ধ সরকারকে করা হবে অনুরূপ উপায়ে, কিংবা!
কে জানে, এঁ রাজ্যে যেহেতু নির্বাচন অত্যাসন্ন, ত্রিপুরার সরকারকে ৷ কেন্দ্রে
ব্যবহারে জাতীয় সংহতি বৃদ্ধি প্রাপ্ধ হবে না, প্রধান মন্ত্রী এবং সাধারণভাবে শাসক-
শ্রেণী সম্পর্কে খিভিন্ন রাজ্যে জনবিক্ষোভ গভীরতর হবে, কিন্তু সে-সব নিয়ে নতুন
দিল্লির শাসক্কুল আদে ভাবিত ব'লে মনে হয় না, অগ্ভভক্ষ-ধনুণ্ত ণঃ-দর্শনে তীরা
বিশ্বাস আরোপ করেছেন, একটা-দ্ুটে। চিমটি-খামচি কেটে সাময়িক যে-বাঁড়তি
আনন্দ এই মুহূর্তে তারা উপভোগ করতে পারছেন, তাঁতেই তীরা সন্তষ্ট, জাতীয়
সংহতির মতো গুরুগত্ভীর বিষয় তাঁদের চিন্ত1-ভাবনীর গণ্ডির বাইরে। কিন্ত
যেখানে কেন্দ্র সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছেন, জাতির সামগ্রিক স্বার্থে,
জাতীয় এঁক্য অটুট রাখবার তাগিদে, রীঁজ্য সরকীরগুলিকেই সেখানে এগিয়ে
আসতে হবে। কেন্দ্রের আক্রমণের বিরুদ্ধে তাদের এঁক্যবদ্ধ হ'তে হবে, জাতীয়
স্বার্থেই এটা প্রয়োজন | হঠাৎ টাকা বন্ধ ক'রে দিয়ে ভবিষ্যতে কেন্দ্র যাতে
কোনে রাজ্যকে অস্থবিধাঁয় ফেলতে সমর্থ ন হয়, সেই উদ্দেশ্টে অকংগ্রেসী রাজা
সরকারগুলির পক্ষে পারস্পরিক বোঝাপড়ায় উপনীত হওয়া মনে হয় একান্ত
প্রয়োজন । এই বোঝাঁপড়ার অঙ্গ হিশেবে ঘোষণ।| করা যেতে পাঁরে, এখন থেকে
ওভাঁরড্রাফ,টের উর্ধ্বসীম। অতিক্রমের অভিযোগে কোনে রাজ্য সরকারকে যদি
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়, সঙ্গে-সঙ্গে অন্ত অকংগ্রেষী রাজ্য
সরকাবগুলি সবাই মিলে সেই রাজ্যকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিন। স্থদে টাকা ধার
দেবেন, যতদিন পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাঁর নির্দেশ তুলে ন। নিচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই
ধারের টাকা ফেরত চাওয় হবে না । কেরলের মানুষ মুশকিলে পড়লে তাদের
দিকে হাত বাড়িয়ে দেবেন পশ্চিম বঙ্গ-কর্ণাটক-অন্তধ্ প্রদেশ-অসম-ত্রিপুরার মাহুষ,
পশ্চিম বঙ্গের জনসাধারণ মুশকিলে পড়লে তীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াবেন
কেরল-কর্ণাটক-অন্ধর প্রদেশ ইত্যাপি রাজ্যের মানুষ, অন্তর প্রদেশ বিপদে পড়লেও
অনুরূপ ব্যবস্থা, যদি কর্ণাটককে জব্খ করার চেষ্টা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে
৫৩
তা হ'লেও তাই । কেন্দ্রীয় সরকারের অমানবিক আচরণের যোগ্য প্রত্যুত্তর এই
পাঁরম্পরিক-কাছে-আসার মধ্য দিয়েই দিতে হবে । তাতে প্রধান মন্ত্রী ও তার
পারিষদদের হয়তো! তেমন লঙ্জাবোঁধ হবে না, কিন্তু সম্ভবত চৈতন্ভোদয় হবে যে
এ-ধরনের নোংরামি আথেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মাহুষদের কেন্দ্রের প্রতি
আরো বেশি বিদ্িষ্ট ক'রে তুলবে ।
পঁচিশ কোটি টাকার জন্য রিজার্ ব্যাঙ্ক কেরল সরকারের চেক বন্ধ ক'রে দিল।
ছু'সপ্তাহ আগে অন্য যে-ছুয় রাজোর মুখ্যমন্ত্রীবুন্দ কলকাতায় মিলিত হয়েছিলেন,
তাঁদের পক্ষে অতি স্বচ্ছন্দে নিজেদের ভাগ থেকে সাময়িকভাবে এই পঁচিশ কোটি
টাকার ব্যবস্থা! করা সম্ভব হতো । যদি এখন থেকে কেন্দ্রকে জানিয়ে দেওয়] যায়,
নতুন দিল্লির হুমকির কীছে মাথা নত করবেন না রাজ্য সরকারেরা, কৌোনো-এক
রাজ্য সরকারের টাঁকা বন্ধ করলে অন্থা বাজ্য সরকারর। সাহাষ্যের হাত বাড়িয়ে
দেবেন, তা হ'লে হয়তো নতুন দিল্লির করাব্যক্তিরা একটু সংযত হ'তে শিথবেন |
সেই সঙ্গে মনে হয় অন্য-একটি ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে এঁক্যবদ্ধ
পদক্ষেপের সময় হয়েছে । আয়কর ও অস্তঃশ্ুক্ক থেকে সংগৃহীত রাজস্বের যে-অংশ
রাজ্যগুলির প্রাপ্য, তাঁর উপর খধরদারি করার কোনে। আধকার কেন্দ্রের নেই |
সংবিধানের নির্দেশে সেই রাজস্ব রাজ্যগুলির কাছে আসছে, কেন্ত্রর দয়ায় নয় | অথচ
রাজস্বেব সেই টাক। প্রথম দফায় পুরোটা জমা পড়ছে জাতীয় তহবিলে, এবং
কেন্দ্রের খেয়াল-খুশি মতো ত। রাজ্যগুলিকে দেওয়1 হচ্ছে, কখনে আদে দেওয়া
হচ্ছে না, অথব1 অনেক দেরি ক'রে দেওয়া ইচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রীর] অত্যন্ত যুক্তির সঙ্গেই
এই দাবি করতে পারেন, সংগৃহীত রাজন্বের যে-অংশে রাজ্যগুলির অধিকার, তা
আলাঁদ! একটি বিশেষ তহবিলে জমা৷ দেওয়া হোক এখন থেকে, বিশেষ তহবিলের
উপর কেন্দ্রের কর্তালি করার কোনে সুযোগ থাকবে ন'. রাষ্ট্র যনি প্রধান হিশেব-
রক্ষক, সংবিধানে ধার ক্ষমতা নিদিষ্ট করা আছে, সেই কম্পট্টোলার ও অভিটর-
জেন'রেল এই তহবিলের দায়-দাঁয়িত্বে থাকবেন, যেই প্লাজ্যকে যখন য] দেয়,
তিনিই তদনুযাঁয়ী দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন । অবশ্য মোহ থাঁকা উচিত নয়, দাবি
পেশ করলেই কেন্দ্রীয় সরকার সুবোধ বালকের মতো! মেনে নেবেন, তা৷ অবশ্ঠ
হবার নয়, কিন্ত রাজ্যে-রাজ্যে যদি আলোড়ন সৃষ্টি করা যায়, সর্বস্তরের মানুষকে
বোঝানো যাঁয় কোন্ কাঠি কোথায় কে কীভাবে নাড়িয়ে থাকেন, প্রধান মন্ত্রী ও
তার পাঁরিষদবর্গ কিছুটা পিছু হঠতে অবশ্যই বাধ্য হবেন, এই ওভারড়ীফ.ট-ওভার-
ড্রাফট খেলার রঙ্গ ভঙ্গ হবে তখন ।
৫১
জ্বালানির মতো ভ্বলুন !
নতুন বিধান সভা বসেছে । কংগ্রেসীরা এবার আরো-একটু কমজোরি, কিন্ত বিরাজ
করছেন, বিরোধী দল হিশেবে নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার জাহির করছেন ।
এক কংগ্রেসী সদস্য, কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন বেশ কয়েক বছর, বিলাপ করলেন ক'দিন
আগে পশ্চিম বঙ্গে শিল্পের তুলনামূলক অধোগতির কথা উল্লেখ ক'রে । দাঁক্ষিণীত্য-
মহাঁরাষই-গুজরাট শিল্পের ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাঁচ্ছে, আমাদের রাজ্যে তুলনায়
সব-কিছু মিয়মাণ । এই দুরবস্থা দেখে একজন বাঁগালি হিশেবে গুর নাঁকি লঙ্জা-
বোধ হয়।
পাঁপবোঁধ হয় না? কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন, বিশ্ববিদ্ভালয়ে অধ্যাপন। করেছেন,
নিরক্ষর তে] বলা যাঁবে না তাঁকে । মন্ত্রী থাকাকালীন মাশুল সমীকরণ নীতি নিয়ে
সামান্যতম প্রতিবাদ উচ্চারণ করেছেন, পশ্চিম বঙ্গে কেন্দ্রীয় বিনিয়োগ কেন ক্ষীণ
থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে তা নিয়ে এমনকি অর্ধস্ফুট প্রশ্নও রেখেছেন, কেন্দ্রীয় আখিক
প্রতিষ্ঠানগুলি পশ্চিম বঙ্গ তথা পূর্বাঞ্চলে টাক1 খাটাতে কেন এত অনাঁসক্ত সে-বিষয়ে
কোনে হাল্কা উদ্বেগও কোনোদিন প্রকাশ করেছেন, যৌজনাক্ষেত্রে গড প্রতি
কেন্দ্রীয় সাহায্য বছরের-পর-ধছর ধ'রে পশ্চিম বঙ্গের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম কোন্
আশ্চয বিচারের নির্তরে, এমনকি চুপি-ঢুপিও নিজেদের মধ্যে কখনো! আলোচনা
করেছেন ? কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি অধিষ্িত দুই সংস্থা, তুলো কর্পোরেশন
এবং পাট কর্পোরেশন, উভয়ের আপাতউদেশ্য এক : কী ক'রে উৎপন্ন পণ্যের জন্য
ম্তাষ্য দাম কৃষকদের পৌছে দেওয়। যায়, কী ক'রে অধিক ফলনের বছর মৃল্যন্ীস-
জনিত বিপদের হাত থেকে তাঁদের রক্ষা কর] সম্ভব। উভয় ক্ষেত্রেই সরকার কর্তৃক
সহায়ক মূল্য ঘোষণার ব্যবস্থা আছে, এবং ঢঙ্কানিনাদসহকীরে নীতি বিঘোষিত যে
বাজারে দাম হু-ছু ক'রে নিচে নামবাঁর উপক্রম দেখা দিলে উভয় পণ্যের ক্ষেত্রেই
কেন্দ্রীয় সংস্থা দ্বারা -_ তুলোর ক্ষেত্রে তুলে। কর্পোরেশন, পাটের ক্ষেত্রে পাঁট কর্পো-
রেশন -- নির্ধারিত সহায়ক যূল্যে তুলো! বা পাঁট কেনবা'র ব্যবস্থা করবেন, সাধারণ
কষক-গরিব কৃষক সর্বনাশের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবেন । কিন্তু এক যাত্রায়
পৃথক ফল । একাদিক্রমে বু বছর ধ'রে তুলে! কর্পোরেশন নির্ধারিত সহায়ক মূল্যের
৫২
দ্িগুণ-তিনগুণ বেশি দাম দিয়ে গুজরাটে-মহারাষ্ট্রে-মধ্য প্রদেশে ধনী কুষককুলকে খুশি
রাখবার তাগিদে তুলো কিনে গেছেন । অন্ত পক্ষে, পাটের দাম এমনকি সহায়ক
যূল্যেরও অনেক নিচে নেমে গেছে, বিহাঁর-উড়িষ্য1-পশ্চিম বঙ্গ-অসমের সহায়সগ্বল-
হীন গরিব চাষীরা সমৃহ বিপদের মুখোমুখি, কিন্তু, বছরের-পর-বছর গড়িয়ে গেছে,
পাট কর্পোরেশন নিরাসক্ত বৈরাগীর ভূমিকা গ্রহণ করেছে। যিনি কেন্দ্রে মন্ত্রী
ছিলেন, খোদ বাঁণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন, তিনি জানেন না এই কাহিনী? তার
মন্ত্রকের নির্দেশেই কি এধরনের ঘটনাবলী ঘটানো হয়নি? এবং কাদের স্বার্থে
এবংবিধ দ্বিরীচারী নীতি, তা-ও কি তার অজান1? মনের অগোচরে অবশ্ত পাপ নেই,
কিন্তু মনের গোঁচরে যাঁ, পাঁপবোধহীনতার আয়ে ফ্ীড়িয়ে তাকেও বোধহয়
এড়িয়ে যাঁওয়া খাঁয়। কে জানে, এই প্রজ্ঞারই হয়তো অপর নাম উচ্চতর দর্শন |
পটভূমিকা মাঝে-মাঝে পাল্টায়, কিন্ত অভিনয়দর্পণে অন্ত-কোনে। ইতর-
বিশেষ ঘটে না। আপাতত ফলাও ক'রে খিজ্ঞাপিত হচ্ছে, পাটশিল্পের পুনর্গ ঠন-
আধুনিকীকরণের জন্য কেন্দ্রীয় আথিক সংস্থাদি মারফত দেড়শো না আড়াইশে।
কোটি টাকা পাঁট্রে মালিকদের পৌছে দেওয়। হচ্ছে । এট] চলিত ভাষায় যাঁকে
বল হয় আপে রসিকতা । মালিকরা পাটশিল্পকে শোষণ ক'রে-ক'রে শ্রু
ছিবেড়েটা! ফেলে রেখেছেন, এখন তাঁরা অন্যত্র পরিভ্রমণে যাবেন, এই শিল্পের
নবীকরণ-আধুনিকীকরণ ইত্যাদিতে তাদের বিন্দুমীত্র আগ্রহ নেই। স্তরাং যে-
টাকার কথা বলা হয়েছে, তা অব্যবন্ৃতই থাকবে । অথচ যে-মৃহূর্তে বল! হলো',
এভাবে তো! চলতে পারে না, লক্ষ-লক্ষ শ্রমজীবী-কৃষিজীবী মানুষের ভাগ্য জড়িত
পাটশিল্সের সঙ্গে, এই শিল্পকে রাষ্ীয়ত্ব করা হোক, তারপর রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ
নির্দেশনায় আঁধুনিকীকরণের কাঁজ শুরু হোক, কেন্দ্রের সমাজতান্ত্রিক সরকার ক্ষেপে
আগুন, তাঁর রেগান সাহেবের কাছ থেকে অর্থশাস্ত্রে দীক্ষা নিয়েছেন, তাদের
শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তারা প'ট শিল্পের জাতীয়করণ প্রস্তাবের বিরোধিতা
করবেন | শ্রেণীস্বার্থযুক্ত নাড়ির টানের তুলনা নেই।
পাট শিল্প না হয় পুরোনে। কাস্থন্দি, কংগ্রেসি পণ্ডিতজনর।| সম্ভবত খলবেন
ইতিহাসের অমোঘ বিধানে পৃথিবীতে এই শিল্পের দিন শেষ হয়ে আঁসছে, এবার
অন্ত দিকে মুখ ফেরাতে হবে । ইস্পাত ও ইস্পাতভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের
বিকল্প স্বপ্ন স্বাধীনতার আগে থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ দেখতে শুরু করেছিলেন।
আকাশকুনুম রচনা নয়, সেই স্বপ্রের বাস্তব ভিত্তি ছিল : পশ্চিম বঙ্গে এবং আশে-
পাশে প্রভূত খনিজ সম্পদ, লোহা, সেই সঙ্গে কয়লা, কয়লাতে লোহা গালিয়ে
৫৩
ইস্পাত, সেই ইস্পাত পিটিয়ে হাজারো যন্ত্রপাতি-কল-সরঞ্রাম | ভৌগোলিক কিছু
সুবিধা পশ্চিম বঙ্গের ছিল, ইস্পাত তথ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ক্ষেত্রে ; গড়পড়তা
উৎপাদনব্যয়ে আমাদের সঙ্গে অন্ত-কারো পাল্লা দেওয়ার সম্তাবন1 ছিল অতি সংকীর্ঘ।
সম্তা কয়লা, সম্তা ইস্পাত, সম্তায় যন্ত্রপাতি তৈরি, যে-ন্ত্রপাতি সারা দেশে এবং
বিদেশেও বিকোবে, শিল্পের প্রসার ঘটবে, আমাদের ছেলে-মেয়ের] কাঁজ পাবে,
দেশের সামাজিক কাঠামো! যতদিন পুরোপুরি বদল ন1 হচ্ছে কোনো অমরাবতী
তৈরি হবে না, কিন্তু ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিম বঙ্গেও কিয়ৎ
পরিমাণে নতুন শিল্পের পত্তন হবে, কর্মহীনতাঁজনিত সংকটের সামান্য কিছু উপশমের
সম্ভাবনা থাকবে | কেন্দ্রের দয়ালু সরকাঁব মাশুন সমীকরণ নীতি প্রবর্তন ক'রে
আজ থেকে তিরিশ বছর আগে সে-সন্তাঁবনার গুড়ে বালি ঢাললেন, ফতোয়। জারি
ক'রে সারা দেশে লোহা! ও ইম্পাঁতের দা এক ক'রে দেওয়া হলো, রেলের ক্ষেত্রে
এমন-এক মাশুল নীতি চাঁলু করলেন যার ফলে পশ্চিম বঙ্গের কয়লা আসাঁনসৌল,
দুর্গাপুর, হলদিয়া, খড়গপুরে যে-দাঁমে বিকোয়, তার চেয়ে কম দামে নাসিক বা
আমেদাবাদ বা চগ্ডীগড়ে পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হলো । অর্থাৎ
আমাদের ভৌগোলিক স্ববিধাঁটি কেডে নেওয়! হলো, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে আমাদের
আপেক্ষিক আথিক সুবিধাটিও সেই সঙ্গে । যুক্তি দীড় করানো হলো।, শু পূর্বাঞ্চলে
কেন, দেশের সবত্র ইস্পাত-ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গ'ড়ে তোলা প্রয়োজন সৃষমাযুক্ত
উন্নতির স্বার্থে, পশ্চিম বঙ্গলহ এই অঞ্চলের রাজ্যগুলিকে তাই ত্যাগ স্বীকার করতে
হবে । যুক্তিতে ক্রটি নেই, সত্যিই তো, শুধু আমাদের এখানে কেন, সার! দেশেই
সমান তালে শিল্পোৎপাঁদন ঘটুক, তাঁর জন্য যদি কিছু ত্যাগ করতে হয়, এই রাজ্যের
মানুষরা নিশ্চয়ই তা খুশি মনে মেনে নেবে | কিগ্ত যে-প্রশ্ন পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীরা
গত তিন দশক ধ'রে ক'রে আসছেন, তার উত্তর মেলেনি । মাশুল সমীকরণ কি
শুধু কয়লা-লোহা-ইম্পাতের ক্ষেত্রেই হবে, অন্য উপাদানের ব1 কীচামালের ক্ষেত্রে
হবে না, রাসায়নিক দ্রব্যাদির ক্ষেত্রে হবে না, আমাদের কয়লা-লোহা-ইম্পাত
একই দামে পশ্চিম-উপকৃলবর্তণ প্াজ্যগুলিতে যাঁচ্ছে, তা৷ হ'লে ওখানকার তুলো
কিংব। প্রাকৃতিক গ্যাঁস কেন আমরাঁও ওখানকার দামেই এখানে পাবে না?
ইতিমধ্যে অনেক কমিটি বসেছে, অনেক রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, কয়লা-লোহা-
ইস্পাতের মাশুল সমীকরণের একচক্ষু নীতি অবৈজ্ঞানিক তা মেনে নেওয়! হয়েছে,
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখানেও ইতিহাসের দোহাই টানছেন । সম্তায় লোহা-
'কয়লা ইস্পাত পেয়ে দেশের নানা জায়গায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গ'ড়ে উঠেছে, এখন
৫৪
হঠাৎ এঁ নীতি পরিবর্তন করলে ওদের ক্ষেত্রে নানা অন্থবিধা দেখ! দেবে, সেটা
কি শিষ্টাচার হবে? পূর্বাঞ্চলের প্রতি যে অনিষ্টাচার হচ্ছে, মাশুল সমীকরণ নীতির
একপেশে প্রয়োগের ফলে আমাদের এখানে যে শিল্পপ্রসার তথা কর্মসংস্থান
ভয়ংকররকম ব্যাহত, তা নিয়ে কিন্ত কারো! মাথাব্যথা নেই । এখন বল হচ্ছে বড়ো
জটিল সমশ্থা।, জাতীয় উন্নয়ন পরিষদে বিবেচিত হোক | পরিষদে বশংবদ কংগ্রেসি
মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে হাত তুলবেন, তাই আগে থেকেই ব'লে দেওয়া! চলে,
সিদ্ধান্ত হবে, উছ, উক্ত নীতি পাল্টানো সম্ভব নয়, সেটা শিষ্টাচার্বহিভূতি হবে।
নাকের ডগায় একটি বিষর্কোড়া উঠেছে, বেচারা এতদিন ধ'রে এত কষ্ট করে
বড়ো হয়েছে, এখন ওটাকে কেটে বাঁদ দেওয়া! ঠিক ভদ্রতা হবে না ।
স্থতরাং পশ্চিম বঙ্গ পূ'কুক | এই রাজ্য থেকে মাঝে-মধ্যে একজন-ছ'জন কেন্দ্রীয়
মন্ত্রিসভায় যান, টে কেন না খুব বেশিদিন কেউই, পছন্দ না হ'লেই তাঁদের তাড়িয়ে
দেওয়া হয়, কিন্তু গোলামিকে ধারা জীবনের ব্রত হিশেবে গ্রহণ করেছেন এ-ধরনের
বিপদের ঝুকি তাঁদের কাছে বাধা হয়ে দীড়ায় না, আগে-কে-বা-প্রীণ-করিবেক-
দান মনৌবৃত্তি ত্রেয়ে তারা প্রভুর সেবায় নিজেদের নিযুক্ত করেন । এবং স্থলে ভুল
নেই, ভুলেও তারা পশ্চিম বঙ্গের কোনে সমস্থ নিয়ে মুখ খোলেন না। কিছুদিন
আগে পশ্চিম বঙ্গ থেকে এক কেউকেটা রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন । কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষের
যে-জাদুযুক্ত মাশুল পদ্ধতিতে পশ্চিমবঙ্গের কয়লা কোডাইকাঁনালে আসাঁনসোলের
চেয়ে কম দামে পাঁওয়। যায়, তার গায়ে তিনি জীচড়টি পর্যন্ত কাটতে রাজি হননি,
গে রকম কোনো মূর্খ সাহস তিন দেখাবারও চেষ্টা করেননি কোনোদিন । আর
একজন খলিফা ব্যক্তি, এই পশ্চিম বঙ্গ থেকেই খোদ অর্থমন্ত্রী বনে গিয়েছিলেন পযন্ত,
স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আরোহণ-অবরোহণ দুটোই অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সংঘটিত
হ'তে পারে । এই ভদ্রলোকটি আপাতত কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত, তবে জনশ্রুতি
বিশ্বনাথ প্রতাপ পিংহ-ঘটিত ডাঁমাভোলের বাজারে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
অর্থমন্ত্রী থকাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের লৌহ-ইম্পাত ইত্যাদির মাশুল সমীকরণসহ
সমগ্র ঘুল্যনীতি পরিবর্তন-সংশোধনের স্থযোগ তার ছিল, কিন্ত, ওরে বাঁধা, তার
ধার-কাছ দিয়েও যাননি তিনি | বরঞ্চ, বছর তিনেক আগে পাটনাতে সদস্ত তিনি
ঘোষণ। করেছিলেন : বর্তমান মাশুল সমীকরণ নীতি চালু থাকছে, চালু থাকবে,
বিহ্বার-পশ্চিম বঙ্গ যদি তাঁতে ক'রে প'ড়ে-প'ড়ে মার খায় খাবে, তাঁর কিছু করবার
'নেই।
তা হ'লেও কংগ্রেপী বিধায়করা বিধান সভায় কেঁদে নদী হয়ে যাচ্ছেন, পশ্চিম
৫৫
বঙ্গে শিল্পবিকাশ হচ্ছে না সেই শোকে । তারা একটা কাজ করুন না কেন?
প্রধান মন্ত্রী এই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে এসে গভীর ব্যঙ্গের সঙ্গে অভিমত ব্যক্ত
করেছিলেন জ্যোতি বন্থর মতো অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী তার অন্তত জীন! নেই, এই মুখ্য-
মন্ত্রীটি এমনকি নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের জন্যই কিছু করেননি, রাঁজ্যের স্বার্থ দেখা
এর কন্মো নয় | যেট। প্রধান মন্ত্রী বলেননি, বলতে তাঁর বিনয়ে বেধেছিল, অপর
পক্ষে তিনি নিজে তীর নির্বাচন কেন্দ্র অমেথির জন্য কত-কিছু করেছেন, প্রায়
সোন। দিয়ে মুড়ে দিয়েছেন আমেথিকে | উদাহরণত, পীঁচ-সাত-দশ হাঁজার কোটি
টাক! খরচ ক'রে গুজরাট থেকে পাইপ টেনে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে যাঁওয়। হচ্ছে
আমেখিতে, এই গ্যাস থেকে ওখানে মন্ত্র বড়ো সারের কারখান। তৈরি হবে,
টাকার জন্য ভাবনা নেই, খোঁদ প্রধান মন্ত্রীর নির্বাচনী কেন্দ্রে টাকার জন্য, সামান্য
দশ হাজার কোটি টাকার জন্য, কাজ আটকে থাকবে ন1।
তা এই রাজ্যের কংগ্রেসি বিধায়করা এক কাজ করুন ন] কেন? হলদিয়ায়
আমরা যে-পেটোকেমিক্যাল কারখানা স্থাপন করতে চাইছি, তার অনুমতি দিতে
কেন্দ্রীয় সরকার নান? টালবাহানা! করছেন, বলছেন আমাদের প্রস্তাবিত কারখানার
জন্য প্রস্তাবিত উপাদান নাপথা, কিন্ত এই উপাদান ব্যবহার করলে উৎপাদন ব্যয়
বেশি হবে; দেশের পশ্চিমাঞ্চলে যে-পেট্রোকেমিক্যাল কারখানাগুলি আছে তাদের
উপাদান প্রাকৃতিক গ্যাস, তাতে খরচ অনেক কম পড়ে ; সুতরাং আমাদের কারখান।
ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারবে না । বেশ তো, এ প্রধান মন্ত্রীর নির্বাচনী
কেন্দ্র আমেখির দেখাদেখি, কংগ্রেপী বিধায়কর। নতুন দিল্লিতে ব'লে-ক"য়ে গুজরাট
থেকে পশ্চিম বঙ্গ পর্যন্ত পাইপ টেনে প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে আসার ধন্দোবস্ত ক'রে
দিন না কেন, তা হ'লে আমরাও আমাদের পেট্রোকেমিক্যাল কারখানায় গ্যাস
ব্যবহার করতে পারি. যার ফলে প্রতিযোগিতায় আমরাও, দাঁড়িয়ে যেতে পারবে! ।
তা ছাড়া, যেহেতু আমাদের পৃবাঞ্চলের কয়ল। পশ্চিমাঞ্চলের রাঁজ্যগুলিতে সমান
দামে বিক্রি হচ্ছে, পশ্চিমাঞ্চলের প্রীকৃতিক গ্যাসও ধরেই নেওয়। যেতে পারে,
অনুরূপ একই দামে আমাদের কাছে বিক্রি করা হবে। কয়লাও জালানি।
স্থতরাং মূল্যনির্ধারণের ব্যাপারে হেরফের হওয়া তো৷ উচিত নয় ।
কংগ্রেসি বিধায়কদের কাছে আবেদন রাখছি : পশ্চিম বঙ্গে শিল্পে জোয়ার
আনার জন্য আপনারা অঙ্গীকাঁরবদ্ধ, সেই অঙ্গীকারের মর্যাদা রাখুন, আপনারা।
জালানির মতে] জ'লে উঠুন ।
€ভ
অনন্তকাল যা চলতে পারে ন!
হঠাৎ অনেক সংস্কৃত কথা! শোনা যাচ্ছে, সংবিধানের পবিভ্রতা-বশুদ্ধতা-সার্বভৌম্ব
ইত্যাদি । শাঁসকশ্রেণীর নিজেদের মধ্যে খেয়োথেয়ি চলছে, স্থমহান্ সংবিধানকে
সেই কাঁজিয়ায় লাগানো হচ্ছে । বাঘা-বাঁঘ। ব্রধী-মহাঁরধীর1 এ পক্ষে-ও পক্ষে নেমে
পড়েছেন, সবাই গণতন্ত্রের পক্ষে, সত্যের পক্ষে, প্রাণের বিনিময়ে সংবিধানকে,
দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা! করবার ব্রতধারী | শ্রেণীস্বার্থ, গোঠীস্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ
জড়িত থাকলে অবশ্থ সব সময় সংস্কৃত শবাদিতে আবদ্ধ থাক। যায় না, ছুন স্কুলের
মিহিন প্রলেপ ধুয়ে-মুছে যায় । এমনকি দেশের প্রধান মন্ত্রীর মুখ থেকেও রকের
ভাষা বেরিয়ে পড়ে : “আমাদের সঙ্গে যারা মামদোবাঁজি করতে আসবে, তাদের
ঠাকুমা-দিদিমার নাম ভুলিয়ে ছাড়বো |” পবিভ্র সংবিধানে তো কোথাও লেখা
নেই প্রধান মন্ত্রী প্রাকৃত ভাষায় কথা বলতে পারবেন না ।
তবে একটু বাঁড়াবাঁড়ি হচ্ছে । ভারতীয় সংবিধান সম্বন্ধে বিরাট মোহ পোষণ
করার তেমন কোনে। কারণ সত্যিই নেই। ইংরেজ আমলে প্রধানত সমাজের
উপরতলার মানুষেরই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন, ১৯৪৬ সালে এই
মানুষেরাই বিভিন্ত্র প্রদেশে ভোট দিয়ে বিধান সভার সদশ্ত নির্বাচন করেছিলেন ।
সেই সদশ্যর। অতঃপর নিজেদের ভোট প্রয়োগ ক'রে সংবিধান সভা-কনষ্টিটিউয়েপ্ট
আযসেম্বলী গঠন করেন । পরোঁক্ষনির্বাচিত সংবিধান-সভ1, দেশের দরিদ্রতর
অধিকাংশ অধিবাসী কিন্তু সেই পরোক্ষ নির্বাচিত সভাতে নিজেদের প্রতিনিধি
পাঁঠাতে পারেননি । তা] ছাঁড়া, আরে! আজব ব্যাপার ঘটলো সংবিধান খসড়া তৈরি
করবার সময় । ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের অনেকেই
খসড়া কমিটিতে রইলেন না| বিদেশী শীসকদের বহুদিন ধ'রে সেব1 ক'রে এসেছেন
এ ধরনের আইনবিদ-প্রশীসন বিশেষজ্ঞতে ছেয়ে গেল সেই কমিটি । ভারতীয়
জনগণের কাছে স্বাধীনতা আন্দোলনের কী-কী অঙ্গীকার ছিল, ভারতবর্ষের কোন্
বিশেষ প্রতি্বরূপ দেশের মানুষ কল্পন। ক'রে এসেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ
প্রহর জুড়ে, সে-সমস্ত কথ! বলবার মতো বিশেষ কেউ ছিলেন ন সংবিধান-রচনার
উদেশ্ঠে-গঠিত খসড়া কমিটিতে । এই বনৃভাষী বন্ছ সাংস্কৃতিক সম্ভাঁরের বৈচিত্র্য-
প্র. কথা $ ৫৭
মগ্ডিত দেশের সর্বাত্মক শুভ সংসাধনের স্বার্থে যুক্তরাষ্্রীয় যে-বিষ্তাসের প্রতিশ্রুতি
জাতীয় নেতারা একদ1 দেশবাসীর কাছে রেখেছিলেন, ধুয়ে-মুছে গেল সে-সব
প্রতিশ্রুতি, সংবিধানের মধ্যবতিতায় এক অতি-অতিকেন্দ্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন কর!
হলো! । তার স্থৃফল-কুফলের আমরা ভুক্তভোগী সেই পঞ্চাশ দশকের গোড়া থেকে
শুরু ক'রে আজ পর্যন্ত । জীবনযুদ্ধে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের এই সংবিধান
সম্পর্কে বিন্দুমাত্র মোঁহ থাকবার কথা নয় | সমাঁজবিপ্লব সফল হ'লে এই সংবিধানের
সমাধি ঘটবে, বৈচিত্র্য-বৈ শিষ্ট্য -বৈষম্য-ঠাসা অথচ সেই সঙ্গে স্থষমা-সংহতিতে-
সমাচ্ছন্্ন এই দেশের জনগণের সাবিক স্বার্থের কথা মনে রেখে তখন নতুন ক'রে
ফের সংবিধান রচিত হবে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সেই মাহেন্ত্রমুহূর্তে আমরা না
পৌছুচ্ছি, বর্তমান সংবিধানকে মেনে নেওয়] ছাড়া উপায় নেই, তার নিয়মাবলীর
চৌহদ্ডি মাথায় রেখে আমাদের উপস্থিত কর্তব্য নির্ধারণ করতে হবে ।
সাধারণভাবে এট তাই বলতে বাঁধ নেই যে সংবিধানের ৭৪ ধারার
অবমানন। অনুচিত। পরিষদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত মন্ত্িপভাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার
অধিকার কারে। থাকতে পারে না, রাষ্্পতিকেও তার আচার-আচরণে বিচার-
বিচরণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নির্দেশ তথা ইচ্ছ1 শিরোধার্য ক'রে নিতে হবে।
লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদশ্যের আস্থাভোগী মন্ত্রিসভা আমাদের গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দু, রাষ্ট্রপতি কোনো অবস্থাতেই তাঁকে এড়িয়ে যেতে পারেন না।
এই বিধান তর্কের বাইরে । তাঁর অর্থ কিন্তু এই নয় যে ৭৪ ধাঁরার ঘাঁড়ে চেপে
সংবিধানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলিকে বেপরৌয়। অবজ্ঞা ক'রে যাওয়। সম্ভব |
সংবিধানের ৭৮ ধার! স্পষ্ট বলছে, সরকার ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত-
ও ক্রিয়াঁকর্ম-সম্পকিত বিভিন্ন তথ্য চেয়ে পাঠাবার অধিকার রাষ্ট্রপতির আছে।
এই অধিকারকে ধারা পদদলিত করছেন, প্রকাশ্তে দেশজ ভাষায় রাষ্ট্রপতির নামে
অবিশ্রান্ত কুৎস! প্রচার ক'রে চলেছেন, তীরা সংবিধানের নিহিত সারাৎসাঁরকেই
নম্যণৎ করতে চাইছেন ।
তারও বাইরে কতগুলি কথ৷ থেকে যায়। রাষ্ট্রপতির ভূমিকা তো কেন্দ্রীয়
মন্ত্রিসভা ও প্রশাসনের প্রসঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি গোটা দেশের-গোট।
জাতির রাষ্ট্রপতি, রাঁজ্যপযূহেরও তে। তীর উপরে নির্ভরশীল হওয়ার অধিকাৰ
আঁছে। রাঁজ্যে-রাজ্যে বিধানসভ1-বিধান-পরিষদের সদস্যরাও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন, সংবিধানে সেই অনুজ্ঞা আছে।
সুতরাং এ-বিষয়ে স্পষ্ট লেখা থাক বা না-ই থাক, কোনো-কোনে। বিশেষ অবস্থায়
৫৮
বীজ্য সরকারগুলির নৈতিক দাবি থাকবে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হওয়ার | তার!
সমন্যায় পড়েছে, কেন্দ্রীয় প্রশাসনের সঙ্গে তাদের পারস্পরিক সম্পক নিয়ে সমস্যা
দেখা দিয়েছে, যেহেতু তিনি তাদেরও রাষইপতি, সার! দেশের রাষ্ট্রপতি, তারা
তার কাছে বিচারপ্রার্থা।
এ ধরনের কোনে। পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কী করবেন রাষ্ট্রপতি? নিছক
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন, যেখানে বাজ্যগুলির সমস্থা৷ কেন্দ্রীয়
মন্ত্রিসভাঁকে নিয়েই, তাদের অভিযোগ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধেই ? এট আদৌ
কোনে। অবাস্তব প্রসঙ্গ নয় | সংবিধানের ২৮০ এবং ২৮১ ধারার গুরুত্ব অপরিসীম,
কেন্্র এবং পাঁজ্যগুলির মধ্যে পয়সাকড়ি সুষম বণ্টনের উদ্দেশ্টে একটি বিশেষ
র্যবস্থার কথা এই ধারাদ্ধয়ে উল্লিখিত | প্রতি পীচ বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি
একটি অর্থ কমিশন নিয়োগ করবেন, কেন্দ্র কর্তৃক সংগৃহীত কিছু-কিছু রাঁজস্ব, যেমন
আয় কর অথব1 অন্তঃশুক্ক, কী পদ্ধতিতে কেন্দ্র এবং রাঁজ্/গুলির মধ্যে পরবর্তী পাচ
বছরের জন্য ভাগ করা হবে অর্থ কমিশন সে-সম্পর্কে বিধান দেবেন ; কেন্দ্রীয় অর্থ-
ভাণও্ড থেকে কোনো-কোনো রাজ্যকে অনুদান দেওয়। প্রয়োজন কিনা, এবং প্রয়োজন
হ'লে সেই অন্ুদাঁনৈর কী পরিমাণ হবে, তা-ও অর্থ কমিশনের বিবেচ্য বিষয় ।
রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে কেন্দ্র-রাঁজ্য সম্পদৃবিন্যাস-সম্পকিত অগ্-কোনো। ব্যাপারেও
কমিশনের অভিমত চাইতে পারেন । অর্থ কমিশনের সামগ্রিক সিদ্ধাপ্ত পেশ
হবার পর সে-সব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কী-কী ব্যবস্থা গ্রহণ কর! হলো, ২৮১ ধারা বলে
রাষ্পতিকে তা-ও প্রকাশ্ঠে ঘোঁষণ! করার দায়িত্ব দেওয়। হয়েছে ।
সংবিধানের নির্দেশে কোনো জড়ত1 নেই, অর্থ কমিশন সম্পর্দ[বিভাজনের ক্ষেত্রে
কেন্দ্র এবং রাঁজ্যগুলির মধ্যে সালিশি করবে । তার ভূমিকা বিচারকের । এই বিচারে
এক পক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার, অন্য দিকে রাজ্য সরকারসযূহ । এই বিচারক কে হবেন,
অর্থ কমিশনের সভাপতি ও অন্যান্য সদশ্য হিশেবে কারা-কার1 থাকবেন, কমিশনের
কাজেব শর্তীবলীতে কোন্-কোন্ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে, রাষ্ট্রপতি কার উপদেশ অথব!
পরামর্শে এসব প্রশ্নের মীমাংসা! করবেন ? যদি ৭৪ ধারার দোহাই পেড়ে বল? হয়,
এসব নিয়ে বাঁড়তি কথা কেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তেই সমস্ত কিছু হবে,
তা হ'লে তো। অর্থ কমিশনের বিচারে শুদ্ধতা থাঁকবে না, নিরপেক্ষতা থাকবে না,
মালিশির ছুই পক্ষের এক পক্ষ ঠিক ক'রে দিচ্ছেন কে সালিশি করবেন এবং কী-কী
বিষয়ে সাঁলিশি হবে । অথচ স্বাধীনতার পর এটা চষ্লিশতম বছর, এতদিন পর্যস্ত
এভাবেই হয়ে এসেছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রাষ্ট্রপতির নামে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অর্থ
৫৪
কমিশন গঠন করেছেন, কমিশনের কর্তব্যের তালিক। ঠিক ক'রে দিয়েছেন, এবং
কমিশনের বিচারের উপর তার পর একতরফ নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন ।
প্রতি পীঁচ বছরের জন্য কমিশন সম্পদৃবণ্টনের ছক রচন1 করেন, অথচ অইম অর্থ
কমিশনের রিপোর্ট যখন পেশ করা হলো, ১৯১৪-১৫ সালের পুরো বছরের কমিশন
কর্তৃক বরাদ্দ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে দিতে অস্বীকার করলেন ।
অতীতে য। হয়েছে অনন্তকাল ধরে তো! তা চলতে পারে না । আগামী কয়েক
সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে নবম অর্থ কমিশন গঠনের কথা ঘোষণ। করতে হবে ।
এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি যদি প্রধান মন্ত্রীকে ডেকে বলেন, হ্যা, অবশ্যই তিনি কমিশন
গঠন করাঁর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মতামত জেনে নেবেন, কিন্ত সেই সঙ্গে তিনি
রাজ্য সরকাঁরগুলির সঙ্গেও আলোচন] করবেন, অর্থ কমিশনের সভাপতি তথা
সদন্য কাদের-কাঁদের কর! যেতে পারে সে-ব্যাঁপারে রাজ্য সরকারগুলিরও পরামর্শ
চাইবেন, কমিশনের জন্য নির্ধারিত নিদের্শমালাই ব। কী হবে তা নিয়েও তাঁদের
সঙ্গে আলোচনা ক'রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, তা হ'লে রাষ্ট্রপতি কি মহাপাপ
করবেন, তীকে কি শূলে চড়াঁতেই হবে তা হ'লে?
এখানে আর একটি প্রসঙ্গের উল্লেখও অসমীচীন হবে না । যদি কেন্দ্র এবং
কোনে রাঁজ্য সরকারের মধ্যে কোনে ব্যাপারে মতান্তর দেখা দেয়, সংবিধানের
১৪৩ ধারাবলে রাষই্পতির অধিকার আছে বিসংবাঁদটি স্থপ্রিম কোর্টের কাছে
নিষ্পত্তির জন্য পাঠানোর । কোনে। রাজ্য সরকীর ভীষণ অস্থবিধায় পড়েছে, তার
দৃঢ় ধারণ। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর প্রতি অবিচার করছে, তাঁর সম্পর্কে সংসদে অব-
মাননাকর তথ্য দাখিল করেছে, কিংবা তার প্রাপ্য টাকা অন্তাঁয় ক'রে আটকে
রেখেছে । সেই রাজ্য সরকার তাই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রার্থন। জানিয়েছে, পুরে!
ব্যাপারটি স্প্রিম কোর্টের কাছে বিচারের জন্য পাঠানো হোক, দেশের সর্বোচ্চ
আদালতের রায় রীজ্য সরকার মীথা পেতে মেনে নেবে । কিন্তু বুঝুন মজা, রাজ্য
সরকারের এই সকাতর প্রার্থনা পাওয়ার পর এটিকে স্কপ্রিম কোর্টে পাঠানোর
অধিকার নাকি রাষ্পতির নেই । ফের ৭৪ ধারা ছায়া ফেলবে, কেন্দ্রীয় সরকার
এ রাজ্যের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে কি করেনি সে-বিষয়ে স্থপ্রিম কোর্ট বিচার করবে
কি করবে ন। তা পর্যন্ত নির্ভর করবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বিচারের উপর, রাষ্্পতি
রাজ্য সরকারের প্রার্থনীপত্রটি শুধু প্রধান মন্ত্রীর কাছে পাঠাতে পারবেন, তার পর
যথাসময়ে প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর থেকে রাজ্য সরকারের কাছে চিঠি যাবে : ও হে বৎস,
অবহিত হও, আমীর বিরুদ্ধে নালিশ করবার যে-অভিপ্রায় ব্যক্ত ক'রে তুমি রাষ্টর-
৬০
পতির কাছে চিঠি দিয়েছিলে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারের প্রার্থনা
জানিয়েছিলে, আমি স্বয়ং বিবেচন। ক'রে সিদ্ধান্তে পৌছেছি, তোমার নালিশ গ্রহণ-
যোগ্য নয়, আমার বিরুদ্ধে কারে! কখনোই কোনে! অভিযোগ থাকতে পারে না।
কোনে কল্পকাহিনী নয়, পশ্চিম বঙ্গের ক্ষেত্রেই এ ধরনেব ঘটন। ঘটেছে ।
৭৪ ধারার পবিত্রতা অক্ষয় থাক, কিন্তু দেশের সর্বত্র জনসমুদ্রে জোয়ার নেমেছে,
যে-ধরনের খামখেয়ালি শ্বেচ্ছাচারিতা কেন্দ্রীয় সরকার শ্রেনীস্বার্থপ্রসারের তাগিদে
রাজ্য সরকারগুলিকে লক্ষ্য ক'রে এতদিন চালিয়েছে, তা এখন থেকে ক্রমশ ছুরূহতর
হবে। রাষ্ট্রপতির সর্ববিধ অনুচ্! শুনতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বাধ্য নন, তীর] জন-
গণের দ্বারা নির্বাচিত এবং আমাদের সংবিধানে, জনশ্রুতি, জনগণই শেষ কথা
বলবেন । কিন্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পক্ষে এটা ভুললে চলবে ন1 রাজাসরকারগুলিও
জনগণের দ্বার নির্বাচিত এবং রাঁজ্যসমূহ সম্পর্কে ঘোড়সওয়ারবৃত্তিম্থলভ মানসিকতা
একমাত্র সবনাশই ডেকে আনতে পারে । কোঁটি-কোঁটি টাকা ঢেলে, সরকারি
ব্যবস্থাপন1 নিলচ্জভাবে কাজে লাগিয়ে, নতুন দিল্লির ময়দানেব সুরক্ষিত পাটাতনে
দীড়িয়ে “আমি বিপন্ন, অতএব জাতি বিপন্ন” এই বাঁলখিল্য যুক্তির ফুলিয়ে-ফাপিয়ে
ব্যাখ্যা নিজের বশংবদদের কাছে ক'রে ক্ষণিকের আত্মতপ্তি অর্জন সম্ভব | যে-
ইতিহাস বচণায় জনতার একচ্ছত্র অধিকার, তাঁর অভিযাত্রার এতটুকুও হেরফের
হবে ন! তাতে।
৬১
মানুষ কেন খঞ্জ হয়
অভিধান বলে, 'খেঁসারি' আসলে 'খগ্রকারী” শব্দটির অপভ্রংশ | যে-খাছ্য বা
অথাছ্ বেশি পরিমাণে অথব। অনেক দিন ধ'রে গ্রহণ করলে খগ্জ কিংব1 বিকলাঁ্গ
হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, তাই খেঁপারি, খঞ্জকারী। আমাদের এই হতভাগ্য দেশে,
বিশেষ ক'রে বিহারে-মধ্য প্রদেশে-উড়িঘ্যাঁয়, প্রাত বছর অন্তত পনেরো-কুড়ি লক্ষ
মানুষ খেঁসাঁরি ডাল ভক্ষণের পরিণামে খঞ্জ বনে যাচ্ছেন, নাঁন। ধরনের শারীরিক
বিকৃতির শিকার হচ্ছেন । অপরিবর্তনীয় ভারতবর্ষ, বছরের পর বছর ধ'রে, এই
পরম শোৌকান্তিক ঘটন1 ঘ*টে আসছে, যেন নিয়তিলিখন, কারে কিছু করবার নেই ।
অথচ স্বাধীনতার পর চার দশক অতিক্রান্ত, সাত-সাতটি পঞ্চবাধিকী পরিকল্পনার
জাছু নাকি আমাদের ছুয়ে গেছে। পরম পরিকল্পিত ভারতবর্ষ, সব-কিছুই
পরিকল্পনা-অনুযায়ী ঘটছে, দেশের গরিব মান্ষগুলিই শুধু পুষ্টির সন্ধানে উদৃত্রান্ত,
হয়ে খেঁপারির ডালের আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন, তার পর খঞ্জ হয়ে যাচ্ছেন ।
নীরস-নিরেট কয়েকটি কথা উল্লেখ করতে হয় | সেফ টি“কে থাকবার তাগিদেই
মানুষের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন, প্রোটিনের অভাবে শরীরে অপুষ্ঠি ছড়ায়,
আধিব্যাধির সঙ্গে লড়াই করবার ক্ষমতা শরীরে ক'মে আসে। ধনসচ্ছল দেশগুলিতে
সাধারণ মানুষ মাছ-মাংস-ডিম-ছুধ ইত্যাদি থেকে প্রোটিনের চাহিদা মেটান।
আমাদের দেশেও সমাজের বিস্তবাঁন অংশ ছুর্ধ-ঘি-ডিম-মাঁছ-মাংস থেকে প্রোটিন
গ্রহণ করেন | দরিদ্রতর জনসাধারণের সেই স্থযোঁগ নেই, দারিদ্র্যসীমার নিষ্নপ্রান্তে
ধারা, থি-ডিম-ছুধ-মীছ-মীংস তাঁদের কাছে স্বপ্নবিলাসিতা | অথচ তাদের শরীর ৪.
নিছক টি"কে থাকবার জন্যই, ন্যুনতম কিছু প্রোটিনের জন্য আকুপাঁকু করে । ডাল
থেকে তাঁরা এই প্রে"টিন আহরণের প্রয়াস করেন । গরিব মানুষে ছাওয়া এই
দেশ, কোটি-কোঁটি গরিব মানুষ, প্রোটিনের জন্য তীদের ভালই একমাত্র ভরস] ;
পবম বিচিত্র কাহিনী। পরিকল্পিত ভারতীয় অথব্যবস্থা, সা-সাতটি পঞ্চবাধিকী
পরিকল্পনার জাদুকাঠি দেশকে ছুয়ে গেছে, জগৎসতায় এখন নাকি আমরা গব
ক'রে বলতে পাঁরি, ভারতবর্ষ খাছ্যে স্বয়স্তর, বিদেশ থেকে এখন আর আমাদের
খাগ্যশশ্য আমদানি করতে হয় না, এখন আমরা বিদেশে খাছ রধধানি পর্যন্ত করতে
৬২
পারি। অথচ এই বাগাড়ম্বরের পাশীপাশি রূঢ় সত্যের সঙ্গে মুখোমুখি হ'তে হয় :
ভারতবর্ষ, জনশ্রুতি, খানে স্বয়স্তন, আড়াই কোটি টন খাছ্শশ্ সরকারি গুদীমে
ভাই হয়ে আছে, কিন্ত দেশে দুভিক্ষের খামতি নেই তাতে, কাল্াহাণ্তির মানুষ-
গুলি বরাবরের মতো! এখনে। না খেতে পেকে মৃত্যুগত হচ্ছেন । এবং ডালের
সংস্থান করতে অপারগ, প্রতি বছরের মতে! এখনে1 পনেরো1-কুড়ি লক্ষ মানুষ
খেঁসারি ভক্ষণ ক'রে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন । খেঁসারিতে সামান্য প্রোটিন আছে, কিন্ত
বিষও আছে সেই সঙ্গে, যা বিকলাঙ্গ ক'রে দেয় ।
নিরাড়ম্বর গুটিকয় তথ্য, চাঁচাছোলা তথ্য, রেখে-ঢেকে বলার কোনে! স্বযোগ
নেই এখানে । স্বাধীনতা-উত্তর চল্লিশ বছরে দেশের জনসংখ্যা আড়াই গুণের
মতো! বৃদ্ধি পেয়েছে । অথচ এই চার দশকে মুগ-ছোলা-অড়হর-মুন্থর-কলাই
সবরকম ডালের সামগ্রিক উৎপাদন এক দানাঁও বাড়েনি : সেই ১৯৪৭-৪৮ সালে
কম-বেশি এক কোটি কুড়ি লক্ষ টন, এখনো, এই ১৯৪৭-৪৮ সালেও, এক কোটি
কুড়ি লক্ষ টন, অন্তর্বর্তী কোনো-কোনো বছরে উৎপাদন হয়তো! আরো কম
হয়েছে, ক্কচিং-কঞনে। একটি-ছু'টি বছরে হয়তো এক রজ্জি বেশি হয়েছে। কিন্তু
গোটা হিশেবে হেরফের নেই, দেশ এগিয়ে চলেছে, জনসংখ্য1 আড়াই গুণ বেড়েছে,
পরিকল্পনার নামে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা এই চল্লিশ বছরে ব্যয় করা হয়েছে,
প্রতিরক্ষার খরচ চল্লিশ গুণ বেড়েছে, খাঁগ্যশস্তের উৎপাদন নাকি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত,
আড়াই কোটি টন উদ্বত্ত খাছাশস্য সরকারি গুদামে শান্তিতে কালাতিপাত করছে।
কিন্ত, অপরিবর্তনীয় ভারতবর্ষ, ডালের উৎপাদন এক কোটি কুড়ি লক্ষ টনে ঠাস
দাড়িয়ে আছে।
সামান্য, সৌঁজ। হিশেব । ডালের সামগ্রিক উৎপাদন বাড়েনি, কিন্তু জনসংখ্যা
আড়াই গুণ বেড়েছে, ধার অর্থ চল্লিশ বছরে জনপ্রতি ডালের সংস্থান শতকরা ষাট
ভাগ কমেছে, যা ছিল বাৎসরিক ছত্রিশ কিলোগ্রাম, তা দাঁড়িয়েছে বছরে পনেরো!
কিলোগ্রীমে । কিন্তু গড়ের হিশেবে মস্ত কাকি থাকে | ধারা উচ্চবিত্ত, তারা ভাল
কেনা নিশ্চয়ই কমিয়ে দেননি, তাঁদের সীমধ্ধ্য আচে, সেই সামথ্য খাটিয়ে খোল।
বাজারে তারা ডাল কিনছেন, চল্লিশ বছর আগে যে-পরিমাণ কিনতেন তা-ই
কিনছেন, অতএব গরিবদের জন্য ডালের পরিমাণে আরে! টানি পড়েছে, তাদের
জনয জোগান যদি গড়ে প্রতি বছর মাত্র দশ কিলোগ্রামে নেমে গিয়ে থাকে,
আশ্চর্য হবার কিছু নেই ।
গরিব মাহুষগুলি হতচকিত, হতভম্ব, কোন্দিকে মুখ ফেরাবেন তাঁর! ? শরীর
৬৩
ব্যাধিমুক্ত থাকতে চায়, শরীর তাই পুষ্টির অন্বেধণ করে, প্রোটিনের জন্ত হস্তে হয়ে
ফেরে । যে-ডাল তাঁদের একমাত্র ভরসা ছিল, পরিকল্পিত ভারতীয় অর্থব্যবস্থার
ফলে, তার জোগান ক্রমশ হ্াসপ্রাপ্ত । অথচ যে-ক'রেই-হোক শরীরের চাহিদা
মেটাতে হবে, সুতরাং শেষ পর্যন্ত অতি নিকৃষ্ট থেকে নিকুইুতর খেঁসারি । শ্রেণী-
বিভক্ত সমাজব্যবস্থার এ এক আজব নিয়মকল। : গরিব মানুষের শরীর ব্যাধি
এড়াতে চায় বলেই নির্দয়তর ব্যাধির শিকার হ'তে বাধ্য হয়। খেঁসারির ব্যবহার
বাড়ে, প্রতি বছর আরে বাড়তি কয়েক লক্ষ মানুষ বিকলাঙ্গ হন ।
স্বাধীনতা -উত্তর চল্লিশ ধছৰ জুড়ে, অস্বীকার করবার উপায় নেই, কৃষিক্ষেত্রে
ভারতবর্ষ প্রভৃত উন্নতি করেছে । লক্ষ-ল্ক্ষ নতুন জমিতে আবাদ শুরু হয়েছে,
সেচের প্রপারের সঙ্গে-সঙ্গে এক-ফসলা জমি ছু”-ফসলা।, তিন-ফসল, চার-ফসল!
হয়েছে, উন্নত বীজশস্ের প্রয়োগে উৎপাদনের হার বিভিন্ন শস্যের ক্ষেত্রে বছ্গুণ
বেড়েছে, সারের বৈজ্ঞানিক ব্যবহারেও অনুরূপ সাঁড়া পাওয়া গেছে, তা ছাড়া
কীটনাশক-ব্যাধিনাশক ওষুধপাঁতি উৎপন্ন শশ্যের স্বাস্থ্যরক্ষায় সাহায্য করেছে।
ধারা একটু মাকিনভক্ত, বিপ্লবের প্রসঙ্গে ভয়ে কুঁকড়ে আসেন, তারাও রুষির
প্রসঙ্গে গর্ব ক'রে বলেন, ভারতবর্ষে সবুজ বিপ্লব' সংসাধিত । তবে বড়ো একচক্ষু
বিপ্লব এটা, থাছশস্তের সামগ্রিক উৎপাদন বেড়েছে, কিন্ত সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে
খাছাশস্তের গড় জোগান বাড়েনি, বরং কমেছে । খান্তশস্য ড"1ই হয়ে গুদামে
পচছে, অথচ অভুক্ত-মরণাপন্ন-দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে তা নাকি বিলিয়ে দেওয়া
অসম্ভব ! এবং ডালের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যস্ত আদে বাড়েনি, যে-পরিমাণ জমিতে
ডালের আবাদ হতো চল্লিশ বছর আগে, এখনো আবাদের ক্ষেত্র সেখানেই থমকে
থেমে আছে, ডালের উন্নত বীজ উদ্ভাবন নিয়ে সরকারি মহলে কাঁরে। তেমন মীথা-
থামানো দেখা যায়নি । সরকার হঠাৎ যখন কোনে| কঠিন সমস্যার মুখোমুখি
হয়ে পড়েন, খবরকাগজে কাহিনী প্রচার করা হয়, 'যুদ্ধকালীন তৎপরতা'র সঙ্গে
সেই সমস্যার সমাধানে সবাই নেমে পড়েছেন । ডালের ফলন আদ বাঁড়ছে না,
গরিব মানুষগডুলি ডালের অভাবে ক্রমশ উৎকীর্ণতর অপুষ্টিতে ভুগছেন, বাধ্য হয়ে
খেঁসারির ব্যবহার বাড়ছে, যার প্রকোপে দেশে খগ্রত্ব ছড়াচ্ছে, কর্তাব্যক্তিদের
কাছে এ-সব কোনে! সমস্যাই নয় । সেই যে উড়িস্যাঁর মুখ্য মন্ত্রী বছর দেড়েক আগে
জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকে বলেছিলেন, দেশে গরিব মানুষ সেই রামায়ণ-
মহাভারতের সময় থেকেই আছে, তাদের নিয়ে অধথা বাড়তি মাথাব্যথ! কেন ।
উড়িস্যার মৃখ্য মন্ত্রী মনে হয় স্পষ্টবক্তা মাহুষ, মনে আর মুখে আড়াআড়ি নেই।
৬৪
ভোটের সময় গরিবদের নিম্নে একটু-আধটু আদিখ্যেত। দেখাতে হম্ন, কিন্তু পরি-
কল্পনার মতো৷ গুরুগভীর বিষয়ে আবার তাদের প্রসঙ্গ উত্থীপনে তীর বিবেকগত
আপত্তি ।
যে-আপত্তি এখন প্রধান মন্ত্রী প্রমুখ কে্বিষ্ুর! মেনে নিয়েছেন : সত্তর কোটি
দেশের দরিদ্র জনসাধারণের কথা৷ ভাবার দরকার নেই, উপরতলা'র অপেক্ষাকৃত সচ্ছল
দশ কোটির প্রসঞ্গে নিবদ্ধ থাকাই শ্রেয় । উপরতলার দশ কোটি মানুষ যদি এগিয়ে
যান, তাঁদের জীবনযাত্রার মান আরো যদি মহথণ উর্ধ্বগামী হয়, যদি উপভোগের
উপকরণ তাঁদের কাছে অপেক্ষাকৃত আরো। সম্তায় পৌঁছে দেওয়া যায়, তাদের
জন্য উপার্জনের স্ুযেগ-সথবিধা যদি আরো প্রসারিত করা যায়, তাতেই জাতির
সাবিক মঙ্গল । একটি নিটোল তত্ব বিধৃত আছে এখানে : বড়োলোকের ইষ্টেই
গরিবের ইষ্ট, বড়ৌলোকরা আরো বড়োলোক হয়ে একটু-একটু প্রসাদের কণা
ছিটোবেন, নিজেদের সন্তোগ বাঁড়াবেন, সমাজের দরিদ্রতররা তখন তাদের সেবা
করার বাড়তি স্থযোগ পাবে, ষা থেকে তাদেরও খানিকট। শ্রসযুদ্ধি ঘটবে ।
আপাতত এই মাঁকিন দর্শনে আমাদের নতুন দিল্লিস্থ সমাজতান্ত্রিক সরকার সম্পূর্ণ
ম'জে আছেন, উচ্চবিত্তদের স্থখসমৃদ্ধির স্থাধাগ কী ক'রে বাঁড়ানে। যায় তার চেয়ে
মহত্তর কোনে] চিন্ত। সরকারের জানা নেই । দেশে ডালের উৎপাদন কেন বাড়ছে
না, প্রতি বছর পনেরো-কুড়ি লক্ষ লোক খেঁসারির খুদ খেয়ে কেন বিকলাঙ্গ হচ্ছে,
এ-সব উটকো! প্রশ্ন এই মুহূর্তে করা মানেই দেশে অস্থিতিসঞ্চারের গৃঢ চক্ক্ান্ত ।
অথচ হৃদয়হীনতা! থেকে সহ্ৃদয়তায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়াটি তেমন-কিছু হুরূহু
নয় । কেন্দ্রীয় সরকারের বাঁৎসরিক ব্যয়ের বহর সত্তর হাজার কোটি টাকাও ছাপিয়ে
গেছে। যদি, অন্তত বছর পাঁচেকের জন্যও, এই বিরাট অঙ্ক থেকে মাত্র একশো
কোটি টাকার মতোও দেশে ডালের সামগ্রিক উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্তে আলাদ!
ক'রে রাখা হয়, সফল প্রত্যাশা করা মোটেই অযৌক্তিক প্রস্তাব নয়। পণ্যশন্যের
উৎপাদন বাড়তে পারে, অন্যান্য সমস্ত খাছ্শশ্তের উৎপাদন বাড়তে পারে, একমাব্র
ভালের ক্ষেত্রে উৎপাদন কিছুতেই বাড়বে না, তা! হ'তেই পারে না। বিজ্ঞানের
সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে, বিনিয়োগের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা ক'রে, সার-সেচ-
বপনবিস্তাস ইত্যাদির স্থধম প্রয়োগের দিকে লক্ষ্য রেখে, সরকারি মৃল্যনীতির
প্রয়োজনমতো পরিবর্তন বা পরিশোধনের দিকে যত্ব দিয়ে নিশ্চয়ই ডালের উৎপাদন
বহুগুণ বাঁড়ানে। সম্ভব, মাত্র কয়েক বছরের চেষ্টাতেই সম্ভব । সোনার কাঠি-
রুপোর কাঠির ব্যাপার নয় এটা, কিমাশ্চর্য জাছুধটিত কিছু নয়, একটি নিদিষ্
ভ€৫
লক্ষ্যে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌছনোর জঙ্য নিজেদের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ
হওয়া, তারপর সংহত উদ্যোগে প্রতিটি স্তরে প্রতিটি পর্যায়ে নির্ধারিত কর্তব্যগুলি
পালন ক'রে যাঁওয় | মানুষ চাঁদে পায়চারি ক'রে ফিরে এসেছে, সোভিয়েট
বিজ্ঞানীরা আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই মঙ্গলগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের
পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করে এনেছেন, অথচ আমরা ভারতবর্ষে ডালের ফলন
এক কোটি কুড়ি লক্ষ টন থেকে ছু'কোটি বা তিন কোটি টনে টেনে তুলতে অসমর্থ
হচ্ছি, এবং যেহেতু আমর অসমর্থ হচ্ছি, প্রতি বছর পনেরো-কুড়ি লক্ষ অতিদরিদ্র
হতভাগ্য মাঁনুষ খেঁসারির খুদ গলাধঃকরণ ক'রে খপ্রতবপ্রাপ্ত হচ্ছেন, এই দৃশ্য সাধারণ
বুদ্ধির বাইরে ।
রহস্যের কোনে] ব্যাপারই নয় এটা, দেশের সাঁাজিক-আথিক পরিকল্পনা নিছক
প্রযুক্তি বা প্রকরণের প্রয়োগ নয়, পরিকল্পনা শ্রেণীচেতনাহীন নিরাঁলগ্ব-বাঁযু-
ভূত বস্ত নয়। কোন্ শ্রেণী ক্ষমতা কুক্ষিগত ক'রে আছেন, এই জিজ্ঞাসার উত্তরকে
পাঁশে সরিয়ে রেখে পরিকল্পনা অকল্পনীয় ৷ শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় যে-শ্রেনী
ক্ষমতা আঁকড়ে আছে, সে, লাজলজ্জাহীন, নিজের কোলে ঝোল টানবে, নিজের
আখের গোছাবে, তার পৌষমাসে অপরাপর শ্রেণীর সর্বনাশের স্বপ্ন দেখবে ।
বিশ্মিতবোধ করাই বিশ্ময়কর প্রযুক্তির ঘাটতি নয়, প্রকরণের স্মলন নয়,
বিনিয়োগের জন্য প্রয়ৌোজনাহ্থগ অর্থসংকুলানে অসামর্থ্য নয়, দেশে ডাঁলের উৎপাদন
বাড়ুক শাসককৃল এট] চাঁন ন? ব'লেই ডীলের উৎপাদন বাড়ে ন7া। আমরা ভুল
বলি, আমাদের ভারতবর্ষে প্রতি বছর পনেরো -কুড়ি লক্ষ মাচুষ খঞ্জ হন ন',
তাদের থঞ্র করা হয়। শ্রেণীযুদ্ধ এট] ।
৬৬
জাতীয় সংহতির কী ও কেন
প্রায় দেড়শোর মতে দেশ রাষই্সংঘের সদশ্য | চীন-ডভাঁরতবর্ষের মতো জনসংখ্যা সম্বদ্ধ
দেশ থেকে শুরু ক'রে মরিটেনিয়া-ভূটান-জামাইকার মতে! খুদে-খুদে রাই, সবাই
সদশ্য, সবাই সার্বভৌম । ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভূক্ত সেইণ্ট লুসিয়া কিংব।
সেইণ্ট কিটুস্ দ্বীপ, লোকসংখ্য। ছ'লক্ষও ছাড়িয়ে যাবে ন1 হয়তো, তারাও রাষ্ট্র-
সংঘের সদশ্য, তাদের আলাদা নিশান হাওয়ায় ওড়ে, সে-সব দেশের মানুষ নিজেদের
কথা নিজেদের ভাষায় ব্যক্ত করবার উদ্দেশ্তে আলাদ! বেতার-টেলিভিশনের ব্যবস্থা
করতে পারেন । এবং করেওছেন ।
আমাদের পশ্চিম বঙ্গে ছ'কোটির উপর মানুষ, ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্য আমরা,
ভারতবর্ষের লার্বভৌমত্বের মধ্য দিয়ে আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রকাঁশিত-রূপায়িত।
বাইরের পৃথিবীর কাছে আমাদের পরিচয় ভারতবর্ষের নাগরিক হিশেবে, এই
পরিচয়ে আমাদের গৌরব, গর্ব, তৃপ্তি । অথচ কতগুলি অপূর্ণতার-অসা মপ্জস্যের কথাও
অহরহ আমাদের চেতনাকে তাড়া ক'রে ফেরে । দেড়শোর মতো দেশ রাষ্ট্সংঘের
সদন্য । কিন্তু চীন, সৌভিয়েট ইউনিয়ন, মাকিন যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, ত্রীজিল,
পাকিস্তান, মেক্সিকো, বাংলাদেশ, নাঁইজেরিয়], জাপান, ভিয়েতনাম ও পশ্চিম
জার্মানি, সাঁকুল্যে এই বারোঁটি দেশ বাদ দিলে অগ্ প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যাই
পশ্চিম বঙ্গের জনসংখ্যার চেয়ে কম। তা হ'লেও তার] নিজেদের ভাষায় নিজেদের
মতো! ক'রে নিজেদের আবেগ-আকৃতি-মতামত প্রকাশ করবার জগ্য বেতার-টেলি-
ভিশন কেন্দ্র ইত্যাদি খোলার ব্যবস্থা করতে পারেন, ব্যবস্থা করেওছেন । আমর?
পারি না, ভারতবর্ষের সংবিধান নাকি আমাদের সে-অধিকার দেয়নি, আমাদের
বেতার-দুরদর্শন কেন্দ্র প্রত্যেকটিই নতুন দিল্লির তত্বাবধানে, কেন্দ্রীয় সরকারের
নির্দেশে তারা পরিচালিত হয় | সংবিধান নাকি সেই নির্দেশই দিয়েছে। কেন্দ্রের
মন্ত্রীরা মীঝে-মীঝেই আমাদের জ্ঞীনশলাক1 উন্মীলনের প্রয়াসে উদ্যোগী হন : রাজ্য-
গুলি যতই বেতার-দুর দর্শন ইত্যাদি প্রচারযস্ত্রের ক্ষেত্রে নিজেদের অধিকার বিস্তারের
দাবি করুন না কেন, কেন্দ্র অসহায়, সংবিধানের ধারাবলী লঙ্ঘন তো সম্ভব নয়
সংবিধানের সপ্তম তফসিলে কেন্দ্র তালিকা, রাজ্য তালিকা ও যুগ্ম তালিক] নামে
৬৭
তিনটি সুস্পষ্ট তালিকা! সন্নিবদ্ধ আছে, কেন্দ্রের কোন্-কোন্ ক্ষেত্রে দায়িত্ব তথা
অধিকার, রাঁজ্যগুলির কোন্-কোন্ ক্ষেত্রে দায়িত্ব তথা অধিকার, এবং কোন্-কোন্
ব্যাপারে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ দায়িত্ব তা জলের মতে] ক'রে এই তফ্সিলে বুঝিয়ে
দেওয়া আছে। কেন্দ্র তালিকার অন্তর্ুক্ত একত্রিশ সংখ্যক নির্দেশিকা অনুযায়ী
টে।লফোন, টেলিগ্রাফ, বেতার ইত্যাদির দায়িত্ব কেন্দ্রের হস্তে সমপিত। সংবিধানের
নির্দেশ তে এড়ানো সম্ভব নয়, রাজ্য সরকারসযূহকে বেতার-দুরদর্শন কেন্দ্র খুলতে
দেওয়া সংবিধানকে অবমাননার শামিল হবে । তা ছাড়া, দেশবাঁসীগণ, ভেবে
দেখুন সবাই, জাতীয় সংহতি বিপন্ন, দেশের ভিতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে কী ক'রে
আমাদের জাতীয় একা ও অগগুতাকে ভেঙে চুর্ণ-বিচুর্ণ ক'রে দেওয়া যায়। এই
পরিস্থিতিতে রাজা সরকারদের বেতা'র-টেলিভিশন কেন্দ্র খোলবার অনুমতি দেওয়া
চরম হটকারিতা হবে । দেশের এই সংকটমুহূর্তে কোনো দায়িত্বশীল সরকার
এমনধার] প্রস্তাবে রাজি হ'তে পারেন না।
রাজ্য সরকারসমূহ নিজেদের তত্বাবধানে বেতার-দূরদর্শন কেন্দ্র প্রবর্তন করার
স্থযোৌগ পেলে জাতীয় সংহতি শিথিলতর ন] নিবিড়তর হবে সেই তর্ক এই মুহুর্তে
মুলতুবি থাক। কিন্তু সত্যিই কি ভারতের সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশ আছে কোনো
অবস্থাতেই রাজ্যগুলির হাতে বেতার-টেলিভিশন চালানোর দায়িত্ব ন্যস্ত কর
চলবে না, অনন্তকাল ধ'রে কেন্দ্র এই ব্যাপারে তার একচেটিয়া! অধিকার প্রয়োগ
করেযাবে?
আমাদের সাংবিধানিক ইতিহাস কিন্তু অন্য কথাই বলে ।
ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতারা অনেক ক্ষেত্রেই অনুকরণ-অনুসরণের পন্থা
অবলম্বন করোছিলেন : এখান থেকে একটি ভাবন ধার করা, ওখান থেকে একটি
অহ্চ্ছেদ যুক্ত করা. এ-ধরনের অজন্ন জোড়াতাঁলির উদাহরণ সংবিধানের সর্বত্র
ছড়িয়ে আছে। কেন্দ্র-রীজ্যের দায়িত্ব ও অধিকার নির্দেশের ক্ষেত্রে প্রীয় সম্পূর্ণ
নির্ভর করা হয়েছিল ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের উপর । প্রথম মহাযুদ্ধের
উত্তরপর্বে ভারতবর্ষে জাতীয় আন্দোলন উত্তাল, সাম্রাজ্যবাদী শোষণের শৃঙ্খল-
মোৌচনের লক্ষ্যে শত-সহস্ম দেশবাসী কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিক) পর্যন্ত সংগ্রামে
ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, বিদেশী শাসকের দমন-পীড়ন-অত্যাচারকে তুচ্ছাতিতুচ্ছ জ্ঞান
করে সাধারণ মানুষ সংগ্রামরত, যত বেশি দমন-গীড়ন-অত্যাঁচাঁর, লক্ষ-কোটি
ভারতবাসীর প্রতিজ্ঞা তত বেশি দৃঢ়বদ্ধ, স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে তার! তত
বেশি বেপরোয়া-অকুতোভয় ৷ ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারলেন কৌশলগত
৬1৮
কারণেই শৌধষপ-অত্যাচারের পাশাপাশি একটু-আবটু দয়া-দেখানোর ডাঁণ করা
প্রয়োজন | সাম্রাজ্যবাদ স্বেচ্ছায় নিজেকে অপস্ছত করবে না, কিন্তু একটু-আধটু
ক্ষমতা বিলিয়ে দেওয়ার অভিনয় করলে তো ক্ষতি নেই, তাতে অন্তত কিছু-াকছু
ভারতবাঁপীর মনে বিভ্রান্তি দেখ দিতে পারে, যার ফলে স্বাধীনত। আন্দোলনের
ঈষৎ দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা । এই চিন্তাধারার ফসল ১৯৩৫ সালের ভারত
শাসন আইন। যুক্তরাস্্ীয় প্রশাসনিক কাঠাযোর একটি ভণিতা ছড়িয়ে আছে
এই আইনের সর্বত্র, নতুন দিল্লিস্থ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই আসল সমস্ত ক্ষমতা
কুক্ষিগত থাকবে, কিন্তু ভারতীয়দের সামান্য খুশি করবার নিমিত্ত, পাশাপাশি,
গাঁলভর “প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনেরও ব্যবস্থা থাকবে, ভারতবর্ষের মানুষ বিভিন্ন
প্রদেশে সীমিত দাতিত্ব ও অধিকারের স্থযোগ গ্রহণ ক'রে প্রশাসনিক অভিচ্ঞতান্্
নিজেদের আভযিক্ত করতে থাকুক, দয়ালু ব্রিটিশ সরকার তার পর বিধেচন।
ক'রে দেখবেন ভবিষ্যতে তাদের দেশশীসনের আরে বাড়তি-কিছু দাঁয়িত দেওয়।
যেতে পারে কিন| | দেশটি ভারতবাসীদের নিজেদের হ'লেই বা কী, দেশ-চালানো
তো চাট্টিখাশি কথা নয়, ধের্য ধ'রে 'প্রাদেশিক' স্বায়ত্তশাসনে তারা হাতেখড়ি
দিক আপাতত ; যদি ভালে। করতে পারে, দয়ার আক্র সাম্রাজযবাদীদের পক্ষ
থেকে প্রজাকুলের প্রার্থন! আর-একবাঁর পরে বিবেচনা ক'রে দেখা হবে ।
এই মানসিকতা থেকে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের উদ্ভব, গোলামের
জাতকে প্রভু সম্প্রদায় প্রাদেশিক স্বায়ত্তশীসনরূপী প্রসাদকণ। বিলোচ্ছেন । ১৯৩৫
সনের আইনেই নিধান দেওয়া আছে, যোগাযে!গ ব্যবস্থা-বেতারযন্ত্র ইত্যাদির
উপর কেন্দ্রীয় সরকারের বিধিগত নিয়ন্ত্রণ থাকবে | কিন্ত নিয়ন্ত্রণের অর্থ এই নয়
যে নতুন দিল্লির সরকার বেতারমাধ্যম সম্পূর্ণ নিজের কুক্ষিগত করে রাঁথবেন,
প্রাদেশিক সরকারগুলিকে বেতারকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার কোঁনে। স্বযোৌগই
দেওয়া হবে না। ১৯৩৫ সালেব আইনের ১২৯ ধারায় বেতার ব্যবহারের বিশদ
ব্যাখ্য। দেওয়া আছে, কোনোরকম অস্পষ্টতা নেই এই ব্যাখ্যায় । নিজেদের
প্রয়োজনে কোনে প্রাদেশিক সরকার যদি বেত'রকেন্দ্র স্থাপনেপ্ন অনুমতি প্রার্থন।
করেন, তা হ'লে অযৌক্তিক কারণে তা অগ্রাহ্য করার অধিকার কেন্দ্রীয় সরকারের
থাকবে না। বেতারব্যবস্থার ক্ষেত্রে যদিও কেন্দ্রের বিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রণের অধিকার
থাকবে, সেই অধিকারের অপপ্রয়োগ করা চলবে না, যুক্তিসংগত কারণ ন1 দেখিয়ে
কোনে প্রাদেশিক সরকারের নিজস্ব তত্বাবধানে বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার অনুরোধ
বাতিল করা চলবে না, এমনকি প্রাদেশিক বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত বক্তব্য
৬৯
র1 বিষয়াবলী সম্পর্কে আপত্তি জানাঁবার অধিকারও কেন্দ্রের থাকবে না, প্রাদেশিক
সরকারগুলিকে শুধু এই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তাঁদের বেতারকেন্দ্র থেকে এমন-
কিছু প্রচার কর। হবে ন1 যাতে দেশের শীন্ত অথব1 শৃঙ্খল। বিদ্বিত হয় ।
ব্রিটিশ আমলে য1 ছিল প্রদেশ, স্বাধীন ভারতবর্ষে তা-ই রাজ্যে রূপান্তরিত।
সাম্রাজ্যবাদী ত্রিটিশের অতি-সংকীর্ণ অতি-অনিচ্ছার আইনেও, দেখ] যাচ্ছে, ভারত-
বর্ষের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের বেতারকেন্ত্র স্থাপনের অধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। কিন্তু
১৯৩৫ সাঁলের ভারত শাসন আইন পুরোপুরি চালু হওয়ার আগেই দ্বিতীয় মহা যুদ্ধ
বাধলো। ইতিহাসের দ্রুত পটপরিবর্তন ঘটলো, মহাযুদ্ধের উপসংহার, ভারতবর্ষ
থেকে সাম্রাজ্যবাদীদের অপসারণের সিদ্ধান্ত, দেশভাগ, স্বাধীন ভারতের নিজের
সংঁবধান, যা ১৯৫০ সাল থেকে আমাদের জীবনযাপনের নিয়মকলা নিয়ন্ত্রণ ক'রে
আসছে। সংবিধানপ্রণেতার কেন্দ্র-রাঁজ্য ক্ষমতা-দায়িত্ব বিভাজনের প্রশ্নে তেমন-
কোনে। মৌলিকতাঁর আশ্রয় নেননি, প্রায় হুবনথ ১৯৩৫ সালের আইনের নির্দেশাবলী
অন্থসরণ করেছেন । যোগাযোৌগ-টেলিফোন-টেলিগ্রাম-বেতারব্যবস্থাি, ১৯৩৫
সালের আইনে যেমন ছিল, সংবিধানেও কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয় হিশেবে বিধি-
বদ্ধ করা হলে! । শুধু একটি তফাৎ ঘটলো | ১৯৩৫ সালের ১২৯ সংখ্যক ধারাঁটি
আলাদা ক'রে পুনরুল্লেখ করা হলো না । সংবিধান প্রণেতারা আলোচনার সময
অবশ্টু বললেন, ১৯৩৫ সনের আইনের নিহিত উদ্দেশ্ঠ সংবিধানেও বলবৎ থাকবে,
রাজ্যগুলিকে আলাদ। বেতারকেন্দ্র স্থাপন করার পূর্ণ স্থযোঁগ দেওয়1 হবে, প্রধান-
মন্ত্রী জবাহরলাল নেহরুও এই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে গল মেলালেন । রাজ্যগুলিকে
অনুমতির জন্য অবশ্য কেন্দ্রের কাছে আসতে হবে, কেন্দ্র-কর্তৃক নির্দেশিত কিছু-কিছু
অনুশাসন তাঁদের মেনে চলতে হবে, কিন্তু রাঁজ্য সরকারসমূহের স্থুযোগ থাকবে
নিজেদের মতো ক'রে, নিজেদের ইচ্ছ?-আদর্শ-চিন্তাধার। অনুযায়ী, প্রচার-বেতীর-
কেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপন করাঁর।
সেই প্রতিশ্রীতি কয়েক বছবের মধ্যেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। এমনকি
সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকার পর্যন্ত প্রাদেশিক স্বাঁয়ত্বশীসনের নামে অঙ্গরাজ্যগুলিকে
যে-অধিকার দিতে আদৌ চিন্তিত বোঁধ করেননি, স্বাধীন ভারতবর্ষে তা স্থদূর-
পরাহত। সংবিধানরচনার মূহুর্তে প্রধান মন্ত্রীকর্তৃক উচ্চীরত অঙ্গীকার সুষ্ঠু ধারা-
রাহিকতাঁর সঙ্গে তিন পুরুষ ধ'রে অন্বীকৃত হয়ে এসেছে । এখন সংবিধীনেরই
দোহাই পাড়া হচ্ছে, যে-অধিকাঁর সংবিধান-অনুযায়ী কেন্দ্রের একার, ত! রাজ্য-
গুলিকে দান কর সম্ভব নয় ।
এটা ঠিক আইনঘটিত সমস্যা নয়, দৃষ্টিতঙ্গি-মানসিকতার সমস্যা । দেশের
সর্বোচ্চ বিচীরাঁলয়ের বিচারাঁধিপতিরা এ-সম্পর্কে কী অভিমত পোষণ করেন, তা
আজ পর্যন্ত যাচাই ক'রে দেখা হয়নি । কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অধিকার একচেটিয়]
অধিকারের সমার্থক কিন। সেই তর্ক তাই অমীমাংসিত । যদি ১৯৩৫ সালের ভারত
শীদন আইনের নজির তোলা যায়, এবং খোদ সংবিধানপ্রণেতাদের ব্যক্ত
অভিপ্রায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ কর! হয়, তা হ'লে বিচাঁরপতিদের সিদ্ধান্ত কী
হওয়া উচিত, তা নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না। অন্য পক্ষে ধারা বলবেন
ইতিহাস পরিবর্তনশীল, এবং অতীতের নজির দেখিয়ে সংবিধানের বিশ্লেষণকে একটি
বিশেষ খাতে প্রবাহিত করার প্রয়াস অসমীচীন, তীরা ভিন্ন উপসংহারে পৌছতে
চাইবেন । তর্ক গড়িয়ে চলবে | ইতিমধ্যে কিন্তু দেশের লক্ষ-কোঁটি জনসাধারণের
চেতনার মীন একটু-একটু ক'রে উন্নীত হবে, নিজেদের আথিক-সামাজিক-সাংস্কতিক
সংস্থান সম্পর্কে তাঁরা ক্রমশ সচেতন হবেন, পৃথিবীর পরিপার্থে কোথায় কী ঘটছে
আস্তে-আন্তে ত৷ তাঁদের জ্ঞানের বৃত্তের পরিধির মধ্যে ধরা পড়তে থাকবে ।
যেমন, আমাদের দেশের চৌহদ্দিতেই, একটি-ছু'টি ঘটনা ঘটেছে । কোনো
রাজ্য সরকারকেই বেতাঁর বা টেলিভিশন কেন্দ্র খোলবার অনুমতি দেওয়। হয়নি ।
দূরদর্শনের হুজ্ুরদর্শন খ্যাতি পরিয্ান হবার কোনে সম্ভাবনা আপাতত দেখা
যাচ্ছে না, অথচ ভারত সরকারই পরিস্থিতির চাঁপে প'ড়ে একটি বিশেষ সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন । শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েক লক্ষ তাঁমিলভাধী নাগরিক,
ধারা নিজেদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে আন্দোলন করছেন, সাময়িকভাবে
দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, দাক্ষিণাত্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
আছেন, এখান থেকেই শ্রীলঙ্কায় সংগ্রামরত সহযোগীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা ক'রে
চলেছেন । শ্রীলঙ্কায় বাণীপ্রচারের জগ্য তারা ভারতবর্ষের মাটিতে নিজেদের
বেতারকেন্দ্র স্থাপন করেছেন পর্যন্ত । কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে এই
বেতারকেন্দ্র খোল! সম্ভব নয়। অচিরেই তাদের সেই অনুমতি মিলেছে।
সংবিধানের নজির টান। তাই পণুশ্রম। শ্রীলঙ্কার তামিল স্বাধীনতাসংগ্রামীদের
বেতারকেন্ত্র মঞ্জুর ক'রে কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই সংবিধান-বহিভূ্ত কিছু করেননি,
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের ব্যাখ্যা অতএব কেন্দ্রের একচ্ছত্র অধিকার নয়, বেতার-টেলিভিশন
পরিচালনার ব্যবস্থা কেন্দ্রের নির্দেশে নিয়ন্ত্রিত হবে মাত্র, কিন্তু কেন্দ্রের একান্ত
কুক্ষিগত থাকবে ন', রাজ্য সরকারগুলি অনুরোধ জানালে তাদেরও সেই অধিকার
দেওয়। সমীচীন হবে, তাদের কতগুলি কেন্দ্রীয় নির্দেশ-অনুজ্ঞ! মানতে হবে মাত্র ।
৭১৯
সাধারণ বুদ্ধিতে এ-ধরনের মীমাংসাতেই পৌছনে? উচিত। কিন্তু ধারা
একনায়কতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেন, তারা তো সাধ!রণ বুদ্ধি দিয়ে পরিচালিত হ'তে দায়-
বদ্ধ হন। তীর সব-কিছু নিজেদের জন্য গ্রাস করতে চান, সমস্ত ঝোল নিজেদের
কোলে টানতে তীর! বদ্ধপরিকর, দেশের সমস্ত সম্পদ তাদের স্বার্থে ব্যয়িত হবে.
দেশের সমস্ত আইন ছুমড়ে-মুচড়ে তাঁদের স্বার্থ প্রসারের জন্ প্রয়োগ করা হবে,
দেশের বিচাঁরব্যবস্থ! তাঁদের শ্রেণীস্বার্থে তারা ব্যবহার করবেন, দেশের প্রশাসন
সর্বস্তরে একমাত্র তাঁদের স্বার্থ দেখবে, দেশের যাঁবতীয় প্রচারমাধ্যম তাদের পুরো-
পুরি কুক্ষিগত থাকবে ।
স্থতরাং সংবিধানের ইতিহাঁসবিঙ্লেষণের কোনো স্থযোগই নেই এখানে ।
দেশ বিপন্ন, কেরল ব1 কর্ণাটক বা ত্রিপুরা ব1 পশ্চিম বঙ্গ সরকারকে দূরদর্শনের
দ্বিতীয় তরঙ্গ ব্যবহার করার অনুমতি দিলে, কে না জানে, এই অবস্থায় জাতীয়
সংহতি শিথিল হবার আশঙ্কা । আমাদের পরম দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় সরকার এই
ঝু'কি আদে নিতে পারেন না।
মুশকিল হলো, ছ'কোঁটি মানুষ পশ্চিম বঙ্গে, সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ অন্ধ
প্রদেশে, পাচ কোটি মানুষ কর্ণাটকে, তিন কোটি মানুষ কেরলে, এই মানুষগুলি
যদি হঠাৎ ভাবতে শুরু করে, কেমনধার। প্রথা এটা, সেইণ্ট কীটসের মাত্র সত্তর
হাজার নাগরিক, তাঁদেরও নিজেদের রেডিও-টেলিভিশন থাকতে পারে, আছে,
অথচ আমরা এত-এত কোটি মানুষ, আমাদের ক্ষেত্রে তা হবার জো নেই, কিন্তু
কেন নেই | এ-ধরনের চিন্তা যদি একটু-একটু ক'রে ক্রমশ ছড়াতে শুরু করে,
জাতীয় সংহতি কী শিথিলতর হবে, ন। দৃঢ়তর হবে ?
৭২.
ধনতন্জ্রের নাভিশ্বাস ?
ধুন্দমার কাণ্ড চলছে ধনতান্ত্রিক দেশগুলির ফাঁটক বাজারে । শেয়ারের দাম
গৌত্তা খেয়ে নিচে নামছে, নিউ ইয়র্কে নামছে তে। লগ্ুনেও নামছে, নামছে
শিকাগোতে, টোৌকিওতে, প্যারিসে, হঙকঙে। প্রত্যেকটি দেশে এখন ভয়চকিত
কঠস্বর : তবে কি মার্কসবাঁদীরাই ঠিক, ধনতাস্ত্রিক কাঠামো! সত্যি-সত্যি ধ'সে
পড়বে, দেশে-দেশে, সেই প্রায় ষাট বছর আগে যেমন দেখা দিয়েছিল, ফের মন্দা
দেখা দেবে, কোম্পানির পরে কোম্পানি ফেল পড়বে, একটার পর একটা কারখানা
বন্ধ হয়ে যাবে? এমনিতেই কর্মসংস্থানের অবস্থা ভালে নয়, এখন আরো
হাজার গুণ খারাপ হবে, গোটা ধনতান্ত্রিক বিশ্ব ছুড়ে কোটি-কোটি নাগরিক বেকার
হয়ে পড়বেন? উৎকঠা, আর্তনাদ, পারম্পরিক সন্দেহ : লক্ষণ দেখে মনে হয়,
মেরামতি ক'রে আর পশ্চিমী ধনতন্ত্রকে খুব বেশি দিন টিকিয়ে রাখ যাবে না।
কিছু গুণ একদ] হয়তো এই ব্যবস্থায় ছিল, এখন শুধুই ঘুণের পালা, সংকট চারদিক
থেকে যেন ছেঁকে ধরছে, এবার আর অব্যাহতি নেই ।
ফাটকা বাজারের বিশিষ্ট একটি মানসিকতা। আছে, একবার দাম পড়তে শুরু
করলে, এবং ফাটকাবাজদের একটি বড়ো অংশ হতাশার শিকার হ'লে, দাম ভু-হ
ক'রে কমতেই থাকবে । যদি ধারণ ছড়িয়ে পড়ে যে আগামী কাল শেয়ারের দাম
আরে! নামবে আজকের তুলনায়, এবং আগামী পরশু তার চেয়েও বেশি নিচে
নামবে, তাহ'লে উর্ধবশ্বাসে সবাই এই মূহুর্তে শেয়ার বিক্রি ক'রে দিতে ছুটবেন।
এবং শেয়ার বেচবার আগ্রহ ঘত বেশি হবে, দাম তত বেশি পড়বে, তখন বেচবার
তাঁগিদ আরো বাড়বে, ফের শেয়ারের দাম আরো নিচে নামবে, এমনি ক'রে
নামতে-নামতে একেবারে প্রায় পাতালে গিয়ে ঠেকবে । গত দু'সপ্তাহ ধ'রে
ধনতান্ত্রিক বিশ্বে শেয়ার বাজারে যে-বিপর্যস্ততা দেখা দিয়েছে, তার গোড়ায় এই
মানসিকতা | ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপ্রতিহত ভবিষ্যৎ অগ্রগতির কল্পকথায় দেশে-
দেশে সাধারণ মানুষ যেন আর সায় দিতে পারছেন না, এমনকি খোদ মাঁকিন
মূলুকেও পারছেন না। সবাই যেন ধরেই নিয়েছেন, এখন থেকে ঘুণের পালা,
স্থতরাঁং গুটিয়ে নিয়ে আসে! নিজেদের, ঘর সামলাও, নিজেদের ঘর, প্রতিবেশীদের
প্র, কথা £ ৭৩
কথা আপাতত না ভাবলেও চলবে ৷ মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের শাঁসকবর্গ ভাবছেন
নিজেদের স্বার্থ কোনোক্রমে রক্ষা করবার কথা, এ একই কথা ভাবছেন পশ্চিম
ইওরোপের ব1 জাপানের মানুষজনের । এবং তাতে পারস্পরিক অবিশ্বাস-ভুল-
বোঝাবোঝি আরো বাড়ছে। ৃ
হালে সংকট যে-বিশেষ আকারে দেখা দিয়েছে, তার মূলে অবস্ত মাকিনি
অর্থব্যবস্থা । মাকিন সরকার বিত্বশালীদের উপর ট্যাক্সো চাপাতে রাজি নন,
তারা ঘাটতি বাজেট করছেন, ঘাটতি মেটাচ্ছেন নোট ছাপিয়ে, এই টাকায়
প্রতিরক্ষা খাতে সতত ব্যয় বাড়িয়ে যাঁওয়। হচ্ছে, প্রতিরক্ষার উপকরণ-সরঞ্জামাদি
সরবরাহকারী শিক্প প্রতিষ্ঠান-ঠিকেদারদের পোয়া বারো । কিন্ত বেশি নোট
ছাপিয়ে মুদ্রান্ষীতি ঘটালে দেশে জিনিশপত্রের দাম উর্ধ্বনুখী হবে, সেই আশঙ্কা
এড়াবার জন্য বিদেশ থেকে প্রচুর জিনিশপত্র আমদানি করছেন মাঁকিন কর্তৃপক্ষ,
বাজেটে যে-পরিমাণ ঘাটতি, রপ্তানি ছাপিয়ে আমদানির বহরও ঠিক সেই পরিমাণ,
কিংবা কোনো-কোনে। বছর তারও বেশি। মূল্যবৃদ্ধি রোধ করবার জন্যই এই
ব্যবস্থা প্রয়োজন, বৈদেশিক বাণিজ্যে এই পরিকল্পিত ঘাটতি । কিন্তু রপ্তানির
চেয়ে আমদানি বেশি হ'লে অন্য সমস্যা, বাণিজ্যিক ঘাটতি মেটাবার দায় দেখা
দেয়, নগদ টাকা দিয়ে তা মেটাতে হয়। এখানেও মাফিন কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক-
বছর ধ'রে একটি বিশেষ প্রকরণের উপর নির্ভর করছেন। তারা দেশের
অভ্যন্তরে সুদের হার বাড়িয়ে গেছেন । বাঁড়তি স্থদের আকর্ষণে অন্যান্য ধনতা স্ত্রিক
দেশ থেকে কাঁচা টাক! মাঁকিন যুক্তরাষ্ট্রে জমা হয়েছে, এই টাকায় মাকিন জাতি
তাদের বাণিজ্যিক ঘাটতির দায়ভার মেটাচ্ছেন। জিনিশপাতি কিনছেন বিদেশ
থেকে, আবার সেই জিনিশপাতি কেনার সংস্বান করছেন বিদেশীদের কাছ থেকে
খণ গ্রহণ করে।
কিন্ত ঠিক এখানেই ধনতাস্ত্রিক ব্যবস্থার স্ববিরোধিতা প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে ।
অঢেল হারে স্থদ বাড়াবার ঝুকি আছে। স্থদের হার বাড়লে দেশের মানুষ
ব্যাঙ্কে টাকা রেখে স্থ?দ উপভোগ করবার দিকে ঝুঁকবে, ফাটকা বাজারে গিয়ে
শেয়ার কেনবার শখ তাদের ক'মে যাবে । সুদের টাকা নিশ্চিন্ত হারে আসছে,
কিন্তু শেয়ার কিনলে তা থেকে আখেরে লাভ হবে কি হবে না তা নিয়ে
একটু অনিশ্চয়তা থেকেই যাঁয়। শেয়ার মানে শিল্পপ্রতিষ্ঠানা দির শেয়ার, শিল্প-
প্রতিষ্ঠানাদ্দির মুনাফা ভালে! হ'লেই শেয়ারে টাকা খাটিয়ে লাভের সম্ভাবন]।
কিন্তু মীকিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে এক দিকে যেমন স্থদের হার চড়ছে, অন্ত দিকে
৭
তেমনি শিল্লোৎপাদনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়-সন্দেহ মাথা চাড়া দিচ্ছে । সৌিয়েট
€দশের নেতৃবৃন্দ অহরহ শান্তির কথা বলছেন, তার ইওরোপের পারযাণবিক অস্ত্রশস্ত্র
কমিয়ে আনার উদ্দেশে চুক্তি সই করেছেন, নিত্য-নতুন আরো প্রস্তাব দিচ্ছেন
যাতে গোটা পৃথিবীতে অর্থহীন অস্ত্রস্তীর ব্যাহত হয় । নান। যুক্তির ফাদে তারা
মাকিন কর্তৃপক্ষকে আটকে ফেলেছেন, সুতরাং, বলা যায় না, হয়তো মাফিন
সরকারকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে অস্ত্রশত্ত্রের উৎপাদন কমীতে রাঁজি হ'তে হবে ।
যার মানে মাকিন প্রতিরক্ষা ব্যয় এক ধাকায় অনেকটা হ্রাস পাবে, সংশ্লিষ্ট শিল্প
ও ঠিকেদারি সংস্থাগুলিয় উৎপাঁদন-উপার্জনের উপর প্রভাব না পড়েই যায় নাঁ।
ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা গভীর ছুঃসংবাঁদ হিশেবে দেখা দেয় কারো-কারে। কাছে,
প্রতিরক্ষার খরচ কমবে, শিল্লোৎপাঁদনও সেই সঙ্গে, পুঁজিপতিদের লাভে খামতি
ঘটবে, শেয়ার কিনে লাঁভ নেই তেমন | কেউ যদি একবার এই আর্তোক্তি উচ্চারণ
করেন, সঙ্গে-সঙ্গে তার অন্তঃস্থিত মর্ম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে, আতঙ্কের পালা শুর
হয়, ধস নামে ফাঁটকা বাজারে. যেমন নেমেছে গত ছুই সঞ্াহ ধ'রে।
ত৷ ছাড়া,-অন্য সমস্যাও আছে । মাঁকিন পুঁজিপতির! শিল্প প্রতিযোগিতায়
জাপানীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না। জামাকাপড়ের মতে অতি সাধারণ ভোগ্য-
পণ্যই হোক, অথব1 রেডিও-টে।লভিশনই হোঁক, কিংবা কম্পিউটারপ্রতিম ইলেক-
ট্রনিক শিল্পজাত পণ্যই হোক, জাপানীর] যে-দীমে যে-উৎ্কর্ষের জিনিশ বাজারে
ছাঁড়তে পারছেন, মাঁকিনর1 তীর কাছাকাছিও আসতে পারছেন না, এমনকি
মাকিন দেশের বাজারই জাপানী জিনিশপত্রে ছেয়ে যাচ্ছে । জাপানের উত্তরোত্তর
পৌষ মাস, মাকিনীদের সর্বনাশ । এখন মাকিন যুক্তরাষ্টে শোরগোল শুরু হয়েছে,
জাপানীদের হাতে প'ড়ে-প'ড়ে মার খেতে রাজি নন অনেক মাকিন শিল্পপতি, একটি-
দ্'টি শ্রমিক প্রতিষ্ঠনিও তাদের সঙ্গে গল [মলিয়েছেন, গ্াঁদের সম্মিলিত দাবি :
হয় জাপানীর। স্বেচ্ছায় মাকিন বাঁজারে জিনিশ বিক্রি-বাট! কমিয়ে আনুন, নয়তো
সাকিন কর্তৃপক্ষ বিধি-নিষেধ আরোপ করুন যাতে জাপান থেকে অঢেল পণ্য
আসা বন্ধ হয়। দুই দেশের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে আলাপ-আলোচন। চলছে,
প্রতিশ্রতির আদান-প্রদাস, কিন্ত সমশ্যার তেমন সুরাহা হচ্ছে না। ছুই দেশেই
তাই একটু-একটু ক'রে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে । নিউ ইয়র্কে ফাটক বাজার যেই মার
খাচ্ছে, সঙ্গে-সঙ্গে টোকিওতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, মাকিন কর্তৃপক্ষ নিজেদের আভ্যন্তরীণ
অর্থব্যবস্থা সামাল দিতে এবার বুঝি কড়া দাওয়াই প্রশ্নোগ করবেন, নির্দেশ দিয়ে
জাপান থেকে আমদানি কমাবেন | এই স্তাঁবন! নিয়ে আলোচন। গুরু হওয়।
৭৫
মাত্র টোকিও-র ফাটকা বাজারে তার ছায় পড়ে, দাম নিচে নামতে শুরু করে ।
এভাবে এক ধনতান্ত্রিক দেশ থেকে আর-এক ধনতান্ত্রিক দেশে ত্রাসের বার্তা
পৌছে যেতে থাকে।
আরেকটি সমস্যাও প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দেখা দেয়। মাকিন দেশে টাকার
স্বাদ ক্রমশ উপরে চড়ে, পশ্চিম ইওরোপে তা হাতছানি,হয়ে দেখ। দেয় । ইওরোপের
সঞ্চয় বাড়তি স্থদের লোভে মাফিনমুখে হয়, ইওরোপের ধনতান্ত্রিক দেশগুলিতে
টাকার ঘাটতি ঘটে, অতএব প্রয়োজনীয় ধিনিয়োগ আটকে থাকে, এই
অন্থবিধ! থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় ইওরোপীয় দেশগুলিতেও টাকার
স্থদ বাড়ানো । কিন্তু তা হ'লে শিল্লোৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে, রঞ্চানি
বাণিজ্যে পশ্চিম ইওরোপের দেশগুলিতে পিছিয়ে পড়তে হবে | সমাজতন্ত্রের জুদুর
ভয়ে এইসব দেশের সরকার মাঁকিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক সধ্যে আবদ্ধ, কিন্তু
আস্তে-আসন্তে এখন অর্থনৈতিক সংঘাতের সমস্যা বড়ো আঁকার ধারণ করছে, মাফিন
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন-কষাঁকষির পাল। এদেরও শুরু হয়েছে তাই । চাঁচা-আপন-
প্রাণ-বাঁচা, এই নীতি এখন প্রায় প্রত্যেকেরই চেতনার গভীরে স্ুপ্রোথিত। সর্বত্র
যখন শেয়ার বাজারে স্কট দেখ! দেয়, তখন প্রত্যেকটি ধনতান্ত্রিক দেশেই এই
ভাবন। প্রকট হয় রাজনৈতিক সৌভ্রাতৃত্ববোধ নিয়ে যতই প্রচার করা হোক না
কেন, সংকটের মূহুর্তে প্রত্যেকেই নিজেব-নিজের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা ভাববে,
বিদেশ থেকে জিনিশ কেনা-কাট। কমিয়ে আনবে, যে-সিদ্ধান্তের ভুক্তভোগী হ'তে
হবে অন্য দেশগুলিকে । পারস্পরিক অবিশ্বীসের জৌয়ারে প্রাক্তন অনেক প্রতি-
শ্রুতি ও অঙ্গীকাঁরের ভেসে যাওয়ার উপক্রম হবে ।
আমরা যাঁর ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাইরে আছি, অথচ পরিকল্পিত সমাজতন্ত্রের
পৃথিবীতে এখনো! উপনীত হতে পারিনি, পুঁজিবাদী সংকটে জড়িয়ে পড়তে হর
আমাদেরও । টাকার স্থদ বাড়লে গরিব-অন্ুমত দেশগুলিকে সেই চড় হারে টাকা
ধার করতে হয় পুঁজিবাদী রাষ্্রসমূহ থেকে, সেই স্থদের চোট সামলাতে সকলের
ব্রাহি-ত্রাহি অবস্থা । একটা হিশেবে ধরা পড়েছে, অনুন্নত দেশগুলিকে সম্প্রতি
শ্রেফ স্থুদ হিশেবেই ষত টাঁক। পশ্চিমের ধনতান্ত্রিক দেশগুলিতে পৌঁছে দিতে হচ্ছে
প্রতি বছর, তা ভারতবর্ষের বাঁধষিক জাতীয় উপার্জনের সমপরিমাণ । তাছাড়া,
পশ্চিমে ধনতন্ত্রের সংকট যত পরিব্যাপ্ত হবে, উৎপাদন ও উপভোগ ব্যবস্থায়
তার প্রভাব পড়বে, বাণিজ্যিক লেনদেন-ক্রয়-বিক্রয় হাঁস পাবে, গরিব-অনুন্নত
দেশগুলিতে তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রী বিদেশের বাজারে বিক্রি করতে গিঙ্কে
৭৬
হিমসিম খাবে | এ-সমস্ত সামগ্রীর দাম চাপে ফেলে কমিয়ে আন। হবে, মারা
পড়বেন গরিব দেশের গরিব মানুযগ্ুলি । যতদিন পর্যন্ত অনুন্নত রাইগুলি নিজেদের
মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এই চাপকে উপেক্ষা করতে সক্ষম না
হবেন, ততদিন অস্থবিধার মধ্যে থাঁকতে হবে তাদের, পুঁজিবাদীর] তাঁদের সংকটের
খানিকট। দায় পৃথিবীর দরিদ্রদের কাধে চাপিয়ে মুনীফার বহর যথাসম্ভব রক্ষা
রক্ষা করতে সদাঁসচেষ্ট থাকবেন : ধনতন্ত্রের এটাই নিয়মকলা |
পশ্চিমের দেশগুলিতে শেয়ার বাজারে ধুন্দুমার কাঁও, সধনাশের পূর্ধলক্ষণ।
হয়তো পুঁজিবাদীরা জোড়াতালি দিয়ে আরো কিছুদিন সংকটের উদগ্র প্রকাশ
ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন, হয়তো পারবেন না। শেষ পর্যন্ত যা ঘটবে তা
ইতিহাসের নিয়ম-অনুযায়ীই ঘটবে : ধনতন্ত্রের কপাল পুড়বে, কিন্তু কবে কোথায়
কীভাবে পুড়বে তা ইতিহাসে আগে থেকে লেখা থাকে না, বিশেষ ঘটনা ক্রমের
উপর তা নির্ভরশীল। তার অর্থ কিন্তু এই নয় যে ইতিমধ্যে আমর হাত গুটিয়ে
ব'সে থাকবো কবে রাঁধ। নাচবে সেই প্রতীক্ষায় । গরিব উন্নতিশীল প্রতিটি দেশে
যদি স্বনির্ভর অর্থব্যবস্থার বেলাভূমি স্প্রশস্ত কর! সম্ভব হয়, আমরা যদি সংযুক্ত-
সম্মিলিত হ'তে শিখি, পুঁজিবাদের সংকট তাহলে আমাদের কোনে বিপাকেই
পারবে না, ইতিহাস তো ঝু'কবে আমাদের দিকে ।
৭৭
“নিলামে তেল বেচো দাম কমকে,
খবরকাগজের ভিতরের পৃষ্ঠায় ঢোকাঁনে! অতি ছোটে সরকাঁরি বিবৃতির বয়ান,
চোঁখে পড়ে কি পড়ে না: দিল্লির সরকারের চোখে ঘুম নেই, দেশে খরা, শশ্হখনি,
জিনিশপত্রের দাম চড়ছে, ভোজ্য তেলের দাম অতিরিক্ত দিয়েও অনেক রাঁজ্যেই
যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না, জোগ।নে ঘাটিতি। নতুন দিল্লিস্থ সরবরাহ মন্ত্রক
এই ব্যবস্থা চলতে ন। দিতে দৃঢকল্প, তাঁদের তবীবধানে পঞ্চাশ হাজার টন ভোজ্য
তেল মুত আছে, সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘব করবার উদ্দেষ্তে সেই তেল তারা
বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই তেল অচিরে ছাড়া হচ্ছে । কী পদ্ধতিতে
ছাঁড়। হচ্ছে? সেই পঞ্চাশ হাজার টন তেল নিলামে বিক্রি করবাঁর বন্দোবস্ত
করছেন কেন্দ্রীয় সরকার | এর পর ভোজ্য তেলের দাম নাকি না ক'মেই পারে না।
প্রায় আশি কোটি মানুষের দেশ আমাদের, এই আশি কোটি নাগরিককে
গোমুখ্যু ভেবে নিয়েছেন সরকার, নইলে এ-ধরনের বিবৃতি বাজারে ছাড়বাঁর সাহস
অথব] স্পর্ধা চট ক'রে হবার নয়। নিলামে চড়ালে ঘাটতি জিনিশের দাম কমে
না, বাড়ে। নিলাম থেকে এই পঞ্চাশ হাজার টন ভোজ্য তেল চড়া দাম দিয়ে
কিনবেন সাধারণ নাগরিকর। নন, কিনবে সে-সব ব্যবসাদারর1 চড়া দাম দিয়ে
কেনবার মতে৷ সংগতি যাঁদের আছে । এবং ইত্যাঁকার ব্যবসাদারর। দয়ার সিদ্ধ
নয়, তাদের উপর সরকারের কোনে হুকুমদাবির ক্ষমতাও থাকবে না । নিলামে
সর্বোচ্চ দাম দিয়ে তারা সরকারের জিম্মা থেকে যে-ভোজ্য তেল কিনে নিজেদের
গুদোমে তুলবে, তারা তা ইচ্ছা হলে বাজারে ছাড়বে, ইচ্ছা না হ'লে ছাড়বে
ন1 | তাঁদের ইচ্ছার গতি-প্ররূতি নির্ভর করবে সম্ভাব্য মুনাফার পরিমাণের উপর |
চড়া দামে যা কেন। হয়েছে আরো চড়া দামে তা ন। বিক্রি করতে পারলে ব্যবসার
ধর্মরক্ষা হয় না, এবং অন্য-কোঁনে। দায়ে ব্যবসাদারর1 নিজেদের বা অন্য-কারে। কাছে
অঙ্গীকারবদ্ধ নয়। স্বধর্মে নিধন শ্রেয়, পরধর্ম ভয়াবহ : মনে প্রাণে এটা বিশ্বাস
করে ব'লেই মজ্ুতদাররা মজুতদার, ফাটকাবাঁজরা ফাটকাবাজ, ব্যবসাদারর1
ব্যবসাঁদার । যে-ভোঁজ্; তেল দয়ার সাগর সরকার খুশি মনে ব্যবসায়ীদের
হাতে তুলে দিচ্ছেন, এই মুহূর্তে বিক্রি না ক'রে বরঞ্চ ধ'রে রাখলে ইচ্ছামতো
৭৮
আরো।-অনেক চড়। দামে বিক্রি কর সম্ভব হবে মনে হ'লে ব্যবসাদাররা তা
ধরে রাখবে, গুদামজাত ক'রে রাখবে ; বাজারে যখন আরো! অনেক বেশি ঘাটতি
দেখা দেবে, দাম আরে! ঢের বাড়বে, তখন একটু-একটু ক'রে তারা গুদাম থেকে
তেল ছাড়তে শুরু করবে, তাঁদের অস্কের হিশেবে কোনো খুঁত থাকবে না, সম্ভাব্য
সর্বোচ্চ মুনাঁফায়, সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দামে সরকার কর্তৃক বিদেশ থেকে আমদানি
কর। ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা বাজারে ছাড়বে । সুতরাং সরকার সিদ্ধান্তে বাজারে
দাম কমবার কোনো' প্রশ্নই নেই, দাম আরে! বাঁড়বে ।
নতুন দিল্লির সরকার জনসাধারণকে যাই ভাবুন না কেন, নিজের অন্তত
গোমুখ্যু নন । তাঁরা ভালো ক'রেই জানেন কোন্ সিদ্ধান্তের কোন্ পরিণাম হ'তে
পারে । নিলামে বিক্রি করলে ভোজ্য তেলের দায় যে পড়বে না, বরঞ্চ বাঁড়বে
সেই জ্ঞান তাঁদের আছে। এবং আছে বলেই যে-সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর] হয়েছে তাতে
উপনীত হয়েছেন তাঁর শ্রেণীব্বার্থান্ধ সবকারের চরিত্রই এটা । স্বশ্রেণীডুক্ত
জন-পরিজনদের আখের গুছোবাঁর কোনো স্থযোগই নষ্ট হ'তে দিতে নেই :
শ্রেণীযুদ্ধের অন্যতম প্রধান স্যত্র এটা । বাজারে আগুন লেগেছে, সেই আগুনের
সদ্যবহার করতে হবে । এটা ব্যবসাঁদারদের সরকার, মুনাফাবাজদের সরকার,
সরকারেব প্রতিটি ক্রিয়াকর্ম শ্রেীভুক্তদের স্বার্থ প্রসারের উদ্দেশ্টপ্রহুত | তাই
লোক-দেখানে। সিদ্ধান্তগুলিও লোঁক-ঠকানে। সিদ্ধান্তে পর্যবসিত হয় । বাজারে
আগুন, জিনিসপত্রের দাম চড়ছে, সরকার স্যাকার সখি সাঁজেন, জিনিশপত্রের দাম
কমাবার অছিলায় জিনিশপত্রের দাম আরো! বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন,
ব্যবসাদারের ট*্যাক,আরো ভারি হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের এবংবিধ আচরণের হয়তো আরো! একটি সংগোপন কারণ
আছে। দেশের লোক বাঁচলো। কি মরলে তাতে এই সরকারের তেমন-কিছু যায়
আসে না, সরকারের ভাবনা এই মুহূর্তে অন্তত্র । প্রতিরক্ষ। তথা নিরাপত্তা
বাহিনী পুষবাঁর নামে সরকারের ব্যয় ছু-হু ক'রে বেড়েই চলেছে : নিয়ন্ত্রণহীন ব্যয়,
সাপের জন্য খরছ করা হচ্ছে ন। ব্যাঙের জন্য বাইরে থেকে তা জানবার উপায় নেই,
এমনকি সংসদসদস্যদেরও জানবার উপায় নেই, যা খরচ কর! হচ্ছে তার কত
পরিমাণ বোফর্সসদৃশ দুরশতির খাতে উধাও হয়ে যাচ্ছে তা পর্যন্ত জানবার উপায়
নেই। অথচ খরচ বাড়ছে । নোটের পর নোট ছাপিয়েও সেই খরচের সামাল
দেওয়া যাচ্ছে না । যে করেই হোক, দিল্লির সরকারকে আরে! টাকার ব্যবস্থা!
করতে হবে। ভোজ্য তেল আমদানি কর] হয়েছিল সরকারি বণ্টনব্যবস্থা মারফত
৭৯
তা বিতরণ ক'রে বাঁজারে তেলের দামের উপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে ।
শিকেয় তোল! থাঁক সেই প্রাগৈতিহাসিক উদ্দেশ্, আপাতত ব্যবসাদারদের কাছে
নিলামে তেল বেচে কিছু লাভ করা হোক তো আগে, সেই লাভের টাকায়
সরকারের ঘাটতি খানিকট] মেটাঁনে! যাবে । এই সরকারি কেরামতিতে বাজারে
দাম যদি আরো! বেড়েই যাবে, কী আর করা, শাসকগোষ্ঠীর কেউ তে। আর মার
খাচ্ছে না তাতে, তাদের বরং আরে! স্ৃবিধাই হবে, তারা নিজেরাও আরো-
একটু বাড়তি আখের গুছিয়ে নিতে পারবে এই স্থযোগে । এমন না হ'লে শ্রেনী
সরকার ।
যে-কোনে। সংকটের সময় সাধারণ মানুষ আরো-বেশি শোধিত-বঞ্চিত হবেন,
এবং দেশের ক্ষমতাশীল সরকার দ্ীড়িয়ে-দীড়িয়ে মজা দেখবেন, সেই শোষণ-
বঞ্চনার বিরুদ্ধে কোনে] ব্যবস্থা নেবেন না, উল্টে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত দেবেন
শোষকপ্রবঞ্চক সম্প্রদায়কে : এটাই ধব সমীজিক সত্য | কিন্তু গণমাঁনসে এই সরল
সত্যটি আঁদে সহজগ্রাহ নয় । সামন্ততান্ত্রিক একটি বিশেষ মোহের কুয়াশ। এখনে!
সমাজের একটি বড়ো অংশের চেতনা সমাচ্ছন্্ ক'রে আছে। সামন্ততন্ত্রের অন্ধকারে
অভাবী মানুষ, ছুঃখী মানুষ, অত্যাঁচারিত-হতভম্ব মানুষ সর্বদা পরিত্রাত। অন্বেষণ-
গীল। দুঃখরজনীর নিরসন ঘটবে, ছুঃশীসন থর্ব হবে, এমন-কারে] আবির্ভাব
ঘটবে যিনি অত্যাচারিত-শোষিত মানুষদের ত্রাণ করবেন, তাঁদের হয়ে লড়াই
করবেন, তাঁদের জন্য ম্যাঁয়বিচারের ব্যবস্থা করবেন । সেই পরিভ্রাতা হয় ঈশ্বর,
নয় রাঁজা, নয় দূরস্থ সরকার | নায়েব-পেয়াদা-খরকন্দাজর। গরিব মানুষ-দ উপর
যে-অত্যাচার চালাচ্ছে, রাজ! বাহাদুর বা জমিদার সাহেব নিশ্চয়ই সেই খবর
রাখেন না, সেই খবর তাঁর কাছে পৌছয় না, পৌছুতে দেওয়া হয় না, কিন্ত
কোনোক্রমে যদি খবরটা তিনি পেয়ে যান, তড়িঘড়ি ছুটে আসবেন তিনি, রথ
চালিয়ে কি ঘোড়। ছুটিয়ে, আমাদের গ্রামের মাঠে তিনি রথ বা ঘোড়া থেকে
নামবেন, আমরা সাষ্টাঙ্গ হবো, তিনি আমাদের প্রার্থন] শুনবেন, আমাদের উপর
অত্যাচারের বিবরণ আরো বিশদ ক'রে জানবেন, সঙ্গে-সঙ্গে যথাঁবিহিত ব্যবস্থা
নেবেন, গোমস্তা-পেয়াদা-বরকন্দাজদের অত্যাঁচার-থেকে মুক্ত করবেন তিনি, আমরা
মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচবে : অস্বীকার ক'রে লাভ নেই, যুগের পর যুগ ধ'রে
দূরবর্তী রাজা-জমিদার-দরকার সম্পর্কে এই কুহকবোধ দেশের বেশির ভাগ মানুষকে
ঘোরের মধ্যে রেখে দিয়েছে । পেয়াদা-বরকন্দাজরা যে সরকার ব1 জমিদার থেকে
আলাদ] নয়, যে-অত্যাচারে তারা জর্জরিত হচ্ছেন তা যে খোদ জমিদার বা
৮ 2..
সরকারের নির্দেশ মেনেই কর] হচ্ছে, এই প্রতীতিতে সাধারণ মানুষকে পৌছে
দেওয়া এখনে যথেষ্ট দুঃসাধ্য | নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিশের দাম বাড়বে, গরিধ,
অধ্যবিত্ত সম্প্রদায়তুক্ত মানুষ মূল্যবৃদ্ধির তাড়নায় হাঁসফাঁস করবেন, অথচ নতুন দিষ্লিস্থ
সরকার বাহাছুর দ্াঁড়িয়ে-দীড়িয়ে মজা দেখবেন, মানুষের দুর্দশা! অপনোদনের
জন্য ন্যুনতম চেষ্টাটুকু করবেন না, এমনকি হয়তো দুর্দশা! যাতে বাড়ে তার জন্য
একটি-দু'টি বাড়তি অপকর্ম সংঘটিত করবেন : শীদামাটা গৃহস্থ মাচুষ এরকম
কোনো বাস্তবতা এখনে] যেন ঠিক মেনে নিতে পারেন না, তাঁদের দু'চোখে
বিশ্ফারিত বিস্ময় ৷
আন্তে-আস্তে অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যাবেন তীর, শ্রেণীস্বার্থের, শ্রেনীদ্বন্দবের
পাটিগণিত একটু-একটু ক'রে রপ্ত হবে তীঁদের। সরকার নিরপেক্ষ-নিরালম্ব
কোনো বস্তু নয়, সেই সরকার কেন্দ্রীয় সরকারই হোক, কিংব1 রাজ্য সরকার ।
প্রত্যেকটি সরকারকে আবৃত ক'রে শ্রেণীস্বার্থ, স্ব-স্ব শ্রেণীভূক্তদের স্বার্থ দেখবার
জন্য সরকার । স্থতরাং যারা মাঝে-মাঝে অনুযোগ করেন, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘর্ষের
কচকচি আর ভালো লাগে না, আপনাদের ঝগড়ার্বাটি মুলতুবি রাখুন না কেন
রাজ্যের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, জাতির স্বার্থে কেন্ত্র-রাজ্য সরকারগুলি
মিলে-মিশে একযোগে কাঁজ করুন না আপনারা. তাঁদের সবিনয়ে বলতেই হয়,
এক অলীক কল্পরাজ্যে বিহার করছেন তাঁরা । ধারা গল কাটতে চাইছেন,
আর ধারা টিকে থাকতে চাইছেন, এই সমাজে তাদেরও বেঁচে-বর্তে থাকার
অধিকার আছে সেট! প্রমাণ করতে চাইছেন, এই ছুই মেরুর মধ্যে বোঝাঁপড়ার
অথবা যুদ্ধবিরতির কোনে! অবকাঁশ নেই । কৌশলগত কারণে হয়তো। কোনো
সাময়িক চুক্তি হ'তে পারে, কিন্তু ্রেণীযুদ্ধ, শেষ পর্যন্ত, শ্রেনীযুদ্ধই।
অসম বিকাঁশের লক্ষণে ভারাক্রান্ত দেশ, আমাদের সংবিধান ধার রচনা করে-
ছিলেন, বিচক্ষণতার অভাব ছিল না তাদের. তারা অনুমান করতে পেরেছিলেন
কোনো-না-কোনে। সময়, এই রাজ্যে নয় তো সেই রাজ্যে, শোধিত-বঞ্চিত-
অত্যাচারিত শ্রেণীভুক্তরা মাঁথ। তুলে দীড়াবেন, তারা সংঘবদ্ধ হ'তে শিখবেন,
এমন কি হয়তো তারা, এই রাজ্যে নয় তো! সেই রাজ্যে, সরকার গঠন করতে সক্ষম
হবেন পর্যন্ত । সংবিধানরচয়িতাদের স্কুলে ভুল ছিল ন', দূরদর্শা ছিলেন ত্বারা
সবাই, শ্রেণীস্বার্থ কী ক'রে আবহমানকাল ধ'রে রক্ষা করতে হয় তার বিধি-ব্যবস্থায়
তাই তাঁরা কোনো খুঁত রাখেননি | একটি-ছু'টি রাজ্য সরকার হয়তো শ্রেণী-
শক্রদের খপ্পরে গিয়ে পড়তে পারে, কিন্তু ঘাবড়াবার কিছু নেই, সংবিধান এমন-
৮১৯
ভাবে রচন! কর! হবে যে রাজ্য সরকারগুলির টিকি বাঁধ! থাকবে কেন্দ্রের কাছে,
আইন করবার ক্ষমতা, প্রশাসনিক ক্ষমতা, আথিক ক্ষমতা সব-কিছুর জগ্য মুখাপেক্ষী
হ'তে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের | কেন্দ্রীয় সরকার যদি চুণের ঘরে ধ্লাডিয়ে অঢেল
অসত্য কথা বলেন, অঢেল অন্ঠায় করেন, রাজ্য সরকারগুলির হাতে উপস্থিত
মুহূর্তে প্রতিরোধ ব1 প্রতিবাদের তেমন-কোঁনে। মোক্ষম অন্ত্র থাকবে ন1।
নতুন দিল্লির সরকাঁর এট জানেন ব'লেই ভোজ্য তেলের দাম কমাবার
অছিলায় পঞ্চাশ হাজার টন তেল, য1 কষ্টাজিত বিদেশী মুদ্রা খরচ ক'রে সরকারি
খাতে কেন] হয়েছিল, ব্যবসাদারদের কাছে নিলামে ঝেড়ে দেওয়ার মতো সাহস
সঞ্চয় করতে পারেন । কিন্তু 'এক মাঘে তে গীত যায় ন1।
৮২
সর্বভূতেষু
পোশাকি ভাষায় আমর! বলি সামন্ততন্ত্র সৌজা বাংলায় জমিদারি মানসিকতা,
কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। এখন মাঝে-মাঝে সন্দেহ হয়, সামস্ততস্ত্রের ভূত আমর! কাধ
থেকে গোড়ার দিকে যতট। ঝেড়ে নামাতে সফল হয়েছিলাম, স্বাধীনতার পর
চল্লিশ বছর ধ'রে ততটাই যেন অসফল হয়েছি, এমনকি সব-মিলিয়ে হুয়তো।
পিছিয়েই পড়েছি আরে
ব্যক্তিভিত্তিক দৃষ্টান্ত না দিতে হ'লেই ভালে। হতো, কিন্তু উপায় নেই, সামস্ততন্তর
ও ব্যক্তিপূজার মধ্যে জড়াজড়ি সম্পর্ক। আমাদের দেশের প্রধান মন্ত্রী গত বছর
ব্যাঙ্গালোর শহরে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের বাধিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে
অনেক গালভারি কথা ব'লে এসেছিলেন : দেশে বিজ্ঞানচর্চার মান অত্যন্ত নেমে
এসেছে, বৈজ্ঞানিকর। অল্পে তুষ্ট হচ্ছেন; মহত্তর, বৃহত্তর বৈজ্ঞানিক লক্ষ্য-আদর্শের
দিকে এগোচ্ছেন না, এবার থেকে তার] কাঁজকর্ষে আরো! একটু মন দিন ইত্যাদি
দি। যেন হেডমাস্টার মশাই ইশকুলের ছেলেদের সদ্দুপদেশ দিচ্ছেন । প্রধান-
মন্ত্রী মহোদয়ের বিদ্ার বহর তেমন পরিব্যাপ্ত নয়, বিদেশের যে-বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়তে গিয়েছিলেন সেখান থেকে দু'বছর ব1দে তাকে ফেরত পাঠানে। হয়েছিল,
পঠন-পঠিনে সুবিধা! করতে পারছিলেন না ব'লে, তারপর আর তিনি পড়াশুনার
ধারকাছ দিয়ে থাকেননি । কিন্তু অতীত গৌরব-কাহিনী প্রধানমন্ত্রীর বিবেচন।
তথা বাগশক্তিকে আদে পঙ্গু করতে পারেনি । বাঁঘা-বাঘা বৈজ্ঞানিকদের সভায়
গিয়ে তিনি জ্ঞানগর্ভ উপদেশ দিয়ে আসেন, এ ধরনের বত্তৃতাবর্ষশ, অন্তত তার
পক্ষে, কতটা বেমানান, সেই বৌধশক্তি যেন সম্পূর্ণ অন্তহিত। যেটা সমান
বিদ্ময়জনক, সভায়-জড়ো-হওয়। বিদ্জ্জনমগ্ডলী প্রধান মন্ত্রী-বষিত অপমানজনক
উক্তি নীরবে শোনেন, বক্তৃতান্তে হাততালি দিয়ে থাকেন পর্যন্ত । এবং এই বছরও
যথাবিহিত প্রধান মন্ত্রী ফের বিজ্ঞান কংগ্রেসে নিমন্ত্রিত হয়েছেন, ধ'রেই নেওয়
ধায় আরেক দফ1 পুরনে। বক্তৃতা বর্ষণ করবেন : বৈজ্ঞানিকদের আরো দায়িত্বশীল
হ'তে হবে, দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা ক'রে আরে নতুন-নতুন আবিষ্কারে
নিজেদের নিয়োগ করতে হবে, অন্যথা তাদের বৈজ্ঞানিক জীবন ব্যর্থ*..। সামান্যতম
৮৩
প্রতিবাদ সভার কোনো প্রান্ত থেকে ধ্বনিত হবে না, প্রতিবারের মতো, জড়ো-
হওয়া বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় প্রধান মন্ত্রীর জ্ঞানগর্ত ভাষণকে করতালিসহ স্বাগত
আনাবেন।
এই দাসান্দাঁস মাঁনৌভাবের ছটো৷ আলাদা কারণ আছে। প্রথম কারণ,
সরকারের কাছে টিকি বীধা বৈজ্ঞানিকদের । তাঁদের গবেষণার টীকা জোগান
সরকার, তাদের মাইনের-ভাতার টাকা আসে সরকারের কোঁষাগার থেকে,
যাবতীয় বৈজ্ঞানিক সরঞ্রাম-উপকরণাদির জন্য তাদের সরকারি মন্ত্রক-দগ্তরের
মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। চিনি জোগান যে-চিন্তামণি, তীর অশ্নমধুর বাণী
মাঝে-মধ্যে একট্ু-আধট্র না-শুনে উপায় কী: তাদের বৃত্তির সামগ্রিক স্বার্থের
কথা চিন্তা! ক'রে অধিকাংশ বেজ্ঞানিক তাই সামন্ততান্ত্রিক অনুশাসনগুলি মেনে
নেন, একটু-আধটু গা-জালা-কর কথা শোনা তো মাত্র, তা না হয় একদিনের জন্ত
কোনোক্রমে শোনাই গেল, বছরের বাকি সময়টা! তো যথেচ্ছ কাজ কর] যাবে,
এবং পয়সাকড়ি-সরঞ্রাঁমের অসংকুলান হবে না।
দ্বিতীয় কারণ কিন্ত আরো অনেক গভীরে । খুব কম বৈজ্ঞানিকই আছেন
যিনি নিরীশ্বরবাঁদী। ভারতবর্ষের মানুষের আবহমান কাল ধ'রে দৈব ক্ষমতায়
প্রথল আস্থা, এই আস্থার সম্মোহ থেকে বৈজ্ঞানিকরাঁও মুক্ত নন | যখন চার-
দিক অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন, অন্যান্য দেশবাসীর মতো! বৈজ্ঞাঁনিকদেরও একটি বড়ে।
ংশ মনে করেন হঠাঁৎ কোন এশী শক্তি এসে পরিত্রাণের পথ দেখাবেন । স্বাধীনতা
আন্দোলনের কালে দেশের নেতৃবুন্দদের জনসাধারণ দেবতার আসনে বসিয়ে-
ছিলেন : বিধাতা পুরুষরা অদৃশ্য, তারা প্রত্যক্ষ ধর1-ছোয়ার বাইরে, কিন্তু নেতাদের
আমরা দেখতে পাঁচ্ছি-প্রণাম করতে পারছি, তারাই আমাদের দেবতাসদৃশ,
তাঁরাই আমাদের পথ দেখিয়ে জ্যোতির্ময়লোকে পৌছে দেবেন। “নরকে দেবতা
করি, দেবতাকে নর" শুদু কথার কথা ছিল না, আমাদের পাঁত্যহিক অভ্যাসের সঙ্গে
সেই আচরণ মিশে গিয়েছিল, দেবদ্ধিজে ভক্তি ও নেতৃবন্দন। প্রায় সমার্থক ব্যাপারে
পরিণত হয়েছিল । এই মানসিকতা থেকে দেশের বৈজ্ঞানিকরাঁও মুক্ত ছিলেন ন1।
পরাধীন দেশ, স্থযোগ-স্থবিধা খণ্ডিত-সংক্ষিপ্ত, তারই মধ্যে পাঠাগারে-গবেষণাকক্ষে
বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় স্ব-স্ব কর্তব্যে নিয়োজিত, ত্ীরাও স্বপ্ন দেখছেন দেশ একদিন
স্বাধীন হবে, সেই স্বাধীন দেশে বৈজ্ঞানিকর৷ তাঁদের প্রাপ্য দম্মীন পাঁবেন,
সমাজ তাদের জন্ক উপচাঁর সাজিয়ে অপেক্ষা করবে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চর্চা ও
ব্যবহার সহম্গুণ বৃদ্ধি পাঁবে ভবিষ্যতের সেই স্বাধীন-হুন্দর প্রভাতবেলায় । বে-
৮৪
নেতার! সেই স্বাধীনতার দিকে দেশকে-জাতিকে পথ প্রদর্শন ক'রে এগিয়ে নিষ্বে
যাচ্ছেন, তার] দেবোপম, তারা নমস্, তারা প্রণমা, বৈজ্ঞানিকদেরও তীরা
প্রণম্য | জাতীয়তাবাদের এই উন্মাদনাঘোর থেকেই স্বাধীনতাব পুরবাহে, চল্লিশের
দশকে, জবাহরলাল নেহরুকে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের পভাপতি নির্বাচন করা
হয়েছিল। জবাহরলাীল নেহেরু যদিও বিজ্ঞানাম্ুরাগী ছিলেন, কোনো অর্থে ই
বৈজ্ঞানিক ছিলেন না তিনি । কিন্তু বিদেশী শীসকদের অবহেলা প্রত্যুত্তর
হিশেবে, জাতীয়তাবাদী স্বদেশপ্রেমিক বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় জথাহরলাল নেহরুকে
মাল। পরিয়ে তাদের সভাপতিরূপে ধরখ ক'রে নিলেন ৷ 'নরকে দেখা করি,
দেবতাকে নর এই আবাহনে নিজেদের আবদ্ধ রাখলেন না] তারা, “দেবতারে
প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবতা'-পর্যায়ে পৌছে গেলেন ।
জবাঁহরলল নেহরু জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মনোনীত হয়ে গর্ববোধ
করেছিলেন যেমন, মজীও পেয়েছিলেন তেমন ! কিন্তু মুশকিল হলো নেতারাও
মানুষ, রক্তগাংসের মানুষ, তাঁরাও ষড়রিপুর প্রভাখমুক্ত নন। কয়েক বছর
বাদে দেশ স্বাধীন হলো, নেতারা স্বাধীন দেশের মন্ত্রী হলেন, তাঁদের ঘরে
সম্ভার-বৈভবের তুলনা! নেই । এবং তাদের মাথায় পোকা ঢুকে গেল। স্বাধীনতা!
আন্দোলনের মুহুর্তে, আমীদের মলিন আকাশ, সামনের দিকে তাকিয়ে বোঝা।
যায় ৭ আমর কোথায় আছি-কোথায় যাচ্ছি, এট প্রয়োজন ছিল আমর
পরস্পরের খুব কাছাকাছি থাকি, সাধারণ মানুষ, নেতৃবৃন্দ, দেশের বিছ্যৎসমজ, একে
অপরের কাঁছ থেকে প্রেরণা সঞ্চয় করি, পরম্পরকে আনুগত্যের অঙ্গীকার প্রদান
করি। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী পর্বে পরিবেশ ও প্রয়োজনের রকমফের ঘটেছে,
রকমফের ঘটতে বাধ্য : এবার স্ব-স্ব বৃত্বিতে প্রত্যাবর্তন করতে হবে সাধারণ
মানুষকে, মন্ত্রীবর্গকে, কবিকে, সাহিত্যিককে, বৈজ্ঞানিককে । এই সোজা সত্টি
নেতৃসম্প্রদায় বুঝতে রাজি হলেন না। স্বাধীনতার আগে দেশপ্রেমিক বিদজ্জন
তাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, নেতারা ধ'রে নিলেন এই অভ্যর্থনায় তাদের
জন্মগত অধিকার ! নেতারা আর শুধু নেতা নন, তাঁরা মন্ত্রী । মন্ত্রীরা বিঘজ্জন
সম্প্রদায়ের ঘাড়ে চেপে ব'সে রইলেন | জবাহরলাল নেহরু বচ্ছরের পর বছর ধ'রে
বিজ্ঞান কংগ্রেসের সম্মেলনে গিয়ে বক্তৃতা দেওয়া অভ্যাঁস করলেন । এবং শুপু
বৈজ্ঞানিক সম্মেলন নয়, তিনি সাহিত্য সন্মেলনেও যাঁওয়া-আপ। শুরু করলেন,
ভারপর ইতিহাস সম্মেলনে, দর্শন সম্মেলনে, অর্থনীতিবিদূদের বৈঠকে । ক্রমশ
স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের নতুন সাংস্কৃতিক এতিহ জন্মগ্রহণ করলে! : অনুষ্ঠানটি
৮৫
'বিবাহ হোক, শ্রাদ্ধ হোক, অন্নপ্রাশন হোক, মন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন অপরিহার্য। কানু
বিন? গীত নেই, মন্ত্রী বিন। সম্মেলন নেই, তা সেই সম্মেলন যত গুরুগম্ভীর বিষয়
নিয়ে হোক না কেন।
এই সাংস্কৃতিক অঘটনের ভুক্তভোগী এখন গোট। দেশের জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ।
যে-সম্মেলনের প্রধান ঘোষিত উদ্দেশ্য নিজেদের মধ্যে নিভৃতে জ্ঞানাধ্যয়ন, বিভিন্ন
গাবেষণিক সমশ্য] নিয়ে ভাব তথা মতামত বিনিময়, মন্ত্রীদের অভ্যাগমে তা
মহোৎসবের প্রকৃতি পরিগ্রহণ করে, মন্ত্রীদের পরিচর্চাতেই সময় ও সামথ্য ব্যয় হয়ে
যায়। অন্য অন্থবিধাও ঘটে। মন্ত্রীরা রক্তমাঁংসের মানুষ, ষড়রিপুর দাস।
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জ্ঞানীগুণীদের সভায় বিভিন্ন
ব্যাপারে একাদিক্রমে বক্তৃতা দিয়ে-দিয়ে তাঁদের মনেও অনেক সময় ধাঁরণ।
প্রোথিত হয়ে যায়, কে জানে, হয়তো সত্যি-সত্যিই তীরা, মন্ত্রীর, সকল-
কলাপারঙ্গম, তাঁদের প্রতিভার তুলনা নেই । জ্ভঞানবিজ্ঞানের কোনো বিশেষ
প্রশীখার কোনো বিশেষ সমশ্যা সম্পর্কে হঠাৎ তাদের মনে হঠাৎ যদি কোনো
উটকে। ধারণ! জড়ে! হয়, তারা তখন বিদ্বান মানুষদের সভায় গিয়ে নিজের
খেয়ালি ধারণাটি সরবে ঘোষণা কর] একান্ত কর্তব্য ব'লে মনে করেন । বিদূষকের
দল আশেপাশেই থাকেন, তীর! ঘাঁড় নশড়েন, গবেষণ। হোক, মন্ত্রী-কর্তৃক নির্দেশিত
সমশ্যাটি নিয়ে আরো গবেষণা হোক । রবীন্দ্রনাথ সামন্ততন্ত্রকে আখ্যা] দিয়ে-
ছিলেন কর্তার-ইচ্ছায়-কর্ম। তাই-ই হয়, বৈজ্ঞানিকদের রুচিঅভিরুচি-ইচ্ছা-
অনিচ্ছা মুখ থবুড়ে পাঁশে প'ড়ে থাকে, গবেষণার টাঁকা ঢাল! হয় মন্ত্রীর খেয়ালপনা
মেটাতে | স্বাধীন ভারতবর্ষের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস ঘাটলে এই গোছের
মন্ত্রীভজন গবেষণার ভূরি-ভূরি উদাহরণ তুলে ধর। সম্ভব |
হাতের কাছে যে-দৃষ্টান্ত, সেটিও নিতান্ত তুচ্ছ নয়। রবীন্দ্রনাথের বিশ্ব-
ভারতী যখন আইন প্রণয়ন ক'রে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিগ্ভালয়ে রূপান্তর করা হলেো।,
তদানীপ্তন প্রধানমন্ত্রী জবাহরলাল নেহরুকে প্রতিষ্ঠানের আঁচার্যরূপে ঘোষণ। করা
হলো! সঙ্গে-সঙ্গে ৷ বিশ্বভারতীর প্রধান পুরুষ আচার্য । যেহেতু জবাহরলাল নেহরু
রাজনৈতিক নেতা হওয়। সত্বেও বরাবর জ্ঞানচর্চ। করেছেন, বইপত্র রচন! করেছেন,
এবং রবীন্দ্রনাথের অন্ুরক্ত ভক্তও ছিলেন, বিশ্বভারতীর আচার্যর্ূপে তাকে আদৌ
বেমানান মনে হয়নি | তার পিতার জ্ঞানতৃষ্ণীর অণুতমও ইন্দির] গান্ষির মধ্যে ছিল
না, কিন্ত ললিতকলায় তার অন্তত গভীর আগ্রহ ছিল, তাই তাকেও বিশ্বভারতীর
আচার্য পদে বৃত হওয়ার ব্যাপারটাকে তেমন কুরুচিপূর্ণ মনে হয়নি৷ অপর পক্ষে
৮৬
মৌরারজী দেশাই প্রধান মন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হবার পর সাধারণ কাণ্-
জ্ঞান খাটিয়ে এটা বুঝেছিলেন তাঁর পক্ষে বিশ্বভীরতীর আচার্য হওয়া উদ্তটকিন্তৃত
ব্যাপার হবে। অন্য হাজার বিষয়ে মোরারজী দেশাইকে সমালোচনা করা যেতে
পারে, কিন্ত এই বিচারের জন্য তাঁকে অভিনন্ান জানাতেই হয় যে তিনি হৃদয়ঙ্গম
করতে পেরেছিলেন তার প্রধান মন্ত্রী হবাঁর যোগ্যতা থাকতে পারে, কিন্তু বিশ্ব-
ভারতীর আচার্য হবার অধিকার নেই, আচার্যপদে তিনি তাই গুজরাটের বিখ্যাত
কবি মনীষী উমাশংকর যোশীর নাম প্রস্তাব করেছিলেন ৷ কিন্তু বর্তমান প্রধান
মন্ত্রী সামন্ততস্ত্রের আদর্শ ধারক, যে-উত্তরাধিকারস্থত্রতাবোধে তিনি রাজসিংহাসনে
সমারূঢ় হয়েছেন, তারই তাগিদে বিশ্বভারতীর আচার্য হিশেবেও নিজেকে বৃত হ'তে
দেখে তিনি পরিতৃপ্ত, কোনে দ্বন্দ্বের যন্ত্রণা তাকে দীর্ঘ করছে ব'লে বাইরে থেকে
অন্তত মনে হয় না।
এবং এই সামস্ততান্ত্রিক ব্যাকরণের বিরুদ্ধে তেমন-কোনে। প্রতিবাদ ধবনিত
হ'তেও শোন] যায় না। সামন্ততাস্ত্রিক মানসিকতা স্বতঃসিদ্ধতার মতো দেশের
অধিকাংশ মানুষের চেতনায় স্প্রোথিত। মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর্গ জনপ্রতিনিধি,
সমাজের সামগ্রিক প্রত্যাশার প্রতিবিষ্ব তীরা, কিন্ত মাত্রাজ্ঞান পেরিয়ে স্ব-স্ব বৃত্তের
বাইরে গিয়ে তাদের যে-অনধিকার চর্চ1, তা-ই সামন্ততন্ত্র। অথচ বৈজ্ঞানিকরা
মুখ বৃণ্জে অর্ধাচীন বক্তৃতা হজম করেন, বিশ্বভারতীতে দিগ,গজ পণ্ডিতরা
বংশবদ টিকি নাঁড়েন। এবংবিধ আচরণও কিন্তু সামন্ততন্ত্রের সমাচ্ছন্ন প্রভাবের
স্বাক্ষরবাহী |
৮৭
ভারতভাগ্যবিধাতা
প্রজাতান্ত্রিক ভাঁরতর্যকে যেন নিলামে চড়ানো হয়েছে । নাগাল্যাণ্ডে নির্বাচনের এক
সপ্তাহ আগে প্রধান মন্ত্রী এ রাজ্যে সফরে গেলেন । কোনো ঢাঁকাঢুকির ব্যাপার
নেই, প্রধান মন্ত্রী নিলাম হাকলেন : যদি কংগ্রেস দলকে জিতিয়ে দেয় নাগাল্যাণ্ডের
লোকেরা, পুরস্কারস্বরূপ তাদের জন্য একটি বিধান পরিষদ তৈরি ক'রে দেওয়। হবে।
বিধান সভা তে। আছেই, কিন্তু সেই সঙ্গে একটি বিধান পরিষদও ! অনেক-অনেক
রীজ্যে- যেমন পশ্চিম বঙ্গে, অন্ধ প্রদেশে- বিধান পরিষদ তুলে দেওয়া হয়েছে,
বেশ-কয়েকটি রাজ্যে-যেমন কেরলে অথবণ হরিয়ানায়ই _ আদপেই কোনোদিন
পরিষদ গঠনের কথা ভাব] হয়নি । গরিব দেশ, রাঁজ্যস্তরে পাশাপাশি ছু"টি আইন
সভা! বেমানান, এ ধরনের অযথা অপচয়ের কোনে। যৌক্তিকতা নেই । নাগাল্যাণ্ডে
সব মিলিয়ে মাত্র আট লক্ষের মতো মানুষ, পশ্চিম বঙ্গে হাওড়া জেলার যে-জন-
সংখ্যা, তারও অর্ধেকের কম । ষাঁটটি আসন-বিশিষ্ট বিধান সভা আছে নাগাল্যাণ্ডে,
সেই বিধান সভার জন্তই নির্বাচন । নির্বাচনে প্রধান মন্ত্রীকে জিততেই হবে, তার
দলকে জেতাতেই হবে, অতএব নীতি-নিয়ম-যুক্তিকে নিলামে চড়াও, বিধান সভার
নির্বাচনে যদি আমার দলকে ভোট দাও তোমর।, বিধান সভার পাশাপাশি আমি
তোমাদের জন্য একটি বিধান পরিষদও গঠনের ব্যবস্থা ক'রে দেবে1। এই পরিষদেও
নিদেন পক্ষে বাট জন সদস্য থাঁকবেন, তাঁদের জন্য বেতন-ভাতার ব্যবস্থা থাকবে,
সাধারণ মানুষের তাঁতে কাঁর কতটা লাভ না! ভাবলেও চলবে । আসলে গণতান্ত্রিক
নির্বাচনকে আদর্শ-কর্মন্ুচী ইত্যাদি নিয়ে পারস্পরিক তুলনা-প্রতিতুলনা থেকে অনেক
দূর সরিয়ে আন] হয়েছে, নির্বাচন এখন নিলামের হকের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন
ংগ্রেসের নেতারা, সেই দলের যিনি সর্বেপর্বা, সেই প্রধান মন্ত্রী। আইন অবশ্ঠ
বলে নিধীচনের প্রাকৃ-মুহূর্তে এ ধরনের প্রতিশ্রুতির বন্যা বওয়ানো বিধিবহির্ভূত,
কিন্তু দেশের প্রধান মন্ত্রীকে তো আইনের তোয়াক্কা করতে হয় না। তবে যেহেতু
তিনি দেশের প্রধান মন্ত্রী, তাঁর তো বোঝ উচিত নাঁগাল্যা্ডের আট লক্ষ
মীনুষের জন্য আলাদ বিধাঁন পরিষদ গঠন করা হ'লে এক ধরনের প্রবণতা ছড়িয়ে
পড়তে বাধ্য; অপ্রয়োজনীয় সম্ভার, প্রত্যেক রাঁজ্যেই হয়তো নতুন ক'রে ধুয়ে!
৮৮
উঠবে বিধান পরিষদ চাই, শেয়ালদের যেহেতু ভাঙা বেড়া দেখিয়েছেন স্বয়ং দেশের
প্রধান মন্ত্রী। নাগাল্যাণ্ডে বিধান পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হ'লে, মেঘালয়-মিজোরাষ-
ত্রিপুরা-সিকিম-হিমাচল প্রদেশ-গোয়। সর্বত্রই দাবি উঠতে পারে এই-এই রাজ্যেও
চাই, কোন্ যুক্তিতে সেই দাবি খণ্ডন করবেন প্রধান মন্ত্রী? তা সবেও তিনি যদ্দি
ব'লে বসেন, উন, নাগাঁল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে রাজি হয়েছি ব'লেই মেঘালয়ের ক্ষেত্রে
সম্মত হবো এমন তো। কথা নেই, আগুন জলবে মেঘালয়ে, সেই আগুন নেভাতে
গলদঘর্স হ'তে হবে সবাইকে । ক-কে য! দেওয়া হয়েছে, খ-কে তা থেকে ইচ্ছা
ক'রে বঞ্চিত করা হয়েছে, এই ধারণ। থেকেই দেশে বিচ্ছিন্রতাঁবোঁধের জন্ম হয়।
অদূরদর্শশ প্রধাঁন মন্ত্রী নির্বাচনী সফরে এসে চিস্তাহীন একটি প্রতিশ্রুতি উচ্চারণ
ক'রে প্রকৃতপক্ষে বিচ্ছিন্নতাবোধকে প্রশ্রয় দিয়ে গেলেন, এখন অনেক দূর পর্যন্ত
এই প্রতিশ্তির জের গড়াবে ।
অথচ কংগ্রেস দলের, এবং সেই দলের নেতার, দেশের প্রধান মন্ত্রীর, এখন
এমনই শোচনীয় অবস্থা যে নাগাল্যাণ্ডের নির্বাচনে কোনক্রমে জয়লাভ কর] মরখ-
বাঁচন সমন্যার রুপ্র পরিগ্রহ করে, দেশের বুহত্বর স্বার্থ নিয়ে মাথা-ঘামানোর
আপাতত দরকাঁর নেই, দেশের স্বার্থকে নিলামে চড়াও, যদি বিধান পরিষদের
আগাম প্রতিশ্ঞতি দিলে জেতার সম্ভীবনা বাড়ে, তা হ'লে অস্ত সমস্ত বিবেচন!
বিসর্জনান্তে প্রতিশ্রুতিটি দেওয়ার সিদ্ধান্তই টেকে । এখন খবরকাগজে লেখা-
লেখি হচ্ছে, এ ষাঁট-আসন বিশিষ্ট বিধান সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবখর জন্য কংগ্রেস
দলের পক্ষ থেকে নাগাল্যাণ্ডে নাকি সাকুল্যে পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ কর!
হয়েছে । জনসাধারণেরই পকেট কেটে কংগ্রেস দল এই পঞ্চাশ কোটি টাকার
ব্যবস্থা করেছে : ব্যবসাঁদীররা গোপনে ব। প্রকাস্তে চাদ। দিয়েছে সেই টাকা,
ঠিকাদারর। লুকিয়ে উৎকোচ প্রদান করেছে সেই টাকা।, রাষ্রীয় খাতে আমদানি-
রপ্তানি কেনা-বেচার কমিশনের টাকা | কিন্ত নির্বাচনে জিতেও সোয়াস্তি নেই।
ধাটটির মধ্যে আটব্রিশটি আঁসনে কংগ্রেস প্রার্থীরা, যে ক'রেই হোক, জিতেছেন ।
তাদের মধ্যে একুশ জনকে মন্ত্রী করতে হয়েছে, বিধানসভার অধ্যক্ষ-উপাধ্যঙ্ষ
হবেন আরো ছু'জন, অবশিষ্ট যে ক'জন আছেন তাদের হয়তো নানান রায়
সংস্থা খুলে তাদের দায়িত্বে বসিয়ে দেওয়] হবে, বাঁড়ি-গাড়ি-বাড়তি ভাতার
নিশ্চিন্ত ব্যবস্থা | স্বাধীনতার প্রথম পর্বে একটি প্রথা চালু কর! হয়েছিল, মন্ত্রিসভার
সদশ্যসংখ্যার উর্ধ্বসীমা বিধান সভা বা সংসদের সমগ্র সদশ্যসংখ্যার এক-দশমাংশ
ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। কিন্ত নিয়মনীতিপ্রথা এখন ধুয়ে-মুছে গেছে।
প্র" কথা ৬ ৮৯
দেশকে খখন নিলামে চড়ানো হয়েছে, বিধান সভার যে-সদশ্যকেই মন্ত্রী কর না
হবে, তিনিই দলত্যাগের ভয় দেখাবেন, এবং এক-তৃতীয়াংশের মতো যদি দল
থেকে বেপিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, আড়াই-বছর-আগে-গৃহীত-হওয়।
আহন প্রয়োগ করেও তাদের ঠেকানো যাবে না। নিলামের প্রানে গোটা দেশ
এখন ভেপে যেতে বাধ্য |
হাতের কাছে তার অন্ত প্রমাণ দাঁজিলিঙ সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের
লীলাখেল] । পঞ্চাশ বছরের তদগত সাধনা, অধ্যবসায় ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে গিয়ে
কমিউনিস্ট পাটি দাঁজিলিঙ অঞ্চলে সর্বভাষাভাধী শ্রমজীবী মানুষদের একটি সংঘ-
বদ্ধ, শক্তিশালী আন্দোলন গণড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল, জাতীয় এঁক্য ও সংহতি
রক্ষার্থে সর্ব ক্ষমত] প্রয়োগ করতে যে-আন্দোলন সদা প্রস্তুত। দিল্লির করতাব্যক্তিদের
রাতে ঘুম নেই, পশ্চিম বাংলার সর্বস্তরের সর্ববর্ণের থেটে-খাওয়1 জনসাধারণের অটুট
এীক্যে যে-ক'রেই-হোক চিড় ধরাতে হবে । এই উর্দেশ্ট সিদ্ধ করতে হ'লে যদি
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সাহায্য দান করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে,
তবে তা-ই হোক । গত দেড় বছরের অনবচ্ছিন্ন অবসন্ন রক্তাক্ত নাটক সেই অভি-
সন্ধির পরিচয় বহন করছে। জাতীয় সংহতি ক্ষার পণে দৃডবদ্ধ নেপালী কমরেডরা
দিনের পর দিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণ প্রতিরোধ ক'রে চলেছেন,
অনেক মুল্যবান প্রাণ ঝ'রে পড়েছে । আদশবাঁদী কমরেডরা হতোছ্ম হননি
তা! হ'লেও, চোখের জলে সহকর্মীদের বিদায় দিয়ে নতুন ক'রে খিভেদপন্ঠীদের
বিরুদ্ধে নিজেদের জড়ো করেছেন । অথচ জাতীয় এঁক্য ও সংহতির এই অতন্দ্র
প্রহনীদের প্রতি কৃতচ্ঞতা হ্ভাপন করে দিল্লির সবকার একটি অর্ধবাক্যও আজ
পর্যস্ত বায় করেননি, তাঁর সম্পূর্ণ উদ্বেগ-উৎকগ্ঠা বিচ্ছিন্রতীবাদীদের কী ক'রে
আরো1-একটু বাড়তি প্রশ্রয় দেওয়া যায়, ত। নিয়ে ! বিচ্ছিন্নতাখাদীদের সর্বশেষ
ধুয়ে! পীধত্য পরিষদের সঙ্গে শিলিগুড়ি ও ডুয়ার্পকেও যুক্ত করতে হবে। এই
দাবির অদ্ভুত অযৌক্তিকতা নিয়ে প্রধান মন্ত্রী বা তীর স্বরাষ্ মন্ত্রী কিন্ত একটি বিরূপ
মন্তব্যও করেননি । এই গোছের দাঁবির পুনঃপৌনিক উচ্চারণের মধ্যেও যে
দেশের সাথিক সর্বনাশের বীজ নিহিত আছে, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথা-
ব্যথা নেই। এখন ঘিসিওয়ের কায়দায় যে-কেউই দাবিপত্র পেশ ক'রে বসতে
পারেন, যেহেতু পৃণিয়। জেলার শতকরা তিরিশ ভাগ মানুষ বঙ্গভাষী, অতএব এ
জেলাকে পশ্চিম বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, অথব1 যেহেতু বে'প্বাই শহরে বসবাস-
কারীদের শতকরা পনেরে। জন উত্তর প্রদেশ থেকে আগত, এ শহরের প্রশাসনে
৪৯০
উত্তর প্রদেশ সরকারকে অন্তত শতকর পনেরো ভাগ দাতিত্ব দিতে হবে। দেঁশে
হানাহানি বাঁড়ুক, অদ্ভুতকিস্তৃত দাবির পাহাড় জ'মে উঠুক, সেই সব দাবিদাওয়।
নিয়ে জনগণ, তাদের রুটিকজির সমস্যা ভুলে, সমাজবিপ্রবের স্বপ্র-লক্ষ্য পাশে
সরিয়ে রেখে, উন্মত্ত হয়ে উঠুক : দেশের ধারা সতত অনিষ্ট চিন্তা! করেন, তাদের
এটাই পরম মনোবাঞ্চ। |
কিন্তু কেন্দ্র নির্বাক, বিচ্ছিন্নতাধাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে কেন্দ্রীয় সরকারের
প্রতিনিধিদের জিভ জড়িয়ে আসে । কেন্দ্রীয় শ্বরা্ ই মন্ত্রী বোঝাতে চাইছেন তিনি
এক কথার মানুষ, যদি পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি-ডুয়ার্স সম্পকে বিচ্ছিন্নতা
খাদীদের সর্বশেষ দাবিটি মেনে নেন, তা হ'লে তিনিও মানবেন, অন্যথা না । যেন
দেশকে এক্যবদ্ধ রাখার একমাত্র দীয় পশ্চিম বঙ্গের দুখ্যমন্ত্রীর, কেন্দ এ-বাপারে
হাত-পা ধোঁওয়]| দেশকে যদি টুকরৌ-টুকরে। করার চক্রান্ত হয়ে থাকে, মনৌভাবটা
যেন তা হ'লে কেন্দ্রের কিছু করার নেই, তা ছাড়া ঘিসিঙ বড়ো ভালে! ছেলে,
একে গোপনে আমরা একটু আদর-আপ্যায়ন ক'রে থাকি। এ এক আশ্চর্য
পরিস্থিতি : এ'রা একদিকে জাতীয় সংহতি পরিষদ গঠন কর্নবেন, অনেক ধোঁপা-
বাড়ি-ফেরত ভালো-ভালো। কথ। বলা হবে সেই পরিষদের বৈঠকে, এরাই আবার
বিচ্ছিন্নতীবাদীদের দিকে চোখ টিপবেন, চালিয়ে যাঁন আপনারা, তলে-তলে
মতুন দিলি থেকে আপনাদের প্রশ্রয় দিয়ে যাবো আমর] ।
তা না হালে হঠাৎ কোন্ রহস্যের স্থত্র ধ'রে পশ্চিম বঙ্গে হঠাৎ শিবু সেরেন
মহোদয়ের অভ্যুদয় ঘটে? সোরেন মশাই এক সঙ্গে আমিশাধী-নিরামিশীযা,
বিহারে তিনি ঝাড়খণ্ডী দলের নেতৃত্ব দাঁন ক'রে থাকেন, আবার নির্বাচনের মরশুম
সমাগত হ'লে কংগ্রেসী প্রসাদ কুড়োবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন | সাড়ে চার বছর
জুড়ে খর্তমান সমাজব্যবস্থার অন।চারে আদিবাসী সম্প্রদায়ের হতজীর্ণ দশ! নিয়ে
বিবিধ উপাখ্যান রচন। করেন, প্রত্যক্ষ সংগ্রামের হুমকি ছাড়েন, অথচ নির্বাচনের
তাঁরিখ ঘোঁধিত হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে বর্তমান সমাঁজব্যবস্থার সমস্ত অনাচারের জন্য
দ্বায়ী যে-রাজনৈতিক দল, সেই কংগ্রেসের ছত্রতলে আশ্রয় অন্বেষণ করেন, আশ্রয়
মেলেও সঙ্গে-সঙ্গে। যেহেতু পশ্চিম বঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন অত্যাসন্ন, এবং
গ্রামাঞ্চলে কংগ্রেসের খুঁটির জোর সম্পূর্ণ অন্তহিত, একটু বহির্দাহায্যের প্রয়োজন
দেখা দিয়েছে । শিবু সোরেন মশাইয়ের কংগ্রেস দলের প্রতি খণশোধের খু
এটা, সুতরাং পশ্চিম বঙ্গের তিনটি জেলাকে বিচ্ছিন্ন ক'রে ঝাড়থণ্ড রাজ্যের দাবি
নিয়ে তাকে সোচ্চার হ'তে হচ্ছে।
৯১১
একই কাহিনী ত্রিপুরা রাজ্যে। চল্লিশ বছরের একাদিক্রম সীধনায়, কমিউনিস্ট
পার্টর প্রেরণায়, বামপন্থী আন্দোলন সমতল-্বনাঞ্চল-পাহাড়ের মানুষদের এঁক্যবদ্ধ
করতে সফল হয়েছেন, সার। প্াজ্য জুড়ে বাম ফ্রণ্ট সরকারের নেতৃত্বে তাদের আথিক-
সামাজিক সংগ্রাম দ্রুত এগিয়ে চলেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা হতাশ, সন্ত্রস্ত । অতএব
কেন্দ্রীয় সরকারের নিদ্রাহীন রাত্রি, যে-ক'রেই-হোঁক বিচ্ছিন্বতাঁবদীদের শক্তিতে
ফিরিয়ে আনতে হবে। ১৯১৯ সালের মতো, এবারেও তাই কংগ্রেস দলের
প্রকাশ্য রাখীবন্ধন উপজাতি সমিতির সঙ্গে: এ লড়াই বাঁচার লড়াই, দেশের
সংহতিকে বিপদের গর্তে না৷ ফেলতে পারলে কেন্দ্রের, প্রধীন মন্ত্রীর, কংগ্রেসের
রাুমুক্তি নেই ।
দেশে বিচ্ছিম্রতাবাদ পরিব্যাপ্ত হ'লে, এখানে-ওখানে অন্তঃকলহ বাড়লে,
কংগ্রেস বা প্রধান মন্ত্রীর কী লাঁভ ত1 ভেবে নির্ণয় করা সাধারণ বুদ্ধিতে সত্যিই
কুলোয় না । কিন্তু তাদের দিক থেকে একটি প্রচ্ছন্ন যুক্তি নিশ্চয়ই আছে । এত
বড়ো! দেশ পরিচালন) তাঁদের সাধ্যের বাইরে ; যত দিন যাচ্ছে, তত বেশি তারা
সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা সামাঁজিক-অর্থনৈতিক সমস্থ
আরো ধেশি ক'রে মাথাচাড়া দিচ্ছে, দিল্লির বর্তমান কর্তীব্যক্তিরা অভিজ্ঞতায়
থাটো, তারা হালে পানি পাচ্ছেন ণাঁ। এই পরিস্থিতিতে তার1 অসাধারণ বুদ্ধির
আশ্রয় নিয়েছেন । রাঁজ্যে-রাঁজ্যে অসন্তোষ, রাজ্যে-রাঁজ্যে ধিরোধীর। সরকার
গঠন করেছেন, তীরা কেন্দ্রের শ্রেণীস্বার্থান্ধ সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের
জগ তৈরি হচ্ছেন, তাদের ছত্রভর্গ করতে হবে, তা করতে হ'লে প্রতিটি প্রান্তে
বিচ্ছিম্নতাবাদীদেশ লেলিয়ে দেওয়া যাঁক, এই বিচ্ছিন্নতাবাঁদীর। জ্যোতি বস্থ
সম্প্রদায়ের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে, নিজেদের-নিজেদের ঘর সাঁমলাতেই ব্যস্ত হয়ে
পড়বেন জ্যোতি বস্থ সম্প্রদায়, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনের শক্তি বা
সময় আর থাকবে না তা হ'লে তাদের, অতএব ঘিসিঙ৬-সৌরেন-উপজাতি সমিতি
প্রভৃতিদের জড়ো করা যাক ।
নিজের নাক কেটে নিজেদেরই যে যাত্রাভঙ্গ করছেন তা বোঝৰার ক্ষমতা
পর্যন্ত, মনে হয়, কেন্ত্রীয় সরকার বা প্রধান মন্ত্রীর নেই। এত বড়ে। দেশ যেন
খেলার পাত্র, মাজমতে] তারা ভাঙবেন-চূর্ণ করবেন । দেশ থাকুক না থাকুক কী
যাঁয় আসে, অধশংবদ রীজ্যগুলিকে ও তাঁদের মুখ্য মন্ত্রীদের তো ঠাণ্ডা ক'রে
দেওয়া যাচ্ছে?
৭২
ষড়ফন্ত্রী মশাইদের লীলাখেলা
আজ থেকে দশ-পনেরো৷ বছর আগে কলকাতার একটি নাট্যগোষ্ঠী প্রচুর চিত্তাকর্ষক
সংগীত-সংবলিত একটি নাটক -_“মারীচ সংখাদ”-- পরিবেশন করেছিলেন । যাঁকিন
গুপ্তচর সংস্থা সেপ্টণীল ইনটেলিজেন্স এজেন্দিকে বাংলায় কখনো আমরা বলি সিয়া,
কখনো বলি সি আই এ। সেই সংস্থার অদ্ভুতকিস্ভৃত ক্রিয়াকলাপ এঁ নাটক-
অনুষ্ঠানের কালে কারো-কারে কাছে হয়তো কল্পকথা ব'লে মনে হয়েছিল, হয়তো
মনে হয়েছিল নাটকীয়তাঁর স্বার্থে একটু বাড়িয়ে বল! হচ্ছে । সি আই এসার'
পৃথিবী জুড়ে অনেক অন্যায় ষড়যন্ত্র ক'রে বেড়াচ্ছে তা ঠিক, কিন্তু এ নাঁটকে-ঘটানো
উৎকট ব্যাপারগুলি, কমিউনিস্ট-বিরোধিতা যাঁদের রন্ধে-রন্ধে ঢুকে গেছে, তাদের
পক্ষেও নিশ্চয়ই আদৌ সম্ভব নয় ।
সম্প্রতি মাফিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন শহর থেকে বব উডওয়ার্ড
নামে এক সাংবাদিক “দি ডেইল' শিরোনামে সিআই এ-র গত সাত-আট বছরের
বাবধ গুপ্তচরবৃত্তি সম্পর্কে একটি লোমহর্ষক বই প্রকাশ করেছেন । উডওয়ার্ড
সাংবাদিকতায় ভুবনজোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন আজ থেকে পনেরে! বছর
আগে মাকিন দেশে ওয়াটারগেট কেলের্কারির সময় | তৎকর্তৃক উদঘাটিত তথ্যের
ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নিকসনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
নিকসন প্রেসিডেণ্ট হিশেবে অমার্জনীয় অসদাঁচরণে রত হয়েছিলেন ; উডপয়া্ড
ভূরি-ভূরি গোপন তথ্য লোকসমক্ষে হাজির ক'রে প্রেসিডেন্টের অপরাধ প্রমাণ ক'রে
ছেড়েছিলেন, নিকসগন পদত্যাগ ন। করলে বিচাবে তাঁকে কারাদণ্ড ভোগ করতে
হ'লেও আশ্র্ষের ব্যাপার হতো না । এই সাংবাদিকের দক্ষতা তথ! দায়িত্বজ্ঞান-
শীলতা অতএব প্রশ্নাতীত। “দি ভেইল” বইটিতে সি আই এ-র কীতিকাহিনী
নিনীসক্ত, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ, নৈপুণ্যের সঙ্গে উডওয়ার্ড সম্পূর্ণ নিরাবরণ করেছেন ।
পৃথিবীর অপকারসাঁধনের প্রবৃত্তির তাড়নায় সংস্থাটি যে কত নিচে নামতে পারে, কী
পরিমাণ হীন জবন্থ ক্রিয়াকর্মে লিঞ্চ হ'তে পারে, একটির-পর-একটি উদাহরণ উপস্থিত
করেছেন তিনি । কোনে! ক্র মাকিনবিরোধীর কলম থেকে এই বই বেরোয়নি।
-বব উডওয়ার্ড মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের অতি-অভিজাত সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টের
৪৩
অন্তম সহযোগী সম্পাদক, তার পেশ-করা' প্রতিটি তথ্যের যথার্থতা বহুবার যাচাই
ক'রে নেওয়ার পরই বইটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সুতরাং এটা বল! চলবে না
পক্ষপাতদুষ্ট, কেউ মাফিন দেশকে গালাগাল পাড়ার প্রকট উদ্দেস্টে “দি ভেইল'-এর
মতো! গ্রন্থ রচন1 করতে প্রবৃত্ত হয়েছেন । অলীক কাহিনী নয়, কোনে! আষাঢ়
গল্প নয়, “মারীচ সংবাদে” পরিবেশিত অদ্ভুতকিন্তৃত বছু ঘটনা পৃথিবীতে ঘটেছে,
ঘটছে, সি আই এ দ্বারা ঘটাঁনে। হচ্ছে । “দি ভেইল? স্পষ্ট ক'রে ব্যক্ত করছে,
বিশ্ময়ে ই হয়ে যাওয়ার অধিকার সত্যিই আমাদের নেই, এমন কোনে কুকর্ণই
আমরা কল্পনায় আনতে পারবে] না যা সি আই এ-র পক্ষে ঘটানো অসম্ভব, সি
আই এ সব পারে।
আমরণ এতার্দন পর্যন্ত সেফ অনুমানের উপর নির্ভর করেছিলাম যে এশিয়া-
আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে জাগ্রত জনতার আন্দোলন প্রতিহত
করতে যে-সমস্ত প্রতিবিপ্রবী-পতিক্রিয়াশীল শক্তির সমাবেশ ঘটে, তাদের প্রায়
প্রত্যেকটির পিছনে সি আই এ-র অরূশ্ত হাত কাজ করছে। উডওয়ার্ডের বই
পড়ে আমাদের জ্ঞানশলাকা উন্নীলিত হয়, আমরা উপলপিব করি 'প্রায়' কথাটি
অপব্যয়িত, পৃথিবীর সর্বত্র প্রতিটি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রান্তকে উদ্ধদ্ধ করেছে ও
করছে সিআই এ সংস্থা । ভিয়েতনাম-কৃবা-চিলির কথা ছেড়েই দিই, নিকীরা-
গুয়ায় উপস্থিত মুহূর্তে ঘা ঘটছে সেই প্রসঙ্গও যদি পাঁশে সরিয়ে বাঁখি, তা হ'লেও
কোঁনে। ক্ষতিবুদ্ধি নেই, সি আই এ সতত সর্বত্র সঞ্চারমান, লিবিয়ার খিরুদ্ধে, চাদ
হোক, মিশর হোঁক, কিংবা সুদান হোক, যখনই যে-দেশকেই উগ্র মৃতি ধরতে
দেখ গেছে গত সাঁত-আট-দশ খছরে, প্রতিটি ঘটনা সি আই এ-অন্ুপ্রাণিত,
সি আই এ কর্তৃক এই দেশের-এ দেশের-সেই দেশের কৌনে1 রাজা বা মন্ত্রী বা
সেনাপতি বা রাষ্টপ্রধানকে টাকা বাওয়ানো হয়েছে, কিংবা অন্য কোনে উপায়ে
বশীভূত কর! হয়েছে । ইরানে প্রতিপিগাবীদেব উৎসাহ দিচ্ছে সি আই 'এ, দক্ষিণ
ইয়েমেনের প্রতিবিপ্রবীদের হয়েও কলকাঠি নাড়ছে সি আই এ, আলো লাতে
প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ভাড়াটে গুণ্ডা নিয়োগ করেছে সি আই এ,
আফগানিস্তানের ব্যাপার তো৷ আরো অনেক প্রকাস্ত্ে। লেবাননে গৌড়! খি ্ীয়
সম্প্রদায়কে উস্কে দিয়ে এসেছে বন্ধ বছর ধ'রে সি আহ এ. তাঁদের যিনি নেতা,
তাঁকে পয়সা দিয়ে আমৃত্যু পুষেছে পর্যন্ত সি আই এ । এশিয়ার অন্ত্রও একই
কাহিনী, লাতিন আমেরিকীতেও । আড়ি পাত, গোঁপনে অস্ত্র চালান করা,
মিন স্বার্থের পরিপন্থী ব'লে যাঁদের মনে করা হয় তাঁদের খুন করা, দিনকে-বাত-
৯৪
করা মিথ্য। অপপ্রচার, পিছন থেকে ছুরি মারা, তুষ দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রধান
পুরুষদের দেশের-জাতির প্রতি ধিশ্বীসঘাঁতক হ'তে শেখানো, এ সব-মিলিয়ে এমন-
কোনো পাপাচার নেই যার সঙ্গে সিআই এ নিজেকে জড়ায়নি !
উডওয়াডের বইতে আরো যে-ভগ্মংকর সত্য উদঘাটিত, ১৯১৯ সালে প্রেসিডেপ্ট
রেগানের মেয়াদ শুরু হবাঁর পর থেকে সি আই এ-র কাজকর্মের উপর রাশ ধ'রে
থাকবার মতো মাকিন প্রশাসনে কেউ ছিলেন না? । মাকিন ব্যবস্থায় মাকিনি
আইন সভা কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া সরকারি খরচপাঁতি সম্ভখ নয় ; অতীতের
তিক্ত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, বিশেষ ক'রে ভিয়েতনাম, চিলি, ইরান ইত্যাদি দেশে
সি আই এ-র বিবিধ অপকর্মের কাহিনী ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর. কংগ্রেস থেকে প্রচুর
কড়াকড়ি কর! হয়েছে, আগে থেকে বিশদ হিশেধ দাখিল ন। ক'রে অপকর্ষে লিপ
হওয়া সিআই এ-ব পক্ষে আইনত এখন আর উপায় নেই । কিন্তু চোরা না শোনে
ধর্মের কাহিনী । কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই, কংগ্রেসকে না জানিয়ে, বহু ক্ষেত্রে
কংগ্রেসের নির্দেশ তুড়ি মেরে উপেক্ষা ক'রে দি আই এ এই দশকের প্রায় গোড়।
থেকে বিবিধ গুপ্তকমে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছে । কখনো-কখনো পি আই এ
এইসব কুকীতি করেছে প্রেসিডেপ্টকে জানিয়ে, আবার কখনো সি আই এন প্রতুরা
বড়ে।-কর্তা-যত-কম-জানেন-তত-তীর-পক্ষেমঙ্গল এই দর্শনে বিশ্বাসবর্তী হয়ে রেগান
সাহেবের অগৌচরেই পুথিবিতে অশান্তি ছড়াতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।
কংগ্রেসকে জানানো হয়নি, প্রেসিডেন্টকেও ন1, দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে না । দেশের
পূর্বনিদিষ্ট পররাষ্ট্র নীতিকে কল? দেখিয়ে নিজেদের মনমতো আলাদ। পররাষ্ট্র নীতির
পত্তন করেছে সি আই এ, দেশের প্রতিরক্ষা নীতিকে অগ্রাহা ক'রে নিজস্ব আলাদা
প্রতিরক্ষাব্যবস্থার খসড়া তৈরি করেছে । প্রশাসনের একটি গোপন ভগ্নাংশ গোটা
প্রশাসনকে ছাড়িয়ে গেছে, গোটা দেশের 'ভাগ্য কিছু গুপ্চচর বেপরোয়। খেয়াল-
ধুশমতে। নির্ধারখে নিজেদের নিয়োগ করেছে । এমন নয় যে মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের
অনুমোদিত পররা্্নীতি ব1 প্রতিরক্ষানীতি এমনিতেই প্রতিক্রিয়া ঠাসা ছিল না,
কিন্তু গুপ্তচরদের ষড়যন্ত্রে তা আরো মারাত্সরক বিপবংসী রূপ পেয়েছে ।
অন্ধকারের বুত্তে যাদের ঘোরাফেরা, অবশেষে তারা হাতে-নাতে ধর। পড়েছে
নিকারাগুয়ার প্রতিবিপ্রবীদের প্রত্যক্ষ সাহাধ্য করার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কপতে
গিয়ে । কংগ্রেস থেকে-বার বার অনুশাসন ঘোষণা কর। হয়েছে, নিকারাগুয়ার
প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্তে সিআই কিছুতেই প্রত্যক্ষভাবে লিপ্ধ
হ'তে পারবে না । কোন্টি প্রত্যক্ষ চক্রান্ত কোন্টি পরোক্ষ তা তো সংন্ঞ! আরোপের
৯৫
ব্যাপার । সি আই এর তরফ থেকে অতএব কংগ্রেসের কাছে অভিযোগ জানানো
হলে! নিকারাগুয়1 থেকে অন্তর চালান করা হচ্ছে হওুরাঁস রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত সরকারকে
বিপদে ফেলবার অসদুদ্দেশ্টে, এই অস্ত্র চালান বন্ধ করা প্রয়োজন, সেল্গন্য পাঁচশ!
প্রতিবিপ্রবী নিকারাগুয়! নাগরিককে তালিম দিতে হবে, টাকা চাই; নিকারাগুয়ার
বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর] হবে না, কিন্তু সেই সরকার যাতে প্রতিবেশী
রাষ্ট্র হণুরাসের অন্থবিধা না-ঘটাতে পারে তার জন্য তো ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন ।
এই ছুতো থেকে যে-কাহিনীর শুরু, তা, যতই বছরের-পর-আরেকটি-বছর
অতিক্রান্ত হয়েছে, আন্তে-আস্তে, গভীর-গোপন ফড়যন্ত্রের রূপ নিয়েছে, পাঁচশো
পরিদর্শক-প্রহ্রীর বাহিনী ক্রমে প্রায় পনেরো-কুড়ি হাজার প্রতিবিপ্রবী সৈম্যাদলের
রূপ পরিগ্রহ করেছে, নিকারাগুয়ার প্রতিটি বন্দরের প্রবেশমুখে সি আই এ নিজে
উচ্ভোগ নিয়ে বিস্ফোরক মাইন পেতেছে, নিকাঁরাগুয়ণর গ্রামে-শহরে বোমা ফেলবার
লক্ষ্য নিয়ে ঠ্যাডারে বিমানবাহিনী হৃষ্টি করেছে, এই হিশেব-এঁ হিশেব থেকে
লুকিয়ে-ঠকিয়ে টাকার ব্যবস্থা কর] হয়েছে নিকারাগুয়ার বামপন্থী সরকারকে খতম
কপনবার মহাঁন্ উদ্দেশ্ঠ নিয়ে। সব কিছুই করা হয়েছে কংগ্রেসের অগোচরে,
পররাষ্্র মন্ত্রীকে না জানিয়ে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকেও সমপরিমাণে অবজ্ঞ1 ক'রে,
একটু-আধটু প্রেসিডেন্টকে আভাসে-ইঙ্গিতে জানিয়ে, তা-ও ঠিক কতটা তা
এখনে! রহশ্যের কুয়াশায় ঢাকা ।
ধর্মের কল বাতাসে নড়ার ব্যাপার নয়, শেষ পর্যন্ত সি আই এ ধরা প'ড়ে
গেল বেশি বাঁড়ীবাঁড়ি করতে গিয়ে । কংগ্রেসের কাছে টাঁকা চাইতে যাওয়ার
প্রশ্নই ওঠে না. অথচ নিকারণগুয়ার পনেরো-কুড়ি হাজার প্রতিবিপ্নবীদের অস্ত্র
কেনবার জন্ত ব্যবস্থা চাই । কংগ্রেস ইরানের সঙ্গে লেনদেন বারণ ক'রে দিয়েছে,
কিন্তু তাঁতে কী, কংগ্রেসকে কে পরোয়া করে, অন্তত সি আই এ করে ন1। এক
কাজ করা যাক, গোপনে ইরান দেশকে কিছু গোলাবারুদকাযানবন্দুক বিক্রি
করা যাঁক, তাঁতে রথ দেখা-কল] বেচা দুটোই বোধ হয় হবে, ইরানের নেতাদের
সঙ্গে লেবাননের আরবদের ভাব আছে, ইরানকে অস্ত্র বিক্রি করলে গুরা হয়তো
আরবদের কাছে মীকিন সরকারের হয়ে স্থপারিশ করবেন, আরবরা লেবাননে যে-
সব মাঞ্নিদের বন্দী ক'রে রেখেছে, তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, ত ছাড়া
ইরানকে অস্ত্র বেচে যে-মুনাফা! মিলবে সেই টাকায় এবার নিকারাগুয়ার প্রতি-
বিপ্লবীদের জগ্য অস্ত্রশস্ত্র কেনার বন্দোবস্ত পর্যন্ত কণা সম্ভব হবে।
কিন্ত এত বিভিন্ন দলে জড়িয়ে পরিকল্পন1 ফাঁদ! হয়েছিল যে শেষ রক্ষা হলো
সঙ
না, কোথাও গুপ্ত কথা ফাঁস হয়ে গেল, সি আই এ ধরা পড়ে গেল। এই ধরা-
পড়ার পুঙ্খাচুপুঙ্খ কাহিনী “দি ভেইল”, যার খলনায়ক সি আই এর সর্বোচ্চ কর্তা
বিল কেসী, মাঝারি-ক্ষদে খলনায়ক প্রেসিডেন্টের খাস দপ্তরেব আরো একজন-
ছু'জন। রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চকাহিনীর মতো এই উপাখ্যান । তথাকথিত গণতাস্ত্বিক
ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও কী ক'রে সমস্ত বিধিবিধান-নীতিনিয়মকলাকে উপেক্ষা
ক'রে সরকারি গুপ্ুচরসংস্থা সার! দেশের প্রধান ভাগ্য নিয়ন্ত্রকরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠা
করতে পারে, মন্ত্রীরা! অসহায়, ব্যবস্থাপক সভা পুরোপুরি অগ্ধকারে, রাষ্ট্রনায়ক নিজে
পর্যস্ত বেশির ভাগ পরিকল্পনা-ঘটনাবলী সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ত, বব উডওয়াও সেই
দাঁনবীয় কাহিনী স্তবকের-পর-স্তক সাজিয়ে আমাদের শুনিয়েছেন।
দু'টি আলাদা মন্তব্য সংযোজন করা অযৌক্তিক হবে না। আমাদের দেশে
এখানে-ওখানে সন্দেহজনক নান] ব্াপারশ্যাপার ঘটছে, উত্তর-পূধ সীমান্তে,
ত্রিপুরায়, দাজিলিংয়ে ঝাড়খণ্ডী আন্দোলনের নাম ক'রে ; কখনে] হয়তো! আমরা
বঙ্গভাষী অথব1 আমরা! ব্রজবুলি-বা ভোজপুরী-ভাঁষী, আমাদের দাবি মানতে হবে
এ ধরনের আপ1তঅভ্ভুত কোনে ধুয়োর আড়ালে । অনেক ক্ষেতে আমাদের মনে
খটক] লাগে, হয়তো সাধারণ মানুষের অনুভূত কিছু অভাববধোধ আছে, হয়তো
কিছু আবেগীশ্রয়ী অভিযোগ, ধান্দাাজ কিছু লোক সম্ভবত ছুটে গেছে, কিন্তু তা
হ'লেও অভাব-অভিযোগের যথার্থতা-অযথার্থতা একটু খতিয়ে দেখা ভালো । “দি
ভেইল' প'ড়ে নতুন ক'রে পুরনো সন্দেহ মাথাচাড়া দেয় | সাধারণ মাঁনুষের অভীব
অভিযোগ অবশ্যই খানিকটা আছে, কিন্তু তিলকে তাল করা হচ্ছে না তো, যে-
ধান্দাবাজগুলি মৌড়লি দিচ্ছে, তাঁদের পিছন থেকে সি আই এ উৎসাহদান করছে
কি করছে না আমরা সত্যিই আর বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছি না : যা মনে
হয় হয়তে। অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়, অন্তত সি আই এ সম্পর্কে যা মনে হয়৷
দ্বিতীয় যে-সংশয়ে দীর্ঘ হ'তে হয়, তা আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা-তথা-গুপ্তচর
বাহিনী প্রসঙ্গে । প্রতিরক্ষা দৃঢ়তর করতে, এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আরো
পাঁকাঁপৌজ্জ করতে, অঢেল টাকা ঢাঁলা হচ্ছে, গরিব দেশের গরিব মানুষের টাকা,
য] সরকারের হাতে চ'লে যায়, সেই টাক । এখং এই কাড়ি-কাঁড়ি টাকা খরচ
হচ্ছে নিভৃত গোপনে, সংসদে এই খরচপাতি নিয়ে যেই বিশদ প্রশ্ন তোলা হচ্ছে,
সঙ্গে-সঙ্গে যে-সদশ্য প্রশ্ন উত্থাপন করছেন, তীর দেশপ্রেম নিয়ে বক্রোক্তি করা
হুচ্ছে । কিন্তু মীকিন দেশের চরম কেলেঙ্কারির বিবরণ জানার পর আমাদের
নিজেদের ক্ষেত্রেও এ ব্যাপারে নীরব-নিরাসক্ত থাকা মহাপাতক হবে । আমাদের
৭
প্রতিরক্ষাবাহিনীর দক্ষতা ব্যয়ভারবৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে বাড়ছে নী কমছে, দেশের
মানুষের ত। জানবার নিশ্চয়ই অধিকার আছে, বোফর্স এবং সাবমেরিন কেলেঙ্কারি
ধস হয়ে যাবার পর আরে! বেশি ক'রে আছে। সেই সঙ্গে, গুপ্তচর ও নিরাপত্তা-
বাহিনীকে উন্নততর করার নাঁমে কোথায় কী হচ্ছে তারও আভাস সদাসর্বদা
লোকসমক্ষে পৌছে দেওয়1 প্রয়োজন, অন্যথা সি আই এ-র লীলাখেলার মতো
আমাদের এখানেও হয়তে। প্রবলপরাক্রান্ত প্রধান মন্ত্রীর উদার আশ্রয়ের আড়ালে
কোনো খলনায়ক, প্রধান মন্ত্রীর অন্থমতি কখনো-কখনেো নিয়ে আবার কখনো-
কখনে। না নিয়েই, একটিপ-পর আর-একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হ'তে পারে । অতি
গোপনীয়তার পর্দার অন্ধকারে যার ঘোরাফেরা করে, তারা সহজেই সহসা ভেবে
বসতে পারে মুখ্যস্থখ্যু জনগণের কথ ধর্তব্যের মধ্যেই নয়, সংসদের সাস্যর]
অযোগ্য-অপদার্থ, একমাত্র তারাই, গুপ্তচররাই, দেশের সর্বোচ্চ স্বার্থ অন্ুধানে
সক্ষম । একটা-ছুটে। জায়গায় য! ঘটছে, পাঞ্জাবে ব। দাজিলিংয়ে ব1 শ্রীলঙ্কার
ব্যাপারে, তাতে সন্দেহ হওয়] অন্যায় নয় কিছু-কিছু কুচক্রী দেশকে গভীর সবনাশের
গহ্বরে ফেলার তালিম দিচ্ছে । আমাদের আশেপাশে, কোণে-ঘুপচিতে লুকিয়ে,
অপকর্ম সাধনে তদ্গতমন, সি আই এ-র চরেরা যেমন সম্ভবত আছে, নতুন দিল্লির
সরকারের বেতনভোগী ষড়মন্ত্রীমশীইরাও সেই সঙ্গে হয়তো আছেন, প্রায়
যুগলখন্দী যেন তাঁদের অবস্থান । এই অগ্ধকীরের জীবের মুখোশ উদঘাটনের
চেয়ে মহত্তর জাতীয় কর্তব্য আপাতত সত্যিই নেই ।
ধর্মে আছে, জিরাফেও আছে
দেখা করতে এসেছে বছর আটেকের একটি বাচ্চা ছেলে । ফুটফুটে দেখতে, এপনই
মধ্যে চোখে চশমা, বেশি-বেশি পড়তে গিয়ে চোখ খারাপ ক'রে বসেছে । গল্পচ্ছলে
নিজের নাম বানান ক'রে লিখতে বল! হ'লে ইংরেজিতে অতি হচ্ছন্দে সঙ্গে-সঙ্গে
লিখে দেখালে । বাংলাতে বানান লিখতে গিয়েই কিন্তু বিপদ, যা বেরোলো।
তো৷ “স্বিদ্হার্” । অথচ পড়াশুনায় দিব্যি ভালে সিদ্ধার্থ, অবশ্তই ইংরেজিতে
পড়াশুন]। হয় তার স্কুলে, পরীক্ষায় এ-বছর ক্লাসে প্রথম হয়েছে । প্রাঁয়ই একই রকম
আরেকটি অভিভ্ত্তা | টেনের কামরায় পাঁশে বসেছে সিদ্ধীর্থেরই কাছাকাছি বয়স
একাট ছেলে, অনুরূপ সপ্রতিভ | খাবা-মা নিকষ বঙ্গভাষী, ধাবা কাজ করেন
পশ্চিম ধাংলমতেই এক শিল্পশহরে, কিন্তু অনেক কাঠখড় প্রঁড়য়ে স্কুলে ব্যবস্থা
করা হয়েছে ছেলের জন্য, ক্লাসে তার প্রথম ভাঁষা ইংরেজি, দিতীয় ভাষা হিন্দ |
বাঁংলাও একটু-আধটু পড়বে, ওবে তৃতীয় ভাষা হিশেবে |
একটি-ছু"টি বিক্ষিপ্ত উদাহরণের ব্যাপার নয়, গোটা দেশ জুড়ে, পামন্ততাস্ত্রিক
ঝৌক বাড়ার সঙ্গে-সঙ্গে, আরো-একটি প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত । দেশ স্বাধীন
হয়েছে, অথচ বিদেশ সম্বন্ধে মোহ একটি বিশেষ মহলে প্রতি'দন প্রবলতর হচ্ছে।
দেশ, দেশের মানুষের অবস্থা, ইত্যাদি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা উচ্চবিত্ত শ্রেণীভুক্তর]
করতে আদৌ রাঁজি নন, তাঁদের মন পাশ্চাত্যনুখী, তাঁদের চেখে পশ্চিমী সংস্কৃতি-
সভ্যতার স্বপ্লীঞ্জন, তীরের ছেলেমেয়েদের বাচ্চা ঝয়স থেকেই মাকিন দেশের
বৈভব-উপচারের কথা! শেখানে। হয়, স্ুল-কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়ের গণ্ডি একবার
পেরোতে পারলেই তারা উড়ে চ'লে যাবে ইওরোপে বা আমেরিকায়, এখানেই
আরো-কিছু পড়াশুনা হয়তো শেষ করবে, তারপর জীবিকাগ্রহণ । দেশে মাঝে-
মধ্যে অবশ্ট ফিরবে, তবে তা নিছক বেড়াতে, নয়তো] ছ'দশ দিনের জঙ্ বাবা-মা'র
সঙ্গে দেখা ক'রে যাওয়ার উদ্বেস্টে । এই যে তারা কোনোক্রমে দেশে জীবনের
প্রথম পনেরো-কুড়ি বছর কাটাচ্ছে, তা নেহাতই দাঁয়ে পড়ে, স্থুলে একটু-আবটু
মাতৃভাষ1 জানতে হয়, তা-ও দায়ে পড়ে । তাঁদের ধ্যানজ্ঞান আমের্রিকা, যেখানে
৪৪)
নাঁকি স্থুখ আর এরশ্র্ষের বন্া। বয়ে যাচ্ছে । ভারতবর্ষের মতো! হতভাগ্য-দরিজ্ত
দেশে তারা কেন প'ড়ে থাকবে ?
পোশীকি ভাষায় এই ধ্যানধারণণকেই হয়তে। বল? হয় উপনিবেশিক মানসিকতা ।
দেশ চল্লিশ বছর হলো স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু দেশের উচ্চবিত্ত সম্প্রদায়ের একটি
বড়ো অংশ স্বেচ্ছায় পরাধীনতা৷ বরন করতে চাঁন, যে-কোঁনে কারণেই হোক, দেশ
সম্পর্কে তাদের মমতা বা অনুরাগ নেই, অহংকারের কথ! ছেড়েই দিলাম । হয়তো
সামন্ততীন্ত্রিক চেতনারই এক বিকল্প প্রতিফলন এই মানসিকতা | গরিব দেশ এট,
নোংরা, অপরিচ্ছন্, অশিক্ষিত-স্বাস্থ্যবিহীন লোকের ভিড়ে ঠাসা, এমন দেশে
তিষ্ঠোনো অসম্ভর, ছেলেমেয়েদের জন্য তাই তাঁরা ইংরেজি ভাষার মধ্যবতিতায়
শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন, এবং স্থযোগ খুঁজে বেড়ান কী ক'রে যথাশীপ্র তাদের
মাঁকিন দেশে পাঠিয়ে দিতে পারেন । সংখ্যায় এর! অতি নগণ্য, কিন্ত টাকার
জোর আছে এদের, আমাদের শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় এর। নিজেদের জাহির
করতে পারেন অতি সহজে । সমাজ থেকে এর] অল্লানচিত্তে কিছু বাড়তি স্থবিধা
আদায় করেন, এ'দের ছেলেমেয়েদের উচ্চতর শিক্ষাদানের জন্য সরকার থেকে
ব্যয়বস্থল ব্যবস্থা কর! হয়, এই গরিব দেশের গরিব মাচুষের টাকায় বড়োলোকের
'ঘরের ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তিবিগ্তার বিভিন্ন শাখায় পারদশণ হয়ে ওঠে, তারপর
উধাও হয়ে যায় তারা, আমেরিকায় বা অন্য-কোনো বিদেশে |
যারা যায়, তারা যাঁয়। তাদের জন্য দেশের টাকা কিছু অপচয় হয়, কিন্ত
আপাতত বর্তমান সমীজব্যবস্থায় উপায় নেই, এটা হ'তে ধাঁধ্য। কাউকে তো ধারে-
বেঁধে দেশকে ভালোবাসতে শেখানো যাঁয় না, যারা দেশকে জীর্ণ বন্ত্রের মতো
পরিত্যাগ ক'রে যেতে চায়, বোধ হয় তাদের যেতে দেওয়াই ভালে! | দেশের সঙ্গে
তাদের যে1গস্ত্র চিরবিচ্ছিন্ত্র হয়ে গেলেও আ'খেরে খুব-একটা মারাত্বক ক্ষতি হবে
না ভারতবর্ষের, আশি কোটি মানুষের দেশ, প্রতিভার অভাব হবে না এ-দেশে,
সমাজের সমস্ত স্তর থেকে, ষথাঁযথ স্থযোগ পেলেই, দেশপ্রেমে ভাস্বর, বুদ্ধিতে
উজ্জ্বল ছেলেমেয়েরা কাতারে-কাঁতারে বেরিয়ে আসবে. দেশের সেবায় নিজেদের
ঢেলে দেবে তারা ।
যাঁরা গেল তাদের তাই যেতে দেওয়াই তালে! । কিন্ত মুশকিল বাঁধে সেই সব
দেশবাসীকে নিয়ে ধীদের মনট। প'ড়ে আছে আমেরিকায়, কিন্তু ধারা মোড়লি
করতে চাঁন দেশের মাটিতে । তদের মধ্যে অনেকে প্রশীসনে কে্-বিইু হয়ে
বসেন, কেউ-কেউ খন্ত্রী হন, কেউ-কেউ আমলা 1 দেশটা গবিব, সমস্বাগুলি শাদা-
১৩০
মাটা সমস্যা, অসাম্যের সমস্া, সম্পত্ভি-স্থযোগ-স্থবিধ! ভয়ংকররকম অপমবণ্টনের,
সমশ্যা, কিন্ত এই সব ঞ্রব সত্যগুলি স্বীকার ক'রে নিলে তাদের নিজেদের অস্তিত্বে
টান পড়বে, তাই এঁ পথে হাটেন না তীরা। তাদের মন তাই চলে যায় মাকিন
দেশের দিকে, ভারতবর্ষকে স্বর্গরাঁজ্যে পরিণত করার একমাত্র উপায়, তার! বিবেচন।
ক'রে সিদ্ধান্তে পৌছন, মাফিনি প্রশাসন ব্যবস্থা, মাকিনি অর্থনীতি, প্রধান মন্ত্রীর
মীকিন রাষ্রপতির ধশাাচে আচরণ-বিচরণ-ব্যবহ্থার | তারা ধুয়ো তুলেছেন আমাদের
আমলাদের কিস্তিতে-কিন্তিতে মাফিন দেশে পাঠিয়ে দেওয়া] প্রয়োজন, এ দেশে
প্রশাসনে কী জাছু আছে তা জেনে আস্থন আমাদের সবল্তরের প্রশীসকা, তা
হ'লেই নাকি দেশের চেহার1 পাল্টে যাবে, নিরক্ষর] সাক্ষর হবে, খেকারর] কাজ
খুঁজে পাবে, সতীদাহ বন্ধ হবে, ফাইল দ্রুতগতিতে এক টেবিল থেকে আরেক
টেবিলে যাওয়া-আসা করবে, উন্নয়ন প্রকল্পাদির বাস্তব রূপায়পণ ঝটিতি সুসম্পন্ন
হবে । দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় আপাতত কিছুদিনের জন্য আমাদের
প্রশাসকদের ম।কিনি ধণাচে দীক্ষিত করার কর্মসুচী স্থগিত রাখ! হয়েছে, কিন্তু
স্থযোগসন্ধানীর! ঘোরাফেরা করছেন, খানিক সময় বাদে এ'র। হয়তো] চেষ্ট। করবেন
প্রশাসনের মগজ-ধোলাইয়ের স্থমহান পরিকল্পনাটি কী ক'রে ফের চালু করা যায়।
এই মাঞ্চিনপ্রেমিকদের অনেকেই প্রশাসনের খোদ অন্দরমহলে ঢুকে গেছেন,
ধাপে-ধাপে উপরে উঠেছেন, এখন বিভিন্ন মন্ত্রকের বহু দায়িত্বশীল পদে সমান ।
এদের মধ্যে কেউ-কেউ হয়তো বনু বছর ধ'রে বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক অর্থভাগ্ডের
সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিংবা এখনে আছেন, ছুটি নিয়ে এসেছেন সে-সব প্রতিষ্ঠান
থেকে । এরা একটি বিশেষ আথিক দর্শনে বিশ্বাস রাখেন, জাতীয় স্বনির্ভপতার
প্রসঙ্গ এদের কাছে বাতুলের প্রস্তাব, বিদেশী বিশ্ববিভালয়ে যে-ধনবিজ্ঞাঁন পড়ে
এসেছেন তা-ই এ'র। প্রয়োগ করতে চান ভারতবর্ষে মাঁটিতে । ভৃমিসংস্কার নয়,
কাঠামোর পরিবর্তন নয়, গরিব মানুষদের লেখাপড়1 শেখানে] বা তাদের স্বাস্থ্যের
উন্নতিবিধান, এ-সব কোনো কিছুই নয়, দেশবাসীদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর উপর
জোব দেওয়ার কোনো আবশ্যকতা নেই, দেশের আথিক উন্নতি, এরা ধরেই
নিয়েছেন, একমাত্র বিশ্ব ব্যাংক বা আন্তর্জাতিক অর্দ ভাণ্ডার কর্তৃক নির্দেশিত
উপায়েই হ'তে পারে । অর্থাৎ জমিদার-পুঁজিপতি-ব্যবসাঁদারদের উৎসাহবর্ধন করতে
হবে, তাদের উৎসাহ বুদ্ধি পেলেই দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, সেই উৎসাহের পরিসর
বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোতে গেলে যা-য] প্রয়োজন তাদের মধ্যে প্রধান বড়ে-
লোকদের উপর ট্যাক্সোর বোঝ! কমানে, তাদের জন্ক অধিক পরিমাণে অনুদানের
১৬৩
ব্যবস্থা! করা, রাষ্ত্ীয় উদ্যোগ সংকুচিত ক'রে আনা, একচেটিয়া! পুঁজির সম্প্রসারণের
উপর থেকে সবরকম বাধাবিদ্ব তুলে দেওয়া, খিদেশ থেকে অঢেল পুঁজি ও প্রযুক্তির
আমদানি, বিদেশ থেকে জিনিশপত্রেরও অঢেল আমদানি, কারণ তা হ'লে নাকি
প্রতিযে।গিতার মুখে প'ড়ে স্বদেশী শিল্প দক্ষতা শিখবে, যাঁর ফলে রপ্তাণির সম্ভাবনা
বুদ্ধি পাবে, এবং স্বদেশী পণ্যের বর্ধযান রঞ্কানির সুত্র ধরেই আথিক উন্নতির হার
তাব্রতর হবে, দেশ এগিয়ে যাবে, মাকিন দেশের প্রধান-প্রধান মন্ত্রশিষ্য দক্ষিণ
কোরিয়ায় কিংব] সিঙ্গাপুরে যেমন এগিয়ে গেছে । পাশাপাশি, এই পণ্ডিত প্রশাঁসক-
কুল এট1ও বলবেন, টাঁকার বৈদেশিক মূল্য ক্রমশ কমিয়ে আনতে হবে, এই কাজটি
ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সমাধা করলেই নাঁকি, তীব] দিব্যি দিয়ে বলবেন, ভারতবর্ষের
রপ্তানি হু-স্থ ক'রে বেড়ে যাবে, সেই সঙ্গে বাড়বে জাতি আঁথিক অগ্রগতির হাঁর।
ছিনে জেশকের মতো লেগে আছেন এই গোগী, তাঁরা প্রশীসনের বাইরে
আছেন, ভিতরেও আছেন । টাকার মূল্য সরকারি ঘোষণ! মারফৎ কমিয়ে দিলে
বিদেশীরা আমাদের পণ্য আরে। সম্তায় কেনার সুযোগ পেয়ে যান, আর আমাদের
আরে। চড়া দাম দিয়ে বিদেশী পণ্য কিনতে হয়। যে-যুক্তি দীড় করান] হয়,
এই অবস্থায় বিদেশীরা আরে। বেশি-বেশি আমাদের জিনিশ কিনবেন, আর আমরা
বিদেশী পণ্য কেনা কমিয়ে আনবো, ছু" দিক দিয়েই তাই বৈদেশিক মুদ্রাসঞ্চয়ের ক্ষেত্রে
সাশ্রয় ঘটবে, আমরা রপ্তানি ক'রে বাড়তি ডলার পাউগু-মীর্ক-ইয়েন ঘরে তুলবো,
এবং যেহেতু আমদানি কমবে, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাব্যয়ও সংকুচিত হবে |
অভিন্ততা। কিন্তু অন্য কথা বলে । আজ থেকে বছর বাইশ আগে তার মাঁকিন-অনুরাগী
উপদেষ্টাদের পরীমশ শুনে ইন্দিরা গান্ধির টাকার অধমৃল্যায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন,
কিন্তু যা-য! পূর্বঘোষণ1 করা হয়েছিল কিছুই ঘটলে। ন! সে রকম : রপ্তানি আদৌ
বাড়লো না, অন্য পক্ষে দেশে খরা দেখা দেওয়ায় বহু পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্র।
খরচ ক'রে বাড়তি আমদানির ব্যবস্থা করতে হলো, যন্ত্রপাতি আমদানির খরচও
ভীষণভাবে বেড়ে গেল। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পর প্রশীসনের অভ্যন্তরে যে-
সব মাঁকিনপ্রেমিক অবস্থান করছেন, তারা! খোলা গলায় নতুন ক'রে টাকার
মূল্য কমাবাঁর জন্য আব দাবি পেশ করতে সাহস পাচ্ছেন না। কিন্তু তার মানে
এই নয় যে তার। হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কোনোরকম সরকারি ঘোষণা
ছাড়াই, চুপি-চুপি, প্রতিদিন প্রাত্ড সপ্তাহে একটু-একটু ক'রে, বাস্তবতার সঙ্গে
ভারসাম্য রক্ষার অছিলায়, তারা ভারতীয় মুদ্রার বৈদেশিক মুল্য গত ছ'সাত বছরে
প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কিংবা তারও বেশি কমিয়ে ফেলতে সফল হয়েছেন, সাড়ে সাত
১৩২
টাকায় যে-্ডলার মিলতো!, সেই ডলারের জন্য এখন তেরে! টাকা খরচ করতে
হয়। এই অবযূল্যায়ন নাকি ঘটানে। হয়েছে জাতির স্বার্থে, অথচ জাতির কী
স্বার্থ সংসাধিত হয়েছে সাধারণ বুদ্ধিতে তা বুঝে ওঠ মুশকিল ৷ 'আজ থেকে সাত-
আট বছর আগে জাতীয় আয়ের মাত্র শতকর। পাচ ভাগ রপ্তানি করতাম আমরা,
টাকার মূল্য অর্ধেক কবে আনার ফলেও সেই একই অবস্থা, বর্তমান বছরেও
আমাদের সামগ্রিক রপ্থানি জাতীয় আয়ের পাঁচ শতাংশ অতিক্রম ক'রে ধাবে না।
অন্ত পক্ষে, আমাদের আমদানি হু-ু ক'রে বেড়ে চলেছে, সাত খছর আগে যা ছিল
জাতীয় আয়ের সাত শতাংশের পরিমাণ, ত1 এখন বেড়ে প্রায় দশ শতাংশ হবার
উপক্রম | আমাদের কুষক-শ্রমজীবী মানুষদের মাথার ঘাম পায়ে ঝণরিয়ে উৎপাদিত
জিনিশপত্র বিদেশীরা আরো অনেক সন্তায় কেনার সুযোগ পাচ্ছে,আর বিদেশীদের
উৎপাদিত জিনিশ আমাদের আরো অনেক চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে ।
যা ঘটছে, ঘটানে| হচ্ছে, তা মাঁকিন নীতির সারাৎসার অনুসরণ কবেই
বটানে। হচ্ছে । সাশ্রাজ্যবাদী শোষণের বিভঙ্গ বদলায়, টাকার বৈদেশিক মূল্য হাস
করানোতে বাধ্য করিয়ে শোষণ তীব্রতর কর] নধসাস্্রাজ্যবাঁদের একটি পরিচিত
প্রকরণ। এখন সাহস বেড়েছে। বিশ্ব ব্যাংক থেকে এখন আবার দাবি করা হয়েছে,
টাকার দাঁম আরে কমাঁতে হবে, এবং প্রকাশ্তে, সরকারি ঘোষণা মারফত, কমাতে
হবে, নাচতে নেমে ফের ঘোমটা দেওয়া কেন। শাসকদল ও তার নেতার অপকীতি
তথ৷ দুর্নীতি হেতু গোটা ভারতবর্ষে বাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নতুন ক'রে গোচরমান,
বিশ্ব ব্যাংক তার সুযোগ গ্রহণ করতে চাইছে । এবং তাঁকে সাহায্য করবার জগ্ঘা,
ধরেই নেওয়া যায়, উদৃত্রীব প্রতীক্ষায় রত কিছু মন্ত্রী-শান্ত্রী-আঁমলা, যাঁদের কাছে
দেশপ্রেমের সংজ্ঞা মাকিনপ্রেম |
আমরা মুৎ্হুপ্দি পুঁজির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করি, দেশকে মুৎস্থপ্িরা
কী ক'রে বিদেশী পুঁজির কাছে হেলায় তুলে দিতে পারে সেই চিন্তায় ভাঁখিত হই |
প্রশ!সনের অভ্যন্তরে যে-মুৎস্দ্দির। প্রবিষ্ট, তাঁদের সম্পর্কেও সমপরিমাণ সতর্ক হবার
সময় হয়তো! এসেছে । মাতৃভাষায় নিজের নাম লিখতে পারে না, অথচ ইংরেজিতে
অবলীলাক্রমে পারে, এমন ছেলেমেয়ের সংখ্যা দেশে যে-হারে বেড়ে যাচ্ছে, ভার
চেয়েও ভ্রততর হারে মনে হয় বাড়ছে প্রশীসনের অন্দরমহলে সগৌরবে বিরাজম]ন
এই স্বদেশকে-তাচ্ছিল্য-করতে-অভ্যন্ত বিদেশপ্রেমিকদের সংখ্যা । বাচ্চা ছেলেটিকে
বকুনি দিয়ে কী হবে, সে উপর মহলের দৃষ্টান্ত থেকে উদ্বদ্ধ হচ্ছে, দেশরক্ষ!র
কাজ কোথায় শুরু করবে! আমরা ? অন্তর্থাতে নিবেদিতপ্রাণ মুৎস্থদিরা তো,
আধুনিক কবির ভাষায়, ধর্মে আছে, জিরাফেও আছে ।
১৩৩
মেরেছে! কলসীর কানা, তা বলে কি
প্রাচীন কালে আলংকারিকর1 ছিলেন, তারা শব্ের-বাক্যের রহস্থের সন্ধানে
অনেক গভীরে চ'লে যেতেন, পরস্পরের সঙ্গে তর্কে জড়িত হতেন । তাদের
স্ুক্মাতিস্ক্ষা বিচারে রাজসভায় সোরগোল পড়ে যেত, রাজার কাছ থেকে শিরোপ।
পেতেন তারা, গ্রামে-গঞ্জের হাবা-গোব1 মান্ষগুলি দূর থেকে সসন্তরমে তাদের
প্রণাম জানাতো |
আমর] বিংশ শতাব্দী প্রায় অতিক্রম ক'রে যাচ্ছি, আলংকারিক পণ্ডিতদের
কাল আর নেই, কিন্ত হুশ্মাতিস্ুক্ম বিচারের ঘাটতি হচ্ছে না তা হ'লেও ।
আলংকারিকরা নেই, অর্থনীতিবিদ্রা আছেন। তারাই এখন রাজসভা জুড়ে
থাকেন । তীরা মন্ত-মস্ত অঙ্ক কষেন, আপাঁতসহজ কথাকে কঠিন ভাষায় প্রকাশ
করেন, ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে সরকারকে উপদেশ দেন, তাদের বাদ দিয়ে সরকার অচল।
এবং তারা নিজেদের মধ্যে প্রভূত তর্ক করেন । তারা তর্ক করেন ব'লেই হয়তো
সরকারের মন্ত বাচৌয়] | অর্থনীতিবিদ্রা যখন পরস্পরকে তর্কে ঘায়েল করতে
থাকেন, সেই অবসরে সরকার নিজের সিদ্ধান্ত ঘোষণা ক'রে ফেলেন । যে-বিষয়
নিয়ে অর্থনীতিবিদূদের বিতর্ক, সেই সম্পর্কেই সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়।
পণ্ডিতরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মেটাতে পারছেন ন1 ব'লে তো আর পৃথিবীর
নিয়ম বন্ধ থাকবে না, কোনো দেশের সরকারও কাঁজকর্স বন্ধ রেখে পণ্ডিতি
সিদ্ধান্তের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা ক'রে থাকবেন না, সেটা সম্ভব নয় । সরকারের
পক্ষে স্থবিধাঁই হয় এক হিশেবে অর্থনীতিব্দিদের পারম্পরিক বিবাদে লিপ্ত হওয়া
থেকে । সরকার এখন লোকসমক্ষে বলতে পারবেন যে তাঁরা পগ্ডিতজনদের
উপদেশ-পরামর্শ অনুযায়ীই চলতে চান, কিন্তু, কী আর করা, পণ্ডিতরা নিজেদের
মধ্যে বোঝাপড়ীয় আসতে পারছেন না, অতএব সরকারকে স্বীয় ক্ষুদ্র বুদ্ধির উপর
নির্ভর ক'রে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে | সাপও মরলো, লাঠিও ভাঁঙলো না । সরকার
নিজের পছন্দমতোই সিদ্ধাস্ত ঘোষণা করলেন. কিন্তু ওদিকে ঝলাও চললে!
অর্থনীতিবিদৃদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তবে তীর মনস্থির ক'রে উঠতে পারছেন
না।
১০৪
ত'বে অগ্রকমও হচ্ছে । শ্রেণীবিভক্ত সমাজব্যবস্থায় শাসককুল তাদের স্বার্থ-
সিদ্ধির অন্বেষণে ধনবিজ্ঞানকে অবস্থাই কাজে লাগাবেন, সেই সঙ্গে অর্থনীতি-
বিদ্দেরও। পুরোনে? দিনে পণ্ডিতরা অলংকার নিয়ে কোন্ ধরনের বাগাড়ন্বর
করলেন তাতে রাজ্যচাঁলনার ক্ষেত্রে কিছু যেত-আসত না, প্রজাপীড়ন সুছু উপায়েই
চলতো, কিন্তু বর্তমান কাঁলে অর্থনীতিবিদৃদের বলা-কওয়াও সঙ্গে দেশের শুভাম্তভ,
এবং বিভিন্ন শ্রেনীস্বার্থ, ওতপ্রোত জড়িত। শাসককুলকে তাই অর্থনীতিবিদ
যেমন পুষতে হয়, সঙ্গে-সঙ্গে তাই এটাও দেখতে হয় এই পণ্ডিতদের দল আবার
উটকো-কিছু পরামর্শ যেন দিয়ে না বসেন । অর্থাৎ য। প্রয়োজন হয়ে পড়ে তা
পরমবশংবদ, অতিঅন্ুগত একপাল অথনীতিবিদের, ধাদের দিয়ে যা-কিছু-খুশি
বলানে। যাবে-লেখানে। যাবে । এই অবস্থায় ভাড়াটে গণৎকারের সঙ্গে ভাড়াটে
অর্থশান্ত্রজ্ের কৌনে1 তফাৎ থাকে ন] : ছ'জনকে দিয়েই পছন্দমতো ভবিষ্যপ্ধাণী
করানো যায়।
ভাত ছড়ালে কাকের অভাব হয় না । তা ছাড়া, যেহেতু জিনিশপন্দ্রের দাম
বাড়ে, টিকে থাকার সমস্যা, একটু ভালোভাবে খেয়ে-প'রে বীচার হাতছানি,
সরকারের সুনজরে থাকলে এটা-ওটা নান] সুবিধালাভের সম্ভাবনা, বিবেকের
কাছে দায়বদ্ধ থাকা! তেমন বেশিদিন অনেক পণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষেই তাই আর হয়ে
ওঠে না। তাঁর] আত্মসমর্পণ করেন, সোতে গ1 ভাঁ?সয়ে দেন, শ্রেণীবিভক্ত সমাজ-
ব্যবস্থ।, শাসককুল নিজেদের শ্রেণীশ্বাপ্রপারে ব্যস্ত, দেশের অধিকাংশ মানুষের
স্বার্থ যেহেতু শীসককুলের স্বার্থের পরিপন্থী, প্রশাসনের তদ্গত সাধন। হয়ে দাড়ায়
কী ক'রে জনসাধারণের সর্বনাশ কী ক'রে ক্ষিপ্রতম পন্থায় সুসম্পন্ন করা চলে।
এই মহীন্ কব্যের সঙ্গে ভাঁড়া-কবা অর্থনীতিবিদ্দেরও জুড়ে দেওয়৷ হয় ।
এই এতগুলি কথ! অবতারণ। করার উপলক্ষ একটি প্রকাশিত সংবাদ। যোজনা
কমিশনের সদশ্যরা সবাই জ্ঞানীগুণী মানুষ, আপাতত তাঁরা অতি শঙ্কিত । কিছুদিন
আগে কয়েকশে। অতিথিকে চা-পানে আপ্যা রিত করছিলেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ।
হেমন্তসন্ধ্যা, মৃদ্ু-হুন্দর আবহাওয়া, হঠাৎ নাকি প্রধান মন্ত্রী, সর্বসমক্ষে, যোজন
কমিশনের সদস্যদের সম্পর্কে মন্তব্য ক'রে বসলেন, গুরা সব ভাড়, গুদের দিয়ে
কিছু হবে নাঁ। জ্ঞানীগুণী মানুষ, আমন্ত্রণ ক'রে এনে যৌজনা কমিশনে বছর
তিনেক আগে এদের বসিয়েছিলেন প্রধান মন্ত্রী স্বয়ং, দেশ ও জাতি যাতে নুচারু
ছন্দে দ্রুত সামাজিক ও আথিক উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে সেই উদ্দেশে
এ*র। বুদ্ধিপরামর্শ দেবেন, পরিকল্পনা রচন] করবেন, নিজেদের স্বাধীন চিন্তার
প্র. কথা ৭ ৯০৫
নির্ভরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারদের আধিক নির্দেশ জ্ঞাপন করবেন, জনমানসে
অন্তত সেরকম ধ্যানধারণা । কিন্তু এই পণ্ডিত ব্যক্তিদের আলাপ-আচরণ স্পষ্টতই
প্রধান মন্ত্রীর পছন্দ হয়নি, তার বিবেচনায় এ'র। ভাড়ের দল, এবং তাঁর এই
বিচাঁর তিনি প্রকাশ্রেই ব্যক্ত করেছেন৷ ব্যক্ত করেছেন আজ থেকে প্রায় ছু'মাস
আগে, এবং হয়তো করেছেন এই আশা নিয়ে যে এধরনের অপমানজনক উক্তি
শোনার পর যোজনা কমিশনের সদশ্যাদের নিশ্চয়ই গায়ে জাল] ধরবে, সঙ্গে-সঙ্গে
এর] ইস্তফ1 দেবেন, তার পর তা হ'লে নতুন একঝাঁক সদস্য কমিশনে নিয়োগ
করতে পারবেন প্রধান মন্ত্রী, ধারা আরে! অনেক-বেশি ধশংবদ হবেন । ভাত
ছড়ালে তে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় কাকের অভাব হয় না।
কিন্ত না, যোজনা কমিশনের কোনো সদন্যাই পদত্যাগ করেননি, তাঁর] বৈষণখ
গীতিকবিতার ভক্ত : মেরেছো৷ কলসীর কানা, তা ব'লে কি প্রেম দেবো না।
সর্বশেষ যে-খবর বেরিয়েছে, আগামী সপ্তাহে তারা দল বেঁধে ভক্তি-আগ্ুত চিত্তে
প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন, দেখা ক'রে যথাঁধথ বিনয় ও নশ্তা-সহকারে তার
কাছে প্রার্থনা জানাধেন : তিনি যদি দয়াপরবশ হয়ে একটু তাদের জানান, কর্তব্য-
কর্মসম্পাদনে কোথায়-কোথায় তার কী-কী তুল করেছেন, যেই তুল থেকে তার
চিত্তশান্তি ধিদ্িত হয়েছে ; এবাপকার মতো যদি তিনি তাদের গোস্তাকি মাফ
ক'রে দেন, ভবিষ্যতে নিজেদের শুধরে নেবেন তীর. শুধু তাদের যথাযথ অন্ুজ্ঞা
দান করুন তিনি, এখন থেকে তার] যথা নিযুক্তোম্মি তথা করোমি এই গাতাবচন
অক্ষরে-অক্ষধে পালন ক'রে চলখেন ।
আরো যা খবর সংবাদপত্রে ফলাও ক'রে ছাপা হয়েছে, যৌজন। কমিশনের
সদশ্যারা দেশের আথিক পরিস্থিতি নিয়ে দু'টি আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ।
একটি প্রতিবেদনে বিশদ তথ্যের সাহায্যে বস্তুনিষ্ঠ বিঙ্লেষণ ক'রে দেশের ভয়ংকর
এক আথিক চিত্র তুলে ধরা হয়োছে। অন্য প্রতিবেদনে আপন মনের মাঁধূরী মিশিয়ে.
প্রচুর কল্পনা যোগ ক'রে, এক অতি-উজ্জবল ঝকঝকে আঁথক ভবিষ্যতের ছবি
বণিত হয়েছে । যোজন] কমিশনের সদস্যবা কোনো ঝুকে নিতে চান না1। খদি
প্রধান মন্ত্রী ভালে। মেজীজে থাকেন, সত্যি কথা শুনতে চান, তাঁর বিবিধ খাম-
খেয়াল দেশকে কোন্ অন্ধকার পাশালের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সে-বিষয়ে
অবহিত হ'তে চান, তা'হলে প্রথম প্রতিবেদনটি পেশ করা হবে । আর যদি তীর?
দেখেন প্রধান মন্ত্রীর মেজাজ খি'চড়ে আছে, বেজার মুখ কে ব'সে আছেন
তিনি, তা হ'লে কাজ কী ঝামেলায়, দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করলেই
১৬৬
$লবে যাতে বল! আছে, প্রভু, আপনার নায়কত্বে দেশ তথা! জাতি প্রতিনিয়ত
উৎকর্ষ ও উন্নতির উচ্চ শিখর থেকে উচ্চতর শিখরের দিকে অপ্রতিরোধ্য এগিয়ে
চলেছে ।
ধরণী দ্বিধা হও বলাঁরও কোনে অর্থ হয় না । ধাদের মেরুদণ্ড নেই তাঁর!
কেন সোজা হয়ে দীড়াচ্ছেন না অবান্তর জল্পনা! তা। এক হাতে যেমন তালি
বাজে না, স্বেরতন্ত্র তো তেমনি একপাক্ষিক ব্যাপার না। উপর থেকে আমাদের
উপরে আদেশ-নির্দেশ চাপিয়ে দেওয়া হলো. না মেনে আমাদের উপায় কী, গর্দানা
যাবে যে. এবংবিধ সাফাই অন্য-একটি সমান সতাকে অসাধৃভাবে আড়ালে
রাখতে চাঁয়। ধার! আপাঁতধিচারে শিক্ষিত-সংস্কৃত, ধাদের জ্ঞানে কোনে ঘাটতি
নেই, বিকল্প জীবিকা সংগ্রহ করতেও ধাদের খুব বেশি অস্থ'বধ! হবার কথা নয়,
তাঁরা ধদি প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেন, অপমান মুখ বু'জে সহা করেন, স্পট
কথ] উচ্চারণ করার সাহস বিসর্জন দেন, কোনো ক্রমে নিজেদের হুযোগ-স্থবিধাগুলি
রক্ষা করার তাড়নায় তারা ধদি বিবেককে অতল জণে ডুবিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত,
তাহ'লে স্বৈরাচার তার সাম্রাজ্য বিস্তার করবেই । মনীষী ও বিদৃষকে ব্যবধান
যদি ঘুচে যায়, অত্যাচারীদের সাহস সহশ্রগুণ বৃদ্ধি পায় সেই অবস্থায় ।
স্থতরাং ত্রিপুরার মুখ্য মন্ত্রী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বাধ্যক্ষের কাছে যতই চিঠি লিখুন,
নির্বাচনের প্রাক কালে তীর রাজ্যে রাষ্ায়ত্ত ব্যাংক কর্তৃক খণমেল। অনুষ্ঠিত হবেই,
এবং নতুন দিল্লির শাসকদল হরির লুটের বাতাসার মতো বেপরোয়। কিছু প্রসাদ
বিতরণ করবেনই, এই আশায় ঘদি একটি-?ু"টি বাড়তি আসন এই অনাচার ঘটিয়ে
ছিনিয়ে আনা যাঁয়। রিজার্ভ ব্যাংকের সর্বাধ্যক্ষ চল্লি*-বছর ধ'রে পরিশো ধিত-
পরিমাজিত আমলা, তিনি যদি ধর্মভীরু হন বিশেষ-কিছু বলবার থাকে না।
যৌজন] কমিশনে প্রবিষ্ট পপ্তিতপ্রবর অর্ধনীতিবিদদের যে-সাঁহস নেই, আমলাবাহিনী
সেই সাহসের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবেন এমন আশাপোষণ অন্যায় । ব্রিপুরা
রাজ্যের মুখ্য মন্ত্রীর চিঠিখান। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বাধ্যক্ষ সুতরাং বড়োজোর কেন্দ্রীয়
অর্থমন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দেবেন, তারপর শ্বশানের নিস্তন্ধতা নামবে, অন্ত দিকে
খণমেলার নামে ত্রিপুরাগ্ কয়েকটি দিন শ্রশানে-সভূতের-নাচের পাল অনুষ্ঠিত
হবে।
দেশে আরো রসিকতা ঘটবে, মুখ্য নিবাচন কমিশনার যেখানে যেখানে
শাসকদলের হেরে যাওয়ার আশঙ্কায়, সে-সব জায়গায় কোনেো।-ন। কোনে !-ছুতো
তুলে সমস্ত নির্বাচন-উপনির্বাচন বন্ধ ক'রে দেবেন। তাঁকেও আলাদা ক'রে দোষ
৯৩৭
দেওয়] যায় না, তিনি হয়তে। ভবিষ্যতে রাজ্যপাল হবার বাসনা পোষণ করেন,
আপাতত শাসকদলের খানিকট। যনোরগ্রনের চেষ্টা করা তেমন-কিছু গঠিত
অপরাধ নয়।
জ্ঞানীগুণী মান্ুষর। নিজেদের সত্তাকে বেচে দিচ্ছেন যখন, সেই অবস্থায়
জাতিকে বীচানোঁর দায় তে। আমলাতন্ত্রের নয় । দেশের সামনে আপাতত
সবচেয়ে ধড়ে। বিপদ, মনে হয়, এটাই : পণ্ডিতরা মূর্থ, তা হ'তেই পারে, কিন্ত,
সেই সঙ্গে আরে। যা, পণ্ডিতর। বিবেকহীন ; কোনে। সমাজের পক্ষে ত'র চেয়ে
কলঙ্কজনক কিছু হ'তে পারে না ।
১৩৮
কবরে-চাপা ইতিহাস
আমি-আপনি বাঁড়িতে বসে বই লিখতে পারি, কিন্ত বই ছেপে বের করতে
টাক। দরকার, উল্লেখযোগ্য বা আকর্ষণীয় কিছু বলা হয়ে থাকলে মেই বইয়ে,
ছেপে বের হওয়ার পর আলোচনার মধ্য দিয়েই তার প্রচার সম্ভব | প্রচার ন।
হ'লে বিশেষ-কেউ জানতেও পারবেন না এমন-একটি বই লেখা হয়েছে, এবং
বইয়ের তেমন বিক্রি না হ'লে খরচের টাকা উঠে আদবে নাঁ। যে-কোনো
গবেষণ। ব। বিগ্যার্চার ক্ষেত্রেই অবশ্ঠ সমস্যাটি সমান বাস্তব, কবি-সা হিত্যিকদেরও
একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ধেতে হয়। অনেকে অবশ্য এটাও বলেন, আগুনে
পুড়ে খাঁটি সোঁন। হয়, তেমনি ধারা প্রথম জীবনে কৃচ্ছুসাধনা করেছেন, অনেক
কষ্টে অবশেষে নিজেদের বই প্রকাশ করতে পেরেছেন, তাদের কুকের প্রভাব
প্রতিফলিত হবে প্রকাশিত গ্রন্থের অধিকতর গুণগত উতকর্ষে। সবুরে মেওয়া৷ যেমন
ফলে, কষ্ট্রেহ্ষ্টে অনেক দেরিতে হ'লেও একবার যদি বইটি ছেপে বের করানো
যায়, তা হ'লে তার নিহিত এশ্বর্য দেশের লোকের মন বেশি-বেশি ক'রে কাড়বে ।
অথচ সমাজধারা বাদ দিয়ে অবকথার কোনে সার্থকতা নেই | শ্রেণীবিভক্ত
সমীজব্যবস্থায় কোন্-কোন্ ধরনের বই €লেখা হবে, এবং কোন্ বই সম্পর্কে কী
ধরনের প্রচার বা আলোচন। হবে, তা-ও শ্রেনীভিত্তিক সমস্যা হয়ে পড়ে । সব
বই কদর পায় না, বিশেষ কয়েকটি বই পায়। ইতিহাসের প্রতি অধ্যায়েই প্রতিটি
দেশেই এরকম ঘটেছে । যে-কবি বা দাশনিক নিজের মনে গ্রন্থ রচনা ক'রে গেছেন,
রাজার ব' রাষ্ট্রের প্রসাদের ধার ধারেননি, তিনি অবহেলায় পাশে পড়ে থেকেছেন,
অন্য পক্ষে যে-কবিমন্য ব1 খলপগ্ডিত রাজপভায় কোনোক্রমে অনুপ্রবেশ করতে
পেরেছেন, এবং রাজার প্রসাদ সংগ্রহ করতে পেরেছেন, স্বাকে আর চিন্তা করতে
হয়নি, রাজার কাছ থেকে শিরোপাই শুধু তিনি পাননি, যেহেতু রাজপ্রসাদ লাডের
খবর সর্বত্র প্রচারিত হয়েছে, তীর গ্রন্থের চাহিদ। হু-ছু ক'রে বেড়েছে, তার
এঁহিক বৈভব বহুগুণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে । সরকারের হাতে অপর্যাধধ ক্ষমত?,
অপর্যাপ্ত সম্পদ | সরকার ইচ্ছা করলে রাতকে দিন করতে পারেন, দিনকে রাত ।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সরকারের সঙ্গে মুক্ত হয়েছেন ধনী সংবাদপত্র বা ব্যবসায়ী
১৯৯১
গোঠী। তারাও দিনকে রাত বানাতে পারেন, রাতকে দিন, দারিদ্র্যলাঞ্িত'
কোনো কবি ব] সাহিত্যিকের উপর দয়া'পরবশ হয়ে, তাঁকে আকাশে তুলে ধরতে,
পারেন, অন্যদিকে যথার্থ প্রতিভাবান কোনো লেখককে যদি তাদের অপছন্দ হয়,
তাঁকে নানা ফন্দিফিকির এটে চূড়ান্ত অবহেলার গর্ভে নিক্ষেপ করতে তাদের
বিবেক সামান্যতম কাপে না । এরকম ভুরি-তুরি দৃষ্টান্ত আমর! স্বাধীনতা-উত্তর.
ভারতবর্ষে চল্লিশ বছর ধ'রে দেখেছি । শাসকশ্রেণী এবং সেই শ্রেণীতুক্ত পয়সাওল।
মালিক-চঠিকেদার-ধ্যবসাদাররা পছন্দমতো সাহিত্যিক তৈরি করছেন, সেই
সাহিত্যিককে পুরস্কারভূষিত করছেন, পরে তাঁকে নিজেদের শ্রেণীস্বার্থসিদ্ধির
প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন । আজ থেকে প্রায় একশে। পঁচিশ বছর আগে, এ
ধরনের ঘটনীক্রম পর্যবেক্ষণান্তেই মার্কস মন্তব্য প্রয়োগ করেছিলেন, যে-কোনো
দেশে যে-কোনে৷ যুগে সবচেয়ে ক্ষমতাঁওল। শ্রেণীর চিন্তাধারা সমাজের প্রধান
চিন্তাধারার রূপ পরিগ্রহ করে |
অর্থাৎ শ্রেণী বিভক্ত সমাজব্যবস্থায় শাসককুল যা লিখতে বলেন, বশংবদ
লেখকরা তাই লেখেন, অন্যতর ভাবনা চিন্তা শ্রেণীস্বার্থের পরাক্রান্ত ভারে ডুবে
যায়। বিশেষ ক'রে এটা ঘটে ইতিহাঁসচর্চার ক্ষেত্রে । সাধারণ মান্য ইতিহাস
থেকে প্রেরণা অনুসন্ধান করেন, ভবিষ্যতের ইঙ্গিত হাতড়ে বেড়ান ইতিহাসের
শরীরে । তাই কী ইতিহাস লেখা হবে, কোন্ ভঙ্গিতে ব1 প্রকরণে লেখা হখে,
সেই ইতিহাসে কোন্-কোন্ শ্রেণীর কীতিকাহিনী প্রাধান্য পাবে এখং কাদের
আঁদে। পাত্বা দেওয়1 হবে না, এসব সমস্যা নিয়ে প্রতি মুহুর্তে যে-কোনো সমাজে
প্রভূত আলোচনা হয়ে থাকে । শ্রেণীপ্াার্থের প্রয়োজনে ইতিহাসচর্চাকে ব্যবহার
করার প্রয়োজন স্বীকৃতি পায়; সরকারে আপীন আছেন যে-শ্রেণী বা শেণীগো্ঠী,
তাঁরা তাদের মতো ক'রে ইতিহাস গুছিয়ে লেখবার নির্দেশ দান করেন । শ্রেণী-
স্বার্থের তাঁগিদে তাই ইতিহাসকে একটু লেপাঁমোছা করা হয়, কোনো যথার্থ
ঘটন। চেপে যাওয়া হয়, অন্য-কোনে। অতি সাধারণ ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাপিয়ে
মহত্তর রূপে চিত্রিত করা হয়, কানা ছেলে পদ্মলোচন বনে যায়, দছুশ্চরিক্র,
অতি লম্পট কোনে! রাজপুত্র মহাঁপুরুষ নামে আব্যাত হন, আবার শ্রেণীভিত্তিক
ইতিহাসের প্রয়োজনে কোনে? সঙ্জন ম্যায়পরায়ণ ব্যক্তির চরিত্রে এক কাড়ি,
কলঙ্ক লেপন করা হয় ।
খা আবাল গফফর খা, আমরা বাঁকে সীমান্ত গান্ধি নামে চিহিত করতে
অভ্যন্ত, আটানব্ব,ই বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে.
১১৬
চিরাচরিত শ্রদ্ধ] জ্ঞাপন করা হয়েছে, তাকে যেদিন সমাহিত কর! হলে পাকিজ্তান-
আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী জালালবাদ শহরে, গোটা! ভারতবর্ষে সরকারি-
বেসরকারি কাজকর্ম বন্ধ হলো । কিন্তু দেশের শাসককুল মস্ত স্বস্তির নিংশ্বাসও
নিশ্চয়ই ফেললেন সেই সঙ্দে। ধাঁ আব্দ,ল গফ.ফর খাঁর জীবনাবসানের সঙ্গে-
সঙ্গে অতীত ইতিহাসের একজন সাক্ষী বিলুপ্ত হলেন, আমাদের জাতীয় আন্দোলনের
একটি অতি কলঙ্কজনক অধ্যায় সম্পর্কে মনে করিয়ে দেওয়ার বিশেষ-কেউ আর
রইলেন না, এবার ধীরে-নুস্থে আগাগোড়া লেপে-পুছে, নিজেদের মনের মতো
করে ইতিহাসের সেই বিশেষ অধ্যায়টিকে লিখতে পারবেন আমাদের কর্তীব্যজিরা,
অথবণ তাদের দ্বারা নিযুক্ত কলমনবিশর] ।
ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে ভাগ করা নয়, আদর্শের ভিত্তিতে দেশের সব
সপ্প্রদায়ের মানুষকে সংঘবদ্ধ করা : এই আস্থার উপর নির্ভর ক'রে সীমান্ত গান্ধি ও
তাঁর অন্থগামী খুদ1-ই-খিদ্মতগারর1। দশকের পর দশক ধরে দেশের উত্তর-পশ্চিম
প্রান্তে সাধারণ মানুষকে জড়ে। করছিলেন । অন্তান্ত অঞ্চলে ও প্রদেশে ভারতের
জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ, আজ থেকে পঞ্জাশ বছর আগে, মুসলিম লীগের সঙ্গে
মুখোমুখি মোকাবিলায় চূড়ান্ত ব্যর্থ, মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্তরা কাতারে-কাতারে
লীগের ছত্রছায়ায় জড়ো হচ্ছেন প্রতিদিন. কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ দিশেহার1, কিংকর্তব্য-
বিঘৃঢ়। একমাত্র একটি অঞ্চলে মুসলিম লীগের পরিকল্পন1 ব্যর্থ, উত্তর-পশ্চিম
প্রদেশে পাঠানকুলতিলক খা আব্,ল গফফর খ। ও তার সত্যানুপন্ধানী খুদা-ই-
বিদমতগার সম্প্রদায় জাতীয় অখণ্ডতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মন্ত্র সমাজের সর্ব-
স্তরের মানুষের অন্তঃস্থলে অনুপ্রবেশ করাতে সফল, একটির পর আর একটি নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হচ্ছে সীমান্ত প্রদেশে, প্রতিটি নিবাচনে মুসলিম লীগ পরাভূত, সীমান্ত
গান্ধির নায়কত্বে জাতীয় কংগ্রেস বিজয়ী । লীগের তামসিকতার বিরুদ্ধে সীমান্ত
গান্ধি ও তার অন্ুগামীর! সর্বস্ব পণ ক'রে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তখন, তাঁদের বিশ্বাস
অব্যাহত ছিল যে যেহেতু ইতিহাস তাদের পক্ষে, যেহেতু সর্বদা অন্ধকার থেকে
আলোর দিকে মানুষের অভিযাব্রা, লীগের পতন ঘটবেই, এবং সীমান্ত প্রদেশে
যেমন, ভারতবর্ষের অন্যান্য অংশেও জাতীয় এঁক্যের অঙ্গীকারে সমস্ত সম্প্রদায়ের
মানুষের দীক্ষিত হবেন, দেশের অথগুতা রক্ষিত হবে ।
সীমান্ত গান্ধি নিজে যে-দৃঢ়চিত্তুতা দেখিয়েছিলেন, তিনি আশ] করেছিলেন
জাতীয় কংগ্রেসের নেতারাও সেই ধরনের অনমনীয় দৃঢ়তা দেখাবেন, দেশকে ভাগ
হ'তে দেবেন না। তিনি অপাত্রে ভরসা রেখেছিলেন ৷ ইংরেজর! সেই নৃহূর্ঠে
১১১
লোভনীয় চুষনকাঠি দেখাচ্ছে, তাদের হাতের ব্যাটন তারা জাতীয় কংগ্রেসের
নেতাদের হাতে স'পে দিতে প্রস্তুত, এই অবস্থায় মহাত্মা গাদ্ধি ব1 সীমান্ত গান্ধির
মতো অবুঝ গুরুজনদের প্রলাপোক্তিতে কান পাততে নেই । কান পাঁতেননি
কংগ্রেস নেতার, যে য1 বলুক ভাই, তাদের সোনার হরিশ চাই । ১৯৪৬ সালের
ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যে-কথা-
বার্ হচ্ছিল, তাতেও কিন্তু কোনো ইঙ্গিত ছিল ন1 যে দেশট] ভাগ হবেই, বিভিন্ন
বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচন। চলছিল, একটি অখণ্ড মহাযুক্তরাষ্্রীয় কাঠামে। নিয়ে
মতৈক্যের স্ুত্রও প্রায় খুঁজে পাওয়া যাঁচ্ছিল। অথচ জাতীয় কংগ্রেসেব নেতার!
অস্থির, তাঁরা বরঞ্চ আদর্শ বিসর্জন দিতে পম্মত, তারা বরঞ্চ দেশের একটা -ছু*টো
অংশ পুরোপুরি মুসলিম লীগকে ছেড়ে দিতে রাজি, কিন্তু অন্যান্য অংশের উপর
তাঁদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব চাই। অতএব ভারতমাতা৷ ত্রিথগ্ডিতা হলেন, কংগ্রেসের
নেতারা রাজধানী দিল্লিতে মন্ত্রী হয়ে বসলেন, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের
কংগ্রেস কর্মীদের কথা, থুদা-ই-খিদমতগারদের অতুলনীয় আদর্শনিষ্ঠার কথা, সীমান্ত
গান্ধির সকাঁতর আবেদনের কথা ভুলেও ভাবলেন না জাতীয় কংগ্রেসের নেতার!
নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে সীমান্ত গান্ধির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, এরকম চরম
বিশ্বাসঘাতকতার উদাহরণ ইতিহাসে খুব বেশি নেই।
পাশাপাশি সংগ্রাম করেছেন ধাদের সঙ্গে, তাদের কলঙ্কজনক আচরণে সীমান্ত
গান্ধি বিচলিত নিশ্চয়ই হয়েছিলেন, কিন্তু তা ব'লে ভেঙে পড়েননি । দিল্লিতে
জাতীয় কংগ্রেসের নেতার পরম তৃপ্তির সঙ্গে রাজ্যশীসন করেছেন, দণ্ডমুণ্ডেব কর্তা
বনেছেন, বিলাসের শ্নোতে গা ভাসিয়েছেন, অন্য দিকে পাকিস্তানে খা আব্দল
গফ.ফর খ। শ্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে নিজেকে নিযুক্ত রেখেছেন, পুরোনে। দিনের
মতোই পুলিসের লাঠি-গুলি-অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছেন, দফায়-দফায় কারাঁবরণ
করেছেন, তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তীব পবিবাঁববর্গকে চুড়ান্্ সংকটের মধ্য
দিয়ে যেতে হয়েছে | কিন্তু আদর্শে অবিচল থেকেছেন সীমান্ত গাদ্ি, আপস
করেননি কোনোদিন তার একদা-সহযোগী কংগ্রেস নেতাদের মতো ।
যেহেতু শাসককুলের ইচ্ছান্যায়ী ইতিহাস লেখ হয়ে থাকে, আমাদের দেশে
গত চণ্তিশ বছর ধ'রে যে-ইতিহাসচর্চা চলেছে, তাতে সীমান্ত গান্ধি তথা খুদা-ই-
খিদ্মতগারদের প্রতি কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের স্বাক্কারউদ্রেককারী বিশ্বাসঘাতকতার
অবশ্থই কোনে। উল্লেখ থাকে না । আদর্শ থেকে স্থবিধাবাদে উত্তরণের অধ্যায়টি
কবরচাঁপা দেওয়া আছে। শাসককুলের আশঙ্কা, তেমন জানাজানি হয়ে গেলে
১১৭
যে-সব গালভর। বুলি লালকেল্লার সাহুদেশে দীড়িয়ে প্রতি বছর বিশেষ একটি
দিনে নিষ্ঠাসহকারে বল! হয়ে থাকে, তাদের কপটতা তথা অন্তঃসারশুহ্যাতা সাধারণ
সাহুষের কাছে 'অচিরেই ধর! পড়বে ।
সীমান্ত গান্ধি মুখ খুললে আমাদের শীসকবৃন্দ ঘোর বিপদে পড়তেন । খাঁ
'আব্,ল গফ.ফর খ! আমৃত্যু সৌজন্য দেখিয়ে গেছেন, ক্ষমা ক'রে গেছেন বিশ্বাস-
ঘাতকদের | কিন্ত অতিবৃদ্ধদের বিশ্বাস নেই, জড়বুদ্ধিবশত তারা কখন কী অকথা-
কুকথা ব'লে ফেলেন, সীমান্ত গান্ধির দেহাঁবসানে দিল্লির কর্তাব্যক্তিদের মস্ত ফাড়া
কাটলে! ।
তবে যথার্থ ইতিহাস তো একদিন লেখা হবেই। স্বাধীনতা প্রাপ্ডির মূহুর্তে আদর্শ
বিসর্জন দিয়ে নগদ প্রাণ্থির লোভে আরো কী-কী অপকীতির সঙ্গে জাতীয় নেতৃবৃন্দ
নিজেদের জড়িত করেছিলেন, তাঁর কিছু আভাস সম্ভবত মৌলানা আবুল কালাম
আজাদের আত্মজীবনীর অপ্রকাশিত অংশে উল্লেখিত। মৌলানা আজাদ জীবদ্দশায়
কাউকে অপ্রিয় প্রসঙ্গ তুলে বেদনাবিদ্ধ করতে চাননি, তাই নাকি নির্দেশ দিয়ে-
ছিলেন আত্্জীবনের এই অংশটি জাতীয় মহাফেজখানায় গচ্ছিত থাকবে, তাঁর
মৃত্যুর তিরিশ বছর পরে যেন তা সবসাধারণের কাছে প্রকাশ কর! হয়। আগামী
মীসে মৌলানা আজাদের মৃত্যুর পর তিরিশ বছর অতিক্রান্ত হবে, কিন্তু না
আচালে বিশ্বাস নেই, শাঁসককুল কৌঁনো-না-কোনো ছুতো। ধ'রে মৌলানালিখিত
আত্মজীবনীর ভগ্মাংশটি প্রকাঁশে সম্ভবত বাঁধা দেবেন। যেহেতু জোর যাঁর,
আপাতত মুলুক তার, শাসককুল হয়তে। সফলও হবেন । কিন্ত কতদিন আর আসল
ইতিহাসকে গল। টিপে বাকরুদ্ধ রাখতে পারবেন তাঁর।? অতীত তাঁর কথা কইবেই,
যা আসল সত্য, শ্রেীবিভক্ত সমাজেও অনভ্তকালের জন্থা মাটিচাপা থাকবে ন।
তা।
১১৩
আমরা মারা পড়ছি, কিন্তু কেন
কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ তো! এখনে বাঁকি, কিন্তু এরই মধ্যে, গত এক মাসে,
পেট্রোলের দাম ঝটকা বাঁড়ানে৷ থেকে শুরু ক'রে খাঁম-পোস্টকা-টেলিফোনের
ভাড়া-রেলের মাঁস্লের সর্বাম্মক বৃদ্ধি ঘটিয়ে তিন হাঁজার-সাঁড়ে তিন হাজার কোটি
বাৎসরিক অতিরিক্ত বোঝা! নতুন দিল্লির কর্তাব্যক্কির। জনসাধারণের উপর চাপিয়ে
দিয়েছেন । নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিশপত্রের দীম দিনের পর দিন বর্ধমীন, এবং
তার কারণ প্রারৃতিক দুবিপাক নয়, পরম দয়ালু কেন্দ্রীয় সরকার নিজে থেকে
ফতোয়। জারি ক'রে জিনিশপত্রের দাম চড়াঁচ্ছেন বলেই জিনিশপত্রের দাম চড়ছে।
দাম বাড়িয়ে সরকার টাকা জোগাড় করছেন নিজের খরচ মেটানোর জন্য ৷
উচ্চবিত্তদের উপর কর চাপিয়ে সরকারের পক্ষে অবশ্য অর্থসংগ্রহ সম্ভব, কিন্তু
বর্তমান সরকারের য। শ্রেণীচরিত্র, বড়োলোকদের বাড়তি ট্যাক্স! দিতে কখনোই
বল। হবে না। সরকারের ব্যয় যেহেতু হু-হু ক'রে বেড়ে যাচ্ছে প্রতি বছর,
সাধারণ মানুষের উপর বোঝার ভীরও অতএব ছুবিষহ থেকে ছুবিষহতর হচ্ছে ।
দিল্লির সরকার এট। বলতে পারবেন না যে যেহেতু অভ্ভুতপূর্ব খরা-বন্যার জন্য
এ বছর অনেক বেশি টাকা খরচ করতে হয়েছে, জিনিশপত্রের দাম বাড়িয়ে
জনসাধারণের কাছ থেকে বাড়তি সম্পদ সংগ্রহ না ক'রে উপায় ছিল না। খরা-
বন্থার জন্য অতিরিক্ত বায়নির্বাহের অঞ্জুহাতে সরকার তো বাইরে থেকে প্রায়
হাজীর কোঁটি টাকা গত কয়েক মাসে খণ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, ভ্রাণের নামে
যে-পরিমীণ খরচ কর] হয়েছে বছর ভ'রে খণ হিশেবে তার চেয়ে হয়তো! বেশিই
পেয়েছেন । স্থতরাং দেশের মান্ছষকে শোষণ ক'রে যে-সমস্ত টাকা তোলা হয়েছে,
খরাবন্তাত্রাণের ছুতে। তাদের ক্ষেত্রে দেখানো চলবে না।
কিন্ত, ছলের তো অভাব হয় না, বলা হবে দেশের প্রতিরক্ষা স্বার্থে বাড়তি
টাকার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, দেশকে তো। টেকাতে হবে, দেশ টিকলে জাতি,
আমব। শক্র ও সম্ভাব্য শত্র-পরিবেষ্টিত, দেশের অভ্যন্তরে পর্যন্ত শক্র ঢুকে গেছে,
তারা অন্তর্থাতের চেষ্টা করছে, তাই প্রতিরক্ষার খাতে খরচ না বাড়িয়ে উপায়
নেই, আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্তও ধায় বাড়াতেই হবে। প্রতি মুহূর্তে দেশের
১৯৪
মানুষকে শুনতে হচ্ছে যে দেশেরই স্বার্থে চাল-গম-চিনি-ভোজ্য তেলের দাম
বাঁড়ানে। হয়েছে, প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে, পোস্টকার্ডের দাম-রেলের মাসুল বাড়াতে
হচ্ছে একই কারণে, পেটৌলের দামও বেড়েছে প্রতিরক্ষা-নিরাপত্বার স্বার্থে ।
প্রকারান্তরে বল। হচ্ছে, ধারা-যারা সাধারণ মানুষের উপর ক্রমান্বয়ে এই বাড়তি
বোঝা চাপানোর প্রতিবাদ জানান, তারা আমলে দেশকে তেমন ভালোবাসেন
না, অর্থাৎ তারা সবাই দেশদ্রোহী । জনসাধারণকে সবস্বান্ত ক'রে, সবস্তারে
মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে, প্রতিরক্ষা-নিরাপত্ত1 খাতে অঢেল টাঁকা খরচ করার অন্য
নাম দেশপ্রেম, আর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় কমিয়ে টাকা বাচিয়ে সেই টাক!
গরিব-মধ্যবিস্ত মানুষের প্রয়ৌজনে খরচ করার কথা বলা দেশজ্রোহিতার শামিল ।
দিল্লির সরকারের হাতে প্রচারযন্ত্র আছে, স্থতরাং এধরনের দর্শন যদি এখন
প্রচারিত হ'তে শুরু হয়, অবাক হবার কিছু নেই। অস্ত্রসস্ভীর বিকনেওলা দেশী-
বিদেশী ঠিকেদীররা যে-টাকাটা ঘুষ দেয়, তা-ও সরকারের টাকা, অর্থাৎ দেশের
মানুষকে শোষণ ক'রে সংগৃহীত, কিন্তু প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে টু শব্দটি করা চলবে
না, যদি করতে যাই তা হ'লে আমার-আপনার দেশপ্রেম নিয়ে সঙ্গে-সঙ্গে সঙ্গেই
প্রকাশ কর। শুরু হয়ে যাবে ।
এখানেই মুশকিল দেখা দেয় । আমর] বলি, দিল্লির সরকার চরম প্রতিক্রিয় শীল,
দেশের মান্ষকে শোষণ ক'রে ঝীঝরা ক'রে দিচ্ছে, তবে এই সরকারের বৈদেশিক
নীতি তেমন-কিছু খারাপ নয় | মাঝে-মাঝে সন্দেহ না হয়েই পারে না, ভাবেন
ঘরে হয়তো চুরি করছি আমরা । আশি কোটি মানুষের দেশ ভারতৎর্ষ, আঁধাদের
ভৌগোলিক অবস্থান এমন যে কোনো বিদেশী শক্তিই আমাদের বেশি ঘণাটাতে
সাহস পাঁবে না, আড়াঁলে-আবডালে একটু-আধটু চিম্টি কাটবার চেষ্টা কবে
মাত্র । দেশের অধিকাংশ মানুষ শান্তির স্বপক্ষে, তার! স্বভাবতই সমাজতান্ত্রিক রাই-
সমূহের প্রতি অনুরাগ-আবদ্ধ। এই অবস্থায় দেশের সরকারের শরেণীচরিত্র যা-ই
হোক ন! কেন, কিছুতেই সেই সরকারের সাহস হবে ন1 চিন্নাচরিত সহ-অবস্থান
ও সম-দুরত্বভিত্তিক বৈদেশিক নীতি প্রকাশ্খে বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমী পুঁজিবাদী
দেশগুলির সঙ্গে একাগ্র হবার । দেশের মানুষ সে-ধপরনের কোনে! ব্যভিচার আদে
বরদাস্ত করবেন না। ইন্দির! কংগ্রেস দলের সরকার এটা ভালোভাবেই জানেন,
যেমন জানতেশ এ ১৯৭৭-৭৯ সালের ক্ষণাঘু জনতা সরকারও | জনতা দলে
কয়েকজন বাঁঘা-বাঘা পশ্চিমপ্রেমিক ছিলেন, কিন্তু তারা ভারতবর্ষের বৈদেশিক
নীতির বিন্দুতম পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হননি, বরঞ্চ উক্ত সরকারের বৈদেশিক মন্ত্রী
৯১৫
চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কিন! তা
নিয়ে উদ্ঘমশীল হয়েছিলেন পর্যন্ত । বর্তমান কংগ্রেসী সরকারেরও সাহস নেই ষে
সমগ্র দেশবশসীর সংহত ইচ্ছার বিরুদ্ধাচরণ ক'রে প্রকাশে ধনতান্ত্রিক দেশগুলির
সঙ্গে হাত মেলাবেন।
কিন্তু প্রকাশ্য ঘোষণা এক জিনিশ, প্রচ্ছন্ন প্রবণত] সম্পূর্ণ অন্য বস্ত। যারা
মাকিন অর্থদর্শনে অগাধ আস্থা! রাখেন, ধারা উঠতে-বসতে রাষ্টায়ত্ত সংস্থাদির
নিন্দামুখর হন, ধার বড়োলোকদের উপর কর চাপাতে রাঁজি নন, গরিব মানুষদের
বারা ঘ্বণার চোখে দেখেন এবং মনে করেন ধনী সম্প্রদায়কে সন্তষ্ট করবার
প্রয়োজনে দরিদ্রতর শ্রেণীর উপর উত্তরোত্তর অধিকতর আখিক বোঝ! চাপানো
অতি সুব্যবস্থা, তারা নিজেদের শ্রেণীশ্বাথের তাগিদেই লুকিয়ে-চুরিয়ে পশ্চিমী
দেশগুলির দিকে ঝুঁকে পড়ার স্থযেগ খুঁজবেন । দেশকে তাঁরা আস্তে-ধীরে
বিদেশী পুঁজির হাতে তুলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন, সেই স্বপ্ন যদি সফল হয় তা হ'লে
আমাদের বৈদেশিক নীতিও খোঁল-নল্চে পালটে যাবে, কারো পক্ষেই আর সেই
সর্বনাশ ঠেকাঁনে] সম্ভধ হবে ন] সম্ভবত | সরকারের আভ্যন্তরীণ নীতি, অর্থনীতি,
বাঁণিজ্যনীতি যাঁদ প্রতিক্রিয়াশীল হয়, বৈদেশিক নীতিতেও তা হলে, আজ ন।
হ'লে আগামী কাল, তার ছায়! পড়তে বাধ্য ।
এ বছর ইতিমধ্যেই কংগ্রেসী সরকার তিন হাঁজার কোটি টাকারও বেশি
জনসাধারণের উপর বাড়তি বোঝ] চাপিয়েছেন ৷ সেই সঙ্গে হয়তো হাঁজার দশেক
কোটি টাকার অতিরিক্ত নোট ছেপে বাঁজারে ছেড়েছেন, গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষ
তিলেতিলে যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছেন । এখন যুক্তি দেওয়। হচ্ছে সাধারণ মানুষকে
এতটুকুন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যেতেই হবে, নইলে দেশের প্রতিরক্ষা বিপন্ন
হবে, আমাদের সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন মেটানে1 যাঁবে না, শ্রীলঙ্কায় যে
আমাদের হাজার পঞ্চাশেক পৈস্ত পাঠিয়েছি তদের জন্তা স্বন্দোবস্ত কর! সম্ভব
হবে না। আমাদের সেন্াসামন্তরা জীবনপাঁত ক'রে শ্রীলঙ্কীয় অবস্থান করছেন,
দেশে কোন্ পাতক আছে যে তাদের স্বার্থে সরকারকে বাড়তি একটা -ছু'টে। টাকা
জোগাতে রাজি হবে না?
অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে আমাদের বৈদেশিক ও আভ্যন্তরীণ নীতি পরস্পরের
সঙ্গে জড়িয়ে গেছে! এটাই স্বাভাবিক, এমন না হ'লেই বিস্মিত হ'তে হতো ।
যেহেতু বৈদেশিক নীতির স্বার্থে শ্রীলঙ্কায় আমাদের হাজার-হাজার সৈন্য পাঠাতে
হয়েছে, এবং যেহেতু সরকারের বৈদেশিক নীতি, আমর! নিজেরাই স্বীকার করছি,
১১৬৬
অত্যত্বম, সুতরাং শ্রীলঙ্কায় পাঠানে। সৈগ্কদের খোরাকি মেটাবার প্রয়োজন কোনো
যুক্তিতেই আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না, স্থতরাং গরিব মান্ুষগ্ডলিকে একেবারে
বাঁঝর। করে দিয়ে সরকার যদি বাড়তি টাকা তোলেন, তার গ্ভায্যতা কেন মেনে
নেব না?
এ ধরনের সংশয়ের হাত থেকে সত্যিই কি আমর! পালিয়ে বেড়াতে পারি
অনন্তকাল ধ'রে? গ্রীলঙ্কা নিয়ে নতুন ক'বে ভাববার সময় সত্যিই কি আসেনি ?
শ্ুভবুদ্িসম্পন্ন সকলের সঙ্গে আমরাও শ্রীলঙ্কায় শান্তি ফিরে আম্থক সবশুহূর্ঠে সেই
কামনা ব্যক্ত করি, এঁ দ্বীপের সিংহলী ও তামিল সম্প্রদায়ের মানুষের পারস্পরিক
সম্প্রীতি নিটোল থাকুক তা আমাদেরও সাধনা । গত বছর যে-চুক্তি তাঁড়ঘড়ি
সই করা হয়েছিল, তার ভিন্ত্িতে যদি শান্তি সংস্থাপিত হতো, হৃদয়ের অন্তঃস্থল
থেকে সাধুবাদ জানাতাম আমরা । কিন্তু ঘটনাবলী তে! সম্পূর্ণ অন্য দকে মোড়
নিয়েছে । তামিলদের প্রধান যে-দল, তারা মনে করছেন ন। শ্ুলঙ্কার ত1মল-
ভাষীদের স্বার্থ চুক্তির শর্তাবলীতে আদে স্বরক্ষিত হয়েছে। তারা বলছেন
চুক্তিটি জোর”ক'রে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে । তারা ঠিক কথা
বলছেন কি অন্যায় কথা বলছেন, তারা 'ভামিল সম্প্রদায়ের ঘথাথ মঙ্গলকাম? অথব'
ঘোর দুরাত্মা, ত1 নিয়ে অবশ্য তর্ক উত্থাপন করা যেতে পারে, এবং সেই ৩
অনেকদূর গড়াবে ! কিন্তু প্রধান ঘটশ] তো উপেক্ষা করার উপায় নেই, শ্রীলঙ্কান
তামিল সম্প্রদায়ের বহুলাংশের উপর এই দলের প্রভাব অনব্ষীকার্ধ, ছ'-সাত মাস
অবিশ্রান্ত চেষ্টার পরেও ভারতীয় সন্যবাহনী তামিলপ্রধান অঞ্চলে শাস্তি ফিরিয়ে
আনতে অপারগ হয়েছে, প্রেরিত সৈম্তবাহিনীর আয়তন বেড়ে-বেড়ে এখন পঞ্চাশ
হাজারের অঙ্কও ছড়িয়ে গেছে, এবং শ্রীলঙ্কার তামিলদের একটি বড়ো অংশের
কাছে ভারতীয় বাহিনীর সংজ্ঞা এখন আর বন্ধু নয়, বৈর্নী |
অন্ত যে-ক্ষতি হয়েছে তা আরো মারাত্মক | যে-কোনে! দেশের চেতনাসম্পন্ন
মানুষ এটা পছন্দ করবেন না যে অন্ভ-কোনে। দেশের সেনাধাহিনী আ'নদিষ্ট
কালের জন্য তাদের দেশে উড়ে এসে হ্ুড়ে বসবেন, দেশের সরকারের উদ্যোগে
এবং সেই সরকারের সম্মতি নিয়েও যদি বিদেশী সৈন্যরা এসে থাকেন, তা] হলেও
দেশবাসীর অভিমত অন্যরকম হবার নয়। শ্লক্কার নিজম্ব সৈগ্বাহিনাতে সব-
মলিয়ে মাত্র বারো হাজার সেনা, ভারতবর্ষ থেকে পাঠানে। সৈন্যসংখ্যা তার
চারগুণেরও বেশি, এই অবস্থায় শুলস্কায় ভারতবর্ষ সম্পর্কে আতঙ্ক ও খাতরাগ
সংক্রামিত না হয়েই পারে না। হঠাৎ যদি আমাদের দেশে চল্লিশ-পঞ্চাশ লক্ষ
১১৭
মাফিন বা ইংরেজ বা ফরাসী বা চীনে সৈন্য, আমাদের সরকারের অনুমতি নিয়েই,
হঠাৎ হাজির হতো, তা হ'লে সাধারণ ভারতবাসীর মনে যে-্ধরনের ত্রাস ছড়াতো,
ভার'তীয় সৈন্যদের উপস্থিতিতে অনুরূপ ত্রাসের সঞ্চার হয়েছে গো! শ্রীলঙ্কা ছুড়ে,
সিংঠলভাষীদের ঘরে-ঘরে এখন ভারতবিদ্বেষ দ্রতহারে ক্রমবর্ধমান | বিদ্বেষ,
গোভ, অসহীয়তাবোধ, সব-কিছু মিলিয়ে এখন এক বিস্ফোরণসম্তভব পরিস্থিতি
পশপ্কার সর্বত্র | উত্তর "ও পূর্ব প্রান্তে ভারতীয় সৈন্যদের ভূমিকা তাঁমিলদের পছন্দ
হচ্ছে না, এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিহেতু দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলে ভারত"
বর্ষের আগ্রাসী” 'সাশ্রাজ্যবাঁদী” ভূমিকা নিয়ে সিংহলীভাষীদের পুপ্রীভৃত আবেগ,
পে-আবেগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে স্বভাবতই কিছু-কিছু চক্রান্তকারী কোমর
বেঁধে নেমে পড়েছেন ।
মনকে চোখ ঠেরে লাভ নেই, ঠিক এই মুহুর্তে, আমাদের বৈদেশিক নীতির
বিশেষ বিন্যাসের প্রত্যক্ষ পরিণামে, এলস্কা দ্বীপের জনসাধারণের প্রধান অংশ
ভারতবর্ষকে বন্ধু অথব] শুভানুধ্যাঁয়া হিশেবে আর মানতে রাঁজি নন, আমাদের
সেনাবাহিনী যত বেশিদিন এ দেশে অবস্থান করবে, ভারতবর্ষ সম্পর্কে বীতরাগ তত
বেশি ছড়াবে । এক দিক থেকে বিচার করলে সন্দেহ ন। হয়েই পাবে ন।, ভারতীয়
সেনাবাহিনীর উপস্থিতি শ্রীলঙ্কায় শান্তি পুনস্থণপনে শুধু ব্যথই হয়নি, আমাদের
সৈম্তদের উপস্থিত দেশটিকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এবং কেউ-ই বুকে হাত
ঠেকিয়ে আগে থেকে বলতে পারবেন ন। যে এই গৃহযুদ্ধের শেষে প্রগতিপন্থীরা
শ্রীলঙ্কায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন, শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা নিজেদের বিজয়
কেতন ওড়াঁতে সফল হবেন |
আভ্যন্তরীণ নীতির ছায়া যেমন বৈদেশিক নীতিতে পড়ে, বৈদেশিক নীতির
ছায়াও আভ্যন্তরীণ নীতিতে পড়তে বাধ্য । শ্রীলঙ্কায় আমাদের সৈন্যরা গিজগিজ
করছে, আমাদের বেতার-দূরদর্শন সেখাপে ইতিমধ্যে প্রবিষ্ট, প্রশাসবরা পর্যন্ত
কিছু সংখ্যায় এদেশ থেকে হাঁজির হয়েছেন ওদেশে । গুণাগার দিতে হচ্ছে
দেশের সাধারণ মানুষকে, পরম মহৎ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করলেও সরকারের
শ্রেণীচরিজ্র তো পাল্টাবার নয়, সুতরাং শ্রীলঙ্কা অভিযানের খরচ তোলবার জন্য
বড়োলোকদের উপর করের বোঝা তো 'আর বাঁড়ানে। হবে না, পুরো টাকাটার
ব্যবস্থ৷ কর। হয়েছে যাবতীয় গরিব মানুষদের আরেক দফা পীড়ন ক'রে । এই
উৎপীড়িত মানুষগুলির নিশ্চয়ই প্রশ্ন করার অধিকার আছে, কীসের স্বার্থে আমাদের
এভাবে আরো জর্জরিত কর! হচ্ছে, শ্রীলঙ্কায় আমাদের কোন্ অভীষ্ট সিদ্ধ হচ্ছে,
১১৮
এঁ দ্বীপে আমরা শান্তি সংস্থাপত করছি না শত্রবৃদ্ধি ঘটাচ্ছি, কোনে! বিশেষ
পুরুষের ব্যক্তিগত অহংবোধ আর দেশের তথ জাতির স্বার্থ ছু'টোকে কি আমরা
এক ক'রে দেখছি না?
কাদের বীচাতে গিয়ে আমরা এখানে ধুকে-পুকে মরছি, খুব বেশিদিন তো৷
প্রশ্নটি এড়ীনে। আর সম্ভব নয় । মুক্তিবোঁধ ও পুনবিখেচনীর নাকি মড়ক লেগেছে
এদেশ-ওদেশ-সেদেশ জুড়ে । যদি তা-ই হয়, অভিজ্ঞতার আগুনে পুরোনে? প্রত্যয়-
গুলিকে কেন আরেক বার ঝল্্সে নেবো না আমরাও ? বতমান সমাজবাবস্থায়
আমাদের যে সব দিতে হবে তা তো আমরা জানি, কিন্তু মোহমুক্ত হবার
অধ্যবসায় থেকে কেন সরিয়ে আনবো নিজেদের ? আমর মারা পড়ছি, কিন্তু কেন
মারা পড়ছি তা জানার অধিকারটুকুও থাকবে না৷ আমাদের ?
১৯৯৯
শুধু প্রেম নয়, কিছু ঘণ! রেখো মনে
মৃত্যুর মাত্র তিন মাস আগে রবীন্দ্রনাথ মানুষের জয়যাত্রর অভিযণনকে বন্দনা!
ক'রে গান প্চন1 ক'রে গিয়েছিলেন, অনুষ্ঠানাদিতে সেই গান নিয়ম ক'রে গাওয়া
হয় এখন, 'এ মহামানব আসে্/দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে মত্যধূলির ঘাসে ঘাসে.../
জয় জয় রে মানব অভ্যুদয়, মন্ত্রি উঠিল মহাকাশে” । যদি বলি, নিছক অনুষ্ঠানের
ব্যাকরণচর্চ নয়, রবীন্দ্রনাথের সংজ্ঞ। অনুযায়ী যে-মানব অভ্যুদয়, তার সম্পূর্ণতম
রূপ আমর দেখতে পেলাম পশ্চিম বঙ্গের প্রতিটি গ্রামে গত রবিবার, আদে কি
বাড়িয়ে বলা হবে? গ্রামের লক্ষ-কোটি মানুষ, এই মান্ুষগুলির বড়ো অংশ
এখনে" অক্ষর পরিচয়ের বাইরে | আবহমাঁন কাঁল ধ'রে এই মানুষগুলিকে স্ুযোগ-
স্থবিধার বাইরে রাখা হয়েছে, কিন্তু এই মান্ষগ্ডুলি এখন নতুন একটি উপলব্ধির
স্তরে পৌছুবার সমীপবর্তী হচ্ছেন, এই দেশট। তীদের, দেশের সম্পদে তাদের জন্ম-
গত অধিকার, সেই অধিকারের স্থযোগ গ্রহণ করতে হবে, গোঁটা দেশের আপাতত
সামাজিক পরিস্থিতি তথ৷ সামগ্রিক শ্রেণীবিষ্াঁস, এমন যে এই মুহুর্তে কোনে] ছুরন্ত
ভোজবাঁজি সম্ভব হবে না, গরিবদের অবস্থা এক পলকে খোঁল-নল্্চে পালটাবে
ন], কিন্তু পঞ্চীয়েতী পরীক্ষা তাঁদের সামনে একটি স্থযোগ এনে দিয়েছে,
স্থযোগটিকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে হবে | এই স্থব্যবহারের মধ্য দিয়েই শ্রেণী
সংগঠন দৃঢতর হবে, সমাজচেতন] ব্যাপ্তি পাবে, সমাজবিপ্রবের স্বপ্ন আরো-একটু
বাস্তবের কাছাকাছি আসবে ।
পশ্চিম বঙ্গের নিভৃততম, দুর্গমতম গ্রামের মানুষ পর্যন্ত স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার
স্থযোগ গ্রহণ করবর সার্থকতা, শত প্রতিবন্ধকতা সত্বেও একটু-একটু ক'রে বুঝতে
শিখেছেন । বুঝতে শিখেছেন ব'লেই গত রবিবার তারা নিজেদের অভিপ্রায়কে
উজাড় করে ব্যক্ত করেছেন । গণতান্ত্রিক নির্বাচনের শদ1-মাট। প্রতিবিশ্ব নয়,
নিজেদের চেষ্টীয়, |নজেদের নির্ভরে, নিজেদের স্তরান্তরিত করবার প্রতিজ্ঞার প্রতি-
ফলন, য] প্রতিটি গ্রামে উৎসবের রূপ গ্রহণ করেছে । সরকারিভাবে ভোট দেওয়ার
সময় নির্ধারিত ছিল বিকেল তিনটে পর্যন্ত, কিন্তু লক্ষ-কোটি মানুষ মিছিল ক'রে,
মাদল বাঁজিয়ে, ঝাঁগ্ড কাধে নিয়ে ভোটের জায়গায় জড়ো হয়েছেন, কাতারে"
১২৩
কাতারে সারিবদ্ধ ঈলীড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা, তারা তো তাদের অধিকার প্রয়োগ
না ক'রে ফিরে যাঁবেন নী, বিকেল তিনটের আগে থেকেই তো জড়ো হয়েছেন
তারা, তারা ধের্য ধ'রে প্রতীক্ষমান, স্থতরাং কোনো-কোনে। জায়গায় হয়তো
মধ্যরাত্রি পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অব্যাহত থেকেছে ।
পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে উৎসারিত গণআলোড়ন এমনকি সাধারণ নিধাচন-
কালীন উৎসাঁহকে পর্যন্ত ছাপিয়ে গেছে । এটা কল্পনা নয়, ঘটন1 ৷ অথচ এখনো
কিছু-কিছু, প্রধানত নগরবাসী, টীকাকার এই ঘটনার তাৎপর্য বুঝে উঠতে অক্ষম |
গ্রামের মানুষরা অধিকারের স্বাদ পেয়েছেন, অধিকারকে নিজেদের অবস্থার মোড়
ফেরাতে কী ক'রে ব্যবহার করা যেতে পারে তা শিখতে শুরু করেছেন, পঞ্চায়েতী
ব্যবস্থা, বিগত দশ বছরে, সমগ্র পশ্চিম বঙ্গে আন্ত-একটি নতুন ফ্যোঙনা নিয়ে
উপস্থিত হয়েছে, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় স্নাত হয়েছেন তারা | তুলচুক যে হয়নি তা
তো! নয, এখানে-ওথানে কখনো-সখনে! এক মণ ঘৃধের মধ্যে আধ ফৌট! চোনার
মিশ্রণ ঘটেনি তা-ও তো নয়, অভিজ্ঞতার নিরিখে ভুলক্রটিবিচ্যুতিগুলি শুধরে
নেওয়ার অধ্যবসাম্ম অবিরাম চলবে, কিন্তু আগামী দিনেও কিছু-কিছু তুলচুক ঘটবে,
তা শোধরানোর চে্াও চলবে পাশাপাশি । তবে সব-মিলিয়ে যা ঘটেছে,
প্রচলিত কাঠামোর সংস্থানে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষে অন্যত্র কোথাও ত!
এর আগে ঘটেনি, প্রচলিত কাঠামোর সমস্ত অস্থবিধা-অপূর্ণতার বাঁধা মেনে নিয়েও
একটি মহাপ্রলয় সংগঠিত হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গের গ্রামে-গ্রামে, রবীন্দ্রনাথ-বণিত মর্ত্য-
ধুলির ঘাসে-ঘাসে সেই রোমাঞ্চের ছোওয়া লেগেছে, গত রবিবারের নির্বাচন যার
সাক্ষ্য বহন করেছে ।
কিন্তু নাগরিক টাকাকাররা আছেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বিপুল আসর
জাকিয়ে ধাকবেনও তারা । তাঁর যদি ্বভাবনান্তিক হতেন, অর্থাৎ নাস্তিকতা
তাঁদের অখণ্ড জীবনদর্শন হতো, তা হ'লেও হয়তো! তাদের সম্পকে শ্রদ্ধা পোষণ
কর! যেত। কিন্তু তা তে৷ নয়, এদের মধ্যে অধিকাংশই পেশাদার, মাইনে-করা
নাক্তিক। এর! দেখেও দেখেন না, শুনেও শোনেন না, বুঝেও বোঝেন না, কারণ
এই না-দেখ। না-শোন। ন1-বোঝার ভাণ করার জগ্যই তীদের টাকা দিয়ে পোষা
হয়। সাধারণ মানুষের জয়যাত্রার মহাঁন্ কাহিনী তাঁরা নিজেদের কাছেও স্বীকার
করবেন না, কাঁরখ তা হ'লে, তাদের আশঙ্কা, তাদের বৃত্তি চলে যাবে । তাই তারা
দিনের পর দিন, পরম যতুভরে, পশ্চিম বঙ্গের বিস্তীর্প গ্রামাঞ্চল ভুড়ে সন্ত্রাসের কল্প
কাহিনী লিখে যান, একই কাহিনী নানা বিভঙ্গে, কখনো বীররসসহ, কখনে।
প্র' কথা ৮ ১২১
করুণরসসহ ৷ তাঁদের লেখাটেথাগুলি গ্রামের মাহ্ুষেরা আরে পড়েন না, কিন্ত
শহরের মানুষের! পড়েন, শহরের মানুষদের মধ্যে অন্তত কেউ-কেউ যা পড়েন তা
হয়তো! খানিকট। বিশ্বাসও করেন, চুনের ঘরে দীড়িয়ে কেউ কি মিথ্যে কথা বলে,
ছাপার অক্ষরে যখন লিখেছে, নিশ্চয়ই খাঁটি কথাই লিখেছে ।
অন্ধ হ'লে কি প্রলয় বন্ধ থাকে । থাকে না, কিন্তু এই পেশাদার টাকাকারর।
তো] অন্ধও নন, তার। জ্ঞানপাপী, বুঝেও না বোঝার ভাণ করছেন । কিংবা য।
লিখছেন তা৷ তাদের শ্রেণীচেতণাঁর প্রকাশ । তাঁরা, এবং তাদের মালিকেরা, পশ্চিম
বঙ্গের গণঅভ্যুথানের সামগ্রিক চেহারা দেখে নিদারুণ ভয় পেয়েছেন। তার।
্রস্ত, তাদের মনে শ্রেণীষ্বার্থভির্তিক আতঙ্কের উদয় হয়েছে । এই ত্রাস কিছু
অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়৷ যুগ-যুগ ধ'রে ধারা শোঁধিত-বঞ্চিত-অত্যাচারিত হয়ে
এসেছেন, তাঁরা যখন মাথ! তুলে দ্ীড়ান, যেহেতু তারা সংখ্যায় অনেক বেশি,
তাঁদের সংগঠিত শক্তির সম্ভবপরত1 বহুদুরপ্রসাঁরী, চিরাচরিত শোষকশ্রেণীর প্রতি-
নিধিবর্গ একটু ভয় পাবেন বৈকি, অবশ্যই তাঁদের মনে ত্রাস ঘনিয়ে আসবে, কারণ
তাদের মৌরসী পারায় এবার তো টান পড়বার আশঙ্কা ।
অথচ তারা, ঠিক এই জায়গায়, প্রচণ্ড অসাধুতার আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের
ত্রাসের আসল কারণ চেপে যাচ্ছেন তীরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তারা পায়ের
তলায় ঠাই খুঁজে পাননি, কারণ গ্রামের সাধারণ মানুষ জোট বেঁধে নিজেদের
পছন্দের লোঁককে ভোট দিয়েছেন, খড়কুটোৌর মতো! ভেসে গেছেন মালিক-মহীজন-
জোতদার-জমিদারদের বাঁছাই-কপ প্রাথীর1 । পশ্চিম বঙ্গের প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি
মহকুমায়, প্রতিটি থানায়, প্রতিটি গ্রামে একই জিনিশ ঘটেছে, একদা ধার] প্রজা
ছিলেন, তাঁরা গণতাপ্ত্রিক নির্বাচনের মধ্যবতিতায় নিজেদের রাজাঁসনে বসিয়েছেন,
একদ1 ধারা রাজা ছিলেন, ব্যাকুল বাঁদলসাঝে তাদের দিন ফুরিয়েছে। এহ
একদা-রাজাদের সম্প্রদীয় তাই ত্রস্ত। কিন্ত তাঁদের ত্রাপের হেতু এট] নয় যে
জনগণ তাঁদের উপর চড়াঁও হয়েছেন, ভয় দেখিয়ে তাঁদের ভোট করতে দেননি,
সন্ত্রাস সৃছ্টি করেছেন ! ইতিহাস এগোচ্ছে, এগোচ্ছে ব'লেই তাঁরা ভয়গ্রস্ত, তবে
ত1 ব'লে তে! ব্রাসের সঙ্গে সন্ত্রীসের সমীকরণ কর! চলে মা।
আমাদের পেশাদীরর ঠিক তা-ই করছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের বিরাট
ভাৎপর্য তার! ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে চাইছেন, গত রবিবারের সুবিশাল গণ-
অভ্যুদয় তাঁদের বিজ্ঞাপিত বচারে কোঁনে। ঘটনাই নর । অস্ত ভুল করছেন ত্বারা,
নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুডুল মারছেন । কারণ পশ্চিম বঙ্গের গ্রামের-গঞ্জের
১২২
মানুষদের চূড়ান্ত অপমান করছেন তারা, এই যে লক্ষ-কোটি মানুষ মাদল বাজিয়ে
উৎসব করে স্বশৃঙ্খল সারিবদ্ধতায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দঈীড়িয়ে থেকে নিজেদের ইচ্ছাকে
ব্যক্ত করলেন ভোটের বাক্সের মধ্য দিয়ে, তারা ফতোয়। জারি ক'রে দিচ্ছেন, তা
মূল্যহীন, তা সন্ত্রাসের প্রতিফলন | একটি ভয়ংকর অসত্যকে সত্য ব'লে প্রতিষ্ঠা
করবার চেষ্টা করছেন শহুরে টাকাকাঁররা, নিজেরা ন। বোঝার ভাঁশ করছেন, কিছু-
কিছু নাঁগরিক মানুষকে ভুল সিদ্ধান্তে পৌছে দিচ্ছেন । তারা শহরে বসে কী
বলছেন, বিভিন্ন শ্ত্রে গ্রামের মানুষ তা জানতে পারছেন । শহুরে টীকাকাররা।
বিশ্বীস করুন না-করুন, গ্রামের অভাবগ্রস্ত দীনদরিদ্ত্র বিশ্তুহীন মানুষদেরও হৃদয়
আছে, অনুভূতি আছে, চিন্তা করবার ক্ষমতা আছে, তার! দুখ বু'জে সহা করতে
পারেন যেমন, রাগেও ফু'সে উঠতে পারেন তেমন । এই শহুরে টীকাকাররা
তা হ'লে বলছেন আমাদের ভোটের কোনে! দাম নেই, আমরা যে ভোট দিলাম
তা নাকি গ্রাস্থ নয়, তা গ্রামবাসীদের সন্মিলিত ইচ্ছার নাঁকি প্রতিফলন নয়, ৩।
নাকি সন্ত্রাসের প্রমাণ, গরিধগুরবোঁদের প্রতিনিধিরা ভোটে জিতলে সেটা সন্ত্রাস,
আর বড়োলোকেয়া কোনোৌক্রমে জিতলে তা নাকি গণতগ্্রের পরীকাষ্ঠা । এ ধরনের
অদ্ভুতকিস্তৃত টীকা যত বেশি ক'রে গ্রামের মানুষের কাছে পৌছুবে, তাদের
মানসিকতা তত বেশি তিক্ততা য় আঙ্ছন্ন হবে, ৩৩৬ বেশি তাঁধ। প্রতিজ্জায় ফু'সবেন।
জনৈক বাঙালি কবি, বেশ-কিছু বছর আগে, মন্তবা প্রয়োগ করতে বাধ্য
হয়েছিলেন : শুধু প্রেম নয়, কিছু ম্বণা রেখো মনে | তবে বাইরে «থকে কোনো
কবি উপদেশ বর্ষণ করছেন ব'লেই সামাজিক মানুষের মনে ঘ্বণার সঞ্চার হয় না,
ঘণীর একাট সামীজিক ভূমিকা আছে, সমাজে? অভিজ্ঞতা থেকেই ঘণার সঞ্চার |
যে-প্রলয্নকে শহুরে ভাষ্যকারর] আটকাতে চান, নিজেদের মিথ্যাচারিতর পাপণামে
তাঁকেই কিন্ত ত্বর।ঘ্িত এবং অপ্রতিরোধ্য করে তুলছেন চারা, গ্রামের মানুষ,
নিজস্ব আঁভিজ্ঞতায় ন্নাত হয়ে, ঘ্বণার মন্ত্রে আরো। বেশি কারে দীক্ষিত হবেন এখন,
অপবাদ-অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জগ্য ক্রুশ দৃঢ়তর সংঘবদ্ধ হবেন তারা,
নিজেরা আগড়াবেন, প্রতিবেশীর কীছে জপবেন : শুধু প্রেম নয়, কিছু ঘ্বণা রেখো
মনে ।
প্রসঙ্গক্রমে এ বিদৃষকদের কথাও এসে পড়ে, এ আজকে-যদি-থাকতো-মামা-
পিটিয়ে-তোমীয়-করতো-ঝাঁমার দলের কথা | পশ্চিম বঙ্গের গ্রামের-গঞ্জের মানুষের
কাছ থেকে তারা! অনেক দূরে স'রে গেছেন, গ্রামের-গঞ্জের সাধারণ মানুষ
অবহেলাভরে তাদের পাশে ফেলে দিয়েছেন, তীরা প্রত্যাধ্যাত। কিন্ত এই
১২৩
প্রত্যাখ্যানের সারাৎসার মেনে নিতে তাঁদের অহমিকায় বাঁধছে, তারা কথায়-
কথায় নতুন দিল্লি দেখাচ্ছেন, প্রধান মন্ত্রী-স্বরাষ্টর মন্ত্রী দেখাচ্ছেন, রাষ্্পতির শাসন
জারি করার হুমকি দিচ্ছেন, ত্রিপুরার কায়দায় সেনা নামানোর খোয়াব দেখছেন ।
বিভিন্ন বিস্তাসে এটাই তারা বলতে চাইছেন, গণতন্ত্রে তাদের আর আস্থা নেই,
পশ্চিম বঙ্গের গণতান্ত্রিক মানুষ কোনোদিন আর তাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে
তাকাবেন না, অতএব পশ্চিম বঙ্গে গণতন্ত্র শিকেয় তুলে রাখা হোক, রাষই্পতির
শাসন জারি হোক, পাকিস্তান-বাংলাদেশ-শ্রলঙ্কার মতে। সেনাবাহিনীর হাতে তুলে
দেওয়। হোঁক পশ্চিম বঙ্গের প্রশাসনকে, পশ্চিম বঙ্গের জনসাধারণের অপরাধের
পরিসীমা নেই, এ ভাড়ের দলের প্রাত তারা বার-বাঁর অনাস্থা জ্ঞাপন ক'রে
যাচ্ছেন, স্থতরাং তীদের শীস্তি পেতেই হবে, তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে
নেওয়া হবে, ফৌজ নামিয়ে টিট করা হবে তাদের |
শুধু প্রেম নয়, কিছু ঘ্বণা রেখো মনে । সমাজশুদ্ধির প্রয়োজনেই দ্বণী.
ইতিহাসের প্রয়োজনেই ঘ্বণা ।
১২৪
খাল কেটে কুমির
বর্তমান প্রধান মন্ত্রী, মাত্র বছর চারেক আগে, তখনে! তিনি প্রধান মন্ত্রী হননি,
কিন্তু দলের সাঁধাঁরণ সম্পাদক, পাঞ্জাব ভ্রমণে গিয়ে ভিন্দ্রীনওয়ীলেকে সাপুপুরুষ
ব'লে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন | কিন্তু কয়েকমীসের মধ্যেই সীধুকে ছুশমন ব'লে
ঘোষণা করা হলো, তারপর স্বণমন্দির অভিযান, পরবর্তী আরো অনেক রক্কাক্ত
কাহিনী, ইন্দিরা গান্ধির হত্যা, দিলিতে ও অন্যত্র হাঁজার-হাজার শিখ সম্প্রদায়-
ভুক্তদের বীভৎস সংহাপ্ণলীল।, কেন্দ্রীয় সরকারের হঠাৎ আকাপি দলের এক
ংশের সঙ্গে নিদারুণ সধ্যতা, লঙ্গোয়ালের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর, লঙ্গোয়ালের খুন-
হয়ে-যাঁওয়া, পাঞ্জাবে নিাচন, আকালি দলের যে-অংশের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা
হয়েছিল, তাদের রাজ্যে সরকার গঠন, অন্য শরিকের নেতাদের কারাগারে
নিক্ষেপ। কিন্ত সব-কিছু ছ'পিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের অপ্রতিহত পরাক্রম, পুলিশে-
ফৌজে পাঞ্জাব একাকার ক'রে দেওয়া হয়েছে, একটির-পর-একটি সন্ত্রাপবিরোধী
আইন চালু করা হয়েছে, ফৌজে-পুলিশে মিলে প্রতি-সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়েছে, রাজ্য
সরকার, হয়তো! তার জনসমর্থন ক্ষীয়মান বলেই, তেমন-কিছু সফলত। দেখাতে
সক্ষম হয়নি | ইতিমধ্যে কিছ্তু ব্বর্ণমন্দিরে উগ্রপন্থীরা ফের মোতায়েন হয়েছে,
অস্ত্রের পাহাড জমিয়েছে সেখানে, শ্রামে-গঞ্জে-সড়কে-শহরে হত্যালীল। চলেছে,
পুলিশ-ফৌজ চূড়ান্ত ব্যর্থ, অন্য-কোনে] রাজনৈতিক দলের টিকিটি পর্যন্ত দেখা যায়
নি, একমাত্র সংকল্পে-অটল অকুতোভয় বামপন্থী কম্মীরা মাটি কামড়ে প'ড়ে
থেকেছেন, সাম্প্রদ'য়িক সম্প্রীতি ও জাতীয় সংহতির প্রয়োজনীয়তা, লক্ষ্য, আদর্শ
সম্পর্কে চেতনা ব্যাপকতর করার কর্তব্য থেকে কেউ তাঁদের বিচলিত করতে
পারেনি, দ্রিনের পর দিন ধ'রে তাঁদের মধ্যে অনেকে শহীদের মৃত্যু বরণ করেছেন ।
দিল্লির সরকার সন্ত্রাসের জবাবে প্রতি-সন্ত্রীসের আয়োজন করেছেন, দায়িত্বশীল
রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের ধারকাছ দিয়েও যাঁন নি, ফৌজে-পুলিশে পাঞ্জাব
ছেয়ে ফেলেছেন, পাঞ্জাবরাজ্যবাসীদের ন্নতম নণগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছেন,
জরুরি অবস্থার যা-য? প্রকরণ, সরকারি উদ্যোগে তাদের সব-ক'টিই এখন পাঞ্জাবে
প্রয়োগ করা হচ্ছে, বিনা-বিচারে আটক থেকে শুক করে বিনা প্ররোচনায়
১২৫
সাধারণ গৃহস্থকে গুলি ক'রে মার] পর্যন্ত । কিন্তু অবস্থার হেরফের হয়নি, বরঞ্চ
অশান্তি আরো! ছড়িয়েছে, কারো মনেই যেন আর আশা নেই যে, অচির ভবিষ্যতে
কোনে। মীমাংসায় পৌছুনো যাঁবে। ইতিমধ্যে বাঁরনাল'র-নেতৃত্বে-গঠিত রাজ্য
মন্ত্রিসভার উপর নতুন দিল্লির আস্থা সম্পূর্ণ অবলুপ্ধ হয়েছে বলেই হোঁক, কিংবা
প্রধান মন্ত্রীর দলের কাছে তাঁদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে বলেই হোক, সেই
মস্ত্রিসভাকে বরখাস্ত কর! হয়েছে, রাজ্যপাল ও পুলিশ কর্তার মধ্যবতিতাঁয় কেন্দ্রীয়
সরকার এখন পাঞ্জাবের প্রশাসনে সাক্ষাৎ হাল ধ'রে আছেন। মন্ত্রিসভাকে
বরখাত্ত করণর পরেও কিন্তু এতদিন পর্যন্ত বিধানসভাকে বাতিল করা হয়নি, কারণ
প্রধান মন্ত্রীর দলভুক্তদের লোভের পরিদীমা নেই, কী জানি, যদি কিছু সদস্য
ভাঙিয়ে-টাঙিয়ে কয়েকটা দিন বাদে খোদ একটি কংগ্রেসী মন্ত্রিসভা গঠন কর
সম্ভব হয়! সীমাহীন লোভ, সেই সঙ্গে দুর্মদ আশা ।
তবে যে-কোনো স্বৈরাচারী দলের য1 চরিত্রলক্ষণ, নীতির বালাই নেই
যেহেতু, সমস্ত বিষয়েই মতামত-আচরণ হঠাৎ-হঠাৎ পাল্টে যাঁয়, নেতার মজি
পাল্টে যায়, নেতাঁর মজি পাল্টে গেলে সরকারের ক্রিয়াকর্মের রূপও তাই খোল-
নল্চে বদলায়। স্বৈরতান্ত্রিক দল এবং অস্থিরমতি দলনাঁয়ক, এই রসায়নের
ভুক্তভোগী হ'তে হয় গোটা দেশকে | প্রধান মন্ত্রীর চিত্তের ডাল-পাঁল৷ সহস।
উতল। হয়েছে, গত কয়েক দিন ধ'রে, প্রায় রৌজই পাঞ্জাব নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঘোঁষণ1 করা হচ্ছে । এক বছর-ছু"ধছর আগে যে-আকাঁলির1 ছিল কাছের মানুষ,
এখন তারা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত । সম্ত্রাসবাদীদের বাছা-বাছা চাইদের এতদিন
বিন! বিচারে জেলে পুরে রাখা হয়েছিল, সেই সঙ্গে বন্দী ক'রে রাখা হয়েছিল বনু
নিরীহ সাধারণ নাগরিককে, এদের মধ্যে এখন অনেককে কিস্তিতে-কিস্তিতে মুক্তি
দেওয়া হচ্ছে, খোদ ভিন্দ্রীনওয়ালের ভ্রাতুণ্পুত্র পর্যন্ত মুক্ত । মুক্তির সঙ্গে-দঙ্গেই
তাঁকে শিথ সম্প্রদায়ের সর্বাধিনায়ক হিশেবে বরণ ক'রে নেওয়। হয়েছে । অমৃতসরের
স্ব্মন্দিরে নতুন উৎসাহে উগ্রপস্থী দাবির অহৌরাতব্র বিঘোষণা চলছে । তারই
পাশাপাশি কিন্ত, কেন্দ্রীয় সরকার পাঞ্জাব বিধান সভা তড়িঘড়ি ভেঙে দিয়েছেন,
কারণ তা না হলে অত্যাসম্ন রাঁজ্যসভ1 নির্বাচনে পাঞ্জাব থেকে বাঁঘা-বাঁঘা
সন্ত্রাসবাঁদীরা প্রতিনিধি হয়ে সংসদে আসতেন. সেটা দিল্লির কর্তাব্যক্তিদের
অহমিকাঁয় বাধতে! ।
এই কর্তাব্যক্তির। পাঞ্জাব নিয়ে এখন কী করবেন তা বৌঁঝা দুক্ষর | যেটুকু
আগে থেকে বলা চলে, জাতির সর্বোত্তম স্বার্থ কীভাবে সাধিত হ'তে পারে তা
১২৬
নিয়ে তীর! বিন্দুমাত্র মাথা! ঘামাঁবেন না, নিজেদের দলগত ব1 গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্ত-
পুরণ তীদের বিচারে অগ্রাধিকার পাবে । পাঞ্জাবে আগুন জলছিল, আগুন জ'লে
চলেছে, স্ত্রী-পুরুষ-শিশু প্রতিদিন খুন হচ্ছেন, ফৌজ-পুলিশ দিশেহারা, সাধারশ
গৃহস্থ ভয়চকিত, নিছক প্রতি-অত্যাচার ক'রে বিপথগামীদের নিরম্ত করা সম্ভব নয়,
প্রশাসনের ধারা হাল ধ'রে আছেন তার! বুঝেও বুঝতে চাইছেন না, পাঞ্জাবে
আন্দোলনকারীদের কিছু-কিছু অতি-গ্যায্য রাজনৈতিক-অর্থ নৈতিক দাবি যদি প্রথম
অবস্থায় মেনে নেওয়া হতো তা হ'লে পরিস্থিতি এতটা ঘোরালে! কখনোই হয়ে
উঠতে পারতো। না, এখনে সে-সব দীবিদীওয়াগুলি অবিল্ধে মেনে নিলে হয়তে।
চরম সর্বনাঁশের হাত থেকে পাঞ্জাবকে বাঁচানে। যায়, বামপন্থী কমীরা সেই উদ্দেশ্রে
হতোছাম না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, আত্মোৎসর্গ করছেন, কিন্তু স্বৈর-
তান্ত্রিক সরকার কী ভাবছেন--কী মতলব আটছেন তা এই মুহূর্তে কিছুই বোঝা
সম্ভব হচ্ছে না। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে যেমন, যাঁদের সঙ্গে বছরের-পর-বছর ধ'রে
গভীর সখ্যতা ছিল তাদের ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কলম্বোস্থ সরকারের সঙ্গে হঠাৎ গত
বছর চুক্তি সই করা হলো, পাঞ্জাবেও হয়তো সেরকম যে-সন্ত্রীপবাদীদের ধিনা
বিচারে কারাঁরুদ্ধ ক'রে রাখা হয়েছিল, তাঁদের মহানায়ক ধানিয়ে দেওয়া হবে;
প্রধান মন্ত্রী একদা ভিন্দ্রীনওয়ালের ধন্দনাগান করেছিলেন, এখন, বলা যায় না,
হয়তো ভিন্দ্রানওয়ালের ভ্রাতুপ্পুত্রের পাদোদক মাথা পেতে গ্রহণ করবেন ।
স্বৈরাচারের মন্ত স্থবিধা, স্বতি বা বিবেকের বোঝা বহন করতে হয় না, কার্য-
কারণের যুক্তিন্ব্র খুঁজে না পেলেও শ্বেরবৃত্তি তো দমিত হবার নয় ।
তথাকথিত উগ্রপন্থীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো৷ গোপন বোঝাপড়া
ইতিমধ্যে হয়েছে কিনা বাইরে থেকে তা বোঝবার উপায় নেই। এমন হ'তে
পারে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে ভরাডুবির পর প্রধান মন্ত্রী ব্যক্তিগত স্বার্থে, নিজের ইজ্জত
ঈষৎ পুনকুদ্ধারেৰ প্রয়াসে পাঞ্জাবে কিছু সফলতা প্রদর্শন করতে উদৃত্রীব, এবং
সেই উদ্দেস্তে উগ্রপন্থীদের সঙ্গে হাত মেলাতেও তিনি পিছুপা হবেন না] এখন |
প্রধান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বার্থ বা দলীয় স্বার্থ জাতীয় স্বার্থের সমার্থক নয়, যারা
স্বভাববিচ্ছিম্বতাঁবাদী, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি না দিয়ে পাঞ্জাবে তাদের সঙ্গে কী
বোঝাপড়ায় প্রধান মন্ত্রী পৌছুতে পারেন তা ভেবে নির্ণয় কর! সত্যিই মুশকিল ।
অন্য পক্ষে এই প্রধান মন্ত্রীহই মিজোরামে একদ1-রাট্রপ্রোহীদের সঙ্গে মিতালি স্থাপন
করেছেন, তাঁর দল ব্রিপুরায় সন্ত্রাসবাঁদীদের সঙ্গে যদি-হয়-্জন-তেঁতুলপাতায়-
ন'জন-গোঁছের ভাব জমিয়ে সরকার গঠন করেছে, তীর স্বর মন্ত্রী স্পষ্ট ক'রে বলছেন
৯২৭
না দাজিলিডে গোলমীলনৃষ্টিকারীদের তিনি সংযত হ'তে বলছেন না, আরো! বেশি
গণ্ডগোল পাকাবার জন্য উৎসাহ দান করছেন । এট বলতে গেলে সম্ভবত কর্কশ
শোনায়, কিন্তু ধারা স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসী, দেশ রইলে! কি গেল তা তাঁদের কাছে
তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপার, রাজনৈতিক প্রতিদন্ত্বীদের কতটা ঘায়েল কর গেল সব
অবস্থাতেই তা-ই তাঁদের প্রধান চিন্তা | স্থতরাং এমনও হ'তে পারে, সমগ্র দেশে
যখন শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংহত রূপ পাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের পদ-
ত্যাগের দাবিতে দেশের প্রতিটি প্রান্তে কোটি-কোটি মানুষ সরব-সোচ্চাঁর, ভীষখ-
ভাবে কোণঠাস। প্রধান মন্ত্রী হয়তো! পাঞ্জাবে নতুন-একটি চমক প্রদর্শন করতে
দৃঢকল্প, সন্ত্রাসবাদীদের অনেক অন্যায় দাবিও যদি সেজন্য মেনে নেওয়1 দরকার হয়ে
পড়ে, তিনি হয়তো তাতেও রণাজ, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা পেল কি পেল না তা তাঁর
ধর্তব্যের মধ্যেই নয়।
কিন্ত, এরই পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সরকার আঁকারে-ইঙ্গিতে, এবং কিছুটা
প্রকাশ্ঠেও, অন্ত কথাও বলছেন, সংবিধান সংশোধনের কথা, সংবিধান সংশোধন
ক'রে জরুরি অবস্থাসংক্রান্ত নিধানগুলি নাকি পাল্টে না নিলেই নয়। পাঞ্জাবে
কেন্দ্রীয় সরকার গত কয়েক বছর যেভাবে প্রশাসন চালিয়েছেন তা জরুরি অবস্থারও
বাঁড়া, একে ধরেছেন-তাঁকে মেরেছেন, নিবর্তক আইনে বহু হাজার মানুষকে বিনা
বিচারে বন্দী ক'রে রেখেছেন, পুলিশে-ফৌজে গোটা রাজ্য ছয়লাপ, গোটা রাজ্যে
সাধারণ জীবনযাত্রা স্তব্ধ হয়ে এসেছে । ঘোষণা না ক'রেও যা-যা করেছেন জরুরি
অবস্থা ঘোষণা ক'রেও তাঁর বেশি তেমন-কিছু করতে পারবেন ব'লে আদে বিশ্বীস
হয় না। তা হ'লেও যদি জরুরি অবস্থা ঘোষণা কর! প্রশাসনের খ্ার্থে দরকার
ব'লে বিবেচিত হয়, সংবিধানে ইতিমধ্যেই তো সেই ব্যবস্থা আছে, সরকার
প্রয়োজন মনে হ'লে দেশের যে-কোনো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা! করতে
পারেন। সংবিধান সংশোধনের প্রসঙ্গ তা হ'লে কোথ। থেকে আসছে? এই প্রশ্থের
কোনে স্পষ্ট জবাব সরকার পক্ষের কাছ থেকে পাওয়৷ যাচ্ছে না। প্রথমে তীঁরা
বললেন, সংবিধানের বর্তমান নিধান অনুসারে এক বছরের বেশি কোনে রাজ্যে
রাষ্পতির শাসন বহাল রাখা সম্ভব নয়, কিন্তু পাঞ্জাবে নতুন নির্ধাচন অনুষ্ঠান কর!
ঠিক এই মুহুর্তে অবাস্তব প্রস্তাব, অতএব সংবিধানের সংস্ষিষ্ট ধারার পরিবর্তন চাই ।
পরমুহর্তে আবার অন্য কথা! বলছেন, বহিরাক্রমণের ঘটনা ছাড়া, দেশের অভ্যন্তরে
যদি সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখ দেয়, একমাত্র তা হ'লেই জরুরি অবস্থা ঘোষণা কর
সংবিধানের বর্তমান ধারা-অন্ুযাঁয়ী বৈধ, কিস্ত পাঞ্জাবে যা ঘটছে তা ঠিক সশঙ্ন
১২৮
বিদ্রোহ নয়, স্থতরাং সংবিধান না সংশোধন ক'রে উপায় নেই, অন্থা পাঞ্জাবে
জরুরী অবস্থা ঘোষণ। করা সম্ভব হবে না, এবং তা হ'লে সর্বনীশ, যেন সর্বনাশের
সত্যিই বাকি আছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কোনে! যুক্তিই বুদ্ধিগ্রাহা হয়। রাষ্ট্রপতির শাসনে পাঞ্জাবে
অবস্থার উন্নতি তো! হয়ইনি, বরঞ্চ বছগুণ অবনতি ঘটেছে, মস্ত্রিসভাকে সরিয়ে
দেওয়ার মতো! ঘোরতর অগণতান্ত্রিক কাজের কোনে। জবাঁবদিহিই 'এমনকি অংশতও
সন্তোষজনক নয়, নতুন ক'রে মন্ত্রিসভা গঠনের স্থুযোৌগ এতদিন ছিল, কারণ রাজ্য
বিধান সভা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল না, কিন্তু নতুন দিল্লির কর্তীরা ছ'দিন আগে
তড়িঘড়ি ক'রে বিধান সভাঁও ভেঙে দিলেন । সন্দেহ হয়, যেন ইচ্ছা করেই
দিলেন, এক সঙ্গে ছুই উদ্দেশ্ব সাধন করা হলো । প্রথমত, তাদের পছন্দের মানুষ
নন এমনতরোদের মন্ত্রিসভা গঠনের স্থযোগ থেকে বঞ্চিত করা হলো । সংবিধান
কেন সংশোধন ন! করলেই নয় ভার একটা অঙ্গুহাত তৈরি করা গেল দেই সঙ্গে ।
সরকারের বিকল্প যুক্তিও সমান উদ্ভট । সংবিধানে সশস্ত্র বিদ্রোহের কথা বলা
আছে, গোলম্বাল-ধিশৃঙ্খলার কথা নেই, পাঞ্জাবের গোলমাল-বিশৃঙ্খল1 সশস্ত্র
বিদ্রোহের পায়ে পৌছেছে তা এখনো বল] যাঁবে না, সুতরাং সংবিধালের বর্তমান
পাঠ অনুসরণ করলে পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না, এ সমস্তই তো৷
কথার উপর শুধুই কথা । যা একটু আগে ধল] হয়েছে, জরুর অবস্থা ঘোষণা
ক'রে পাঞ্জাবে সরকার শান্তি ফিবিয়ে আনার জন্য নতুন আর কী বিধিব্বস্থা নিতে
পারেন যা ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়নি তা স্পট ক'রে বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে
না কারণ বলার যতো কিছু নেই । এই সরকার তো৷ আইনের তোয়াক্কা করেন না,
ইচ্ছামতো যেখানে যণ খুশি তা ক'রেই যাচ্ছেন, আইন মানা হলো কি হলো! না,
সহবৎ মান| হলে! কি হলো না, তা নিয়ে তো কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি,
যেমন যায়নি ত্রিপুরার ক্ষেত্রে । তা ছাড়া, পাঞ্জাবের ঘটনাবলাঁকে সশস্ত্র বিদ্রোহ
বলতে অস্থবিধ। কোথায় ? ধারা সরকারের বিকদ্ধীচরণ করছেন, তারা অস্ত্র হাতে
নিয়েই তো করছেন ।
সন্দেহ না হয়েই পারে না, পাঞ্জাব উপলক্ষ্য মাত্র, শাসকদল স*বিধান
ংশোধন ক'রে জরুরী অবস্থার নিধানাদি পাকাঁপোক্ত করতে চান অন্য কারণে!
যদিও বলা হচ্ছে যে-সংশোধনটুকু করা হবে তা একমাত্র পাঞ্তাবের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য হবে, ভারতবর্ষের অস্তাগ্য অঞ্চলে না, কিস্ক এ ধরনের প্রতিশ্রতিন চ্চো
কোনো মূল্য নেই। স্বৈরতান্ত্রিক দলের পক্ষে সব-কিছুই সম্ভব | পাঞ্জাবের নাম
৯২৯
ক'রে জরুরি অবস্থার তৃণ শাণিততর ক'রে নেওয়া হলো, অথচ পাঁগ্রাবে ত৷ প্রয়োগ
করা না করা সমান, কারণ এ রাজ্যে, পুনরুচচারণ করছি, জরুরি অবস্থার ইতিমধ্যেই
অনেক বাঁড়া । শীসকদলের আসল লক্ষ্য হয়তো সার! দেশের জাগ্রত জনতার
সংঘবদ্ধ আন্দৌলন, যে-আন্দোলন থেকে প্রধান মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে,
লোকসভার পুননির্বাচনের দাবি করা হচ্ছে, সরকারের প্রচ্ছায়ায় থেকে ঘে-
ছুরনীতিগ্রন্তরা! উৎকোচ গ্রহণ ক'রে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে-দেশের টাঁকা
বিদেশে পাচার করছে, তাদের শান্তিবিধানের দাবিও উচ্চারিত হচ্ছে সেই সঙ্গে,
সারা দেশে ধর্মঘট, সারা দেশে আন্দোলন, য1-কিন! শাসকদল ব্যাখ্যা দেবেন
আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা । তারপর হঠাৎ এক দিন রাতের অন্ধকারে, শ্রীমতী ইন্দিরা
গাঁ্ধির স্বৃতিলাপ্ছিত পথনির্দেশ অনুসরণ ক'রে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যে-সংশোধনী
পাঞ্জাবের সীমিত ক্ষেত্রে প্রযোৌজ, তা দেশের অন্য সমগ্র অঞ্চলের ক্ষেত্রেও
প্রয়োগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন, কারণ দেশের সর্বত্রই তো বিশৃঙ্খল।, এবং
সংবিধানের চতুর্দশ সংখ্যক ধারা অন্ুযাঁয়ী আইনের চোখে সব রাঁজ্যের মানুষই
সমান, আভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার জন্য পাঞ্জাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা কর! গেলে
অন্ত্রও তা ঘোষণ। নাঁকরার কোনে! যৌক্তিকতা নেই ।
মানুষ তো ঠেকে শেখে, দেখে শেখে । শাঁসকদলের বিড়ীলতপস্বী ভাবে
মজলে পরে নিজেদেরই ছুয়ো দেবো! আমরা । পাঞ্জাবে সন্ত্রীপবাদীদের সঙ্গে
মিতাঁলি করছেন ধারা, তাঁদের এ রাঁজ্যের জন্য জরুরি অবস্থা প্রয়োগের কোনে
প্রয়োজন নেই আর । তদের দৃষ্টি অন্থাত্র, গোটা ভারতবর্ষের জনসাধারণকে কী
ক'রে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা যায়, সেই দিকে । গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন প্রতিটি রাজ-
নৈতিক গোষ্ঠীর কাছে তাই সনির্বদ্ধ অনুরোধ, আগে চিন্তা ক'রে পরে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করুন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর চিন্তা ক'রে লাভ নেই, শাঁদকদলের ফাদে প!
দেবেন না, খাল কেটে কুমির ডাকবেন না ।
১৩০
সংকট, টোটকা, বৃন্দ করাতের হাতে লাঠির বাড়ি
যারা জেগে থেকে ঘুমোয়, তাদের জাগানো যাঁয় না । আর যারা জেনে-শুনে
বুজরুকি করে, সেই বুজরুকি চোখে আল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও তাদের ভ্রুক্ষেপ
হয়না । ভার মিথাঁর পাহাড় রচন। কারে চলে । তাদের হাতে প্রচারযন্ত্র,
তাঁদের হাতে সমস্ত প্রশীসনিক ক্ষমতা, পয়সাঁকড়ি, ফৌজ-বরকন্দাজ, তাঁরা ধ'রে
নেয় কার ঘাড়ে ক'টা! মাথা তাদের বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হবে । একটু-
আবটু হয়তো বাড়িতে ব'পে গালমন্দ পাড়বে লোৌকজনেরা, কিন্তু ক্ষমতা থেকে
তো! তাদের খসাঁতে পারবে না । অতএব বুজরুকি অব্যাহত রাখতে বাঁধা কোথায় ।
_ ঢাঁক-ঢোঁল বাঁজিয়ে জাতীয় উন্নয়ন পর্যদের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল গত
সপ্তাহে । প্রধান মন্ত্রী তার মন্ত্রিপরিষদ পরিবৃত হয়ে বসলেন, মৃখ্য মন্ত্রীদের নান!
অমৃতধচন শোনালেন, এবং সেই সঙ্গে সাধারণ দেশবাসীকেও শোঁনণীলেন | দেশের
মানুষ সরল বোকা সৌকা, ধ'রে ই নেওয়া হয়েছে যা-ই বোঁঝাঁনে। যায় তা-ই তার!
বুঝবে । গত চল্লিশ বছরের হিশেখ আমরা জানি, দেশে খাদাশশ্বের সামগ্রিক
উৎপাদন যে বাঁড়েনি তা নয়, বেড়েছে, কিন্তু অতান্ত টিমেতালে, শতকরা ২৫
বাৎসরিক হারে, য) জনসংখ্য। বুদ্ধির হারের সাঁমান্য-একটু বেশি । অবশ্থ শশ্যোৎ-
পাঁদন যেহেতু এখনো আমাদের দেশে অনেকটাই বৃষ্টির পরিমাণের উপর নির্ভরশীল,
কোনো-কোনো বছর ফপলবৃদ্ধির হার এই গড় হার ছাপিয়ে গেছে, অগ্ পক্ষে
খরার বছরগুলিতে উৎপাদন বাড়েইনি, বরং অনেকটাই ক'মে এসেছে, যেমন এ-
বছর ঘটেছে । তা হ'লেও, কেন্দ্রীয় সরকারের নান! ঢক্কানিনাদ সবেও, যোজন!
কমিশনের ছয়-সাতটি পাঁচসালা পরিকল্পনা সবেও, খাছ্শশ্যের ফলন এই চার দশক
ধারে বাৎসরিক ২*৫ শতাংশ গড় হার অতিক্রম করতে পারেনি । অথচ গত
সপ্তাহে প্রধান মন্ত্রী সবিক্রমে ঘোষণা করলেন, আর ভাবনার কিছু নেই, তাপা
নতুন ছক কেটে ফেলেছেন, অতি স্থচারু পরিকল্পন1 প্রস্তত, এ-বছর খাছাশশ্যের
উৎপাদন মাত্র তেরে! কোটি টন তাতে কী, আগামী বছর তা৷ বাড়িয়ে সতেরো
কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টনে তুলে দেবেন, অর্থাৎ খাছশস্যের ফলন বাড়বে শতকরা ৩৫
ভাগ। তাদের জাছ্কাঁঠির ছোয়ায় মীত্র এক বছরে ।
১৩১
এট? কাগুজ্ঞানের প্রশ্ন । গত চল্লিশ বছরে খাছ্শশ্যের উৎপাদনের পরিমীপ
আট কোটি টন বেড়েছে; ওর]| বলেছেন, এট] আগামী এক বছরেই আরো সাড়ে
চারকোটি টন বাড়িয়ে দেবেন । প্রধান মন্ত্রী এই পাটিগণিতটি বুঝেছেন কিন। বোঝা
যাচ্ছে না, হয়তো তাঁকে বলতে বল হয়েছে, তিনি ব'লে দিয়েছেন । কিংবা হয়াতো
তিনি অতট! নিরেট নন, জ্ভানপাপী , অদূর ভবিষ্যতে হয়তো সাধারণ নির্বাচন
ডাকতে হ'তে পারে, প্রজাকুলকে তাই আশার কথ শোনাতে হয়, রুৃতকার্যতার
কথা শোনাতে হয়, সরকার কত কর্মদক্ষ ইনিয়ে-বিনিয়ে সেই বাণী প্রচার করতে হয় ।
দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্যের জালায় ধু'কছে, আধপেটা খাচ্ছে
অথবা অভুক্ত থাঁকছে, এ-বছব ভয়ীবহ খাদ্াঁভাব, মাফকিন দেশের কাছে ফের হাত
পাতা শুক হয়েছে, কিন্তু মুখেনং মারিতং জগৎ, প্রধান মন্ত্রী স-পারিষদ চাষাবাদ
করতে নেমে সাড়ে চার কোটি টন অতিরিক্ত খাগ্যশশ্যের ফলন ফলিয়ে দেবেন ।
এই ভোজবাজি কী ক'রে সম্ভব হবে? কেন্দ্রীয় সরকার এমন কী নতুন ব্যবস্থা
নিয়েছেন যার ফলে শল্সোৎপাঁদন এমন চমত্কার বাড়বে? সারা দেশ জুড়ে রাতা-
রাতি ভূমিসংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছেন ? রুষিব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিয়ে লক্ষ-লক্ষ
গ্রাম পঞ্চায়েতের তত্বাবধানে বাঁডতি উৎপাদনের নিখুঁত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন ?
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মতো, ভারতবর্ষের অন্য সর্বত্র সেচব্যবস্থা ঢেলে
সাজাচ্ছেন ? অতীতের বছরগুলির তুলনায় আরে! অনেক বেশি টাকা সেচ-কৃষি-
গ্রামোন্নয়ন-বন্তা প্রতিরোধের জন্য ব্যয় করছেন? এর কোনো-কিছুই নয়।
কেন্দের কর্তাব্যক্তিরা কদাঁচ ভুলেও ভূমিসংস্কারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন না, এখনো
করেননি | পূর্ব বাঁ দক্ষিণ-ভারতে সেচ সপ্প্রপারণের জন্য উল্লেখযোগ্য নতুন-কোঁনো!
বিনিয়োগের প্রস্তাব নেই | এ-বছর বন্যাঁনিয়ন্ত্রণ, সেচব্যবস্থা, গ্রামোন্নয়ন ও কৃষি
খাতে সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় বাঁজেটে বরাদ্দ ছিল ৩,*৭৫ কোটি টাকা । সেই বরাদ্
প্রকৃতপক্ষে একটু ক'মে গিয়ে আগামী বছবে ঈীড়াচ্জে ৩.০৫৭ কোটি টীকায়।
অথচ সরকাঁর বলছেন সাঁড়ে চার কোটি টন খাছ্যশস্তের ফসল বাঁড়িয়ে দেবেন ।
বুকের ছাঁতির জোরেই যেন জাছু ঘটিয়ে দেবেন ।
কেন্দের কারা জেনে-শুনে দেশের মানুষদের সঙ্গে তঞ্চকতা করছেন। যখন
এক খছর বাঁদে ফসলের পরিমাণের হিশেব কষা হবে, তখন তারা আরেক দফা!
প্রকৃতির দোহাই দেবেন, তাঁদের কোনে! কম্থুর নেই, তীর তে! ফসল বাডাতেই
চেয়েছিলেন, কুপণ বিধাঁতাপুরুষ বাঁদ সাধলেন । মানুষ যে তাদের কথা ঠিক
বিশ্বাস করবে ন। তা-ও ত্রাঁরা জানেন, কিন্তু তীর! ভ্রক্ষেপহীন |
৯৩২
এই ভ্রক্ষেপহীনতা আসলে দেশবাঁসীদের প্রতি অপার শ্রদ্ধাহীনতার নিদর্শন
মাত্র । কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবার সময় অর্থমন্ত্রী অশ্নানবদনে হিশেব দিলেন,
কই, তেমন-কিছু তো মূল্যবৃদ্ধি ঘটেনি, গত বছরে মাত্র ৯*৮ শতাংশ । অথচ তিনি
যে-হিশেবটা দিলেন ত৷ দশ মাসে দাম বাঁড়ার হিশে, বাৎসরিক গড় কষলে
যা প্রায় ১২ শতাংশে ধঈড়ায় । এবং এই হিশেবও, পাইকারি বাজারে মৃলাবুদ্ধর |
মধ্যবিস্ত-নিক্নমধ্যবিত্ত গৃহস্থ কিংবা! কারখানার শ্রমিক অথব1! গ্রামের কষক যে-
যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিশপত্র কিনতে বাধ্য হন, এবং যে-দামে কিনতে বাধ্য হন,
সেই হিশেব আলাদ। ক'রে কষলে দেখা যাবে গত এক বছরে যূলাবৃদ্ধির হার শত-
করা কুড়ি ভাগ ছাড়িয়ে গেছে । কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নিজেও তা! জানেন, কিন্তু তাদের
কাছে এই সমস্ত-কিছুই খেলাবিশেষ, সাধারণ মানুষকে কত খভিম্ন কায়দায়
ঠকানে। যায় তাঁর নেশায় তার] মেতে আছেন ।
- তীদের বাজেটে বিরাট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে তার
আট-দশ হাজার কোটি টাকার নোট ছাপিয়ে ঘাটতি মেটাচ্ছেন, এই বিশাল
পরিমাণ নোট বাজারে ছড়িয়ে পড়ার ফলে দাম ভয়ংকর না বেড়ে উপায় নেই।
নোট ছাপানো হ'লে জিনিশপত্রের দীম চড়বেই, অথচ নে!ট না ছাঁপালে বড়ো-
লোকদের উপর ট্যাক্সো চাপাতে হয়। কিন্তু শ্রেণীম্বার্থ, বডোলোঁকদের উপর ট্যাল্সো
চাঁপানে। কেন্দ্রীয় সরকরের ধর্মীয় অন্থশাসনে বাধবে, অঙএব নোট ছাপাতেই
হবে, সবার উপরে নোট-ছাপানে। ভালে!, তার উপরে নেই । বুজরুকি, পৃথিবী সুদ্ধ
লোক জানে নোট ছাঁপালে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, কিন্তু, দিলি কর্তাব্যক্তিরা বলবেন,
ভারতবর্ষ ব্যতিক্রম, নৌট ছাঁপালে ভারতবর্ষে মৃল্যবুদ্ধি ঘটে ন1, কারণ তার1 যে
এখাঁনে শাঁসনের দায়িত্বে আছেন | যা ঘটে ত1 সত্য নয়, সবার য1 বলেন, তা-ই
সত্য ; তার! বলেন, জল উঁচু, অতএব জল উচু; তাঁরা বলেন, জল নিচু, অতএব
জল নিচু | তার। যেহেতু বলছেন, আমাদের মেনে নিতে হবে, দেশে জিনিশপত্রের
দাম আদৌ বাড়ছে না, এই যে মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমাদের নাভিশ্বাস উঠছে তা
নিছক বিভ্রম |
অর্থাৎ স্বৈরতস্ত্রের লক্ষণণ্ডুলি একটু-একটু ক'রে ফের স্পষ্ট হচ্ছে । ১৯৭৪
সালের রেল ধর্মঘটের সময় কৌ তৃহলী শ্রোতার! আকাঁশবনী ভবনের সামনে জড়ো
হতেন দেখতে আকাশবানী, স্রেফ কল্পনাশক্তির উপর নির্ভর ক'রে, কেমন ট্রেন
চালাচ্ছে । সে-সমস্ত দিন মনে হয় পুনরাগত, এবং আরে! অনেক বেশি বীভৎস,
রূপ নিয়ে। এখন আর ঢাকাঢুকির ব্যাপার নেই, দুরদর্শন-আকাশবানী ছু'টি
১৩৩
সংস্থাকেই প্রত্যক্ষ শাসকদলের প্রচারে বেপরোয়া ব্যবহার করা হবে, যেমন
কর। হয়েছে ভারত বন্ধ, বানচালের প্রয়াসে, এবং গলা ফুলিয়ে প্রচার হবে দেশের
স্বার্থে এট! প্রয়োজন, কারণ যাঁরা বন্ধ, ডেকেছে তারা তো৷ রাষ্ট্রপ্রোহী, দেশদ্রোহী ।
বঙ্ষিমচন্দ্রের ভাষায় বলা চলে, ছায়। পূর্বগাঁমিনী । পাঞ্জাবের ছুতো৷ ক'রে যে-
সংবিধান সংশোধনী সংসদে পড়ি-কি-মরি ক'রে মঙ্তুর করিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তার
ফলে এখন দক্ষিণ দুয়ার উমুক্ততর হবে । সারা দেশে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা
হবে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা! খর্ব হবে | চাই কি, ইন্দিরা গান্ধি যেমন করে-
ছিলেন, নির্বাচন স্থগিত রেখে সংসদের মেয়াদ অনিদিষ্টকালের জন্য হয়তো-বা
বাড়িয়ে দেওয়া হবে । লিখিত-পড়িত ভাবে জরুরি অবস্থা জারি কর। হবে এক-
মাত্র পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে, কিন্তু সারা দেশ জুড়ে অনাচারের বন্যা নামবে ।
আমরা আশঙ্কার খতুতে আঁবাঁর উত্তীর্ণ । শাসকদলের মাঝারি নেতার৷
নিজেরাই পোষ-না-মানা রাজ্য সরকারগুলিকে উৎখাত করার জন্য সংবিধানের
৩৫৬ ধার! প্রয়োগের কথা! উচ্চারণ করছেন, ত্রিপুরার কায়দায় অন্যত্রও ফৌজ
নামাবার স্বপ্নে লোলুপ হচ্ছেন । তাদের দল যে রক্ধে-রন্ধে স্বৈরতান্ত্রিক, তাঁর
প্রমাণ দিনের পর দিন হাঁওয়াঁতে ছিটিয়ে-ছড়িয়ে দিচ্ছেন | সংকট যত বাড়বে এই
প্রবণতাও তত বাড়বে । কারণ শীসকদল গভীর আঁবর্তের মধ্যে ক্রমশ আরে
বেশি ক'রে ডুবছেন । লঙ্বা-চওড়া যতই বক্তৃতা দেওয়া হোক, কষিউংপাঁদন গত
পাচ বছর ধ'রে এক জায়গায় দীঁড়িয়ে, আমূল ভূমিসংস্কীর ছাঁড়। ফপল বাড়ানো
আর সম্ভব নয়, কিন্তু সংগোৌপনেও এই কথা কনুলতি করতে রাজি নন কর্তা ব্যক্তিরা,
তাঁই শেষ পর্যন্ত টেণটকার অবলম্বন নিতে হয় তাদের । কাঠামোগত পরিবর্তন ন!
ঘটলে শিল্পজাঁত দ্রব্যের চাহিদা দেশে ধাড়তে পারবে না। এখানেও টোটকার
আশ্রয়: ব্যাপক আভ্যন্তরীণ বাজারে কাজ কী, উপরতলার বিস্তবাঁনর1 আছেন, তার!
কেনাকাটা করবেন, আর বিদেশে দালাও জিনিশ রপ্তানি হবে, তা হ'লে ভারতবর্ষে
শিল্পবিপ্রব আর ঠেকায় কে। অথচ কৃতকর্মের স্ববিরোধিতায় ধরা পড়ে যেতে
হয়, প্রতি বছর দশ হাজার কোটি টাকা পরিমাণ নোট ছাপালে মুদ্রাম্ফীতি হয়,
মূল্যবৃদ্ধি ঘটে, শিল্পোৎপাদনের গড় ব্যয় বৃদ্ধি পায়, বিদেশে রপ্তানি ছুরূহ হয়ে পড়ে,
টাকার মূল্যমান কমিয়ে এনেও কোনো লাভ হয় না, কারণ নোট-ছাপানোতে তো
আর বিরতি নেই । তা ছাঁড়া, দেশের বড়ৌলোকরা আর কত শৌখিন জামাকাপড়
ও রঙিন টেলিভিশন কিনবে, চাহিদা তাই কিছুতেই উর্ধ্গতি হ'তে চায় না,
চাহিদা না বাড়লে কোন্ শিল্পপতি উৎপাদন বাড়াবার কথা ভাববেন? এই
১৩৪
অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারকে পৌঁজামিলের শরণাপন্ন হ'তে হয়, আমলাদের দিয়ে
বলাতে হয় শিল্পোৎপাদনের হিশেবের পদ্ধতিতে ভুল, আমরা নতুন পদ্ধতি প্রয্নোগ
ক'রে পুরোনো হিশেবগুলি পাল্টে দিচ্ছি, এবার থেকে প্রমাণ কর! যাবে কলে-
কারখানায় উৎপাদনের হার কমছে না বাড়ছে ।
সরকার হিশেবের কারচুপিতে আত্মপ্রসাদ খোঁজেন, কিন্তু সংকট তো তাতে
অন্তহিত হবার নয়, দেশের অধিকাংশ মানুষ অভূক্ত-অর্ধভূক্ত থাকবে, গ্রামে-শহরে
কোটি-কোটি বেকার, মূল্যবৃদ্ধির প্রকোপে ক্রমবর্ধমান সর্বব্যাপী অসন্তোষ ।
ইতিহাসের নিয়মগ্ডলি এই অবস্থায় প্রকট হ'তে শুরু করে। শাসকদলের ফৌজ-
পুলিশভক্তি হঠাৎ বেড়ে যাঁয়, বিবিধ দমনমূলক আইন চালু হয়, ভিন্দ্রানওয়ালে-
ঘিসিও গোছের ভূ'ইফৌড় অবতারদের সরকারের তরফ থেকে মদত দেওয়। শুরু
এই আশায় যে, হয়, যদি এদের দিয়ে তিতিবিরক্ত জনগণের সংঘবদ্ধ প্রতিজ্ঞাকে
একটু এলোমেলো! ক'রে দেওয়া সম্ভব হয়; পাশাপাশি একই কারণে সমাঁজ-
বিরোধীদের পরাক্রম বাড়ে, তাদের মধ্যে অনেককেই সরকারের তরফ থেকে
মাসোহারা-দানের ব্যবস্থা করা হয়, এই আশায় যদি সেফ মারপিট ক'রে গণ-
আন্দোলনকে স্তব্ধ ক'রে দেওয়া যায় ।
যা-যা ঘটছে, আমাদের ঘিরে ঘটছে, ইতিহাসের নির্দেশিকা মেনেই ঘটছে ।
ভারত বন্ধের দিন রাজধানীতে ভাও্ড মেরে মহিলা কমরেডের হাত গুড়িয়ে
দিয়েছে পুলিশ, কিন্তু এমনটা না হ'লেই অবাঁক হ'তে হতো 1 একটি-ছু'টি রাজ্য
পরকার জনগণের দখলে, কিন্তু সমাঁজবিস্তাঁস তো তাতে অন্থরকম হয়ে খায়নি
সংকট যত গভীরতর হবে, শাসকশ্রেণীর আচারে-আচরণে বিচারে-ব্যবহারে তত
বেশি কদর্যতা প্রকটতর হবে । এরই মধ্যে যারা খাঁলিশে মাথা রেখে ঘুমোতে
চান, সেই সব শহ্যাবিলাসীর। হেনস্থা এড়াতে পারবেন না!
১৩৫
তাতে কী তাতে কী কাহিনী
তাতে কী, তাতে কী। যখন যেমন তখন তেমন | নীতিহীনতাই নীতি । কারণ
তা ন1 হ'লে দলীয় স্বার্থ-গোঠীস্বার্থ-শেণীন্বা ঘঁরক্ষ। করা যায় না।
মেঘালয়ে মাত্র ছ'মাস আগেকার ঘটনাবলী । নিবাচনে ইন্দিরা কংগ্রেস দল
কুপোকাঁৎ। বিধান সভার সাস্যসংখ্যা একুশে ষাট, কংগ্রেস দল তাঁর মধ্যে মাত্র
একুশটি আসনে জয়ী হ'তে পেরেছে। অনু দিকে হিল পিপল্ফ্ ডিম্যাণ্ড ইমপ্রিমেপ্টেশন
কাউন্সিল নামক দলটি পেয়েছে উনিশটা আসন, এই দলের সহযোগী হিল পিপল্স্
ইউনিয়ন পাঁচটি, এবং তাঁদের সঙ্গে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থ হিশেবে নির্বাচিত আরো
আট-ন'জন | এঁরা সবাই মিলে একটি সম্মিলিত মোর্চা গঠন করলেন, বিধান
সভায় সামগ্রিক সদশ্যসংখ্য। ষাট, মোর্চার সদশ্যসংখ্যা তোত্রশ, রাঁজ্যপালের কাছে
মোর্চার নেত। গিয়ে দাবি জানালেন মেঘালয়ে তাদের এবার মন্ত্রিসভ। গঠন করতে
দেওয়া হোক, কারণ বিধান সভায় তাঁদের সুস্পষ্ট সংখ্যাধিক্য আছে। কিন্ত রাজ্যপাল
বহুদিনের-পোড়-খাওয়। কংগ্রেসী, ইন্দিরা! গান্ষির জমানায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন,
তিনি হিল পিপল্স্ ডিম্যাও ইমপ্রিমেণ্টেশন কাউন্সিলের নেতৃত্বে গঠিত মোর্চার
কে ফিরেও তাকালেন না । তড়িঘড়ি রাতের অন্ধকারে তিনি ইন্দির কংগ্রেস
দলের নেতাকে ডেকে তকে মুখ্যমন্ত্রীরপে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে নিয়ে গদিতে
বসিয়ে দিলেন। বিধান সভায় তো ইন্দির! কংগ্রেস দলের সংখ্যাগরিষ্ঠত। নেই,
কিন্তু তাতে কী, তাঁতে কী। কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রীকে আট-দশ-বারে। দিন সময় দেওয়।
হলে! । তিনি হিল পিপল্স্ ডিম্যা্ড ইমপ্রিমেণ্টেশন কমিটি থেকে মন্ত্রিত্বের লোভ
দেখিয়ে কয়েকজনকে ভাডিয়ে নিয়ে এলেন, ভাঙিয়ে নিয়ে এলেন আরো
গুটিকয় স্বতন্ত্র হিশেবে নির্বাচিত সদশ্যকে, মেঘালয়ের মানুষের নিবাচনে ইন্দিরা
কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করলে কী হবে, শেষ পর্যন্ত রাজ্যপাঁলের ভামুমতীর
খেলেরই জয়জয়কার, ইন্দির1 কংগ্রেস দল ফের মেঘালয়ের প্রশাসনে সমাসীন।
একটা মুশকিল যদিও ছিল। ১৯৮৫ সাঁলে যে-দলত্যাগবিরোধী আইন পাঁশ
কর। হয়েছিল, তাঁতে নির্দেশ আছে সংসদে ব1 বিধান সভায় কৌনে। দলের মোট
সদশ্য সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের কম সদশ্য যদি কখনো দলত্যাগ করেন, তাঁদের
১৩৬
দল-পাল্টাঁনে। গ্রাহ হবে না, এবং তাদের সদস্যপদ খারিজ হত্রে যাবে । হিল
পিপল্স্ ডিম্যাণ্ড ইমপ্রিমেণ্টেশন কাউন্সিলের বিধানসভাঁয় মোট সদম্যসংখ্য! ছিল
উনিশ, ধারা দলত্যাগ ক'রে ইন্দিরা কংগ্রেসের সঙ্গে ভিডলেন ঠাদের সংখ্য1 ছয়,
যেহেতু গণিতের হিশেবে ছয় উনিশের এক-তৃতীয়াংশের কম, এই ছ'জনের দলত্যাগ
তো আইনত গ্রাহা নয়, তাদের সদস্যপদ তো খারিজ হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু
তাতে কী, তাতে কী। মহ্ামহৌদয় রাজ্যপাল, ইন্দিরা কংগ্রেসী, নীতিনিয়ম
মানলে কি এঁ দলের সেবাদীস হওয় যায়, আইন যা বলে শুক, সবার উপরে
দলীয় স্বার্থ তাঁর উপরে নেই, স্থতরাং এ ছ'জনের দলত্যাগ অতীব বৈধ ব'লে
রাজ্যপাল ধিবেচন। করলেন, আমাদের কথাটি আপাতত ফুরোলো, মেঘালয়ের
মানুষদের ইন্দিরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার নটে গাছটি আপাতত
নুড়োলো।
এবার মেঘালয় পেরিয়ে না'গাল্যাগ্ড, কাছাকাছি রাজ্য ৷ নাগাল্যা গে, গত খছর
নভেম্বর মাসের নির্বাচনের পর, ইন্দিরা কংগ্রেস মন্ত্রিসভা, অধিষিত, বিধান সভার
মোট সদশ্যসংখ্যা এখানেও ষাট, যার মধ্যে কংগ্রেস দলে আছেন চৌতিরিশ জন।
হঠাৎ এ মাসের গোড়ায় চঞ্চলতা। দেখা দিল, কংগ্রেস দল থেকে তেরোজন সদস্য
পদত্যাগ ক'রে বিরোধী পক্ষে যোগ দিলেন, প্রধান বিগোধী দল নাগাল্যাণ্ড
স্াশানাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে তীর] সম্মিলিত মৌর্চা গঠন করলেন, বিধান-
সভায় এই মোর্চার অবিসংবাদী সংখ্যাধিক্য, কংগ্রেস দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা
ধূল্যবলুষ্ঠিত। যে-তেরোজন কংগ্রেস দল থেকে বেরিয়ে এলেন, খিধান সভার
অধ্যক্ষ তাদের দলত্যাগ বৈধ ব'লে ঘোষণা করলেন, ন। ক'রে তার উপায় ছিল
না, কারণ অঙ্গের হিশেবে কংগ্রেস দলের সদশ্যাসংখ্য। চৌতিরিশ, ধারা দলত্যাগ
করলেন তাদের সংখ্যা তেরে! তেরো চৌতিরিশের এক-ততীয়াংশের বেশি ।
কংগ্রেস-বিরোধী মোর্চা নাঁগাল্যাণ্ডের রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানালেন,
ংগ্রেস মন্ত্রিসভা বিধান সভায় যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তাকে বরখাস্ত
করা হোক, এবং অবিলম্বে সম্মিলিত বিরোধী মোর্চাকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের
জন্য আহ্বান জানানে। হোক ।
এবার কিন্তু অন্য ভাঁনুমতীর খেল । নাগাল্যাণ্ড বিধান সভায় কংগ্রেস দলের
সংখ্যাগরিষ্ঠত। নেই, তাঁতে কী তাতে কী। কংগ্রেস দল ছেড়ে এসেছেন যে-সব
বিধানসভা সদস্য, তাঁদের সংখ্যা তেরো, তেরো৷ চৌতিরিশের এক-ততীয়াংশের
বেশি, স্থতরাং এই দলত্যাগ বৈধ, কিন্ত তাতে কী, তাতে কী, আইনের উপরেও
প্র. কথা ৯ ১৩৭
কানন আছে, দেই কাহুনের নাম যখন যেমন তখন তেমন | মেঘালয়ে হিল
পিপল্স্ ডিম্যাণড ইমপ্রিমেণ্টেশন কাউশ্সিল থেকে বেরিয়ে এসে বিধান সভার ছ'জন
সদস্য কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছিলেন, সেই দলছুটর। নমস্য, কারণ তারা কংগ্রেসের
স্থবিধা ক'রে দিয়েছিলেন । তবে নাগাল্যাঁণ্ডে যে-তেরোজন সদস্য দলছুট হলেন
তারা অতীব নিন্দনীয়, কারণ তাঁএ। ইন্দিরা কংগ্রেস দলের অস্থবিধা ঘটালেন ।
দলত্যাগে কংগ্রেস দলের স্থবিধা হ'লে তা ভালো, কংগ্রেস দলের মুশকিল হ'লে
তা৷ ভীষণ খারাপ ।
কানুন ব'লে কথা । এই কান্ুনের আশ্চর্য প্রয়োগ দেখালেন নাগাল্যাণ্ডের
রাজ্যপাল । কংগ্রেস মান্ত্রসভ1! বিধান সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, কংগ্রেস
দল থেকে তেরে! জন সদস্ত বেরিয়ে এসেছেন, আইন-মোতাবেক তাঁদের দলত্যাগ
বৈধ, সেই বৈধতা৷ বিধান সভার অধ্যক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছে, তীর প্রধান বিরোধী
দলের সঙ্গে সম্মিলিত মোর্চা গঠন করেছেন, এই মোর্চা বিকল্প মন্ত্রিসভা গঠনের
দাবি জানাচ্ছে, নাগাল্যাণ্ড তোলপাড়, অথচ রাজ্যপাল নিধিকার | আসলে প্রথম
কয়েক দিন রাজ্যপালকে খুঁজেই পাওয়া! গেল না। নাঁগাল্যাণ্ডের রাজ্যপাল আবার
মণিপুরের পাজ্যপাল--ত্রিপুরারও-- ; নাগাল্যাণ্ডে অনিশ্চয়তা, রাজ্যপাল কিন্তু
মণিপুরের রাজধানী ইন্ষলে ঘাপটি মেরে বসে রইলেন । ইম্ফল থেকে নাগা-
ল্যাণ্ডের রাজধানী কোহিমায় বিমানযোৌগে পৌছুতে সময় লাঁগে বড়ো জোর
পনেরো মিনিট, কিন্ত রাঁজ্যপালের সময়ের বড়ো অভাব, প্রথম চার-পাঁচদিন তিনি
এলেনই না । কেন তিনি এলেন না তার কারণটি অবশ্য প্রায় সঙ্গে-সঙ্গে স্পষ্ট
হলে! | ইম্ষল থেকে পনেরে। মিনিটের পথ, রাজ্যপাল এলেন না, কিন্ত দেশের
রাজধানী খোঁদ নতুন দিল্লি থেকে ছুটে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাট্মন্ত্রী ও আরো-কিছু
কে্ট-বিষ্ট। তীরা প্রথমে বিধান সভার অধাক্ষের উপর রাগ ঝাড়লেন, তিনি
অতীব গর্দভ, কেন তিনি নতুন 'দাল্লর সঙ্গে পরামর্শ না ক'রেই এ তেরো জন
সদশ্যের দলত্যাগ বৈধ ব'লে ঘোঁষণা করেছেন, আইনমাঁফিক হ'লেই সব-কিছু
যেনে নিতে হয় নাকি, দলীয় স্বার্থ বলে ব্যাপারটা আছে ন1? কেন্দ্রীয় স্বরা্ই
মন্ত্রী ও অন্যান্য কেউবিষ্ুরা তেরো জন দলত্যাগীর সঙ্গে একত্র হয়ে এবং আলাদা-
আলাদা ক'রে দেখা করলেন । মিষ্রি কথায় দলে ফিরে আসার জন্য কাকুতিমিনতি
করলেন, সবাইকে মন্ত্রী ক'রে দেওয়ার প্রলোভন দেখালেন, অন্য নান? উপ-
ঢৌকনের প্রলোভন দেখালেন, কোনো-কিছুতে কাজ হলে! না ব'লে চোখ রাডিয়ে
ভয় দেখালেন । কিন্তু তেরো জনের একজনকেও দলে ফিরিয়ে আনতে নফল
১৩৮
হলেন না। ব্যর্থমনৌরথ হয়ে তারা নতুন দিল্লি ফিরে গেলেন, কেউই তাঁদের
যাওয়ার বেল! পিছু ডাকলো! না ।
এবার রাজ্যপালের পাল1। স্বরাইইমন্ত্রী তার সাধা-সাঁধনা ক'রে গেছেন,
হুকুমবরদার রাজ্যপাল অতঃপর আসরে নামলেন ৷ তিনি ইম্ফল থেকে প্রত্যাবর্তন
করলেন । ছু'দিন বাঁদে তার ঘোষণা বেরোলো। অস্থিরতা, অস্থিরতা, নাগাল্যাণ্ডে
অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এই অস্থিরতা রাজ্যের পক্ষে, দেশের পক্ষে, জাতির পক্ষে
সর্বনাশশ্চক । ধারা কংগ্রেস দল থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তীর অতিশয় নিচমন।
ব্যক্তি, তার! মান্ত্রত্বের লোভে দলছুট, তাদের মানসিকতা নিন্দার, ক্ষমার অযোগ্য,
তাদের প্রশ্রয় দেওয়া মহাপাতক হবে, তা নৈতিকভাবিরোধাী হবে। তা ছাড়া,
দু'দিন বাঁদে হয়তো৷ এই বিধান সভায় সদস্যরা ফের মত ব1 দল পাঁস্টাবেন, তাঁর
ঝুকি নিতে রাজ্যপাল রাঁজি নন | সেহ সঙ্গে রাজ্যপাল এটাও বলতে বাধ্য হচ্ষেন,
দূলত্যাগধিরোধী আইনে অনেক স্থলনপতন আছে, এরকম একটি যাচ্ছেতাই
আইনের নির্দেশ-অনুষাঁয়ী কাজ করতে তার বিবেক কখনোই সায় দেবে ন1!
অতএব বিরোধারা নাগল্যাঞ্চে বিকল্প মন্ত্রিসভা গঠনের স্থযোৌগ পাবেন না, খিধান
সভ1 বাতিল ক'রে দেওয়া, হলে, এবং নাগালাণ্ডে রাষ্টপতির শাসন ঘোষণ। করা
হলে।. যাঁর মানে কিনা বকলমে ইন্দিরা কংগ্রেমী শান, সবকে। সম্মতি দে
ভগবান ।
মেঘালয়ের ক্ষেত্রে এক বিধান, নাগাল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অন্ত । যখন যেমন
তখন তেমন, ইন্দির] কংগ্রেস দলের স্বার্থরক্ষা করার খাতিরে কখনে। বৈধ আইনকে
কল। দেখানো, এ একই স্বার্থে অন্ত-কখনো এ আইনের নৈতিকতার বিরুদ্ধে
বিষোদ্গার । রাঁজ্যপালের] কেন্দ্রের আক্ষাাহী প্রসু, কেন্দীয় মন্ত্রিসভার নির্দেশে
তারা চলেন-বলেন-নৈতিকতার বুলি আগুড়ান-রাতকে দিন ব'লে অভিহিত
করেন, দিনকে বরাত, কেন্দ্রীয় খরা মন্ত্রী যদি বলেন জল উচু, তাপাও বলেন জল
উচু, তিনি যদি বলেন জল নিচু, তারাও খলেন জল শিচু।
তা হ'লেও নাগাল্যাগ্ডের রাজ্যপাল, যিনি ভগ্ডামির এক প্রকুষ্ট দৃষ্টান্ত রাখলেন
এ মাসে, তার সম্বন্ধে আলাদ! ক'রে কিছু বলা প্রয়োজন ৷ রাজ্যপাল নিযুক্ত
হবার আগে এই ভদ্রলোক আমাদের সৈম্বাহিনীর সবাধিনয়ক ছিলেন । সংগ্রামে-
সংকটে যিনি জাতির সেনাবাহিনীর নায়কত্ব দেবেন, তার সম্পর্কে দেশবাসীর প্রত্যক্ষ
বা সংগোঁপন কিছু ধ্যান-ধারণা থাকে : ভিনি বিচারে অবিচল হবেন, চ্যায় নিষ্ঠ
হবেন, শঠতা-কপটতাঁর কলুষ তাঁকে কখনে। স্পর্শ করবে না । চোখ কচলাতে
১৩৬
হয়, নাগাল্যাণ্ডের এই রাজ্যপাল, এ মাসের গোড়ার দিকে যিনি মেরুদগ্ডহীনতা। ও,
কাপট্যের চরম নিদর্শন দেখালেন তার আচরণের মধ্য দিয়ে, এই ভদ্রলোক
আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধ্যক্গ ছিলেন, আমাদের সেনানীদের কাছে
আদর্শস্বরূপ ছিলেন, তাদের প্রেরণ।পুরুষধ ছিলেন ? আমাদের সেনানায়কেরা তা
হ'লে এই ধাতুতে গড়া, চাকরি বজায় রাখার জন্য যে-কোনে। অসাধুত'র আশরঙ্
নিতে তার! প্রস্তত, কাপুরুষতা তাদের রন্ধ্ধে-রন্ধে সঞ্চারিত? ধরণী দ্বিধা হও,
আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব এধরনের ন .ংসক সম্প্রদায়ের হস্তে সমপিত ?
পাঁশাপাঁশি, সাম্প্রতিক অন্য-একটি ঘটন] নিয়েও সামান্য বিস্তৃত হ'তে হয় ।
পাঞ্জাব রাজ্যের পুলিশের ডিরেক্টব জেনারেল, তাঁর নাকি শোর্ষের শেষ নেই, তিনি
নাঁকি তিন মাস আগে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে উগ্রপন্ঠীদের ডিট করে দিয়েছেন ।
পাঞ্জাবে সদর্পে আইন-শৃঙ্খল1 রক্ষা ক'রে বেড়াচ্ছেন তিনি, অপরাঁধদমনের
অভিযাঁনে তাঁর তুলনা একমীত্র তিনিই । এ হেন বীরপুরুষটি জুলাই মাসের শেষ
সপ্তাহে চগ্ডীগড়ে এক নৈশ ভোজসভায় এক মহাকেলেঙ্কীরি বীধিয়ে বসলেন;
মদেন্মত্ত অবস্থায় এক মহিলা আই এ এস কর্মচারীর সঙ্গে অতি অশালীন ব্যবহার
করলেন, সেই মহিলার শ্লীলতাহানি ঘটালেন । মহাঘ্বপ্য অপরাধ, ফৌজদারি অপরাধ ।
এঁ একই অপরাধে মাত্র গত সপ্তাহে দিল্লি পরিবহণের কয়েকজন ড্রাইভার-কগাক-
টরকে গ্রেপ্তার তথ। বরখাস্ত কর। হয়েছে; তারা চলন্ত বাঁসে ইন্দ্রপ্রস্ত কলেজের
একটি ছাত্রীর সঙ্গে অসংযত ব্যবহার কবেছিল । কিন্তু একই অপরাধে পৃথক ফল,
পাঞ্জাব পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের বিরুদ্ধে যে-অভিযোৌগ আন হয়েছে, তার
সত্যতা নিয়ে কেউই সন্দেহ প্রকাশ করেননি, পুলিসের এই বড়ে। সাহেবের বিরুদ্ধে
ফৌজদারি মাঁমলা রুজু করা হয়েছে, কিন্তু তিনি স্বপদে বহাল আছেন, পাঞ্জাবের
মহাঁমান্ রাজ্যপাল ঘোষণ। করেছেন এই ডিরেক্টর জেনারেলকে বাদ দিয়ে উগ্রপস্থী-
দমন অসভ্ভব, সুতরাং তিনি মাঝেমধ্যে মহিলাদের সর্দে অশালীন ব্যবহার করলেও
তা মেনে নেওয়। ছাড়া উপায় নেই; পুলিশের বড়ো সাহেবটি ফৌজদারি অপরাধে
অপরাধী হ'তে পারেন, রাজ্যে অপরাধদমনের দায়িত্বে তথাচ তিনিই বহাল
থাকবেন । রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণ সম্মতি আছে।
প্রধান মন্ত্রী ও তীর মন্ত্রিধর্গ প্রায়ই আর্তনাদ করেন. জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন,
ষড়যন্ত্রকারীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, অতএব প্রাতরক্ষা' বাহিনী-পুলিশ বাহিনী
আরে। জোরদার করতে হবে, প্রতিরক্ষা খাতে-পুঁলশি খাতে জলের মতো আরো
টাক। খরচ করতে হবে, বিদেশ থেকে আরো হাঁজীর-হাঁজার কোটি টাকার অন্ত্রশস্ত্
১৪৩
আমদানি করতে হবে, এই যেমন গত বছর সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার অস্ত্রীদি
আমদানি করা হয়েছে । অবশ্ট অস্ত্র আমদীনির ছুতোয় কত টাকা ঘুষ হিশেবে
এর-ওর পকেটে গেছে তা সাধারণ মানুষের জানা নেই, কিন্তু দেশখাসীদের মনে
অন্য বড়ো প্রশ্ন থেকেই যাবে : অস্ত্রশস্ত্র কি সব-কিছু, বছরের-পর-বছর প্রতিরক্ষা
থাতে-পুলিশি খাঁতে খরচ বাড়িয়ে গেলেই কি দেশের পিরাপত্ত। সংগ্রক্ষিত হবে,
যেখানে দেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্বে নাগাল্যাগ্ডের বর্তমান রাজাপালের মতো
মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তি, পুলিশের সবৌচ্চ পদে পাঞ্জাবের বর্তমান )ডরেইর জেশাবেপের
মতো চরিত্রহীন পুকষ, সেখানে জনসাধারণ কঙুটুকু ভরসা রাখবেন, কতটুকু
নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবেন তীরা, কী বলে নিজেদের বোঝাবেন জা তীয় নিরীপত্তা-
দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা বিদ্িত হখার বন্দুতম আশঙ্কা শেই ? রক্ষকর।
যদি ভক্ষক হয়, কে বাচাবে দেশকে-জাতিকে ?
গণতন্ত্র বিপন্ন, নিরাপত্তা বিদ্রিত, দেশরক্ষার দায়িত্ব ধাদের হাতে হাস্ত, সেই
কেন্দ্রীয় সরকাবের পারিষদবর্গ ও অনুচরবুন্দের অনাচীর-অভ্যাচারেই জাতি বিপন্ন,
জাতির নিরাপত্তা বিদ্রিত। তথাকথিত রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ ।
দেশের মানুষ বোকা নয়, তাঁরা দেখছেপ-বুঝছেন সব-কিছু। ত্রিপুরায়
কংগ্রেস কী ক'রে নির্বাচনে জেতে, নাগাল্যাণ্ডে কোন্ শিয়মে রাষ্ট্পতির শাদন
জারি হয়, পাঞ্জাবের পুলিশ কর্তা মহিলা ধর্ষণ কারে কা ক'রে পার পেয়ে যান,
দুই অন্ত:পুরবতিনী মাতাকন্য। কোনো জাপানি কোম্পানি থেকে কেন সাড়ে-ছ'কোটি
টাকা উপহার পান, বোফর্সেব চৌবটি কে!টি টাকা কোন্ গোপন চড়ায় গিয়ে
ঠেকে, দেশের মানুষ তা সমস্ত জানছেন-বুঝছেন | হঠাৎ একদিন বিস্ফোরণে
ফেটে পড়বেন তারা ।
১৪১
আমার যৌবন-বাগানে হাওয়া লেগেছে ফুল-জাগাঁনে
সময়ের বিচারে যে-ব্যবস্থাঁর দিন ফুরিয়েছে, তাতে ঘুণ ধরবে, তা পচবে, ই তিহাঁসের
নিয়মে তার পর ত1 একদিন বিলুপ্ত হবে | কিন্তু কোন্ হারে, কতটা দ্রুততার সঙ্গে
এই পচনপ্রক্রিয়! পরিসমাপ্ত হবে তা আগে থেকে খল মুশকিল, আকস্মিক
ঘটনাসম্পীতের উপর তা! হয়তো নির্ভর করবে । আমাদের দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক
ব্যবস্থা আর কতদিন টিকবে, কিংবা টিকবে কি আদে ? কয়েক বছর আগেও এ
ধরনের প্রশ্ন করতে বাঁধো-বাধে। ঠেকতো, এখন আর ঠেকবে না, বিশেষ ক'রে গত
কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলীর পর আর ঠেকবে না । তামিলনাদ রাজ্যের বিধান
সভায় এক অদ্ভুতকিন্তৃত নাটক অভিনীত হলে! । ছুই পরম পরাক্রমশালিনী,
পরস্পরের-সঙ্গে-যুমুধান মহিলার অনুগতবর্গের কীতিকলাপ দেখে জনৈক পৌরাণিক
মহিলার আকৃতি মনে পড়লে আমাদের : ধরণী, দ্বিধা হও | পুরাঁণে অনেক জাছ,
তেমন-তেমন প্রার্থন। জানলেই ধরণী নিজেকে দ্বিধাগ্রস্ত করতেন। বাস্তব
পৃথিবীতে এখন তো তা হবাঁর উপাঁয় নেই, ইতিহাসের বিবর্তনের জন্য অপেক্ষা
করতে হয় আমাদের, কোনো-কোনে। ক্ষেত্রে সেই বিবর্তনের প্রবণতাকে আমরা
সাহায্য করতে পারি শুধু আমাদের সামাজিক ভূমিকাঁপালনের মধ্য দিয়ে ।
তাই, যে-মুহূর্তে তাঁমিলনাদের অঙ্কে সাময়িক যবনিকা পড়ে, কান পেতে
আমাদের শুনতে হয় ব্রিপুরাউপাখ্যান, তারপব ত্রিপুরা পেরিয়ে মেঘালয়কাহিনী।
এ যৌবন জলতরঙ্গ রুধিবে কে, সংসদীয় গণতন্ত্র অপ্রতিরোধ্য এগিয়ে চলেছে ।
স্পষ্ট বোঝা যায়, একটি সুক্ম হিশেব কাক্ত করছে । গত এক বছর প্রধান মন্ত্রীর
বড়ে ছুঃসময় গেছে, হরিয়ানা-কেরল-পশ্চিম বঙ্গে, রাজ্যে-রাঁজ্যে তিনি নির্বাচনে
হেরেছেন, তাঁর ও তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ছুনশতির অভিযোগ এসেছে, যে-
অভিযোগ দেশের বেশির ভাগ মানুষের মনে সন্দেহের ছায়া বিস্তার করেছে, তার
অন্তরঙ্গ একজন-ছু'জন স্বহৃদের ছুনীতি পথিক্ষার প্রমাণিত হয়েছে, দাক্ষিণাত্যে তার
দলের প্রভাব বহু দিন ধরেই প্রীয় নিশ্চিহ, এখন এমন কি খোদ আর্ধাবর্তেও
তিনি আর হালে পানি পাচ্ছেন না, বিহাঁর-উত্তর প্রদেশের দেহাঁতিদের ভাষায়,
লেড়ক] 'ফেল' হো গয়া । তাঁর দলে মন্ত ভাঙন ধরেছে, কিছু-কিছু পাল্লাভারি
১৪২
মানুষ ইতিমধ্যেই দল থেকে বেরিয়ে এসেছেন, আরে! অনেকে দলের ভিতরে থেকেই
লুকিয়ে-চুরিয়ে ঘট পাকাচ্ছেন, প্রধান মন্ত্রীকে বিপদে ফেলবার স্থযোগের
অপেক্ষায় আছেন। দলের মধ্যে হাজার বিক্ষোভ, যে-যে প্লাজ্ঞে কংগ্রেসি সরকার
আছে, মৃখ্য মন্ত্রীর! ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে ব'সে আছেন, আভ্যন্তরীণ নানা কৌদল,
কোনো-কোনে। মুখ্য মন্ত্রীকে যে-কোনো দিন যে-কোনো মুহূর্ভে বর্নখাস্ত করা
হ'তে পারে, এমন ধ্যানধারণ, সুতরাং প্রশাসন ভ্তক্ধ। কংগ্রেস দলে বিবেক"
নীতির বালাই বহু দিন ুচে গেছে, জনস্বোর এঁতিহাবাহী কর্মীরা অপস্ত, এখন
ব্যবসাদার-ঠিকেদাররা দলের মধ্যে প্রবিষ্ট, আগামী কাল কা ঘটবে ত নিয়ে
যেহেতু কেউই নিশ্চিন্ত নয়, তারা তাই পড়ি-কি-মরি ক'রে সরকারি প্রসাদের স্থযোগ
গ্রহণ ক'রে লুটে-টেছে নিচ্ছে সব-কিছু । ফলে দলের এবং প্রধান মন্ত্রীর ব্যক্তিগত
জনপ্রিয়তা আরো! কমছে । সেই সঙ্গে এই বিশ্বাপও বদ্ধমূল হচ্ছে যে ১৯১৯
সালের লোকসভ। নির্বাচনে জয়লাভ একটি উটুকো। ঘটনা, ইন্দির। গাঁঙ্ধির শবদেছের
ছবি দেখে ব্যাকুল হয়ে দেশের মানুষ তাঁর ছেলেকে ভোট দিয়েছিল, কিন্তু, তার পর
তো এতগুলি রাজ্যে নির্বাচন অন্ুষ্ঠিত হলো, কোনে কেরামতিই দেখাতে পারলেন
ন] ভদ্রলোক, আপলে প্রধান মন্ত্রীটি, বাংলা ভাষায় আমর যাকে বলি, “হেরো?।
সারা দেশ জুড়ে এখন তাঁর পদত্যাগের দাখি উঠেছে, সেই সঙ্গে নতুন ক'রে
লোকসভা নির্বাচনের | পিঠে কূলে বেধে আর কানে তুলে! দিয়ে প্রধান মন্ত্র
যদি সেই দাবি উপেক্ষাও করেন, তা হ'লেও, সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়মনীতি যদি
মানতেই হয়, ১৯১৯ সালের শেষার্ধে নির্বাচনের ব্যবস্থা ন! ক'রে তীর উপায় নেই।
হাতে সময় বড়ো কম, নিজের ভাবযূতি একটু উজ্জ্বল না করলেই নয়, যে কেই
হোক নিজের “হেরো' প্রখ্যাঁতিটি পাল্টানো প্রয়োজন | বিদেশ থেকে, বিশেষ ক'রে
পুঁজিবাদী দেশগুলি থেকে, অবশ্ঠ ভুরি-ভুরি প্রশংসাপত্র আসছে প্রতিদিন $ তাদের
বিবেচনায়, আমাদের প্রধান মন্ত্রী সব গুণের আধার, তীর দিকে তাকিয়ে তাদের
নাঁকি বিস্ময়ের সীমা নেই । মুশকিল হলো! সংসদীয় গণতন্ত্রের অদ্ভূত নিয়মকা গুন,
ধার। প্রধান মন্ত্রীর প্রশংসায় সহস্বমুখ, দেই বিদেশীদের নির্বাচনে ভোটের অধিকার
নেই । তা ছাড়া, বিদেশীদের কথায় দিশী চি'ড়ে ভেজার দিন শেষ হয়েছে । তাহ
দেশবাসীদের কাছে ভাবযৃতি শৌধরানোর তাগিদ বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে ।
তাঁর জন্য দরকার পর-পর কয়েকটি নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর অন্তত একটি-হু'টি
নির্বাচনী সাফল্য । আর্ধাবর্তের মানুষদের আপাতত ঘটানো! নিরাপদ নয়,
দুর্নীতি ও দুননীতিপরায়ণদের আশ্রয়দানের কলঙ্ক প্রধান মন্ত্রীর ভাবমৃতিকে ওখানে
১৪৩
এতটা কলুষিত করেছে যে এই মুহূর্তে ভোট করতে গেলে ভরাডুবির আশঙ্কা ।
অতএব উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ছোটো-খাটে। প্াজ্যগুলি বেছে নেওয়া যাক । যেমন
নাগাল্যাঁু, মাত্র বারো লক্ষ ভোটদাতা। | যেমন ত্রিপুরা, তেরো লক্ষ ভোটদীত]।
অথবা মেঘ'লয়, একুনে মাত্র ছয় লক্ষ ভোটদাতি৷ | যেন-তেন-প্রকারেণ যদি এই-
ক'টি রাজ্যে নির্বাচনে আংশিক সফলতা ও দেখানে। যায়, সাধারণ মানুষের ধারণ!
পাল্টাতে শুরু করবে, প্রধান মন্ত্রী হেরো নন, তিনি জিততে পারেন-জেতাতে
পারেন এ ধরনের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত স্থযোগ দেখা দেবে তা হ'লে।
বিগত কয়েক মাস ধ'রে পরিকল্পনামাফিক কাজ হয়েছে । মেঘালয়ের বিধান
স্ভ] নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে পঞ্চাশ কোটি টাকা খরচ কর! হয়েছে, সরকারি
খাঁতেও বেপরোঁয়! টাঁকা ঢাল! হয়েছে নির্বাচনের আগে, এমনকি যদিও এ রাজ্যে
দিব্যি বছর ভ'রে স্থুপরিমিত বৃষ্টিপাত হয়েছে, খরাত্রাণের নামেও দশ-বিশ কোটি
টাকা! বিলোৌনো হয়েছে, এক ধাকায় নাগাল্যাগুবাঁসীদের জীবনযাত্রার মান
অনেকটা উপরে উঠে গেছে । তপস্া সার্থক. প্রধান মন্ত্রীর দল নাগাল্যাণ্ডে যাটটি
আসনের মধ্যে দৌত্রিশটি দখল করতে সক্ষম হয়েছে, সাবধানের মার নেই, এই
চৌত্রিশ জনের মধ্যে জনাকুড়িকে মন্ত্রী বাঁনিয়ে দেওয়া হয়েছে, একজনকে বিধান
সভার অধ্যক্ষ, অন্য আরেকজনকে বিধান সভার উপাধ্যক্ষ, আর বাঁকি যে-বাঁরো৷ জন
রইলেন তীদের প্রত্যেককে কোৌনো-না-কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রধানের পর্দে
বসানে। হয়েছে, সুতরাং মনের দুঃখে বনে যাওয়ার মতে! একজনও আর বাঁকি
থাকেননি |
রক্তাক্ত ত্রিপুরার প্রসঙ্গে, ধ'রেই নেওয়] যাঁয়, সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে দেশের
মানুষকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এ সীমান্ত রাজ্যে, কোনে। সন্দেহ নেই, প্রধান
মন্ত্রী ইতিহাস রচনা? করেছেন | এমনকি ভাটের সরকারি হিশেবেও ধর। পড়ছে,
ধার জোর ক'রে ক্ষমতা দখল করলেন গোট রাজ্যে তারা ভোট পেয়েছেন যাঁদের
গলাধাক। দিয়ে প্রশাসন থেকে বিদায় করা হলো! তাঁদের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু
এটা! যুদ্ধ, শ্রেণীযুদ্ধ, শরেণীস্বার্থরক্ষার যুদ্ধ, এই যুদ্ধের সঙ্গে ১৯৮৯ সাঁলের শেষার্ধের
সবভারতব্যাপী আপন্ন মহাযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক, স্যায়-অন্যাঁয় ধর্মীধর্মের ব্যাপার
নেই এখানে, ছলে-বলে-কৌশলে জিততেই হবে। প্রধান মন্ত্রী তিনটি অস্ত্রই
প্রয়োগ করেছেন, তাতেও কাজ না হওয়াতে অন্তত একটি কেন্দ্রে ভোটের গণনায়
পিছিয়ে পড়া সত্বেও নির্বাচনী কমিশনারকে বাধ্য করিয়েছেন সরকারিভাবে তার
দলকে জয়ী ঘোষণা করতে । সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদী কায়দার এই
১৪৪
পরম সংমিশ্রণ উদাহরণ হিশেবে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় অন্ধকার আকাশে উজ্দ্বল নক্ষত্রের
মতো দীপ্থি ছড়িয়ে যাবে আবহমান কাল ধ'রে।
এবার মেঘালয়ের পাল1]। ওথানে বিরোধী দলগুপি নিধাঁচনের আগে
নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াঁয় পৌছুতে পারেননি, তা হ'লেও ভোট গোণা যখন
শেষ হলো, বিধান সভার যাঁটটি আসনের মধ্যে প্রধান মন্ত্রীর দপের ঝুলিতে মাত্র
বাইশটি | তাতে কী, তাতে কী, সততবিবেকতাড়িত রাজ্যপাল মহোদয় এক পলও
বিলঘ্ করলেন ন1, ঝড়ের বেগে প্রধান মন্ত্রীর দলের নেতাকে মন্ত্রিসভা গঠনের জগ
নিমন্ত্রণ পাঠানো হলো, ঝড়ের বেগে তিনি পাঁজভবনে চ'লে এলেন, ঝড়ে বেশে
তিনি ঘুখ্যমন্ত্রীরূপে শপথ গ্রহণ করলেন । বিধান সভায় এই মুহুর্তে প্রধান মন্ত্রীর
দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, তাতে কী, মানুষের সব চেয়ে বড়ো পরিচয় সে নিজেকে
ছাঁড়িয়ে যেতে পারে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে পাবে, প্রধান মন্ত্রীর দল মেঘালয়ে
আপাতত সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার ছুর্দাস্ত খেলায় মগ্ন । দলীয় প্রতীকে যে-
বাইশ সদশ্ট জিতেছেন, তাঁদের অর্ধেকজনকে মন্ত্রী ক'রে দেওয়া হয়েছে, বীকিদেরও
মন্ত্রীদের সমান মর্যাদার পদে নিযুক্ত করা হচ্ছে কোনো-না-কৌনেো সরকারি
প্রতিষ্ঠানে । বাইরেকার তিনজন বিধান সভ] সদশ্যকে, যার! স্বতন্ত্র প্রার্থ হিশেবে
জয়লাভ করেছেন, তাঁদের আপ্যায়ন ক'রে এনে পূর্ণমন্ত্রীর পদে প্রতিষ্ঠিত করা
হয়েছে । কিন্ত, তাতেও হচ্ছে না, আরে] অন্তত পীচজনকে ভাডিয়ে আনা চাই,
নইলে বিধান সভায় সংখ্যা ধিক প্রমাণ করা সম্ভব হবে না। বাথা-ঢাকার কোনো
ব্যাপার নেই এখানে, প্রধান মন্ত্রীর দলের পক্ষ থেকে অতি পরিষ্কার ভাষায় ঘোষণা
ক'রে দেওয়া হয়েছে, কে নিবি ফুল, কে নবি ফুল, আমার যৌবন-বগানে হাওয়া
লেগেছে ফুল-জাগানে. ওগে ফুটেছে এত ফুল ফুলম।লি কই, সংসদীয় গণতন্ত্রে
সঙ্গে উদারচরিত্রের সাধুজ্য ঘটেছে, যিশি আসবেন তাঁকেই মন্ত্রীপদে বরণ ক'রে
নেওয়? হবে, মানের লড়াই এটা, খাজারে তো ব্লটবে প্রধান মন্ত্রীর দল নির্বাচনান্তে
সরকার গঠন করেছে মেঘালয়ে, স্থতরং এই অপবাদ কেউ দিতে পারবে না যে
প্রধান মন্ত্রী হেরো |
মেঘালয়ের রাজ্যপালের সংবিধানগত প্রাণ, তাঁকে যখন প্রশ্ন কর! হলো বিধান
সভায় দৃশ্তত সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা দবেও কেন প্রধান মন্ত্রীর দলের নেতাকে
মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানানো! হলো, তিনি মুহুর্তমাত্র বিলম্ব না কে
ংবিধানের দোহাই পাঁড়লেন, বিধান সভায় যে-দলের সবচেয়ে বেশি সদন্য,
তাদেরই সংবিধানের নির্দেশ-অনুযায়ী মস্ত্রি সভা গঠনের সুযোগ সর্বাগ্রে দিতে হয়,
১৪৫
তিনি ঠিক তা-ই করেছেন । পার্থ্বর্তী ব্রিপুরা রাজ্যে কেন সেই বিধি প্রয়োগ করা
হলো না, কেন সবচেয়ে-বেশি-আসনে-জেতা। সি পি আই ( এম ) দলের নেতাকে
প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আহ্বান জানীনে। হলে না, তার জবাব দেওয়ার
দায় তো মেঘালয়ের রাজ্যপালের নেই । সংসদীয় গণতন্ত্র এট?, কিছু-কিছু লোকি-
লজ্জার ব্যাপার তে। আছে, এখন এটা তো। আর প্রকাশ্যে ঘোষণা ক'রে বলা যায়
ন।, নির্বাচনী ফলাফল যা-ই হোক না কেন, রাজ্যপাল মহোদয়গণ সর্বরাজ্যে সর্ব-
অবস্থাতে প্রধান মন্ত্রীর দলকেই সরকার গড়তে ডাকবেন, তাদের বিবেকের দায়
এটা, নুন খান যার, তারা গুণ গাইবেন তার, কারচুপি করবেন তার হয়ে,
রাজ্যপালর1 করবেন, নির্বাচনা কমিশনার করবেন ।
কে বা কারা বলে আমাদের প্রধান মন্ত্রী হেরে৷ ? যারা বলে, তার সংসদীয়
গণতন্ত্রকে মর্যাদা দিতে শেখেনি, জনগণের রায়ের প্রতি তাদের বিন্দৃতম শ্রদ্ধা
নেই, গণতন্ত্রের যোগ্যই নয় তারা । আইন ক'রে তাদের ভোটাধিকার কেড়ে
নেওয়1 যেতে পারে কিন। সেই প্রশ্নটি বিশেষ ভাবে ৰিবেচন। ক'রে দেখতে হবে ।
১৪৬
মহাভারত একটু অশুদ্ধ হোক
পৃথিবীর সমস্ত খেটে-খাওয়া মানুষ বঞ্চনার বিকদ্ধে, শোষণের বিরুদ্ধে ; পৃথিবীর
সমব্ত খেটে-খাওয়। মানুষের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন অবিচ্ছেছ্া) শোষণের বিরুদ্ধে
কোনো-এক বিশেষ দেশে অআমজীবী মানুষের সংগ্রামধিশেষ অন্যত্র, আরো
হাঁজারটি দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শ্রমিকশ্রেণীকে প্রেরণা জোগায়, রাষ্্ীয় সামা-
রেখা অতিক্রম ক'রে তাই শ্রমিকশ্রেনীর আন্তর্জাতক সৌত্রাত্রধোধ : এই কথাগুলি
যে-কোনো নিষ্ঠীবান, সমাজতন্ত্রে প্রত্যয়শীল বামপদ্থীর চেতনার সঙ্গে ওতপ্রোত
মেশানো । ইাতহাঁসে একই কাহিনী পুনঃপৌনিকতার সঙ্গে ঘটেছে, রাজায়-রাজায়
যুদ্ধ, রাজাদের স্বার্থে যুদ্ধ, অথচ কোতল হয়েছে সাধারণ মানুষ, গরিব নিঃসন্বল
থেটে-খাওয়। মানুষ | হয় তাদের জোর ক'রে সৈশ্যাবাহিনীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে,
শয় তো তাদের দিয়ে বেগার খাটিয়ে যুদ্ধের সাঁজপপঞ্জাম তৈরি কর। হয়েছে, অথবা
তাদের আপ্রাণ পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসল গায়ের জোরে তুলে নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে
চালান কর] হয়েছে । কখনে-কখনে। যুদ্ধের পরিণামে দেশে ঘোর অরাজকতা
দেখ! দিয়েছে, ছুভিক্ষ কিংবা খবার পরাক্রম, বিত্ববাঁন গো নিজেদের স্বার্থ ঠিকই
সামলে নিয়েছেন, চিরাচরিত প্রথায় মার! পড়েছেন এদেশ-ওদেশ-ছই দেশেরহ
গরিবরা ৷ শ্রমজীবী মানুষের হয়ে লড়াই করেন সমাজতান্ত্রিক বোধে দীক্ষিত যে-
বিবেকবান ব্যক্তিরা, তার! তাই যুদ্ধবশজদের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সর্বদা সঙুক
থাকতে উদ্দ্ধ করেছেন-করছেন | রাজপথে যখন লক্ষ কণ্ঠে উচ্চারিত হয়, “যুদ্ধ
চাই না, শান্তি চাই, হামল] চাই না, মৈত্রী চাই, বন্ছ প্রজন্মের অভিজ্ঞতায় সেই
উচ্চারণ অবগাহিত । খুব কম যুদ্ধের কথাই ইতিহাসের পাতায় পড়তে পায় যায়
যে-যুদ্ধ থেকে শ্রমজীবী মানুষ লাভবান হয়েছেন, তাঁদের শক্তি প্রসারিত হয়েছে,
যুদ্ধান্তে তাদের মুরি-উপার্জন বেড়েছে, জিনিশপত্রের দাম কমেছে । একমাত্র
ব্যতিক্রম ফ্যণসিবাঁদবিরোধী যুদ্ধ । হিটলারের সোভিয়েট আক্রমণ, নাঁৎসী নেতাদের
বিভিন্ন ঘোষণ' থেকে য। স্পষ্ট ব্যক্ত হয়েছিল, সংঘবদ্ধ শ্রমজীবী মানুষের আন্দো-
লনের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত সংগ্রাম । সেই যুদ্ধ তাই ছিল শ্রমিকশ্রেণীর পক্ষে
বাঁচার লড়াই, ফ্যাসীবাদকে পযুদস্ত না করতে পারলে মানুষের জয়যাত্র! বন্ছ যুগ
১৪৭
ধ'রে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল । শ্রমজীবী মানুষ শান্তির সপক্ষে যেহেতু তারা
জীবনের সপক্ষে, তাই তারা সর্বস্ব পণ ক'রে হিটলারের নারকীয় আক্রমণের বিরুদ্ধে
ববপিয়ে পড়েছিলেন । এখন উল্লেখ করলে চট করে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়,
ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রায় তিন কোটি সোভিয়েট নাগরিককে আত্মবিসর্জন
দিতে হয়েছিল ।
ধনতান্ত্রিক-সামন্ততান্ত্রিক দেশগুলিতে যুদ্ধোন্মাদন1, তাদের প্রতিরক্ষা খাতে
কাঁড়ি-কাড়ি টাকা অবিরাম খরচ ক'রে যাওয়া, ত। কিন্তু সমস্ত আদর্শ শিকেয় তুলে
রেখে । হয়তো ভুল বলা হলো, একটি বিশেষ আদর্শ অবশ্যই কাঁজ করছে, সাঁমন্ত-
তান্ত্রিক-ধনতান্ত্িক অর্থব্যবস্থাকে কায়েম রাখবার জন্যই হয়তে। প্রতি বছর ধাঁপে-
ধাঁপে সামরিক খাতে খরচ বাড়িয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় । অসম বণ্টন-
ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের উপার্জন রুদ্ধগতি, বাজারে চাহিদায় তাই ঘাটতির
আশঙ্কা দেখা দেয়, মুনাঁফায় ছেদ পড়ে, আথিক সংকটের সম্ভাবনা বাঁড়ে। এই
অবস্থায় সামরিক ব্যয় কৃত্রিম উপায়ে ধ'রে রাখতে পারলে পুঁজিপতিদের মুনাফার
মাপ্রাকেও ধ'রে রাখা সম্ভব হয় । এ একই প্রেরণার বশবতী হয়ে পুঁজিবাদী দেশ-
গুলি থেকে মহ! উৎসাহে গরিব অনুন্নত দেশগুলিতে অস্ত্র রপ্তানির সমারোহ শুরু
হয়; যত বেশি অস্ত্র গছাঁনে1 যাঁবে, পুঁজিওলাদের লাভের বহর তত বাড়বে ।
সমাজতান্ত্রিক বিশ্বাসে স্থিত যে-ব্যক্তি, শ্রমজীবী মানুষের আন্তর্জীতিক
সৌন্রাত্রবোঁধে ধার অগাধ আস্থা, তিনি বিবেকগত কারণেই প্রতিরক্ষা ব্যয় অযথা
অহরহ বাড়িয়ে যাওয়ার বিপক্ষে সৌচ্চার হবেন | যখন স্পষ্ট দেখা যায় প্রতিরক্ষীর
নামে প্রতি বছর বিদেশ থেকে, প্রায় কোনোরকম বাছবিচার না ক'রেই, অঢেল
যুদ্ধের সগঞ্জাম কেনা হচ্ছে, যা থেকে লাভবান হচ্ছে একমাত্র ধনতান্ত্রিক দেশের
পুঁজিপতিরা, আপত্তির সমর্থনে তীর যুক্তি আরো জোরদার হয় । তা হ'লেও, প্রতি-
রক্ষার নাঁম ক'রে যে-অপব্যয় হচ্ছে, তাব বিরুদ্ধে জনমত সংগঠনে এই শ্রেণীর
মানুষদের প্রচুর অস্থবিধার মুখোমুখি হ'তে হয় । রেডিও-টেলিভিশন শাসকদলের
কুক্ষিগত, অধিকাংশ সংবাদপত্র পুঁজিপতিদের মালিকানাধীন, আদর্শনিষ্ঠরা নিজেদের
কথা যথাযথ প্রচার করার তেমন স্থযোৌগ সাধারণত আদে পেয়ে থাকেন না ।
বরঞ্চ, তীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে । 'ওর] বামপন্থী, ওদের দেশপ্রেম
নেই, ওরা আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের কথ বলে, ওর? দেশের স্বার্থ কখনোই
ভাবে না, ওদের কী-সব আন্তর্জীতিক সংগঠন আছে, তাদের নির্দেশেই ওরা
পরিচালিত হয়, স্থতরাং ওর। তো প্রতিরক্ষার খরচ কমাঁবার কথা বলবেই, দেশের
১৪৮
জন্য কোন মায়! আছে নাকি ওদের ? মোটামুটি এই কায়দায় অপপ্রচার চালানে।
হয়।
অন্তত গত পঁচিশ বছর ধ'রে এই বিভঙ্গে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে কুৎসা গাওয়া!
হয়েছে । সরল সাধারণ মানুষের কাছে দেশরক্ষার গ্রসঙ্গ অত্ন্ত সংবেদনশীল
বিষয়, দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হৌক তারা কেউই চাইবেন পা সেটা । এই
মান্ুষগুলির মধ্যে গিয়ে মহীবিক্রমে টেচিয়ে বলা হয়েছে : মায়েরা-বধোনেরা-
ভাইয়েরা, শুন্ছন আপনারা, আমরা বিদেশী আক্রমণের হঠাত থেকে দেশকে রক্ষা
করতে চাই, বিদেশী হামলাবাঁজরা যাঁতে আমাদের সীমান্ত অঞ্চলে কোনো গোলমাল
বীধাতে না পাঁরে সে-বিষয়ে আমর] দৃঢ়কল্প, সেই উদ্দেশ্বেই আমরা প্রতি বছর
প্রতিরক্ষা! খাতে বায় বৃদ্ধি করতে বাধ্য হচ্ছি, বিদেশী শক্র দূর ইটো, অথচ দেখুন,
এই বাঁমপন্থীদের আচরণ দেখুন, ওদের তো দেশ সম্পর্কে কোনো মায়ামমতা নেই.
শুরা সব সময় অন্য-অন্্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির কথা আওড়ায়, নিজেদের দেশ
নিয়ে ওদের মীথাবাথা নেই, দেশ প্ইলো। কি গেল তাতে এদের কিছু যায় আসে
না, এই হতঙচ্ছাডা বাঁমপন্থীরা! বলছে প্রতিরক্ষার বায় সংযত করতে হবে, বুঝে-ঝে
বিদেশ থেকে অস্ত্রশন্ত্র কেন৷ উচিত ; বামপন্থীরা কেন এ-সব বলছে তা বুঝতে তো
আপনাদের কোন অস্ৃবিধা হবাঁর কথা নয়, ওরা দেশকে দুরবল করতে চায়, তাই
আমরা আপনাদের কাছে এসেছি, আপনারাই বলুন, প্রতিরক্ষাব্যয়ে কার্পণ্য না
ক'রে আমরা ঠিক করেছি না ভুল করেছি; আপনারা তো। জানেন, নানা বিদেশী
গুপ্তচর সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের লক্ষ ভিতর থেকে অন্তর্থাত কষ্টি ক'রে জাতীয়
সংহতি, জাতীয় নিরাপত্তা বিস্মিত করা,অতএব আমর] অভ্যন্তরীণ নিরাপস্ভা ব্যবস্থা
জোরদার করতে চাইছি গুপ্তচরদের যাঁতে নিম করতে পানি, এখানেও দেখুন
বামপন্থীরা আপাত্ব তুলছে, বলছে বড্ড বেশি খরচ করছি, এখন আপনারাই বলুন
কী করবে! আমরা, এ দেশপ্রেমহীন বামপন্থীদের কণা গুনে প্রতিরক্ষা তথ
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার খাতে খরচপাতি বন্ধ ক'রে হাত গুটিয়ে ব'সে থাকবো ,নাদেশ-
রক্ষার জন্ত নযনতম যা-য! করণীয়, সেই অনুযায়ী প্রন্চিরক্ষাধ্যয় যথাবিহিত বাড়িয়ে-
বাড়িয়ে যাবে! । এ ধরনের প্রচারের তোড়ে বামপন্থীদের বিবেকগত আপপ্তি
কুটোর মত ভেসে গেছে, দেশের শিরাঁপত্তা নিয়ে তো ছেলেখেল। চলে না।
স্থতরাং আদর্শবাঁদী বামপন্থীদেরও ঠেকে শিখতে হয়েছে । সাধারণ মানুষের
মধ্যে নেমে গিয়ে কাজ করতে হবে, তাঁদের বোঝাতে হবে শ্রেণীসম্ার কথা,
১৪০
ইতিহাসধারার কথা, সামন্ততন্ত্র-ধনতন্ত্রের উ্থান-অবক্ষয়ের কথা, পুঁজিবাদীদের
লালসার কথা, জোটবীধ। শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের অমিত বিক্রমের কথা, কিন্তু
গোড়াতেই যদি সাধারণ মানুষ তীর্দের ভুল বুঝে বসেন, সন্দেহ করেন তাঁদের
দেশপ্রেমে খাদ আছে, সেই পন্দেহ থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখেন, তা হ'লে
সর্বনাশ । জনসাধারণের মানসিকতার প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বামপন্থী কমর
পক্ষে অকর্তব্য, এই বিবেচনাবশত তাই আদর্শবাদীদেরও নিজেদের উক্তি-আচরণ
কিছুটা সংশোধন ক'রে নিতে হয়েছে, হিশেব ক'রে বক্তব্য রাখতে হয়েছে, নিজেদের
মনের সংশয় ঘুরিয়ে ব্যক্ত করার প্রয়োজন দেখ! দিয়েছে, অনেক সময় ড"শহা-ডশাহা
অনাঁচার প্রতিরক্ষা নামে হচ্ছে ন্জেনেও মুখ বুঁজে সহা করতে হয়েছে ।
তবে ধর্মের কল বোধ হয় বাঁতাসে নড়ে । এই এ-বছরই, মাত্র মাস পাঁচেক
আগে, আমাদের নবান প্রধান মন্ত্রী রাজ্যসভায় প্রতিরক্ষা বাজেটের উপরে বক্তৃতা
দিচ্ছিলেন, প্রচুর পিঠ-চাপড়ানো বক্তৃতা, প্রগাঁট পাণ্ডিত্য-ঠাসা। খবরদার, কেউ
প্রতিরক্ষার খরচ কমাবার প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করবেন না, কিংবা! বলবেন না কোন্
থাতে কত খরচ হচ্ছে তা একটু বিশদ ক'রে আলোচিত হোক ; মাননীয় সবৃস্যবৃন্ন,
প্রতিরক্ষা অত্যন্ত সংবেদনশীল ব্যাপার, গোপনীয়তরক্ষ। প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অপরি-
হার্য অঙ্গ ; বহিঃশক্রপা আমাদের ঘিরে রয়েছে, এই পরিস্থিতিতে আপনাদের মধ্যে
যদি কেউ থেকে থাকেন যিনি আবার ধরবেন প্রতিরক্ষার খরচ কমাঁনে! হোক
কিংবা তাকে সে-সব খরচের বিশদ বিবরণ জানাঁনে। হোক, তা হ'লে আমি
বলতে বাধ্য হবে! তার মধ্যে দেশপ্রেমের লেশমাত্র নেই, এমনকি ধলতে বাধ্য
হবো তিনি পক্রপক্ষের অন্থুচ্ের মতো আচরণ করছেন ।
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে । মাত্র মাস পাঁচেক আগে প্রধান মন্ত্রীর এই
বন্ত্রগর্ত বিবৃতি । ইতিমধ্যে ঝোফর্সের বোমা ফেটেছে, জার্মান সার্বমেরিনের
কেলেঙ্কারিও প্রকাশ পেয়েছে । গীয়ে-গঞ্জের অতি সাধারণ মানুষও হঠাঁৎ বুঝতে
পেরেছেন, অনেক কাল ধ'রে তাদের ধে' কা দেওয়া হয়েছে, য1 বল! হয় অনেক
ক্ষেত্রেই ঠিক তা৷ নয়, প্রতিরক্ষার ছুতোয় যে-বাড়তি টাঁক। প্রতি বছর দিল্লির
সরকার খরচ করেন, তা দেশের নিরাপত্তা আদে৷ হয়তো! দৃঢ়তর করে না, তা
আসলে শীঁসকদলের প্রিয়ভাঁজন কোন দালালের উপার্জন বৃদ্ধি করে. এবং সেই
উপার্জন জমা হয় কোন বিদেশী ব্যাংকের গোপন ছু'নগ্থরী খাতায় । তাদেরই টাকা,
তার! ট্যাক্স! দিয়েছেন সেই ট্যাক্সোর টাকা, এভাবে নয়-ছয় হচ্ছে, অথচ বক-
১৫০
ধামিকের দল এই এতগুলি বছর ধ'রে বক্তৃতা দিয়ে বেদ্ডিয়েছে দেশ বিপন্ন,
প্রতিরক্ষাব্যয় না বাড়িয়ে উপায় নেই।
গীয়ে-গঞ্জের মানুষ হয়তো। নিরক্ষর, কিন্তু দেশের ভালো-মন্দ তার! এরকম
অবস্থায় চট্ ক'রে বুঝে নিতে পীরেন। তাঁদের ষে ঠকানো হয়েছে তা তারা বুঝতে
পেরেছেন ৷ জাতির এই মন্ত নৈতিক বিপর্যয়ের সংকট ঠিক কীভাবে আমরা অতিক্রম
করবো তা এখনে! অস্পষ্ট, এত কেলেঙ্কারর পরেও প্রধান মন্ত্রীর গদি টিকবে না
টিকবে না তা-ও এই মুহুর্তে বলা মুশকিল, দেশের জমিদারঞ্রেণী-পুজিপতি-
বাবসাদার সম্প্রদায় বর্তমান অবস্থায় কী কৌশল অবলম্বন করবেন ঠিক বোঝ যাচ্ছে
না, কিন্তু অন্তত একটি ইতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে হতিমধ্যেই নিশ্চয় ক'রে বলা
চলে। শুভফল, এখন থেকে আর আদর্শবাঁদীদের শান্তির সপক্ষে লড়তে নেমে
বিপন্ন বোধ করতে হবে না, তাঁরা উচ্চগ্রামে দাবি ভুলতে পাববেন প্রতিরক্ষাব্যয়
আর দেশপ্রেম সমার্থক নয়, ?নরাপত্তা তথা প্রতিরক্ষা নামে যে-খরচ ইচ্ছে ৩
স্বচ্ছন্দে এক-দশমাংশ অথব1] এক-পঞ্চমীংশ ছাটাই করলে তেমন-কিছু মহাভারত
অশুদ্ধ হবে না, যে-টাকা বাঁচবে তা দিয়ে ভারতবর্ষের প্রতিটি গ্রামে পানীয় জল
সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোঁক, প্রতিটি বর্গক্ষেত্রে সেচের জল পৌছে দেওয়ার
ব্যবস্থ! করা হোক, প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের সাংবিধানিক অঙ্গীকাররক্ষার উদ্বোগ
নেওয়া হোঁক, অভুক্তদের ছুই বেল! অন্ন পৌছে দেওয়া হোক, দেশের নিরাপত্ত!
তাঁতে বাড়বে বই কমবে না!
এখন থেকে, মন্ত বাঁচোয়া, এ উদ্ধত-বাঁচাল প্রধান মন্ত্রীর কাছ থেকে দেশপ্রেম
কাকে বলে তার তালিম ণিতে হবে না।
১৫১
আমাদের লড়াই, আমাদেরই লড়াই
খানিকদূর পর্যন্ত আমাদের বিবেক দৌড়োয়, তার পর তাকে আমরা নিরস্ত হ'তে
বলি। তেমন অস্থুবিধাঁজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হ'লে অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে ঘুম
পাড়িয়ে রাখি । দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু বর্ণবিদ্বেষী সরকার তার ন্ৃশংসতা।-
অমান্ুষিকত৷ নিয়ে বছরের পর বছর ধ'রে বিরাজ করছে, পৃথিবীর অন্তাত্র, দেড়শো-
ছু'শেো দেশে ছিটিয়ে-থীক1, আমার্দের মতো কৌঁটি-কোটি মানুষ অথচ নির্বাক, এবং
প্রায় নিবিকার | আমরা ভীরু, আমাদের হাতে ভুবনের ভার নেই । একটি
স্তর পর্যন্ত অগ্ভের ব্যথায়-ছুঃখে-দুর্দশীয় কাতর হ'তে পারি আমরা, ধারা অত্যাচারিত
ব1 শোধিত হচ্ছেন পৃথিবীর এখানে-ওখাঁনে, একটা স্তর পর্যন্ত তাদের হয়ে আমরা
লড়াই করতেও হয়তো কখনো-সখনে। রাঁজি হ'তে পারি, কিন্তু সেই স্তরে ঈষৎ
দ্রুততার সঙ্গে পৌছে যাই আমরা । দক্ষিণ আফ্রিকায় দিনের পর দিন, মাসের
পর মাঁস, বছরের পর বছর ধ'রে দরিদ্র সহায়সম্ঘলহীন কৃষ্ণকায় সম্প্রদায় জবাই
হচ্ছেন, মুখে আমর! মামুলি সমবেদন] জানাই, বছরে একদিন ফীসিতে-লটকে-
দেওয়া! কবি মৌলায়েজের স্মতির প্রতি অধ্য নিবেদন করি, কিন্তু এ পর্যন্তই ।
আমাদের বিবেক ক্রমে যেন ঘুমের কোলে ঢ'লে পড়ছে। ক্রমশ, আমাদের মধ্যে
এষনকি ধারা বহিপৃথিবী নিয়ে একটু বেশি সচেতনতার দাবি করেন, তাদেরও
উৎসাহ তথা আবেগ হ্ুষ্বের দিকে । “তোমার শীম আমার নাম ভিয়েতনাম
ভিয়েতনাম” সেই ভাবনাবিবেচনাহিশেব-ডোঁবানে! উন্মাদনা! এখন স্বতিতে
পর্যবসিত | মাঁকিন বৌম্বেটে বাহিনী কয়েক বছর আগে ঘখন গ্রেনাজড। গ্রাস ক'রে
নিল, বিশ্বের অন্যত্র সামান্য ধিক্কার জানানোর বাইরে আর আদ কিছু করা
হলো না, দক্থ্যদের বর্বর উল্লাসকে প্রতিহত করার জন্য কোনে প্রতি-উদ্ভোগই
নেওয়া হলে! না । একদা ধারা বিবেকবান ছিলেন, ধীরে-ধীরে তাঁদের অধিকাংশ
এখন হিশেবরক্ষকে পর্যবসিত হচ্ছেন । এমন কি নিকারাগয়ার মাচুষগুলি মরণপণ
ক'রে গত কয়েক বছর ধ'রে তাদের বিপ্লবকে রক্ষা কববার জন্য যে-বেপরোয়।
লড়াই চালিয়ে যাঁচ্ছেন, তার] প্রধানত নিজেদের শক্তি, নিজেদের সাহস, নিজেদের
বিশ্বীসের সংস্থানে দীড়য়েই সেই লড়াই চালাচ্ছেন, আম্বরা বাইরে থেকে
১৫২
সৌজন্তম্ছচক শুভেচ্ছা পাঠিয়েছি, মাফিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মামুলি ধিকার
জ্ঞাপন করেছি, ।কিন্তু ব্যাকরণের মান বীচাতেই আমাদের যতটুকু নড়াচড়া,
ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে আমার্দের বিবেককে সবন্রব্যাপী মানবিক স্বার্থ প্রতিষ্ঠার
ধর্মযুদ্ধে, নিযুক্ত করবার প্রসঙ্গ থেকে আমরা পাশ ফিরিয়ে থেকেছি, খাকছি।
আমরা ক্রমশ চতুর হয়েছি, নিজেদের স্বার্থের কথা সবচেয়ে আগে চিন্তা করতে
শিখেছি, আন্তর্জীতিক সৌব্রাত্রের পোশাকি বুলি শুনতে ভালো, কিন্ত ইতিমধ্যে
আমর। জেনে গেছি, বুঝে গেছি এই মস্ত পৃথিবীতে কেউ কারে। নয়।
হয়তো, তা হ'লেও নিজেদের বিবেকের কাছে লঙ্ঞা পাওয়ার আশঙ্কা থাকে
আমাদের, বিবেককে তাই আফিম খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাথতে হয় । কিন্তু এখন
থেকে হয়তো তারও আব দরকার পড়বে না । নতুন তত্বের কথ। শুনতে পাচ্ছি
আমরা, নতুন নীতির কথাও সেই সঙ্গে। গোটা পৃথিবী পারমাণবিক অস্ত্রে ছেয়ে
যাচ্ছে । এই অন্ত্রাদি সর্ধধবংসী, একবার নিক্ষিপ্ত হ'তে শুরু হলে পরিপূর্ণ প্রলয়,
শক্র-মিত্রের মধ্যে ডেদীভেদ করবে না এই ধবংসলীলা, স্বদেশ-বিদেশ সবই বিলুপ্ত
হবে, নিশ্চিহ্ন হবে! আমরা এদেশে-ওদেশে সবাই, জলখে-পুড়বে-ছাই হয়ে ধাবে
একই সঙ্গে আমাদের-আমাদের বৈরীদের ঘরধাড়ি-কলকারখানা-খেতথামার-
আরোগ্যশালা-প্রমোদকুঞ্জ | পারমীণবিক যুদ্ধ, যে-পক্ষই শুরু করুক না কেন, যে-
অছিলাতেই শুক হৌক না কেন, কাউকেই ছেড়ে কথ! বলবে না, সমগ্র মানব-
সভ্যতা বিলুপ্ত হবে, ভস্মীভূত পৃথিবতে কোনে। প্রাণী আর বিচরণ করবে না।
এই ভয়ংকর সম্ভাবনার কথা৷ মনে ধেখে এখন নান। নবজল্লনার স্যত্রপাত হয়েছে ।
পারমাণবিক যুদ্ধে কোনে! জয়ী নেই, কোনে। পরাজিত নেই, এই যুদ্ধ মনুষ্যজীতির
চরম সর্বনাশ | অতএব যে করেই হোক এই যুদ্ধের আশঙ্কা অস্কুরেই বিনাশ
করতে হবে ৷ মুশকিল ঠলো। পারমাণবিক শক্তির রহস্য এখন আর গোপন নেই,
দেশে-দেশে তা ছড়য়ে পড়েছে, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের সরকার তাদের
পারমাণবিক অন্ত্রসস্ভারের বড়াই করছেন, আরে বেশ কয়েকটি দেশ পারমাণবিক
অস্ত্রোৎপাদনে কতকার্যতার প্রায় কাছাকাছি পৌছে গেছে, অচির ভবিষ্যাতে
আরো অনেক দেশে পারমাণবিক অস্ত্রের আস্ফালন বিস্তার লাভ করবে । আরে
মুশকিল হলো! এই মারণান্ত্র যেমন সমীজতাস্ত্রিক শিবিরের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির কৃক্ষি-
গত, পুঁজিবাদী দেশগুলিও পিছিয়ে নেই । কার ভাগ্ডারে কত বেশি পরিমাণে এই
মারণাস্ত্র জমা পড়েছে, কাদের অস্ত্র তুলনাগতভাবে অধিকতর উতর, এ-সমন্ত প্রশ্নও
তাদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে । কারণ একটি অতি সাধারণ মানের পারমাণবিক
প্র. কথ! ১৪ ১৫৩
বোৌমাই পৃথিবীকে ধবংসের দিকে ঠেলে দিতে সক্ষম । অনবধানতাবশতই হোক,
এক পক্ষ অস্ত্র নিক্ষেপ করলে অন্ত পক্ষ থেকেও সঙ্গে-সঙ্গে প্রত্যুত্তরে অস্ত্র নিক্ষিপ্ত
হবে, আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবী-জৌড়া প্রলয় ।
ইতিহাসের দ্বান্দ্িক প্রাগ্রসরতায় আমর] এতদিন বিশ্বাস আরোঁপ ক'রে এসেছি,
আমাদের চেতনার সঙ্গে এই প্রতীতি জড়াঁনে। যে অত্যাচারই শেষ কথা বলে না,
পৃথিবীর উত্তরণ ঘটে, ঘটবে, মানবসভ্যতাঁর উত্তরণ ঘটে, ঘটবে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার
শোষণ পেরিয়ে গোট! পৃথিবীতে একদিন সমাজতন্ত্রের ঢল বন্যার মতো নামবে,
ইতিহাসের নিয়মে ধনতত্ত্রের নাভিশ্বীস উঠবে, দেশে-দেশে শৃঙ্খলমুক্ত জনগণ
বিজয়কেতন উরে তুলে ধরবে । এখানে-ওখানে শ্রেণীযুদ্ধ ঘটতে থাকবে, এদেশে-
ওদেশে । কিন্তু দুনিয়ার মজদুর যেহেতু এঁক্যবদ্ধ, একই স্বপ্নের অঞ্জন তাদের
চোখে, যে-দেশে শ্রমজীবী মানুষ ইতিমধ্যেই জয়ী, সমাজতন্ত্রের পারিজাততৃমিতে
পৌছে গেছেন তাঁরা, তাঁর] হাঁত বাড়াবেন ধার! এখনো মুক্তির জন্য যুদ্ধ লড়ছেন,
পুঁজিবাদের শোষণের সীড়াশিতে এখনে? পিষ্ট হচ্ছেন ধারা, তাদের দিকে, এগিয়ে
আসবেন সাহায্য ও বরাভয়ের ডালি সাঁজিয়ে। এ-ই তো আন্তর্জাতিক সৌব্রাত্র-
বোধ, আমরা যখন আমাদের ভাষায় ল। ইণ্টারন্তাশনাল সংগীত সমস্বরে গাই,
বলি, এসো, মিলি একসাথ, এই ভ্রাতৃত্ববোধের কথাই তো বলি।
এখন কিন্তু শোন যাচ্ছে, আমাদের নতুন নীতিতে প্রবেশ করতে হবে।
পারমাণবিক অন্ত্রসজ্জাহেতু আন্তর্জীতিক শ্রেণীযুদ্ধের প্রসঙ্গ এখন থেকে নাকি
পরিত্যজ্য, ধর্সযুদ্ধ আর সম্ভব নয়। কোনে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে মীন্ুুষের অবমাননা!
অনবচ্ছিন্ন চলছে, শোষণ তুঙ্গে, গোটা! দেশ ধ্বংসের কারাগার, সেই দেশের মানুষ
এরই মধ্যে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের আশা প্রতিবেশী সমাজতান্ত্রিক
দেশের মান্য তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন, সেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রত্যক্ষ
সমরে আহ্বান করবে এই দেশের পুঁজিবাদী শীঘকদের, শ্যায়ের জয় ঘোঁধিত হবে,
অধর্ষের পরাঁজয়। কিন্তু এখন থেকে সেই আশা আর ফলবতী হবে না। নতুন নীতির
কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি, তত্বের ভিত্তিকে রচিত নতুন নীতি। যেহেতু ষে-
কোনোযুদ্ধই এখন খানিক সময়ের ব্যবধানে পারমাণবিক যুদ্ধের রূপ নেবে,
এবং পারমাণবিক যুদ্ধ মানেই সর্বসংহাঁর, শক্র-মিত্র সবাই পুড়ে মরবে, অতএব
প্রথাগত আন্তর্জাতিক শ্রেণীযুদ্ধও আর সম্ভব নয় । আমাদের নিজেদের সমীজ-
তান্ত্রিক ব্যবস্থাকে তো টিকিয়ে রাখতে হবে. পারমাণবিক বুদ্ধ সংঘটিত হ'লে তো
তা ”টিকবে নী, এবং যেহেতু যে-কোনো যুদ্ধই শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত
১৫৪
হবে, আমাদের বুক ফেটে গেলেও পুঁজিবাদী অত্যাহীরের হাত থেকে
পড়শীদের উদ্ধার করবার জন্য শ্রেণীযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া! আর সন্তুব নয় । আমাদের
সংবৃত থাকতে হবে, ইতিহাসের দান্থিক গতি তার নিজের নিয়ম «মনে এগোক,
আমাদের পক্ষে তাঁকে প্রত্যুপগমন ক'রে নিয়ে আস! সম্ভব হবে না, সেই ত্বাশ্রিক
গতির রথচক্র কোথাও যদি কাঁদায়ও ব'সে যায়. কাদা থেকে টেনে তোপবার জন্তও
আমাদের এগিয়ে যাওয়া সমীচীন হবে ন। । আদর্শের নিয়মকল1 বদলাতে হবে
এখন থেকে, পারমীণবিক অস্ত্রসস্ভার নাকি আমাদের নতুন ক'রে চিন্তা করতে
বাধ্য করেছে, হয় শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান নয় পারমাণবিক সহ-ধিনাশ | স্থতরাং
সর্ববাদীসম্মত অত্যাচারীর সঙ্গেও নাঁকি সহ-অবস্থান করতে হবে, সেই অত্যাচারী
যদি আমার ভাইকে জবাই করে,আমীর বোনকে ধর্ষণ করে, তা হ'লেও ।
বিবেকপ্রক্ষালনের স্থযেণগের দিক থেকে বিচার করলে এই তবের অবশ তুলন।
নেই, সবাই তাহ'লে তুষ্তীভ্ভাখ অবলম্বন করে বাঁচার অবলদ্বন খুঁজে পাবেন । কিন্ত
তন্বটর আরেক দিকও তো আছে । আন্তর্জাতিক সৌন্রীত্রধোধ ধরব সত্য | কিন্তু তা
হ'লেও আমাদের আভ্যন্তরীণ সমাজশক্রর সঙ্গে যখন আমরা মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ
কোনে -_যে-কোনে1--সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে সাহায্যের আশ? পৌষণ অবাস্তব
হবে । এখন থেকে আমাদের মেনে নিতে হবে, সেরকম কৌনে। সাহাধ্য, তা প্রতাক্ষ
হোঁক কি পরোন্দই হৌক, সম্ভব নয়, কারণ ত1 পাবমণবিক পৃথিবীর শান্্রধিরোধী।
নিজেদের লড়াই নিজেদেরই করতে হবে আমাদের । একান্ত নিজেদের সামর্য্যের
ভিত্তিতে, সাহসের ভিত্তিতে, আদর্শ বোধের ভিত্তিতে, বিবেচনার ভিত্তিতে । এমন
নয় যে কথাট। আমাদের পুরোপুরি অজানা ছিল । আমাদের প্রজ্জায় এই বোধ
বরাবরই জাগ্রত ছিল, বিপ্লব রঞ্ধানিও কবা যায় না, আমদানিও কর যায় না,
প্রতিটি দেশের সমাঁজব্যবস্থার বিবর্তনের উপর সেই দেশের বৈপ্রবিক সন্তান!
নির্ভরশীল । কিন্তু তা হ'লেও তে। এতকাল ধরে পূর্বহুরী ধাবা, ধারা নিজেদের
সমাজব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে সফল হয়েছেন, ইতিহাসের দ্বাদ্দিক গতিধারাকে মূর্ত
রূপ দিয়েছেন, পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডে সমাজতন্ত্রের ভিত্তি স্ুপ্রোখিত
করেছেন, তাঁদের কাছে আমরা প্রেরণার জন্য গেছি, উপদেশের জন্য গেছি,
অনুশীলনের জন্ত গেছি । যে-নব্যনীতির কথা শোন! যাচ্ছে, মনে হয় সে ধরন্রে
সীমিত বিনিময়-প্রতিবিনিময়ের ধতুরও অবসান ঘটবে এখন থেকে, আন্তর্জাতিক
সৌভ্রাত্রবোধের নতুন পরিভাষ। অনুযায়ী ব্যাখ্যা করতে হবে ।
তা-ই যদি হয়, আমাদের যদি পরিপূর্ণ স্বাবলম্বী হ'তেই হয়, তা হ'লে চিন্তা ও
১৫৫
যুক্তির ক্ষেত্রেও তে সেই স্বাবলম্বনকে প্রশ্রয় দিতে হবে । আমাদের লড়াই,
আমাদেরই লড়াই, আমাদের একার লড়াই, বাইরে থেকে কেউ ভরসা দিতে
আসবেন না। এই লড়াই তাই আমাদের পরিচালন] করতে হবে নিজেদের
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, নিজেদের বিচার-বুদ্ধির সংস্থানে দাড়িয়ে । শ্রেনীসম্পর্ক
বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে, শেনীদৃ্টিভদ্দি-নন্দিত বিশ্ববীক্ষার ক্ষেত্রে, অগ্রাধিকার মীমাংসার
ক্ষেত্রে, আমর তো তা হ'লে মেনে নেবো আমাদের পরিবেশের ইশীরা, আমাদের
চেতনার ইঙ্গিত । আমাদের স্ব-নির্ভরতার অর্থ চিন্তার ক্ষেত্রেও স্ব-নির্ভরতা,
সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তাই, অপরের বিচার অথবা অপরের স্বা্থবিস্তার সেই চিন্তা বা
সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে না।
আমাদের এতদিনের অত্যন্ত অবলম্বনগুলি খসে পড়ছে । বহিবিশ্বে নতুন
ভাবনার ভিড়, য! আমাদের চিন্তাকে পীড়িত করে । এই পীড়াক্রান্ত অবস্থায়ই
হয়তো আরো! কিছু দিন কাঁটধে । তারপর আশা। করা যার স্বচ্ছতায়, সরলতা য়
ফিরে আসবো আমরা | আশাকে বাদ দিয়ে তে। ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয় ।
১৫
দীপ্ত শিখার অগ্নি স্বলে
অযুত কোটি বিন্দু মিলিয়ে সিন্ধু । আন্দোলনও তো তাই | একটি বিশেষ আদরের
প্রেরণায় কাতারে-কাতারে মানুষ জড়ো হণ, এ-গ্রামে ও-গ্রামে এই শহরে এ
শহরে, শহরের এই পাড়ায়-পাশের পাড়ায়-দূরের পাড়ায়, এই জেলায়-এ জেলায়-
সব জেলায় | সংগঠনই শক্তি, বিন্দু থেকে সিন্ধু । পরস্পরের প্রতি অনুকম্পায়ী
মানুষ, নানা বয়সের মানুষ, স্ত্রী-পুরুষ-তরুণ-বৃদ্ষ-কিশোর-মধ্যবয়ন্ব, ভারা প্রতোকে
আঁলাদা-আলাদ1 অভিচ্তাঁর মধো দিয়ে এসেছেন, অথচ আসলে একই অভিজ্ঞতার
মধ্যে দিয়ে এসেছেন, কিংবা তাঁদের আলাদা-আাল!দা অভিন্্রতাগুলি একটি স্থির
সিদ্ধান্তে তাদের পৌছে দিয়েছে : আমরা সবাহ গ্যায়ের প্রান্তরে পৌছুতে চাই,
সত্যের প্রান্তরে, &চিত্যের প্রান্তরে । আমরা প্রত্যেকে লড়তে চাই অবিচান-
শোষশ-অসাম্যের বিরুদ্ধে, যারা সমাজে থেকেও সমাজ-শক্র, পরস্বাপহরণে নিযুক্ত,
আমাদের ঘুপ্ধ তাদের বিরুদ্ধে । আমরা আলাদ। হয়ে যুদ্ধ করলে এই সংগ্রা্ে
কোনোদিন জয্নী হ'তে পারবো না, অতএব আমাদের সংঘবদ্ধ হ'তে হবে, সংগঠনের
শৃঙ্খল! মানতে হবে, আদর্শে স্থিত থেকে আদর্শের স্বার্থেই যুখবদ্ধতার অঙ্গীকার
গ্রশ্প করতে হবে।
লক্ষ-লক্ষ কর্মী, আদর্শের প্রেরণা যত ছড়িয়ে পড়ে, কর্মীসংখ্যা বাড়ে, মানুষের
মনের প্রতিজ্ঞা সংগঠনের রূপ নেয় | সংগঠন যত বড়ে। হয়, আন্দোলন যত ছড়ায়,
সংগঠনকে স্বশৃঙ্খলায় বাধার প্রয়োজনও সমপরিমাণে বৃদ্ধি পায় । আদর্শের আসু-
গত্যের প্রয়োজনেই শৃঙ্খলা, তাই পরস্পরকে, পরস্পরের আদর্শানুরাগকে সম্মান
জানানোর প্রতীক শৃঙ্খলাপরায়ণতা | এই শৃঙ্খলার মধ্যে নিজেকে বিলীন ক'রে
দেওয়ার আনন্দ পরিমাপের বাইরে । শৃঙ্খলার মধ্যে আছি, আমাদের ক্ষুদ্র স্বাথ
বিসর্জন দিচ্ছি আমরা প্রত্যেকে, কারণ নিয়মের নিগড় ছাড়া সংগঠনের শক্তিবুদ্ধি
অসম্ভব, এবং সংগঠনই ইতিহাসের নিয়ামক 7 ইতিহাসকে আমাদের দৃষ্টান্ত দিয়ে,
আমাদের যুখবদ্ধতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসছি আমরা ।
এই প্রামে-এ গ্রামে, এই পাড়ায়-এ পাড়ায়, এই শহরে-এ শহরে, সংগঠন বাড়ে,
রাজনৈতিক আন্দোলন ক্রমশ মহত্তর পর্যায়ে পৌঁছয় । লক্ষ-লক্ষ কর্ম, সর্বত্র
ছড়ীনো-ছিটোনো1, কেউ কাউকে চেনেন না, কোনোদিন এর! একেঅপরকে
চোখে দেখবেন ন] পর্যন্ত । কচিৎ-কখনে! যখন বড়ে| জমায়েতের ডাক দেওয়1 হবে,
এদের মধ্যে কেউ-কেউ পায়ে ইেটে-টেনে চেপে-নৌকে। বেম্নে-বাসের ছাদে চ'ড়ে
জড়ো! হবেন মহানগরে, কয়েক ঘণ্টার জন্ত মিছিলের সমারোহে রাজপথ কাঁপবে,
১৫৭
তারা ময়দানে নিশান উচিয়ে নয় তো! নিশান গুটিয়ে, দাড়িয়ে বা বসে, প্রিয়
নেতাদের কথা শুনবেন, সভাশেষে সংঘবদ্ধ প্রতিজ্ঞার প্রতীক হিশেবে কাগজের
মশাল জ্বেলে, ক্ষণিক মুহুর্তের জন্য হ'লেও, আকাশের গোত্রান্তর ঘটাবেন, তার পর
অনুরুপ শু্খলায় পায়ে হেঁটে অথব1 ট্রেনে চেপে কিংবা নৌকো ক'রে অথবা ট্রাকে-
বাসে কুলে ফিরে যাবেন নিজেদের গ্রামে-পাড়াঁয়-শহরে | এটুকু অভিজ্ঞতাই মাত্র
তাদের পারস্পরিক পরিচয়ের অভিজ্ঞান বহন করবে | তা-9 সকলের না, ধারা
মহানগরের জমীয়েতে জড়ো হ'তে এসেছিলেন, মাত্র তীদের কয়েকজনের ।
কিছু যায় আসে না তাতে । বিন্দুতে সিদ্ধু, বিন্দৃগুলি পরস্পর থেকে অপরিচয়ের
আড়ালে থেকে যায়, কিন্ধ সমুদ্রসম্ভাবনা! তাতে আদৌ ব্যাহত হয় না। আদর্শে-
জড়ো-হওয়। মানুমগ্ডলি, ছড়ানো-ছিটে!নে! দূর-দূর গ্রীম-শহর-পাড়ায়, পরস্পরকে
চিনবেন না-জানবেন না কোনো দিন, কিন্ত তবু তার! সংহত-সম্মিলিত এক
অক্ষৌহিণী বাহিনী । আদর্শের বেলাভূমিতে তাঁরা জড়ো হয়েছেন, স্থতরাং এই
লশ্-লক্ষ মানুষগুলি যতই ছড়ানো-ছিটেশনো হোন ন। কেন, একই সঙ্গে আছেন,
তাদের আপাত-অপরিচয় ছাপিয়ে তাদের আদর্শের অভিন্্রতা |
খবরকাগজে ছাপা হয় না| অনেক নাম, হাজার-হাজার ণাঁম। এই নামের
মানুষগুলি আদর্শে তদগত, আন্দোলনের সঙ্গে নিজেদের সম্পূর্ণ মিশিয়ে দিয়েছেন।
পাড়ায়-পাড়ায় তারা আন্দোলনের সংগঠন অটুট রাখেন, পত্রিকা-পুস্তিকা বিলি
করেন, ঘরোয়। সভার খিতর্ক-বিশ্লেষণ-ব্যাখ্যার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেন. স্বেচ্ছা
সেবকদের শিক্ষাশিবিবে কর্তব্যাদি লুঝিয়ে বলেন, পড়শীদেৰ অভাব-অভিযেগ
কাঁন পেতে শোনেন, যথাসাধ্য প্রতিধিধানের প্রয়াস করেন, জোষ্ঠদের নিদেশেব
সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেন, কনিষ্ঠদের প্রতিনিয়ত উৎসাহদান কবেন । এই
মানুষগুলিকে কেন্দ্র ক'রেই পাড়ায়-পাঁডাঁয় আন্দোলন ব্যাপ্তি পেয়েছে, সংগঠন
ছড়িয়েছে । খবরকাগজে ছাপা হয় না, হবে না এই সব লক্ষ-লঙ্ কর্মীদের নাম,
কিন্ধ কোনো ক্গতি নেই তাতে । একটি নাম থেকে আরেকটি নাম অবশ্যই আলাদ',
কিন্তু আলাদাঁও নয় । কারণ, সব কথার সার কথা যেটা, প্রত্যেকটি নামই একই
আদর্শে উৎসগণীরুত । লক্ষ-লক্ষ স্বাক্ষরহীন ণামগুলি জড়ো করেই আন্দোলনের
মহীসমুদ্র । এই নামগ্টলিই সংগঠন, এই নামগুলিই আন্দোলন ; আদর্শের সংগ্রাম
বিজয়ী বীবের মতো অপ্রতিহত বেগবান, সেই বেগের কেন্ত্রশক্তি এই নামহীন
নামের মিছিল ।
ইতিহাস এগোয়, কখনে] দ্রুত, কখনো! টিমে তালে । আন্দোলনে নতুন
চিন্তার ছায়া! পড়ে, পরিস্থিতি পাল্টায়. স্বতরাঁং সংগ্রামের পদ্ধতি-প্রকরণেরও
পরিশোধন-পাঁধমার্জনের মাঝে-মাঝে প্রয়োজন দেখা দেয়। গ্রামে-গঞ্জে-পাঁড়ায়
ধার] ব্যুহ পরিচালনার হাল ধ'রে আছেন, তারা একই সঙ্গে প্রহরী ও পথপ্রদর্শক,
পাড়ার-গঞ্জের-শ্রামের আকৃতি-প্রাখনা-আবেদন-প্রশ্ন ইত্যাদি পর্যায়ে-পর্যায়ে স্তগে
১৫৮
স্তবে যথাযথ জায়গায় পৌছে দিয়ে থাকেন, আবার আন্দোলনের সর্বোচ্চ স্তর
থেকে কোনো অনুরোধ বা সিদ্ধান্ত পৌছুলে নিজ-নিজ অঞ্চলে তার প্রচারের
দায়িত্বও তারাই তুলে নেন । তারা নিজেরা বোঝেন, অন্যদের বোঝান, অন্যদের
সংশয়ের জবাব দেন। আন্দোলনে কখনো-কখনো উজ্জল সফলতা, কখনে। কিছু
পিছিয়ে-পড়া, কথনে! রৌদ্রকরৌজ্জবল দিন, কখনো সেঘ-বুষ্রি-ঝড়। কিন্তু ইতিহাস
এগোয়, আন্দোলন এগোয়, সংগঠন আরো পরিণত হয়, যে-নামগ্ডলি কোনে! দিন
ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে না, সেই নামের মাম্ষগুলি নিঃশব্দে, আদর্শের
প্রতি অবিচল, বছরের পর বছর ধ'রে স্ব-স্ব কর্তবা পালন ক'রে চলেন ।
কিন্তু ইতিহাস যদিও অপ্রতিরোধ্য, মাঝে-মাঝে জীবনে মৃত্যুর ছায়া পড়ে!
পাঁড়ার বা গঞ্জের কোনো! প্রিক্ন কর্মী প্রয়াত হন | সংগঠন মানে তো ভালোবাসার
সংসার, ন্নেহের-আঁদর্শের নিগড়ে পরম্পর পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ । প্রিয় কর্মী যখন
রোগাক্রান্ত হন, সহকর্মীরা ঝীপিয়ে পড়েন প্রত্যেকের সাধামতো, চি!কৎসার
আয়োজন করেন, শুশ্রধার ব্যবস্থা, প্রিয় কর্মীর সংসারশ্বাহের দিকেও দৃষ্টিদান
করা হয়। কিন্ত প্রিয়জনকে বাচানো যায় না, আন্দোলনের স্বাথে তিরিশ-চপ্লিশ
বছর ধ'রে, নিঃশব্দ এই প্রিয় কর্মী নিজেকে নিযুক্ত রেখেছিলেন, শরীর বা! স্বাস্থ্যের
কথ। ভাবেননি, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি আলাদা নজর দেওয়ার মতো সংস্থান বা]
সামর্থ্যই হয়তে। তার ছিল ন1 অতীতে সে-সব বছ্ছরে, এখন একটু দেরি হয়ে গেছে,
সহযোদ্ধাকে বিদায় দিতেই হয়। তিনি জড়িয়ে ছিলেন সবখে-ছুঃখে, আনন্দে-
বিষাদে, আদর্শে-স্বপ্লে, আন্দোলন-সংগঠনের স্থানীয় হাতহাস যাকে ধাদ দিয়ে
ভাবা অসস্ভব, তিনি নিক্রমণ করেন । এ প্রয়াণের কথা খবরকাগজে এসে
পৌঁছয় না, অন্য পল্লীতে বা অগ্ত গঞ্জেত আন্দোলনের শরিক যে-অগণিত মানুষ-
গুলি আছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাও জানতে পারেন না একজন সং-সৈনিক
বিদায় নিয়েছেন এই পল্লীতে বা গঞ্জে, তাই সীমানাবদ্ধ শোক ।
কারো-কারো মনে অভিমানের উদ্রেক হওয়। হয়তো স্বাভাবিক, হতিহাস কেন
এত ভারসাম্যহীন হবে, তিল-তিল ক'রে ধার! সংগঠন গণ্ড়ে তুললেন পাড়ায়-
পাড়ায়, গ্রামে-গ্রামে, ধাদের ত্যাণের-তিতিক্ষার তুলন! নেহ, কেন তাদের শ্বতি
এরকম ধুয়ে-ুছে যাবে, ইতিহাসের কেন এই নিক্ষররণ বিচার, বিন্দুগুলি তাদের
অপরিচয়ের আবরণের আড়ালে কেন ধরাবরই থেকে যাবে ?
এই প্রশ্রের উত্তর কিন্তু দর্শনশান্ত্রে নেই, তা নিহিত জাবধনচর্চার সারাৎসারে |
আমার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে আপাদ। এজ্জল্য নিয়ে বিরাজ করবে, এই চিন্তায়
অতি সংকীর্ণষনা এক অহমিকার ভূমিকা অপ্রচ্ছন্ন । অন্যদিকে, যে-কর্মী ব্যক্তিগত
ইচ্ছা-অভিলাষের রূত্ত অতিক্রম ক'রে জনতার দিকে নুখ ঘুরিয়েছেন, আশ্রোৎসর্গের
গহনে আনন্দ আবিষ্কার করেছেন, আত্মপরিচয় লে।প ক'রে দিয়ে মিছিলের ভিড়ে
নিজেকে মিলিয়ে দিম্নেছেন, তার তো! কোনে1-দিনই তৃপ্তিতে খামৃতি পড়বার কথা
১৫৯
নয়। নামহীীন-গোত্রহীন-পঙ,ক্তিহীন সংগ্রামী মানুষের শোঁভাধাত্রায় আনন্দ তার
নিজন্ব আনন্দ, ইতিহাসের চরিতার্থতাই তাঁর ব্যক্তিগত চরিতার্থতা । ইতিহাসের
পষ্ঠায় কাঁতারে-কাতারে জড়ো হওয়া] কর্মীদের নাম লিপিবদ্ধ হবে না, কিন্ত
ইতিহাস প্রতিটি ক্রান্তিলগ্ন পেরিয়ে যে-নতুন আদল পাচ্ছে, এই সংগ্রামারক্
মানুষগুলিই সেই নতুন ইতিহাস লিখছে, তার চেয়ে বড়ো! গৌরবের পরিচয় আর
কী হ'তে পারে?
সম্মান-কীতির শীর্ষদেশে বিহার কর] সত্বেও এমনকি রবীন্্নাথও জীবনের
্রান্তমুহুর্তে প্রায় হুবন্থ এক উপলগ্গিতে উপনীত হয়েছিলেন : 'মোর নাম এই ব'লে
খ্যাত হোক : / আমি তোমাদেরহ লোক ।/ আর-কিছু নয়, / এই হোক শেষ
পরিচয় ।” সম্মানের শীর্ধদেশে পৌছেও মনে হয় একটি অপরিপূর্ণতাবোধ থেকে
যায়, আসল যাশ্ুষগুলির কাছাকাছি কি আপতে পেরেছি: তাদের ভাষা-কান্বা-
আনন্দ-অভিমানেপ সংজ্ঞা কি বুঝতে পেরেছি, খবরকাগজে প্রতিদিন নাম ছাপা
হয় আমার, ইতিহাসের বইতে উল্লেখ থাকবে আমীর কীতি-কাহিনীর, কিন্তু
সাধারণ মানুষকে কি বুঝতে পেরেছি, বোঝাতে পেরেছি? এই দ্বন্দ্বের যন্ত্রণা থেকে
কিন্তু লক্ষ-লক্ষ আদরশযুক্ত কম্মীবাহিনী মুক্ত, জনতার সঙ্গে জড়িয়ে থেকেছেন তীরা,
যথন মৃত্যুর ঘণ্টা বাঁজবে, ইতিহাসের পাতায় নাঁম অক্ষয় অক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে
ন। তাদের, তাদের তৃপ্তির হেতু অন্য, ইতিহাসকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন
তাঁরা, ইতিহাস জনতার যে-অখণ্ড অধিকারের হঙ্গিত 'দয়ে থাকে, সেই অধিকারকে
ছুই কদম আগে বাড়িয়ে দিয়েছেন হাতে ধারে, জীবনধারণের, জীবনযাপনের এর
চেয়ে ঝড়ে চপ্িতারখতা আর কী হতে পারে ।
জীবনের নিয়ম, পাড়ায়-গঞ্জে-শহরে খনুদিন ধ'রে একসঙ্গে-সংগ্রামে-ত্রতী
সহযোদ্ধা! গত হখেন, খবরকাগজে ছাপা হবে না সেই খবর, কিংবা হ'লেও
অতি ছোটো ক'রে ভিতরের পৃষ্ঠায় নিচের দিকে, কিন্তু সীমাবদ্ধ শোকের মধ্য
দিয়েই ইতিহাসের সারমর্ম উজ্জল ফুটে উঠবে, সনম উচ্চারণে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত
গাঁওয়। হবে, আমবা নতুন ক'রে অন্থভব করবো, আমাদের সহযোদ্ধা প্রয়াত, কিন্ত
তা হ'লেও তিনি আছেন, আমাদের মধ্যে আছেন, আমাদের প্রতিজ্ঞার মধ্যে,
আমাদের আদর্শের হৃৎবিন্দুতে । তারায়-তারায় দীপ্ত শিখার অগ্সি জলে, সেই
অগ্নির শরীরে আমাদের প্রয়াত সহষৌদ্ধার উপস্থিতির স্বাক্ষর |